### নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন সায়াহ্নে
লিখেছেন: ' দ্য মুসলিম' @ বুধবার, এপ্রিল ২১, ২০১০ (৪:২৮ অপরাহ্ণ)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
১০ হিজরী সন থেকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্বের চাইতে আল্লাহর স্মরণে অধিকতর মনোনিবেশ করেন। পূর্বের বছরগুলোতে তিনি রমজান মাসের শেষ দশদিন মসজিদে ইতিকাফ করতেন। ১০ হিজরীর রমজানে তিনি বিশদিনব্যাপী ইতিকাফ করলেন।
পূর্বে ইতিকাফের সময় তিনি এবং হযরত জিবরাঈল আ যে পর্যন্ত কুরআন নাযিল হয়েছে, তার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পরস্পরকে একবার আবৃতি করে শুনাতেন। আর ১০ হিজরীর ইতিকাফের সময় তারা কুরআন মজীদ পরস্পরকে দুবার আকৃতি কে শুনালৈন।
হজ থেকে ফিরে এসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর মাসের প্রথম দিকে উহুদ প্রান্তরে গমন করে আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করলেন যেন তিনি জীবিত ও মৃত সকলের নিকট থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করছেন।
এরপর একদা তিনি মদীনার কবরস্হান জান্নাতুল-বাকীতে গিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত কবরবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। শেষে কবরস্হানদেরকে বিদায় জানিয়ে বললেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমরাও অতি সত্বর তোমাদের সাথে মিলিত হবো। (বুখারী)
রোম সম্রাট অধীন সিরিয়ার খ্রিষ্টান শাসক সহরাবিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দূত হযরত হারিস রাঃ কে মুতা নামক স্হানে শহীদ করেছিল। আর এজন্যই ৮ হিজরীতে মূতার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। রোমের খ্রিষ্টানদের দ্বারা পরিচালিত এই যুদ্ধে হযরত যায়িদ ইবনে হারিসা রাঃ সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্হিত মুতায় শহীদ হন। তখন হযরত যায়িদ রাঃ ছিলেন প্রধান সেনাপতি। হযরত যায়িত রাঃ এর পত্র হযরত উসামা রাঃ ওই যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। তিনি সেখানে তার পিতার শাহাদাত নিজ চোখে দেখেন। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। ৭ নবুয়ত সনে তার জন্ম।
৯হিজরীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, রোমের খ্রিষ্টানবাহিনী মদীনা আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, তখন তিনি তাবুক অভিযানে যান। কিন্তু খ্রিষ্টানবাহিনী এগিয়ে আসেনি। ফলে বিনা যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবুক থেকে মদীনায় ফিরে আসেন। তাবুক থেকে ফিরে আসার কিছুদিন থেকেই ওই খ্রিষ্টান অপশক্তি সিরিয়া-সীমান্তে পূর্বের মতো আবার গোলযোগ শুরু করে দিয়েছিলো।
এসব কারণে হজ থেকে ফিরে এসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উসামা রাঃ কে প্রধান সেনাপতি করেন এবং তাঁকে সিরিয়া অভিযানের নির্দেশ দেন। তখন হযরত উসামা রাঃ এর বয়স ছিলো ১৮ বছর।
ওই সময় হযরত উসামা রাঃ এর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে শরীক হতে কিছু সংখ্যক মুসলমান পড়িমসি করতে থাকেন। তাদের গড়িমসির কারণ হলো, প্রবীণ আনসার ও মুহাজিরদের উপর একজন তরুণকে অধিনায়ক করা হয়েছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্হ। এমতবস্হায় হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদেরকে এক ভাষনে বললেন, হে লোকেরা! তোমরা উসামার যুদ্ধাভিযান কার্যকর কর। তোমরা যদি তার নেতৃত্ব নিয়ে এখন কথা তুলে থাক, তবে এর আগে তোমরা তার পিতা যায়েদ নেতৃত্বের ব্যাপারেও তো কথা তুলেছিলে। অথচ সে ছিল একজন যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তি এবং আমার প্রিয়মত ব্যক্তিদের অন্যতম। আর এ ব্যক্তিও যোগ্য ও উপযুক্ত এবং আমার প্রিয়তম ব্যক্তিদের অন্যতম। (ইবনে-হিশাম)
