কিছু প্রচলিত ও বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের উত্তর-৩
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ বুধবার, মার্চ ২৪, ২০১০ (৯:৪৪ অপরাহ্ণ)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
সুত্রঃ আশরাফুল জাওয়াব।
মুলঃ আশরাফ আলী থানভী (রঃ)
শরীয়তের দৃষ্টিতে কুফরীর শাস্তি জাহান্নামের চিরস্হায়ী আযাব কেন? অথচ অপরাধের মাত্রা শাস্তি হওয়া উচিত?
উত্তরঃ
ক) এর জবাবে বলা যায়- “অপরাধের মাত্রা অনুপাতে শাস্তি হওয়া উচিত” আপনার এ যুক্তি স্বীকৃত। কিন্তু ‘ ঔচিত্যের ‘ অর্থ কি এই যে, অপরাধ ও শাস্তির সময়কালও একই মাত্রা এবং সমপরিমাণের হতে হবে? যদি তাই হয়, তবে একস্হানে দু’ঘন্টা ডাকাতির পর ডাকাতকে গ্রেফতার করে আনা হলে বিচারক কি তাকে সে অনুপাতে মাত্র দু’ঘন্টার সাজাই দেবেন? বিচারক যদি তাই করেন তবে আপনি কি তাকে ন্যায়বিচারক বলে মেনে নেবেন? আর এটা অপরাধ অনুপাতে বিচার হয়েছে বলে স্বীকার করে নেবেন? আদৌ নয়। এতে বোঝা গেল যে, অপরাধ ও শাস্তির মধ্যে সামন্জস্যের অর্থ এই নয় যে, উভয়টির সময়কাল সমপরিমাণ হতে হবে। বরং এর অর্থ এই যে, অপরাধের গুরুত্ব অনুপাতে শাস্তি বিধার করতে হবে। এখন পাঠকবর্গই বিবেচনা করুন, শরীয়ত কুফরীর যে শাস্তি বিধান করেছে তা কুফরীর মতো গুরুতর অপরাধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়েছে কি-না। আর এ অপরাধ মারাত্মক কিনা? হয়তো আপনারা বলতে পারেন, অপরাধ তো মারাত্মক বটে, কিন্তু এত জগন্য নয় যে, তার শাস্তি চিরস্হায়ী জাহান্নাম হতে হবে। তাহলে আমি বলতে চাই যে, আপনারা শুধু কর্মের বাহ্যিক দিকের প্রতি নজর করার ফলেই আপনাদের এ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সাজা ও প্রতিফলের ভিত্তি কেবল বাহ্যিক অবস্হার উপর স্হাপিত নয়। এখানে উদ্দেশ্যেরও বিরাট একটা ভূমিকা রয়েছে। বরং এক ধাপ উপরে উঠে একথাই বলা সঙ্গত যে, ‘ উদ্দেশ্যই ‘ হলো এক্ষেত্রে মূল ভিত্তি। সুতরাং কেউ যদি ধোঁকায় পড়ে শরাব পান করে, তবে তার গুনাহ হবে না। যদিও বাহ্যত এতে গুনাহের রূপ বিদ্যমান। কেননা এক্ষেত্রে তার নিয়ত ছিল না। পক্ষান্তরে কেউ যদি শরাব পানের উদ্দেশ্যে মদের দোকানে যায় আর দোকানদার মদের পরিবর্তে অন্য কোন শরবত তার হাতে তুলে দেয় আর শরাব মনে করে সে তাই পান করে তবে সে গুনাহগার হবে। কেননা তার উদ্দেশ্য ছিল শরাব পান করা। এ কারণে ফকীহগণ বলেছেনঃ কোন লোক যদি স্ত্রীর সাথে সহবাস করে আর অন্ধকারে সে মনে করে এ আমার স্ত্রী নয়, বরং অন্য পরনারী, তবে গুনাহগার হবে। অনুরূপভাবে সহবাসকালে যদি মনে মনে ধারণা করে যে, আমি অমুক নারীর সাথে সহবাস করছি আর কল্পনায় তার চিত্র ফুটে ওঠে এবং কামনর স্বাদ আস্বাদন করে এমতবস্হায় সে গুনাহগার হবে। পক্ষান্তরে কারো বাসর ঘরে বাড়ির মহিলাগণ যদি তার স্ত্রীর পরিবর্তে ভুল করে অন্য কোন মেয়েকে পাঠিয়ে দেয় আর সে আপন স্ত্রী মনে করে তার সাথে সহবাস করে তবে এতে তার গুনাহ হবে না এবং এ সহবাস যিনার অন্তর্ভুক্ত হবে না। বরং “ওয়াতী বিশশুবাহ” অর্থাত “সন্দেহযুক্ত সহবাস” রূপে গণ্য হবে। এর দ্বারা তার বংশধারা প্রমাণিত হবে এবং মেয়েটির উপর ইদ্দত ওয়াজিব হবে। এ বিষয়টি অবগত হওয়ার পর জেনে নিন, কাফেরের কুফরী দৃশ্যত যদিও নির্দিষ্ট সময়ের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ, কিন্তু তার নিয়ত ছিল এই যে, যদি বেঁচে থাকি তার চিরদিন এ অবস্হায়ই জীবন কাটিয়ে দেব। কাজেই তার নিয়ত অনুযায়ী চিরকাল তাকে জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে হবে। তেমনি মুসলমানের ইসলাম যদিওবা সময়ের আবর্তে গন্ডিভুক্ত কিন্তু যেহেতু তার উদ্দেশ্য হলো এই যে, যদি চিরদিন বেঁচে থাকি, তবে ইসলামের উপরই কায়েম থাকব। কাজেই এর প্রতিদানস্বরূপ চিরদিন সে জান্নাতে বাস করবে।
খ) অপর একটি সূক্ষ্ম জবাবে হলো, কুফরীর ফলে আল্লাহর হক বিনষ্ট হয়। পক্ষান্তরে ইসলাম দ্বারা আল্লাহর হক পালন ও আদায় করা হয় আর তাও অসীম। তাই এর প্রতিদানও অসীম হওয়া উচিত। আলহামদুলিল্লাহ, এর দ্বারা এ প্রশ্ন সম্পূর্ণরূপে মীমাংসা হয়ে গেল।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
যদি তাই হয়, তবে একস্হানে দু’ঘন্টা ডাকাতির পর ডাকাতকে গ্রেফতার করে আনা হলে বিচারক কি তাকে সে অনুপাতে মাত্র দু’ঘন্টার সাজাই দেবেন?
