লগইন রেজিস্ট্রেশন

ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৭

লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১০ (২:১৯ পূর্বাহ্ণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু।

সুত্রঃ মাসিক মদিনা, জানুয়ারী ২০১০।
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-১
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-২
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৩
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৪
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৫
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৬

হাদীস ও ফেকাহঃ
হালাল-হারাম, আদেশ-নিষেধ, প্রভৃতি নির্ণয়ের মানদন্ড হচ্ছে কুরআনের আয়াত এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস। কোন আয়াতের কি মর্ম, কোন হাদীসখানার দ্বারা কোন হুকুম নির্ধারিত হলো এসব তাৎপর্য উদঘাটনের নামই ফেকাহ। মুহাদ্দিছ বা হাদীস তত্ববিদের কাজ হচ্ছে হাদীস রূপে বর্ণিত বাক্যটির শুদ্ধাশুদ্ধ নির্ণয়। হাদীসখানার মর্মার্থ কি এবং এর দ্বারা কোন কোন হুকুম প্রমাণিত হচ্ছে, তা খুজে বের করার সাধনায় যাঁরা নিয়োজিত হয়েছেন তাদেরকেই ফেকাহবিদ নাবে অভিহীত করা হয়েছে।

ওবায়দুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণনা করেন, আমরা কয়েকজন বিখ্যাত তাবেয়ী মুহাদ্দেছ হযরত আ’মাশের রঃ দরবারে বসা ছিলাম। এক ব্যক্তি এসে মাসআলা জিজ্ঞেস করলো। আ’মাশ কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর জবাব দিলেন- মাসআলাটির জবাব আমার জানা নাই। আবু হানীফাও রঃ সেই মজলিসে বসা ছিলেন। তাঁর প্রতি লক্ষ্য করে আমাষ বললেন, আবু হানিফা! তোমার জানা থাকলে সমাধানটি বলে দাও। আবু হানীফা রঃ জিজ্ঞাসিত বিষয়টির একটি চমৎকার জবাব দিয়ে দিলেন। জবাবটি আমাশের খুব পছন্দ হলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, জবাবটি তুমি কোন হাদীসের ভিত্তিতে দিলে? আবু হানীফা বললেন, আপনার কাছ থেকে শিক্ষা করা অমুক হাদীসের ভিত্তিতে। শুনে আ’মাশ মন্তব্য করলেন, আমরা (মুহাদ্দেসরা) হচ্ছি যারা ঔষধি দ্রব্য নিয়ে নাড়াচাড় করে তাদের ন্যায় (আত্তার বিশেষ)। আর তোমরা হলে ঐ ঔষধ তৈরি করে এবং রোগ নির্ণয় করে রোগীকে তা সেবন করতে দেয়।

অনুরূপ আর একটি মাসআলা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিকে জানাযার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রী-লোকের পক্ষে তার সহগামী হওয়া হাদীসের সুস্পষ্ট নির্দেশ অনুযায়ী নিষিদ্ধ। আবু দাউদ শরীফে এ মর্মে বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু কূফার এ সম্ভ্রান্ত সৈয়দ পরিবারের একটি কিশোর মারা গেলে শোকে তার মা অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মৃতদেহ জানাযার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় শোকে কাতর মাতাও সঙ্গে রওয়ানা হলেন। হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁকে হাজার বারণ করার পরও তিনি মানলেন না। বরং এক পর্যায়ে জেদের বশবর্তী হয়ে তিনি কছম খেয়ে বসলেন যে, তিনি পুত্রের জানাযা পড়বেনই। অপর দিকে ছেলের পিতা স্ত্রীর এই অন্যায় জেদ দেখে বলে বসলেন যে, এখান থেকে ফিরে না গেলে তুমি তালাক হয়ে যাবে। ফলে মৃতদেহ নিয়ে সেখানেই সকলে থেমে গেলেন। বিষয়টা কিভাবে মিমাংসা করা যায়, এ নিয়ে সকলেই ভাবলেন, কিন্তু কোন সমাধান খুজে পাওয়া গেল না। নিরূপায় হয়ে ইমাম আবু হানীফাকে ডাকা হলো। তিনি এসে ছেলের মাকে বললেন, আপনি এখানে দাড়িয়েই ছেলের জানাযা পড়ুন এবং ফিরে যান। কেননা, হাদীস শরীফে স্ত্রীলোকের জন্য মৃতের অনুগমন করতে নিষেধ করা হয়েছে। জানাযা পড়তে নিয়েধ করা হয়নি। এখানে জানাযা পড়ে নিলে আপনার কসম পুরা হয়ে যাবে। আর এখান থেকে ফিরে গেলে আপনার স্বামী কর্তৃক প্রদত্ত তালাকও কার্যকর হবেনা।

উক্ত স্ত্রীলোক ইমাম সাহেবের সমাধান মেনে নিলেন এবং সেখানেই (একা একা) জানাযা আদায় করে বাড়ী ফিরে গেলেন। জানাযার সাথে কুফার বিশিষ্ট আলিমগণের অনেকেই উপস্হিত ছিলেন। সমস্যাটি নিয়ে সবাই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। ইমাম আবু হানীফার এই তাৎক্ষনিক সমাধান শুনে হাদীস তত্ববিদ ইবনে শাবরা রঃ মন্তব্য করেছিলেন, সম্ভবত কোন মাতাই আবু হানীফা রঃ এর ন্যায় মেধা সম্পন্ন সন্তান প্রসব করতে সক্ষম হবেননা।
প্রকৃত প্রস্তাবে হাদিসের মর্মার্থ উদ্ধার করে তার আলোকে উদ্ভৃত সমস্যার সমাধান বের করার নামই তো ফেকাহ। ফেকাহবিদগণকে হাদিসের মতন (মুলপাঠ) যেমন জানতে হয়ে, তেমনি এর অন্তর্নিহীত অর্থ সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান লাভ করতে হয়। ইমাম তিরমিযীর রঃ মন্তব্য হচ্ছে, হাদিসের প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে ফেকাহবিদগণই সর্বাধিক অবগত হয়ে থাকেন।

হিজরী চতুর্থ শতাব্দির প্রখ্যাত মুহাদ্দেস ইমাম আবু বকর মুহম্মদ ইবনে ইসহাক রঃ তাঁর রচিত ‘মাআনিউল-আখরার’ নামক গ্রন্হে লিখেছেন, শরীয়ত বিশেষজ্ঞ কেবলমাত্র ফেকাহবিদগণকেই বলা চলে। অন্যান্য এলেম বিশেষ একটি বিষয় কেন্দ্রীক হয়ে থাকে। যেমন তফসীরবিদগণ শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন। মুহাদ্দেসগণের চর্চা প্রধাণতঃ হাদিসের শব্দ, সনদ ও মতনের মধ্যেই আবর্তিত হয়। কিন্তু একজন ফেকাহবিদ অত্যাবশ্যকীয়ভাবেই হাদিস-তফসীরের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ হওয়ার পাশাপাশি আরো অনেকগুলি জাগতিক জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। সম্ভবতঃএ কারণেই কুরআন এবং হাদিসের প্রকৃত মর্ম অনুধাবনের জন্য ফেকাহ আয়ত্ব করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

(চলবে।)

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২৩৬ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)