প্রকৃত আলেমের পরিচয়। (হাদিস ও সাহাবাগণের জীবনের পরিচালনার ভিত্তিতে)- ১
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১০ (৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ)
সুত্রঃ এহইয়াউ উলুমুদ্দিন।
মুলঃ ইমাম গাজ্জালী রঃ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
(মুল বই থেকে হুবহু না তুলে দিয়ে, কিছু অংশের উদৃতি দেয়া হলো।)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কেয়ামতে সকল মানুষের তুলনায় কঠোর আযাব সেই আলেমের হবে, যাকে আল্লাহ তায়ালা এলেম দ্বারা কোন উপকার দেননি। তিনি আরও বলেনঃ এলেম অনুযায়ী আমল না করা পর্যন্ত মানুষ আলেম হয়না।
অন্য এক হাদিসে আছেঃ এলেম দুই প্রকারঃ এক মৌখিক এলেম। এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা মানুষকে জব্দ করবেন। দুই, অন্তরস্হিত এলেম। এটাই উপকারী এলেম।
আরও বলেন- শেষ যমানায় এবাদতকারী মুর্খ হবে এবং আলেম পাপাচারী হবে। আরও বলেনঃ আলেমদের সাথে গর্ব করা, বোকাদের সাথে তর্ক করা এবং মানুষের দৃষ্টি নিজের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে এলেম শিক্ষা করো না। যে এরূপ উদ্দেশ্যে এলেম শিখবে, সে দোযখে যাবে।
আরও বলেনঃ যেব্যক্তি নিজের এলেম গোপন করবে, আল্লাহ আগুনের লাগাম পরাবেন।
আরও বলেনঃ অবশ্যই আমি দাজ্জালকে ততটুকু ভয় করিনা, যতটুকু দাজ্জাল নয় এমন ব্যক্তিকে ভয করি। প্রশ্ন করা হলোঃ সে ব্যক্তি কে? তিনি বললেনঃ আমি পথভ্রষ্ট কারী শাসকদেরকে ভয় করি। আরও বলেনঃ যেব্যক্তি এলেমে বেশী এবং হেদায়াতে কম, সে আল্লাহ তায়ালার থেকে বেশী দুরে।
হযরত ওমর রাঃ বলেন এ উম্মতের জন্যে আমি মোনাফেক আলেমকে অধিক ভয় করি। প্রশ্ন করা হলোঃ মোনাফেক আলেম হবে কিরূপ? তিনি বললেনঃ যে মুখে মুখে আলেম কিন্তু অন্তর ও আমলের দিক দিয়ে জাহেল, সেই মোনাফেক আলেম।
হযরত হাসান বসরী রাঃ বলেনঃ তুমি তাদের মতো হয়ো না, যারা আলেম ও দার্শনিকদের মতো জ্ঞান রাখে; কিন্তু মুলত আমলে মুর্খদের সমান।
হযরত হাসান বসরী রঃ আরও বলেনঃ আলেমের শাস্তি হলো অন্তরের মৃত্যু। অন্তরের মৃত্যু হচ্ছে আখেরাতের আমল দ্বারা দুনিয়া কামনা করা।
ইয়াহইয়া ইবনে মুয়ায রাজী বলেনঃ এলেম ও জ্ঞান দ্বারা যখন দুনিয়া কামনা করা হয়, তখন তার জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়।
আলেমদের আড়ম্বরপ্রীতির ক্ষতি ধন-সম্পদের চেয়ে বেশী।
আবু সোলায়মান দুররানী রঃ বলেনঃ মানুষ যখন হাদীস তলব করে অথবা বিবাহ করে অথবা জীবিকার জন্যে সফর করে, তখন সে দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। হাদীস তলবের মধ্যে তাদের উদ্দেশ্য থাকে উচ্চ সনদ লাভ অথবা এমন হাদীস তলব করা, যার প্রয়োজন আখেরাতে নেই।
হযরত ঈসা আঃ বলেনঃ যে ব্যক্তির গতি আখেরাতের দিকে এবং সে দুনিয়ার পথে ধাবমান হয়, সে আলেম হবে কিরূপে?