চমৎকার লজিক ।
@হাফিজ,
ঠিক বলেছেন। উনার যুক্তি গুলো আমার কাছে একেবারে বাস্তব মনে হয়।
@দ্য মুসলিম, আশরাফ আলি থানভী (রহ:) ১৪০০ এর মতো বই লিখে গেছেন । আর আমরা সে বইগুলো পড়ে শেষ করতেই পারলাম না ।
@হাফিজ,
ইমাম গাজ্জালী (রঃ) এবং আশরাফ আলী থানভী (রঃ) এর রচনাবলীসমুহে যুক্তির ক্ষেত্রে আশরাফ আলী থানভী (রঃ) এর যুক্তিকে আমার বেশী স্ট্রং মনে হয়। তবে উভয়ের বাচনভঙ্গীতে যথেষ্ট মিল রয়েছে।
@দ্য মুসলিম, আসলে এখানে একটি ব্যাপার আছে । ইমাম গাজ্জালী (রহ:) তৎকালিন সমস্যা নিয়ে লিখেছিলেন , আর আশরাফ আলি থানভী (রহ:) ওনার সময়কার সমস্যা নিয়ে লিখেছিলেন । সুতরাং পার্থক্য তো থাকবেই । তবে ইমাম গাজ্জালী (রহ:) এর ভাষার গঠন বেশী শক্তিশালী । আর ইমাম গাজ্জালী (রহ:) গ্রীক দর্শনের যেসব জটিল ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন , সেটা আসলেই এ ক্লাস , অসাধারন ।
@হাফিজ,
হতে পারে, আমি আসলে ইমাম গাজ্জালী রঃ এর এহইয়াউ উলুমুদ্দীন, কিমিয়ায়ে সাআদাত ছাড়া আর কোন বই পড়িনি। সে তুলনায়, আশরাফ আলী থানভী রঃ এর বই বেশী পড়া হয়েছে।
@দ্য মুসলিম,
ইমাম গাজ্জালী (রহ:) এর তুহফাতুল ফালাসিফা বই এ বিস্তারিত গ্রীক দর্শনের বস্তুবাদি মতবাদ খন্ডন করা হয়েছে । তৎকালীন মুসলমানরা গ্রীক দর্শনের দ্বারা অত্যধিক প্রভাবিত ছিল , যেটা ভয়ংকর ভাবে আকিদার জন্য ক্ষতিকর ছিল । উনি শুধুমাত্র সেটার জবাব দেবার জন্য গ্রীক ভাষা শিক্ষা করেছিলেন ।
@হাফিজ,
বইটির কোন বাংলা অনুবাদ বের হয়েছিলো? হলে কোথায় পাওয়া যাবে?
@দ্য মুসলিম, জ্বী বাংলা অনুবাদ বের হয়েছে । বায়তুল মোকারমে পাওয়া যেতে পারে ।
তবে পারলে “আল মুরশিদুল আমিন, মকতুবাতে ইমাম গাজ্জালি, মুকাশাফাতুল কুলুব ” এই বইতিনটি পড়বেন , আপনার ভালো লাগবে আশা করি ।
@হাফিজ,
ধন্যবাদ, ভাই। পড়ার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
@হাফিজ,
বাসায় ইন্টারনেই সংযোগ নিয়েছেন নাকি? আজ এত রাতে অনলাইনে?
@দ্য মুসলিম,
জ্বী , এইতো ২/৩ দিন আগে নিলাম
@হাফিজ,
আলহামদুলিল্লাহ।
আমার বাসায় গত অনেকদিন থেকেই ছিলো আর সে সুবাদে মোটামোটি ভালোই সময দিতে পারতাম। কিন্তু ইদানিং প্রতি ১ ঘন্টা অন্তর কারেন্ট চলে যায়। একটি পোষ্ট দিতে হলে কয়েকদিন ধরে লিখতে হয়।
@দ্য মুসলিম, কারেন্ট এর অবস্হা করুন । গতকাল রাত ২ টার সময় চলে গিয়েছিল ।
@হাফিজ,
আর হয়েছে ভাই, আগামী ৫ মাস কিভাবে দিন কাটবে আল্লাহ পাকই ভালো জানেন।