সাধারণ, আলীয়া, কওমী; কোন শিক্ষাব্যবস্থা পরিপূর্ণ ?
লিখেছেন: ' সালাহউদ্দীন' @ বৃহস্পতিবার, জুন ১৭, ২০১০ (৫:২৭ অপরাহ্ণ)
এই তিন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা, এর সিলেবাসের পর্যাপ্ততা ও শিক্ষণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা কম হয়নি, বরং এখনো চলছে। সাধারন শিক্ষাব্যবস্থায় যে নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হয় তাকে কোনভাবেই পর্যাপ্ত বলা যায়না। আলীয়ার ক্ষেত্রেও কথাটি অনেকখানি সত্য বরং এখানে অনেক দ্বীনবিরোধী কাজকে ইসলামের রং দেওয়া হয়। যুগটাকে বদলে দেয়ার যে নৈতিক ও আত্মিক শক্তি দরকার, সেটাতো রয়েছে কওমী মাদরাসারই। কিন্তু একজন ছাত্রকে যুগের সৈনিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য কওমী মাদরাসা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে?
৫৪৬ বার পঠিত
সাধারণ পার্থিব জীবনের জন্য সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা পরিপূর্ণ। অসাধারণ পরলৌকিক জীবনের জন্য কওমী শিক্ষাব্যবস্থা পরিপূর্ণ। আলিয়া শিক্ষাব্যবস্থা কোনো ক্ষেত্রেই পূর্ণ নয়। হ্যাঁ যদি আলিয়া শিক্ষাব্যবস্থা শেষ করে কেউ কলেজ, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়, তাহলে তা সাধারণ পার্থিব জীবনের জন্য মোটামুটি পূর্ণ হয়। তবে আলিয়া থেকে কেউ কওমীতে ভর্তি হলেও তা পরলৌকিক জীবনের জন্য পুরোপুরি পূর্ণ হতে পারে না।
তবে বড় প্রশ্নটি হচ্ছে, কওমী মাদরাসা একজন ছাত্রকে যুগের সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে। এর উত্তরে এতটুকু বলতে পারি যে, বর্তমানে এ প্রশ্নটির উত্তর প্রায় সবাই খুঁজছেন। অনেকে আধুনিক শিক্ষার কিছুটা সমন্বয়ে কওমী সিলেবাসকে সাজাচ্ছেন। চেষ্টা চলছে, কেষ্ট মিলবেই। আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে বেশি করে।
আমার মনে হয়, মালেশিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলামে আমাদের দেশীয় সকল শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য মাইলফলক আছে।
তাদের ইসলামী আলাদা আলাদা সাবজেক্ট ওয়াইজ ডিগ্রির সাথে দু একটি টেকনিক্যল বা কর্মমুখী বিষয়ও আছে, মোট মিলিয়ে মনে রাখতে হবে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের দিকেই লক্ষ্য রাখতে বলেছেন।
@বাংলা মৌলভী,
সহমত।
আলীয়া ও কওমী মাদ্রাসার সিলেবাস, উচ্চতর স্তর ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত কোন পোস্ট বা রেফারেন্স দিলে এ বিষয়ে আরো জানা যেত।
কোন ভাই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন আশা করি।
@রাশেদ, হুমম.. সময়সাপেক্ষ ব্যাপার.. তবে কওমী সিলেবাস নিয়ে লেখার ইচ্ছা দীর্ঘ দিনের.. দোয়া চাই ইচ্ছাটা যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারি..