সালেহ ইবনে হাসসান নফরী বলেনঃ আমি অনেক বড় বড় ওস্তাদের সাথে সাক্ষাত করেছি। তাঁরা সকলেই হাদীসের পাপাচারী আলেম থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে শিক্ষা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়, কেউ যদি সেই শিক্ষা দুনিয়ার অর্থ সম্পদ পাওয়ার উদ্দেশ্যে অন্বেষন করে, তবে সে কেয়ামতের দিন জান্নাতের গন্ধও পাবেনা।
দুনিয়ার আলেমদের সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ তায়ালা কিতাবপ্রাপ্তদের কাছ থেকে এই মর্মে অঙ্গীকার নিলেন, তারা এই কিতাব মানুষের সামনে সুষ্পষ্টরূপে বর্ণনা করে দেবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা এই অঙ্গীকার পশ্চাতে নিক্ষেপ করল এবং এর বিনিময়ে সামান্য দুনিয়া ক্রয় করে নিল।
আখেরাতের আলেম সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ কিতাবধারীদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যে আল্লাহর প্রতি, তোমাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি এবং তাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করে আল্লাহর জন্যে বিনয়াবনত হয়ে তারা আল্লাহর আয়াতসমুহকে নিকৃষ্ট দুনিয়ার বিনিময়ে বিক্রয় করেনা। তাদের জন্যই তাদের পালনকর্তার কাছে পুরস্কার রয়েছে।
আবু দারদা রাঃ এর রেওয়ায়েতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা জনৈক পয়গাম্বরের কাছে এই মর্মে ওহী পাঠালেন, যারা দীন ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে ফেকাহবিদ হয়, আমল না করার জন্যে এলেম শেখে, আখেরাতের আমল দ্বারা দুনিয়া তলব করে, মানুষের দৃষ্টিতে ছাগলের চামড়া পরিধান করে এবং তাদের অন্তর ব্যাঘ্রের মত, মুখ মধুর চেয়ে মিষ্ট, অন্তর ইলুয়ার চেয়ে তিক্ত, আমাকেই প্রতারণা করে এবং আমার সাথেই ঠাট্টা করে, তুমি তাদেরকে বলে দাও, আমি তাদের জন্য এমন অনর্থ সৃষ্টি করব, যা সহনশীল ব্যক্তিও সইতে পারবেনা।
চলবে।
তিনি আরও বলেনঃ এলেম অনুযায়ী আমল না করা পর্যন্ত মানুষ আলেম হয়না।
বর্তমান যুগ হলো আমলবিহীন এলেমের যুগ । আমরা শুধু ইসলাম বিষয়ে তর্ক , দলীল এগুলো পছন্দ করি । কিন্তু আমলের ব্যাপার আসলেই আমাদের আর খবর থাকে না । ঘন্টার পর ঘন্টা ইসলামিক বিষয়ে আলোচনা করার পর দেখা যায় ৫ ওয়াক্তের মধ্যে ৩ ওয়াক্ত নামাজই পড়া হয় নাই ।
@হাফিজ,
সহমত। এলেমের পূর্ণতা তখনই আসে যখন তা আমল করা হয়। আমল ছাড়া এলেম অর্জনকারীগণ মুর্খদের চাইতে দুর্ভাগা। মুর্খদের তুলনায় এধরণের আলেমগণের শাস্তি ৭ বলা হয়েছে। তাই যে কোন আলিমের রেফারেন্স দেয়ার আগে আমাদের প্রথমে দেখা উচিত উনি সত্যিকারের আলিম কিনা। ধন্যবাদ।
@দ্য মুসলিম,
তাই যে কোন আলিমের রেফারেন্স দেয়ার আগে আমাদের প্রথমে দেখা উচিত উনি সত্যিকারের আলিম কিনা। ধন্যবাদ।
সহমত । অনেকের কাছে এখন এলেম অর্জন করা ফ্যাশন এ পরিনত হয়েছে । আমি এরকম অনেককে জানি ইসলাম বিষয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করে কাটিয়ে দ্যায় কিন্তু ৫ ওয়াক্ত নামাজই পড়ে না ।
অবশ্য কারো যদি অনুশোচনা থাকে এবং চেষ্টা করতে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা ।
সুন্দর লেখা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। চালিয়ে যান ইনশাআল্লাহ।
@দেশী৪৩২, ইনশাআল্লাহ। দোয়া করবেন। ধন্যবাদ।