ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৪
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ সোমবার, জানুয়ারি ১১, ২০১০ (৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু।
সুত্রঃ মাসিক মদিনা, ডিসেম্বর ২০০৯।
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-১
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-২
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৩
ইমাম সাহেবের শিক্ষা জীবনঃ(বাকী অংশ)
আবু হানীফা নিজমুখে বর্ণনা করেন, কিছুদিন এদিকে সেদিক কিছু লেখাপড় শিক্ষা করার পর একবার আমি বসরায় যাই। সেখানকার জ্ঞানীগুনীদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পর বুঝতে পারলাম যে, কুল-কিনারাহীন জ্ঞান সাগরের অনেক কিছুই আমার পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। তারপরই আমি মনে মনে সংকল্প গ্রহণ করি যে, যতদিন বেঁচে থাকব, ইমাম হাম্মাদের সাহচর্য ত্যাগ করব না এবং এরপর দীর্ঘ আঠারো বছর তাঁর সার্বক্ষণিক সান্নিধ্য থেকে জ্ঞানার্জনে ব্রতী হই। (আবু জোহরা)
৯৬ হিজরীতে সুলায়মান ইবনে আবদুল মালেক খেলাফতের দায়িত্বগ্রহণ করার পর যখন দীনি এলেম চর্চার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তখন থেকেই ইমাম আবু হানীফা নিয়মিত এলেম চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। তখনকার দিনে কুরআন-হাদিসের পাশাপাশি এলমে কালাম বা আকায়েদ শাস্ত্র নামের আর একটি বিষয় দীনি এলেমের অন্তর্ভুক্ত হয়। সাহাবায়ে-কেরামের জামানা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা ও গুনাবলী (যাত ও সিফাত), পবিত্র কুরআনের আয়াত ইত্যাদিতে কোন প্রকার দার্শনিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা কেউ অনুভব করেনি। ইহুদি তাত্ত্বিক আবদুল্লাহ ইবনে সাবার দৌরাত্ম, হযরত আলীর রা. এবং হযরত মোয়াবিয়ার রা. মধ্যকার রাজনৈতিক বিরোধ, প্রাচীন ইরানী সভ্যতার সাথে ইসলামের সংমিশ্রণ প্রভৃতি কারণে মোতাযেলী, খারেজী, শিয়া প্রভৃতি বিভ্রান্তিকর মতবাদের সৃষ্টি হয়। কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনায় মুসলিম উম্মাহর চেতনায় এমন একটি স্হায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হয়, যার প্রতিক্রিয়ায় নানা প্রকার বিভ্রান্তিকর মতবাদ অনুকূল পরিবেশ লাভ করে। ইমাম আবু হানীফার শিক্ষা জীবনের সূচানায় বিভিন্নমুখী মতবাদের মোকানেলায় এলমে-কালাম বা আকায়েদ শাস্ত্রের ব্যাপক প্রসার ঘটে। ইয়হইয়্যা ইবনে শাইবানের বক্তব্য অনুযায়ী ইমাম আবু হানীফা রহ. তাঁর এলমেকালাম চর্চায় ইতিহাস সম্পর্কে বলেন, আমি বেশ বিছুকাল এলমে কালাম চর্চায় নিয়োজিত থাকি। বিভিন্ন জটিল বিষয়ে বিতর্কে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমি বহুবার বসরা সফর করি। কেননা, তখনকার বসরা ছিল বিভিন্নমুখী দর্শনিক আলোচনার পীঠস্হান। এ উদ্দেশ্যে কোন কোন সময় মাসের পর মাস আমাকে বসরায় অবস্হান করতে হয়। (আবু জোহরা)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অনুমিত হয় যে, ৯৬ হিজরী থেকে শুরু করে ১০২ হিজরীতে ইমাম হাম্মাদের শিক্ষায়তনে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত অনুমান সাত বছর কাল ইমাম আবু হানীফা রহ. একান্তভাবে এলমে-কালামের চর্চায় ও অনুশীলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
আকায়েদ সম্পর্কিত দার্মনিক আলোচনার ক্ষেত্রে ত্যাগ করে এলমে ফেকাহর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানীফা রহ. বলেন, একদিন আমি দোকানে বসা ছিলাম। জনৈকা স্ত্রীলোক এসে তালাক সম্পর্কিত একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করলেন। আমি তার প্রশ্নের কোন জবাব খুঁজে না পেয়ে তাকে অনতিদূরে অবস্হিত ইমাম হাম্মাদের দরসগাহে যেতে বললাম। আর বিশেষভাবে বলেদিলাম যে, ইমাম সাহেব তোমার এ সমস্যার কি সমাধান দেয় আমাকেও তা বলে যেও।
ইমাম সাহেব বলেন, সেদিন থেকেই আমার অন্তরে এলমে-ফেকাহ শিক্ষা করার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।
ইমাম হাম্মাদ এবং তাঁর শিক্ষায়তনঃ
হাম্মদ ইবনে আবূ সুলায়মান ছিলেন তাবেয়ীগণের মধ্যে একজন বিজ্ঞ আলেম। কুফার এক সম্ভ্রান্ত বিত্তবান পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। তখনকার যুগে এলমে-ফেকাহর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দি ব্যক্তিত্ব। সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেকের রা. নিকট হাদিস শিক্ষা এবং তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর উস্তাদ ছিলেন প্রাজ্ঞ তাবেয়ী ইবরাহীম নখয়ী রহ.
