কিছু প্রচলিত ও বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের উত্তর-২
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ শুক্রবার, মার্চ ১৯, ২০১০ (৬:০৩ অপরাহ্ণ)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
সুত্রঃ আশরাফুল জাওয়াব।
মুলঃ আশরাফ আলী থানভী (রঃ)
দুরূদ পাঠ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অনুগ্রহের মনোভাব পোষন করা ভুল।
কেউ যদি বলে যে, আমরা ” দুরূদ পাঠ করি আর সেজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপকৃত হন ” তাহলে তার জবাবে আমি বলব- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপকার ততটুকু নয় যতটুকু লাভ খোদ আপনাদের। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালার বানী প্রণিধানযোগ্য।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ “হে মুমিনগণ তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করা এবং যথাযথভাবে তাকে সালাম জানাও।” একটা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কথাটা আরো পরিষ্কার করা যাক। মনে করুন- চাকরকে আপনি বললেন- এখানে হাজার টাকা, আমার ছেলেকে দেয়ার জন্য তুমি সুপারিশ কর। এর দ্বারা চাকরের মান বাড়ানোই আপনার উদ্দেশ্য এবং এটা একটা বিকল্প ব্যবস্হা মাত্র। তার অর্থ এ নয় যে, টাকা পাওয়ার জন্য আপনার ছেলে চাকরের মুখাপেক্ষী। এখন চাকর যদি সুপারিশ না-ও করে তবুও টাকা ছেলের জন্য বরাদ্দ হয়েই আছে, যথারীতি সে পাবেই। চাকরের মর্যাদা বৃদ্ধিই এর লক্ষ্য। দুরূদ শরীফের অবস্হাও তদ্রূপ। আমরা দরূদ পরি আর না পড়ি আল্লাহর অনুগ্রহ তিনি পাবেনই। কেননা এর পূর্বেই (নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে) মর্মে আয়াত বর্তমান রয়েছে। কিন্তু আমাদের মর্যাদা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বরা হয়েছে- দুরূদ পাঠাও তোমাদের নিজেদের মঙ্গল সাধিত হবে। কাজেই কোন মুখে এ কথা আসতে পারে যে তিনি আমাদের মুখাপেক্ষী এবং আমাদের বলার প্রেক্ষিতে তাঁর প্রতি অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। সম্ভবত এটা কোন অনুর্বর মস্তিষ্কের চিন্তা, তাই পরিষ্কার করে দেয়া হলো।
বস্তুত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে আল্লাহ তায়ালার আচরন আমাদের আবেদন-নির্ভর নয়। আলিগমণ এর প্রমাণ স্বরূপ লিখেছেনঃ অন্যান্য ইবাদত কোন সময় কবূল হয় কোন সময় কবুল হয় না, না-মন্জুর হয়ে যায়। কিন্তু দুরূদ শরীফ আল্লাহর দরবারে সর্বদা মকবুল। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অনুগ্রহ বর্ষনে আমাদের আমলের কোন প্রভাব যদি সত্যিকার অর্থে থেকেই থাকে, তবে অন্যান্য আমলের ন্যায় দুরূদ সময়ে কবূল সময়ে না-মন্জুর হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সর্বদা কবূল হওয়া প্রমাণ করে যে, তাঁর প্রতি রহমতের জন্য আমাদের আমলের আদৌ কোন প্রভাব নেই। আমরা দুরূদ পাঠাই বা না পাঠাই তাঁর প্রতি খোদায়ী রহমতের অবিরত বর্ষণ চলতেই থাকে। রহমত আল্লাহ পাঠাবেনই, এটা তাঁর সিদ্ধান্ত। তাই দুরূদ কখনো না-মন্জুর হয় না। এমতবস্হায় আমাদের প্রতি দরূদের নির্দেশ আমাদেরই মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে।
বলা বাহুল্য, মানগত দিক থেকে আমাদের আমল কবূলের যোগ্য নয়। আর প্রত্যাখ্যাত আমল না হওয়ারই শামিল। এ হিসেবে আমাদের দুরূদও মুল্যহীন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর রহমতের ধারা বর্ষণ অবিরত চলছেই। এটাকে কারো দরূদের প্রতিক্রিয়া মনে করা ভুল চিন্তা। সুর্যের আলোকে আমরাও আলোকিত হই কিন্তু আলোক বিকিরণে সূর্য আমাদের মুখাপেক্ষী নয়। অতএব “লাভালাভের বেলায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারো মুখাপেক্ষী নন” আলিমগণের উক্তি দ্বারা এ কথার প্রতি জোর সমর্থন রক্ষা করা যায়। অবশ্য অপর এক প্রশ্নের অবকাশ এখানে থেকে যায় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে দ্বীন শিখিয়েছেন এবং আমাদের যাবতীয় আমলের সওয়াব তিনিও লাভ করেন। তাই আমরা আমল না করলে এত সওয়াব তিনি কিভাবে লাভ করবেন? কাজেই বোঝা গেল এতে আমাদের আমলেরও দখল রয়েছে। এর জবাব হল- নেক নিয়তে তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন কাজেই যেকোন অবস্হায় তিনি সওয়াব লাভের অধিকারী। এখন আমাদের আমলের প্রতিক্রিয়া কেবল এতটুকু যে, উম্মতের আমলের সংবাদ পেয়ে তাঁর অন্তর খুশি হয়। নতুবা আমাদের দ্বারা তাঁর কোন লাভ নেই।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
সুন্দর পোস্ট , জাজাকাল্লাহ ,
আল্লাহুম্মা ছল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা- আ-লি- মুহাম্মাদ
@সাদাত, আমিন।