জ্ঞান, জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানদানের মাহাত্ম্য-২
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ রবিবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১০ (৮:৩৬ অপরাহ্ণ)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
সুত্রঃ এহইয়াউ উলুমুদ্দিন (১ম খন্ড)। ইমাম গাজ্জালী (রহঃ)
অনুবাদঃ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান। মদিনা পাবলিকেশন্স
জ্ঞান, জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানদানের মাহাত্ম্য-১
জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও ঈমানদার সেই জ্ঞানী ব্যক্তি, যার কাছে মানুষ প্রয়োজন নিয়ে আগমন করলে সে তাদের উপকার করে এবং মানুষ তার প্রতি বিমুখতা প্রদর্শন করলে সে নিজেকে বিমুখ করে দেয়।”
তিনি আরও বলেছেনঃ “ঈমান নারাভরণ। তার পোশাক হচ্ছে তাকওয়া (খাদাভীতি), তার মজ্জা হচ্ছে লজ্জা এবং ফল হচ্ছে জ্ঞান।”
এক হাদীসে আছেঃ “মানুষের মধ্যে নবুওয়াতের মর্তবার নিকটতম হচ্ছে জ্ঞানী ও জেহাদকারী সম্প্রদায়।” জ্ঞানী সম্প্রদায় এই কারনে যে, তারা মানুষকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আনিত কথাবার্তা বলে এবং জেহাদকারীগণ এ কারণে যে, তারা পয়গাম্বরগণের আনীত শরীয়তের জন্যে অশ্বের সাহায্যে জেহাদ করে।
অন্য হাদীসে আছে ঃ “একটি গোষ্ঠীর মরে যাওয়া একজন জ্ঞানী ব্যক্তির মরে যাওয়া অপেক্ষা সহজতর।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“মানুষ স্বর্ণ ও রৌপ্যের খনির মত খনি বিশেষ। অতএব যারা জাহেলিয়াতের যুগে শ্রেষ্ঠ ছিল, তারা ইসলামের যুগেও শ্রেষ্ঠ, যদি তারা দ্বীনের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়।”
এক হাদীসে আছে “কেয়ামতের দিন জ্ঞানীদের লেখার কালি শহীদদের রক্তের সাথে ওজন করা হবে।”
আরও আছেঃ “আমার উম্মতের যে ব্যক্তি চল্লিশটি হাদীছ মুখস্ত করবে, সে কিয়ামতের দিন ফেকাহবিদ ও জ্ঞানীরূপে আল্লাহ তায়ালার সাক্ষাৎ লাভ করবে।”
অন্যত্র আছেঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার দ্বীন সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করবে, আল্লাহ তাকে দুঃখ থেকে বাঁচাবেন এবং তাকে ধারণাতীত জায়গা থেকে জীবনোপকরণ সরবরাহ করবেন।”
আরও বলা হয়েছেঃ “আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবনাহীম (আঃ) এর প্রতি এই মর্মে ওহী পাঠালেন, “হে ইবরাহীম! আমি মহাজ্ঞানী এবং প্রত্যেক জ্ঞানীকে পছন্দ করি”।”
আরও আছেঃ “আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেনীর লোক রয়েছে, যারা ঠিক হয়ে গেলে সকল মানুষ ঠিক হয়ে যাবে এর যার বিগড়ে গেলে সকল মানুষ বিগড়ে যায়। তাদের এক শ্রেনী হচ্ছে শাসক এবং অপর শ্রেনী হচ্ছে শাসক এবং অপর শ্রেণী ফেকাহবিদ অর্থাৎ, দ্বীনী এলমে সমৃদ্ধ ব্যক্তিবর্গ।”
অন্য হাদীসে আছেঃ “আল্লাহর নৈকট্যশারী করে এমন জ্ঞান বেশী পরিমাণে না থাকার দিন যদি আমার উপর আসে, তবে সেদিনের সূর্যোদয় যে আমার ভাগ্যে না জুটে।”
এবাদত ও শাহাদাতের উপন জ্ঞানীকে শ্রেষ্ঠত্বদান প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“জ্ঞানী ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব এবাদতকারীর উপর এমনি, যেমন আমার শ্রেষ্ঠত্ব সাহাবীদের উপর।”