যা হোক, হযরত উসামা রাঃ এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী সিরিয়া অভিমুখ রওনা দিল। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রোগ বৃদ্ধির সংবাদ শুনে সেটা মদীনা থেকে ৫ কিলোমিটার দুরবর্তী জুরুফনামক স্হানে যাত্রা বিরতি করল। সাহাবিরা সেখান থেকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শারীরিক খোঁজখবর নেওয়ার জন্য মদীনায় আসতেন।
নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইন্তেকালের পর এবং হযরত আবু বকর রাঃ এর খিলাফতকালে হযরত উসামা রাঃ এর নেতৃত্বে এই সেনাবাহিনীই সিরিয়া অভিযানে সাফল্যমন্ডিত হয়েছিল। সুরা ইযাজা নাযিল হওয়ার পর নবীজি সাঃ হযরত ফাতিমা রাঃ কে ডেকে বললেন, হে ফাতিমা! আমাকে আমার মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে হযরত ফাতিমা রাঃ কাঁদতে লাগলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কেঁদো না। কেননা, আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তখন তিনি হাসলেন। (দারিমী)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওফাতের মাত্র ছয় মাস পর হযরত ফাতিমা রাঃ এর ওফাত হয়। তার আগে কোন আহলে-বাইতের ওফাত হয়নি।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার অন্তিমকালে একদা মিম্বরে বসে বললেন, হে জনতা! আল্লাহপাক তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস এবং আল্লাহর নিকট রক্ষিত নিয়ামত, এ দুটির মধ্যে যে কোন একটিকে গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিলেন। আর ওই বান্দা আল্লাহর নিকট রক্ষিত নিয়ামতকে পছন্দ করলেন। একথা শুনে হযরত আবু বকর রাঃ কাঁদতে লাগলেন। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুনিয়ায় আরো কিছুদিন থাকতে চান, না তাঁর ইন্তেকাল হোক এটা চান, আল্লাহ পাকের তরফ থেকে এ কথা তাঁকে জানিয়ে দিলে তিনি পরেরটি অর্থাৎ ইন্তেকাল হোক, এটা গ্রহণ করেন।
অনেক সাহাবী রাঃ প্রথমে এ কথাটি বুঝতে পারেননি। আর হযরত আবু বকর রাঃ কথাটি বুঝতে পেরে কাঁদছিলেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১ হিজরীর সফর মাসের শেষের দিকে অসুস্হ হয়ে পড়লেন এবং অসুস্হ অবস্হাতেই ১১ দিন পর্যন্ত ইমামতি করলেন। তিনি তাঁর ওফাতের চার দিন পূর্বে রোগ-যন্ত্রণায় অত্যধি কাতর হয়ে পড়লেন। নামাজের ইমামতি করার তাঁ শক্তি থাকলো না। তিনি কয়েকবার বিছানা ছেড়ে উঠতেই বেহুশ হয়ে পড়ে যেতে লাগলেন। হুশ হয়ে জানতে পারলেন, তাঁর জন্য মুসল্লিগণ দেরি করছেন। এমতবস্হায় ইমামতি করার জন্য তিনি হযরত আবু বকর রাঃ এর নাম উল্লেখ করলেন। তখন হযরত আয়েশা রাঃ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বা বড় কোমলচিত্তের মানুষ। তিনি আপনার স্হানে নামাজের জন্যে দাঁড়িয়ে স্হির থাকতে পারবেন না।
হযরত আবু বকর রাঃ তখন সেখানে উপস্হিত ছিলেন না। সুতরাং নামাজ পড়িয়ে দেওয়ার জন্য কেউ কেউ হযরত উমর রাঃ এর নাম উচ্চারণ করলেন। ফলে হযরত উমর রাঃ নামাজ শুরু করে দিলেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর তাকবীর ধ্বনি শুনতে পেয়ে বললেন, আবু বকর কোথায়? আল্লাহ ও মুসলমানদের এটা মনঃপূত নয়। আল্লাহ ও মুসলমানদের এটা মনঃপূত নয়।
এরপর হযরত আবু বকর রাঃ কে ডেকে পাঠানো হলো। তিনি যখন এলেন, তখন হযরত উমর রাঃ নামাজ আদায় করছিলেন, তিনি সেটা সকলকে নিয়ে আবার আদায় করলেন। (ইবনে হিশাম)।
এরপর হযরত আবু বকর রাঃ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবদ্দশায় মোট সতের ওয়াক্ত নামাজের ইমামতি করেন।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্হ অবস্হায় একদিন নামাজের পর বললেন, হে লোকেরা, আল্লাহর কসম! তোমরা আমার উপর কোন দায় চাপাতে পারবে না। কেননা, আমি কেবল ঐ জিনিসকেই হালাল করেছি, যা কুরআন হালাল করেছে এবং কেবল ওই জিনিসকেই হারাম করেছে, যা কুরআন হারাম করেছে। (ইবনে হিশাম)।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
অনেক ধন্যবাদ
@তালহা তিতুমির, ধন্যবাদ!