জ্ঞান, জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানদানের মাহাত্ম্য-১
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ বুধবার, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১০ (১১:৫১ অপরাহ্ণ)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
সুত্রঃ এহইয়াউ উলুমুদ্দিন (১ম খন্ড)। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। মদিনা পাবলিকেশন্স।
কোরআন মজীদে জ্ঞানের মাহাত্ম্য সম্পর্কিত আয়াতসমুহ এইঃ
“ফেরেশতাকুল ও মধ্যপন্হী আলেমগণ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই।”
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম পর্যায়ে নিজের সত্তা, দ্বিতীয় পর্যায়ে ফেরেশতাকুল এবং তৃতীয় পর্যায়ে জ্ঞানীদের কথা উল্লেখ করেছেন। জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম্য ও মৌলিকতা বুঝার জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ
“যারা বিশ্বাসী এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের মর্তবা অনেক উচু করে দেন।”
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন- সাধারণ মুমিনদের মর্তবা অপেক্ষা জ্ঞানী মুমিনদের মর্তবা সাতশ’র বেশী হবে এবং প্রত্যেক দু’স্তরের দুরুত্ব হবে পাঁচশ বছরের সমান।
“জিজ্ঞেস করুন, যারা জ্ঞানী এবং জ্ঞানহীন, তারা কি সমান হতে পারে?।”
“বান্দাদের মধ্যে একমাত্র আলেমরাই আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে।”
“বলে দিন, আল্লাহ এবং কিতাবের জ্ঞানে জ্ঞানীরা আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষ্যদাতারূপে যথেষ্ট।”
“যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিলো, সে বললোঃ আমি তাকে এনে দিচ্ছি।”
এখানে ব্যক্ত করা হয়েছে সে লোকটি জ্ঞানের বলেই রানী বিলকিসের সিংহাসন এনে দিতে সক্ষম হয়েছিলো।
“যারা জ্ঞানী ছিল, তারা বললোঃ তোমাদের ধ্বংস হোক, আল্লাহ প্রদত্ত কল্যানই বিশ্বাসী ও সৎকর্মীর জন্য উত্তম।”
এতে বলা হয়েছে পরকালে মাহাত্ম্য শিক্ষার মাধ্যমে জানা যায়।
“আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ননা করি। এগুলো কেবল তারাই বুঝে, যারা জ্ঞানী।”
“যদি তার বিষয়টি রসুলের কাছে এবং গন্যমান্যদের কাছে উপস্হাপন করত, তবে তাদের মধ্যে যারা জ্ঞানান্বেষী, তার জেনে নিতে পারত।”
এখানে আল্লাহ তায়ালা পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে তাঁর নিজের বিধান শিক্ষিতদের ইজতিহাদের উপর ন্যস্ত করেছেন। আল্লাহর বিধান জানার ব্যপারে তাদের মর্তবাকে পয়গাম্বরগণের মর্তবার সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন।
“হে বনী আদম! আমি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্হান আবৃত করে, আর নাযিল করেছি পশম এবং পরহেযগারীসুলভ পোশাক, এটা সর্বোত্তম।”
এ আয়াতের তফসীরে কেউ কেউ বলেনঃ এখানে পোশাকের অর্থ শিক্ষা, পশমের অর্থ বিশ্বাস এবং পরহেযগারীসুলভ পোশাক বলে লজ্জা বুঝানো হয়েছে।
“আমি তাদের কাছে কিতাব পৌছে দিয়েছি, যা জ্ঞান সহকারে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছি।”
“আমি সজ্ঞানে তাদের সকল অবস্হা বর্ণনা করবো।”
“বরং এগুলো কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াত, যা জ্ঞান প্রাপ্তদের বক্ষে গচ্ছিত।”
জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ
“আল্লাহ তায়ালা যার কল্যান চান, তাকে ধর্মের প্রজ্ঞা দান করেন এবং তার অন্তরে সৎপথ ইলহাম দান করেন।”
“জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ পয়গাম্বরগণের উত্তরাধীকারী।”
বলা বাহুল্য, নবুয়তের চেয়ে বড় কোন মর্তবা নেই। কাজেই এ মর্তবার উত্তরাধীকারী হওয়ার চেয়ে বড় আর কোন গৌরবও নেই।” তিনি আরও বলেনঃ জ্ঞানী ব্যক্তির জন্যে আকাশ ও পৃথিবীস্তিত সবকিছু মাগফেরাত কামনা করে।” সুতরাং এর চেয়ে বড় আর কি পদমর্যাদা হবে, যার কারনে আকাশ ও পৃথিবীর ফেরেশতাকুল মাগফেরাত দোয়ায় মশগুল থাকবে? জ্ঞানী ব্যক্তি নিজের মধ্যে ব্যাপৃত থাকে, আর ফেরেশতারা তার জন্য মাগফেরাত প্রার্থনায় নিরত থাকেন। “রসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ প্রজ্ঞা সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির মাহাত্ম্য বৃদ্ধি করে এবং গোলামের মর্যাদাও এত উঁচু করে যে, তাকে রাজা-বাদশাহদের আসনে বসিয়ে দেয়।” এ হাদীসে তিনি দুনিয়াতে জ্ঞানের ফলাফল বর্ণনা করেছেন। বলাবাহুল্য, আখেরাত দুনিয়ার তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও স্হায়ী।
“দুটি স্বভাব মোনাফেকের মধ্যে পাওয়া যায় না। ১) সুন্দর পথ পদর্শন এবং ২) ধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান।”
কোন কোন সমসাময়িক ধর্ম জ্ঞানীর নেফাক (কপটতা) দেখে এ হাদীস সম্পর্কে সন্দেহ করা উচিত নয়। কেননা, “ফেকাহ” শব্দ বলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে জ্ঞান ও প্রজ্ঞাই বুঝাননি, যা তোমারা মনে কর; রবং এ শব্দের অর্থ পরে বর্ণিত হবে। ফেকাহবিদদের সর্বনিম্ন স্তর হল আখেরাতকে দুনিয়া অপেক্ষা উত্তম বলে বিশ্বাস করা। এ বিশ্বাস ফেকাহবিদদের মধ্যে সুষ্ঠু ও প্রবল হযে গেলে সে নেফাক ও নাম-যশের মোহ থেকে মুক্ত হযে যায়।
(চলবে… … …)
আমার প্রিয় লেখক ।
@হাফিজ ভাই,
আজকাল আলিমদের উপর থেকে আমাদের বিশ্বাস উঠে গেছে। অথচ উনাদের মর্তবা আমাদের কত উপরে তা আমরা অনেকেই জানিনা। এ উদ্দেশ্যেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
@দ্য মুসলিম, সবসময়ই ভালোর সাথে খারাপ থাকে । বাদশাহ আকবরের সময় আবুল ফজল ছিল যে “দ্বিনে ইলাহি” প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আকবরকে পরামর্শ দিয়েছিল , আর এর সাথে মোজাদ্দেদে আলফেসানি (রহ:) ও ছিলেন , যিনি চরম বিপদের মুহুর্তেও ইসলামের আদর্শ পরিত্যাগ করেননি , সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কারাবরন করেছিলেন ।
জ্ঞানদান করা সহজ কিন্ত জ্ঞানার্জন সহজ নয়।
@khan,
পুরো ব্যপারটাই আপেক্ষিক। ব্যক্তির নিজের মন-মানসিকতা, পরিবেশ এবং সামাজিক জীবনের নির্ভর করে ব্যপারটা। তবে সাধারণভাবে আপনার কথা সত্যি।
@khan, জ্বী কথাটা সত্য । এই দেখুন না কত সহজেই আমরা ব্লগে আমাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে কথা বলি , জ্ঞান দান করি । অথচ আগেকার আলেমগন দিনের পর দিন অমানুষিক পরিশ্রম করে এলেম এবং আমলে নিজেদের সুশোভিত করে গেছেন । আমরা শুধু এলেমের কথাই বলি , কিন্তু কোনো সময় নিজেকে প্রশ্ন করি না এগুলোর ওপর আমল করছি কিনা । অথচ আগেকার আলেমগন কোনো একটি এলেম নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করার আগে নতুন কিছু শিখতে চাইতেন না । তাদের সাথে আমরা তো দুরের কথা , এখনকার আলেমেদের মাঝেও আকাশ পাতাল পার্থক্য ।
[...] [...]