আবুল শায়খ তারীখে ইসপাহান গ্রন্হে উল্লেখ করেছেন যে, হাম্মাদ আল্যকাল থেকেই ছিলেন সুফী প্রকৃতির। ইবরাহীম নখয়ীর রহ. সাহচর্যে তাঁর আল্লাহপ্রদত্ত মেধা এবং আধ্যাত্মিক সুষমা জূর্ণমাত্রায় বিকশিত হয়েছিল।
বাল্যকালের একটি ঘটনা। একদিন ইবরাহীম নখয়ী হাম্মাদকে গোশত আনার জন্য বাজারে পাঠালেন। জথে হাম্মাদের পিতা আবু সুলায়মান দেখতে পেলেন, তার জুত্র হাতে একটি থৈ নিয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছে। বালকপুত্রের বেশবাস এবং হাতে থলি দেখে ‘রঈস’ পিতার আত্মমর্যাদা বোধ আহত হলো। তিনি পুত্রের হাত থেকে থলিটা নিয়ে দূরে ফেলে দলেন্ কিন্তু হাম্মাদ সরই থলি কুড়িয়ে নিয়েই দ্রুত উস্তাদের বাড়ীতে চলৈ গেলেন। ইবরাহীম নখয়ী রহ. ইন্তেকালের পর যখন হাদিস শিক্ষার্থীগণ দলে দলে হাম্মাদের বাড়ীতে এসে সমবেত হতে লাগলেন, তখন একদিন আবু সুলায়মান হাম্মাদকে লক্ষ্য করে বলেছলেন, বৎস! ইবরাহীম নখয়ী রহ. সেই জীর্ণ থলেটির তধ্যে যে কত বড় মর্যাদা ও বরকত লুক্কায়িত ছিল, তা এতকাল পর আমার বুঝে এসেছে। (তরজুমানুস-সুন্নাহ)
ইবরাহীম নখয়ী রহ. ইন্তেকালের পর হাম্মাদ তাঁর স্বতন্ত্র শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা করেন। কূফায় হাজ্জাজ বিন ইউসুফের অসহনীয় দৌরাত্ম উপেক্ষা করেই তিনি তাঁর শিক্ষাদান কার্য অব্যাহত রেখেছিলেন। এলেমের গভীরত, অসাধারণ জনপ্রিয়তা এবং পারিবারিক প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে শাসন কর্তৃপক্ষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তাঁর জক্ষে স্বীয় সাধনায় অবিচল থাকে সম্ভবপর হয়েছিল। তাঁর যুগে কূফার সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ এবং নির্ভরযোগ্য আলেম ছিলেন হাম্মাদ ইবনে আবী সুলায়মান। তাঁর অনুপম উদারতা ও চরিত্র মাধুর্য্য সম্পর্কিত বহু কাহিনী রূপকথার ন্যায় বিভিন্ন গ্রন্হে ছড়িয়ে আছে। কথিত আছে, একবার পথিমধ্যে তাঁর অশ্বের ছিন্ন জিনটি মেরামত করার বিনিময়ে গরীব চর্মকারের হাতে তিনি আশরাফীর একটি থলি তুলে দিয়েছিলেন। রমযান মাসে তিনি অন্যুন পঞ্চাশজন দীনদার ব্যক্তি রাখতেন। তাদের সাথে ইফতার করতেন। খানা খেতেন। রমযান শেয়ে প্রত্যেককেই আশাতীত পারিতোষিক দিয়ে বিদায় করতেন। শিক্ষার্থীগণের প্রতি তাঁর স্নেহ-মমতা ও উদারতা ছিল সীমাহীন। শিক্ষাদান কার্য্যে অতুলনীয় নিষ্ঠা এবং শিক্ষার্থীগণের প্রতি পিতৃসুলভ মমত্ববোধের ফলেই তার শিক্ষায়তন থেকে ইমাম আবু হানীফার রহ. ন্যায় সর্বকালের সেরা জ্ঞানতাপসের সৃষ্টি সম্ভবপর হয়েছিল। ইরাক, বিশেষতঃ কূফাবাসীগণের মহান উস্তাদ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের রা. একজন বিশিস্ট উত্তরসুরী রূপে বিবেচিত হতেন হাম্মান ইবনে আবু সুলায়মান।
হিজরী প্রথম দুইশতাব্দি কালের মধ্যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রচলন ছিল না। এক একজন বিশিষ্ট আলেমকে কেন্দ্র করে এক একটি দরছের হালকা বা শিক্ষাদান কেন্দ্র গড়ে উঠতো। শিক্ষার্থীগণ নিজেদের উদ্যোগ সমবেত হতেন এবং বিশেষ একটি বা দু’টি বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতেন। শিক্ষার্থীগণ তা গভীর মনোযোগ সহকারে এলেম বিস্তৃত ও সংরক্ষিত হতো।
