ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-১০
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১০ (১২:১৫ পূর্বাহ্ণ)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু।
সুত্রঃ মাসিক মদিনা, জানুয়ারী ২০১০।
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-১
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-২
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৩
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৪
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৫
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৬
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৭
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৮
ইলমে ফেকাহর সুচনাকালঃ প্রসঙ্গ ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-৯
শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ
হাফেজ শামসুদ্দীন যাহাবী রঃ লিখেছেন- ইমাম লাইছ ইবনে সাআদ রঃ বলেন, আমি ইমাম আজম আবু হানীফা রঃ সুখ্যাতি সম্পর্কে অবহিত ছিলাম। ফলে তাঁর সাথে সাক্ষাতের আকাঙ্খা খুবই প্রবল ছিল। সৌভাগ্যক্রমে মক্কা মোয়াজ্জমায় আমার সে আকাঙ্খা পূর্ণ হয়। একদিন দেখতে পেলাম, অগণিত লোক এক ব্যক্তিকে ঘিরে রয়েছে। এদের মধ্যে এক ব্যক্তি বেশ উচ্চৈস্বরে বলছিল- ইয়া আবু হানীফা রঃ। শুনে মনে মনে বললাম, ভীড়ের ভিতরে উপবিষ্ট এই ব্যক্তিই আমার দীর্ঘ আকাঙ্খার ধন ইমাম আবু হানীফা। (মানাকেবে আবু হানীফা, যাহাবী)
ইমাম লাইছ ইবনে সাআদ রঃ এর এ সাক্ষাতকারটি ছিল নিতান্তই আকষ্মিক। এরপর একবার ইমাম লাইছ ইমাম আবু হানীফা রঃ সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যেই সফর করেন। এ সম্পর্কে ফেকাহতত্ত্ববিদ আবদুর রহমান ইবনুল কাছেম রঃ বর্ণনা করেন, আমি ইমাম লাইছ ইবনে সাআদের মুখে শুনেছি, তিনি বলতেন, একবার আমি জানতে পারলাম যে, এ বছর ইমাম আবু হানীফা রঃ হজের উদ্দেশ্যে আসছেন। আমি শুধুমাত্র ইমাম আবু হানীফার রঃ সাথে সাক্ষাত করার লক্ষ্য নিয়েই এ বছর হজের সফরে যাই। মক্কার তাঁর সাথে সাক্ষাত হয়। আমি তাঁর নিকট থেকে অনেকগুলি জটিল বিষয়ের মিমাংসা বিশেষতঃ কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা বা ভুলক্রমে হত্যার শাস্তি সম্পর্কিত মাসআলারও মীমাংসা অবগত হই। (সদরুল=আয়েম্মা ২য় খন্ড)
বিভিন্ন জটিল বিষয় অবগত হওয়ার লক্ষ্যে শুধুমাত্র ইমাম লাইস ইবনে সাআদ নয়, তাঁর ন্যায় আরো অগণিত জ্ঞানীগুনী ব্যক্তি সর্বক্ষণ ইমাম আবু হানীফা রঃ কে ঘিরে থাকতেন। ইতিপূর্বে ইমাম লাইছ ইবনে সাআদের যবানীই তা জানা গেছে।
ইমাম আবু আসেম রঃ বর্ণনা করেন- আমরা মক্কায় ইমাম আজম আবু হানীফা রঃ সাহচর্য্যে থাকতাম। সব সময় তাঁর নিকট হাদিস এবং ফেকাহ বিশেষজ্ঞ আলেমগণ ভীড় লেগে থাকতো। কোন কোন সময় এই ভীড় সহ্য সীমার বাইরে চলে যেত। কোন কোন সময় এই ভীড় সহ্য সীমার বাইরে চলে যেত। অনেক সময় ইমাম সাহেব লোকজনের জটলা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করতেন। (এলাউস সুনান, ভূমিকা অংশ)
হাদিস বিশেষজ্ঞ ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক বলেন, ইমাম আবু হানীফা রঃ নিকট যারা সমবেত হতেন, তারা ছিলেন, সে যুগের শীর্ষ স্হানীয় হাদিস বিশেষজ্ঞ এবং ফেকাহর ইমাম। (সদরুল আইম্মাহ)
প্রথম আব্বাসী খলীফা আবুল আব্বাস সাফফাহর পূর্ণ শাসন আমল (১৩২-১৩৬ হি) চারবছর নয় মাস কাল ইমাম আবু হানীফা রঃ মক্কা শরীফে স্বেচ্ছনির্বাসনে কাটান। কারণ, বনী-উমাইয়ার শাসন কর্তৃত্বের পতন ঘটানোর আন্দোলনে ইমাম আবু হানীফা রঃ প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। কিন্তু ইমাম সাহেব উমাইয়্যা বংশের পতনের পর আব্বাসিয়দের শাসন-ব্যবস্হা চাইতেন না। তাঁর মতানুসারী সে যুগের ওলামা-মাশায়েখ গণ খোলাফায়ে-রাশেদীনের শাসন-ব্যবস্হার পুনঃ প্রতিষ্ঠা চাইতেন। কিন্তু আব্বাসীয়দের প্রথম শাসক আবু আব্বাস অকল্পনীয় নির্মমতার আশ্রয় গ্রহণ ওলামা-মাশায়েখগণ এবং ধর্মপ্রাণ জনগনের সে আকাঙ্খা নস্যাত করে দেয়। এই পরিস্হিতিতে ইমাম সাহেবের পক্ষে কূফায় অবস্হান মোটেও নিরাপদ ছিল না। শুভাকাঙ্খীদের পরামর্শে ইমাম সাহেব তখন মক্কা শরীফ চলে যান এবং আবুল আব্বাসের মৃত্যুকালে (যিলহজ্জ ১৩৬) পর্যন্ত মক্কাশরীফেই অবস্হান করেন। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মক্কার পবিত্র মসজিদে ইমাম আবু হানীফা রঃ নিয়মিত দরছ দিতেন। হাফেজ যাহাবীর রঃ বর্ণনা অনুযায়ী তখনকার দিনে ইমাম সাহেবের দরছে যেমন হাদিসের ছাত্রগণ দলে দলে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলেমগণও বিপুল সংখ্যায় সমবেত হতেন।
(চলবে।)