লক্ষনীয়, এ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এলেমকে কেমন করে নবুওয়াতের স্তরে রেখেছেন এবং জ্ঞানহীন কর্মের মর্তবা কেমন করে হ্রাস করেছেন। অথচ এবাদতকারী সদাসর্বদা যে এবাদত করে, তার জ্ঞান সে অবশ্যই রাখে। এ জ্ঞান না হলে এবাদত হবে না।
রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“আলেম ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব এবাদতকারীর উপর তেমনি, যেমন চতুর্দশীর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব তারকারাজির উপর থাকে হয়ে থাকে।”
তিনি আরও বলেছেনঃ “কেয়ামতের দিন তিন শ্রেনীর লোক সুপারিশ করবে- পয়গাম্বরগণ, অতঃপর জ্ঞানী লোকগণ, অতঃপর শহীদগণ।”
এ হাদীস দ্বারা জ্ঞানের এমন মাহাত্ম প্রমাণিত হয় যে, এটা নবুওয়তের পরে এবং শাহাদাতের অগ্রে। অথচ শাহাদাতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বহু রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ “আল্লাহ তায়ালার এবাদত কোন কিছুর মাধ্যমে ততটুকু সমৃদ্ধ হয় না, যতটুকু দ্বীনের জ্ঞানের মাধ্যমে হয়। একজন দ্বীনের জ্ঞানী ব্যক্তি শয়তানের জন্য হাজার এবাদতকারী অপেক্ষা কঠোর হয়ে থাকে । প্রত্যেক বস্তুর একটু স্তম্ভ আছে। এ দ্বীনের স্তম্ভ হচ্ছে ফেকাহ (দ্বীনি জ্ঞান)।” আরও বলা হয়েছেঃ ” ঈমানদার আলেম ঈমানদার আবেদ অপেক্ষা সত্তরগুন শ্রেষ্ঠ।”
অন্য এক হাদীসে আছে “তোমরা এমন যুগে রয়েছ, যখন জ্ঞানী ব্যক্তির সংখ্যা অধিক। এমন যুগে জ্ঞান লাভ করা অপেক্ষা আমল করা উত্তম। অতি সত্বর এমন যুগ আসবে, যখন জ্ঞানীর সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং বক্তা হবে অধিক। দাতা কম হবে এবং ভিক্ষুক বেশী হবে। তখন জ্ঞান অর্জন হবে আমল অপেক্ষা উত্তম।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “জ্ঞানী ব্যক্তি ও এবাদতকারীর মধ্যে একশ’ স্তরের ব্যবধান রয়েছে! প্রত্যেক দু’স্তরের মাঝখানে এতটুকু দুরত্ব রয়েছে, যতটকু একটি দ্রুতগামী ঘোড়া সত্তর বছরে অতিক্রম করতে পারবে।।”
আরেক হাদীসে বর্ণিত আছে, “সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেনঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন আমলটি উত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ পাক সম্পর্কিত জ্ঞান। সাহাবীগণ আরজ করলেনঃ আমরা উত্তম আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছি। তিনি বললেনঃ আল্লাহ পাক সম্পর্কিত জ্ঞান। আবার বলা হলঃ আমরা আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করছি, আপনি এলেম সম্পর্কে বলেছেন ! তিনি বললেনঃ এলেম সমন্বয়ে অল্প আমল উপকারী হয় এবং মূর্খতার সমন্বয়ে অধিক আমলও নিস্ফল হযে য়ায়। “
আর এক হাদীসে আছে, “কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদেরকে উঠাবেন। অতঃপর আলেমদেরকে উঠাবেন এবং তাদেরকে বলবেনঃ “হে জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ! আমি তোমাদের মধ্যে যে জ্ঞান রেখেছিলাম, তা তোমাদের কিছু জেনেই রেখেছিলাম। আমি তোমাদের মধ্যে আমার জ্ঞান এজন্য রাখিনি যে, তোমাদেরকে শাস্তি দেব। যাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করলাম।”। “মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমরাও এমন আনজাম কামনা করি।
(চলবে… … …)