ইমাম হাম্মাদের শিক্ষায়তনেও পাঠদানের ক্ষেত্রে এই সনাতন পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো। তবে শিক্ষার্থীদের বসবার ক্ষেত্রে শ্রেণী বিন্যাসের কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করা হতো। মেধাবী এবং পুরাতন শিক্ষার্থীদেরকে প্রথমসারিতে বসতে দেওয়া হতো। আবু হানীফা রহ. যে দিন দরসে শরীক হন, তার পরদিন থেকেই তাঁকে প্রথম কাতারে স্হান করে দেওয়া হয়।
(চলবে।)
এ ব্যপারে আরো বেশি করে জানার জন্য ভিজিট করুন ফিকহে হানাফীঃ কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য
আল্লাহ হাফেজ।
সহীহ সনদে ইমাম আবু হানীফা রাহ. থেকে যে নীতিমালা উল্লেখিত হয়েছে তার সারকথা এই- ১. মাসআলার সমাধান যখন কিতাবুল্লাহ্য় পাই তখন সেখান থেকেই সমাধান গ্রহণ করি। ২. সেখানে না পেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ এবং সহীহ হাদীস থেকে গ্রহণ করি, যা নির্ভরযোগ্য রাবীদের মাধ্যমে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। সহীহ হাদীস আমাদের জন্য শিরোধার্য। একে পরিত্যাগ করে অন্য কিছুর শরণাপন্ন হওয়ার প্রশ্নই আসে না। ৩. এখানেও যদি না পাই তবে সাহাবায়ে কেরামের সিদ্ধান্তের শরণাপন্ন হই। ৪. কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহ ও ইজমায়ে সাহাবার সামনে কিয়াস চলতে পারে না। তবে যে বিষয়ে সাহাবীগণের একাধিক মত রয়েছে সেখানে ইজতিহাদের মাধ্যমে যার মত কিতাব-সুন্নাহ্র অধিক নিকটবর্তী বলে মনে হয় তা-ই গ্রহণ করি। ৫. মাসআলার সমাধান এখানেও পাওয়া না গেলে ইজতিহাদের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছে থাকি। তবে এক্ষেত্রেও তাবেয়ীগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন হই না।-আলইনতিকা ফী ফাযাইলিল আইম্মাতিছ ছালাছাতিল ফুকাহা, ইবনে আবদিল বার পৃ. ২৬১, ২৬২, ২৬৭; ফাযাইলু আবী হানীফা, আবুল কাসিম ইবনু আবিল ‘আওয়াম পৃ. ২১-২৩ মাখতূত; আখবারু আবী হানীফা ওয়া আসহাবিহী, আবু আবদুল্লাহ আসসাইমারী (মৃত্যু : ৪৩৬ হি.) পৃ. ১০-১৩; তারীখে বাগদাদ, খতীবে বাগদাদী ১৩/৩৬৮; উকূদূল জুমান, মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ সালিহী পৃ. ১৭২-১৭৭; মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা, মুয়াফফাক আলমাক্কী ১/৭৪-১০০ ‘ফিকহে মুতাওয়ারাছ সংকলন এবং ‘ফিকহে জাদীদ’ আহরণের যে নীতিমালা ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর নিজের ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে তা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর সকল ইমামের সর্বসম্মত নীতি।
সহীহ সনদে ইমাম আবু হানীফা রাহ. থেকে যে নীতিমালা উল্লেখিত হয়েছে তার সারকথা এই-
