যেমন ছিলেন শিক্ষক, তেমন ছিলেন ছাত্র।
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ বৃহস্পতিবার, মার্চ ৪, ২০১০ (১০:০৫ অপরাহ্ণ)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সুত্রঃ এহইয়াউ উলুমুদ্দিন।
মুলঃ ইমাম গাজ্জালী রঃ
বর্ণিত আছে, একদিন শাকীক বলখী রঃ হাতেমকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কতদিন আমার সাথে রয়েছ? হাতেম বললেনঃ তেত্রিশ বছর ধরে।
শাকীক রঃ বললেনঃ এ সময়ের মধ্যে তুমি আমার কাছ থেকে কি শিখলে?
হাতেম বললেনঃ আমি আটটি মাসআলা শিক্ষা করেছি।
শাকীক রঃ বললেনঃ ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন। আমার সময় তোমার জন্য বিনষ্ট হয়ে গেছে। তুমি মাত্র আটটি বিষয় শিখলে?
হাতেম বললেনঃ ওস্তাদ, আমি বেশী শিখিনি। মিথ্যা বলা আমি পছন্দ করি না।
শাকীক রঃ বললেনঃ আচ্ছা, বল তো সে আটটি বিষয় কি, যা তুমি শিখেছ?
হাতেম বললেনঃ
প্রথম,
আমি, মানুষকে দেখলাম, প্রত্যেকের একটি প্রিয় বস্তু থাকে যা কবর পর্যন্ত তার সাথে থাকে। যখন সে কবরে পৌছে যায়, তখন সে প্রিয় বস্তুটি থেকে আলাদা হয়ে যায়। তাই আমি সৎকর্মকে আমার প্রিয় বস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করেছি, যাতে আমি কবরে গেলে আমার প্রিয় বস্তুও আমার সাথে থাকে।
শাকীক রঃ বললেনঃ তুমি চমৎকার শিখেছ। এখন বাকী সাতটি বল।
হাতেম বললেনঃ
দ্বিতীয়,
আমি আল্লাহ তায়ালার এই উক্তি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেছিঃ এবং কেউ তার পালনকর্তার সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করে এবং নিজেকে খেয়াল-খুশি থেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার ঠিকানা।
আমি বুঝেছি, আল্লাহ তাআলার এ উক্তি যথার্থ। তাই আমি খেয়াল-খুশি দুর করার জন্যে নিজেকে শ্রমে নিযুক্ত করেছি। ফলে আমি আল্লাহর আনুগত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি।
তৃতীয়,
দুনিয়াতে দেখলাম, যার কাছে যে মুল্যবান বস্তু রয়েছে, তাকে সে হেফাজতে তুলে রাখে।
এরপর আমি আল্লাহ তায়ালাকে বলতে দেখলামঃ তোমাদের কাছে যা আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে, আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা অবশিষ্ট থাকবে।
এরপর মুল্যবান যা কিছু আমার হাতে এসেছে, তা আল্লাহর দিকে পাঠিয়ে দিয়েছি, যাতে সেখানে মওজুদ থাকে।
চতুর্থ,
আমি প্রত্যেক মানুষকে ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতি আকৃষ্ট পেয়েছি, কিন্তু এসব বিষয়ে চিন্তা করে দেখলাম, এগুরো তুচ্ছ।
এরপর আল্লাহ তায়ালার এই উক্তির দিকে লক্ষ করলাম। তিনি বলেনঃ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক সম্মানিত, যে অধিক পরহেযগারী অবলম্বন করেছে।
পঞ্চম,
আমি মানুষকে দেখলাম, পরস্পরের প্রতি কুধারণা করে এবং একে অপরকে মন্দ বলে। এর কারণ হিংসা।
এরপর আমি আল্লাহ তায়ালার উক্তি খোঁজ করে দেখলাম, তিনি বলেনঃ আমি মানুষের মধ্যে পার্থিব জীবনে তাদের জীবিকা বন্টন করে দিয়েছি।
তাই আমি হিংসা পরিত্যাগ করে মানুষের কাছে থেকে আলাদা হয়ে গেছি। আমি জেনেছি, রুজির বন্টন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে হয়। তাই আমি মানুষের সাথে শত্রুতা ত্যাগ করেছি।
ষষ্ঠ,
আমি মানুষকে পারস্পরিক হানাহানি, মারামারি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত দেখেছি। এরপর আমি আল্লাহ তায়ালার উক্তির প্রতি লক্ষ করলাম।
তিনি বলেনঃ নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের দুশমন। অতএব তাকে দুশমন রূপে গ্রহণ কর।
তাই আমি কেবল শয়তানকেই আমার শত্রু সাব্যস্ত করেছি এবং তার কাছ থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছি। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তার শত্রুতার সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমি শয়তান ছাড়া অন্য সকল মানুষের শত্রুতা বর্জন করেছি।
সপ্তম,
আমি মানুষকে দেখেছি, প্রত্যেকেই এক টুকরো রুটির আকাঙ্খী। এ ব্যপারে সে নিজেকে লাঞ্চিত করে এবং অবৈধ কাজকর্মের দিকে পা বাড়ায়। এরপর আমি আল্লাহর এরশাদের প্রতি লক্ষ করেছি।
তিনি বলেনঃ পৃথিবীস্হ প্রত্যেক প্রাণীর রিযিক আল্লাহর জিম্মায়।
এতে আমি বুঝলাম, আমি আল্লাহ তায়ালার সেই প্রাণীদের একজন, যাদের রিযিক তাঁর জিম্মায়। তাই আমি এমন সব কাজে মশগুল হয়েছি, যা আমার যিম্মায় আল্লাহর হক এবং আল্লাহ তায়ালার জিম্মায় আমার যা হক, তার অন্বেষন বর্জন করেছি।
অষ্টম,
আমি প্রত্যেক মানুষকে দেখলাম, বিশেষ কিছুর উপর ভরসা করে। কেউ বিষয়সম্পত্তির উপর, কেউ ব্যবসায়ের উপর এবং কেউ নিজের স্বাস্হ্যের উপর ভরসা করে। এরপর আল্লাহ তায়ালার উক্তির প্রতি লক্ষ্য করলাম।
তিনি বলেনঃ যে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
তাই আমি আল্লাহ তায়ালার উপরই ভরসা করেছি। তিনিই আমার জন্যে যথেষ্ট।
শাকীক বলখী রঃ বললেনঃ হে হাতেম! আল্লাহ তোমাকে তাওফীক দিন। আমি তাওরাত, ইনজীল, যবুর ও কোরআন পাকে চিন্তা করে সবগুলোর মূল এই আটটি বিষয়কে পেয়েছি। যে কেউ এ আটটি বিষয় অনুযায়ী আমল করবে, সে যেন এই আসমানী কিতাব চতুষ্টয় অনুযায়ীই আমল করবে।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
চমত্কার লেখা। এই রকম লেখা পড়লে দ্বিধা আর বিভ্রান্তির এই জটিল যুগে জীবনের সঠিক পথটা চিনে নিতে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়।
আল্লাহর উক্তিগুলোর কোরআনসূত্র উল্লেখ করলে আরও ভালো হত; আমরা কোরআন থেকে পড়ে নিতে পারতাম। আমি কয়েকটা খুঁজে পেয়েছি। যেমন: অষ্টম উক্তিটা হলো সুরা তালাক আয়াত ৩ [ এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। ](৬৫:৩)
ষষ্ঠ উক্তিটা হলো সুরা ফাতির আয়াত ৬ [শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়। ] (৩৫:৬)
তৃতীয়টা হলো সুরা নাযিয়াত আয়াত ৪০ ও ৪১ [পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে] [তার ঠিকানা হবে জান্নাত। ] (৭৯:৪০-৪১)
চতুর্থটা হলো সুরা হুজুরাত আয়াত ১৩ [হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। ] (৪৯:১৩)
আশা করি অন্যরা বাকিগুলোও খুঁজে দেবেন। ধন্যবাদ।
[অনুবাদ: মুহিউদদিন খান, সাইট: http://tanzil.info/
@মুসলিম,
দুঃখিত, মুল বইয়ে আয়াত গুলোর কোন সুরার তার উল্লেখ নেই।
@মুসলিম এবং দি মুসলিম ,আপনাদের এই প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবীদার ।
সুন্দর পোষ্ট দ্য মুসলিম ভাই – আশারাখী মুসলিম ভাই বাদবাকি কোরআনসূত্রগুলিও কষ্ট করে উল্লেখ করবেন
@বেদুইন,
খুব সুন্দর হয়ছে