১. মাসআলার সমাধান যখন কিতাবুল্লাহ্য় পাই তখন সেখান থেকেই সমাধান গ্রহণ করি।
২. সেখানে না পেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ এবং সহীহ হাদীস থেকে গ্রহণ করি, যা নির্ভরযোগ্য রাবীদের মাধ্যমে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। সহীহ হাদীস আমাদের জন্য শিরোধার্য। একে পরিত্যাগ করে অন্য কিছুর শরণাপন্ন হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
৩. এখানেও যদি না পাই তবে সাহাবায়ে কেরামের সিদ্ধান্তের শরণাপন্ন হই।
৪. কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতু রাসূলিল্লাহ ও ইজমায়ে সাহাবার সামনে কিয়াস চলতে পারে না। তবে যে বিষয়ে সাহাবীগণের একাধিক মত রয়েছে সেখানে ইজতিহাদের মাধ্যমে যার মত কিতাব-সুন্নাহ্র অধিক নিকটবর্তী বলে মনে হয় তা-ই গ্রহণ করি।
৫. মাসআলার সমাধান এখানেও পাওয়া না গেলে ইজতিহাদের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছে থাকি। তবে এক্ষেত্রেও তাবেয়ীগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন হই না।
-আলইনতিকা ফী ফাযাইলিল আইম্মাতিছ ছালাছাতিল ফুকাহা, ইবনে আবদিল বার পৃ. ২৬১, ২৬২, ২৬৭; ফাযাইলু আবী হানীফা, আবুল কাসিম ইবনু আবিল ‘আওয়াম পৃ. ২১-২৩ মাখতূত; আখবারু আবী হানীফা ওয়া আসহাবিহী, আবু আবদুল্লাহ আসসাইমারী (মৃত্যু : ৪৩৬ হি.) পৃ. ১০-১৩; তারীখে বাগদাদ, খতীবে বাগদাদী ১৩/৩৬৮; উকূদূল জুমান, মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ সালিহী পৃ. ১৭২-১৭৭; মানাকিবুল ইমাম আবী হানীফা, মুয়াফফাক আলমাক্কী ১/৭৪-১০০ ‘ফিকহে মুতাওয়ারাছ সংকলন এবং ‘ফিকহে জাদীদ’ আহরণের যে নীতিমালা ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর নিজের ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে তা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর সকল ইমামের সর্বসম্মত নীতি।
খোরাসান অঞ্চলে ফিকহে হানাফীর ব্যাপক বিস্তার লক্ষ করে কিছু মানুষ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন এবং ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর গ্রন্থসমূহ জলাশয়ের পানিতে ধুয়ে ফেলতে আরম্ভ করেন।
বিষয়টি খলীফার দরবার পর্যন্ত পৌঁছে গেল। তিনি তাদের তলব করে এ কাজের ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। তারা বললেন, এই ফিকহ হাদীসবিরোধী! মামুন নিজেও ছিলেন হাদীস ও ফিকহের প্রাজ্ঞ পণ্ডিত। যখন সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শুরু হল তখন মামুন নিজেই তাদের সকল অভিযোগ খণ্ডন করে ফিকহে হানাফীর ওই সিদ্ধান্তগুলো হাদীস দ্বারা প্রমাণ করে দিলেন। তারা লা-জবাব হয়ে গেলে মামুন তাদের সাবধান করে দিলেন এবং বললেন, ‘এই ফিকহ যদি প্রকৃতপক্ষেই কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী হত তবে আমরা কখনো তা রাষ্ট্রীয় আইন হিসেবে গ্রহণ করতাম না।’
(মানাকিবুল ইমাম আযম, সদরুল আইম্মা; ইমাম ইবনে মাজাহ আওর ইলমে হাদীস (টীকা) পৃ. ১০)
[...] [...]