কওমী মাদ্রাসা একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলো । আমিও কওমী মাদ্রাসার একজন ছাত্র হিসেবে নিজেকে ছোট মনে করিনা । আল্লাহর রহমতে দেশের মোটামুটি তিনটি ধারার শিক্ষার সাথে জড়িয়ে থাকার ফলে কিছু কিছু জিনিস আমি দেখতে পেরেছি যা হয়তো সকলের জন্য সম্ভব নয় । আমার শিরোনাম দেখেই যে কেউ বুঝতে পারবেন আমার আজকের আলোচনার বিষয় কওমী মাদ্রাসা । কওমী মাদ্রাসার প্রতি আমার অন্য রকম দুর্বলতা কাজ করে সেজন্য মন থেকে চাই কওমী মাদ্রাসা একটি উন্নত আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক। প্রথমে আমি আমার দেখা কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করবো ।
সমস্যা:
১. সিলেবাস সংস্কারে অনিহা
২. অযথা ক্লাস বর্ধন
৩. অকৃতকার্য্য ছাত্রদের প্রতি নমনীয়তা
আমি ধারাবাহিক ভাবে কিঞ্চিত আলোচনার চেষ্টা করবো ।
১. সিলেবাস সংস্কারে অনীহা হচ্ছে বর্তমান কওমী মাদ্রাসা সমূহের সবচেয়ে বড় সমস্যা । কেন যে হয়ে ওঠছে একটা আধুনিক মানসম্পন্ন সিলেবাস। আল্লাহই ভাল জানেন । এই সমস্যা সমাধান ছাড়া কওমী মাদ্রাসার উত্তরণ সম্ভব নয় । আমার এখানে আরেকটি সংযোজন করতেই হবে সেটা হচ্ছে আমাদের ক্লাস । ক্লাসের অনেক ল্যাকচার হয় উর্দূতে । ( যদিও বর্তমানে কিছু মাদ্রাসা এর ব্যাতিক্রম তাও সারাদেশে দশ কিংবা বিশটা অধিক হবেনা ।) বর্তমান সময়ের জন্য খুবই দুঃখজনক। এর মাধ্যমে আমারা তিনটি সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি । ১. ছাত্ররা উর্দূকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আরবীর আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে । ২. বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহ নাই বললেই চলে । কারণ, সারা বছরে ২০ লাইন বাংলা লিখতে হয়না । ৩. ভাল উর্দূ শেখা হচ্ছে না । সুতরাং এই সমস্যার সমাধান ছাড়া কোন পথ নেই এগিয়ে যাবার ।
২. আমি কওমী মাদ্রাসাকে অতি কাছে থেকে দেখেছি কওমী মাদ্রাসার বড় একটি সমস্যা হচ্ছে পাশাপাশি মাদ্রাসা গড়ে তোলা এবং ক্লাস বর্ধন করা । আমি অনেক মাদ্রাসায় দেখেছি ক্লাস আছে ঠিক ছাত্র নাই । অনেক জায়গায় দেখেছি দু একজন করে একেকটা ক্লাসের ছাত্র । কওমী মাদ্রার শিক্ষা ব্যবস্থার গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে যে কারণে তার অন্যতম হচ্ছে এই কারণ । এর মাধ্যমে আরেকটি সমস্যা হয় যোগ্য শিক্ষকের অভাব । যে শিক্ষক ৭ম শ্রেণী পড়ানোর যোগ্যতা রাখেন তিনি একাদশ দ্বাদশ পর্যন্ত পড়ান । এখন আমার প্রশ্ন ছাত্ররা ঐসব শিক্ষকের কাছ থেকে কী শিখবে ? আমি আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছি সেটা হচ্ছে একজন শাইখুল হাদীসকে বিভিন্ন জায়গায় পড়াতে হয় যার কারণে ছাত্ররা আপন অধিকার বঞ্চিত । সুতরাং এই দ্বিতীয় সমস্যাকে দূর করতে হবে অন্যথায়….
৩.আরেকটি সমস্যা আসলে এবিষয়টা খুবই লজ্জাজনক ব্যাপার । যার কারণে আমাদের সমাজের আলেমদেরকে অল্পজ্ঞানী ভাবা হয় । সেটা হচ্ছে একটা ছাত্র পরীক্ষায় পাশ না করেও পরবর্তী ক্লাসে ভর্তী হতে পারে । একসময় এই ফেলকরা ছাত্রটাই মসজিদের ইমাম হয়ে মানুষকে ওয়াজ করে । আমার প্রশ্ন উপর্যুক্ত ছাত্রটি যে পরিক্ষায় পাশ করতে পারলোনা সে মানুষকে কী শিক্ষা দেবে ? আমার জানা মতে অনেক মানুষ যারা প্রতিদিন ৫-৬ টা মাহফিলে ওয়াজ করে এবং মাসে তিন থেকে চারলক্ষ টাকা আয় করে তারা কোন ক্লাসেই পাশ করতে পারেনি । কিন্তু ঠিকই পরবর্তী ক্লাস অতিক্রম করেছে । উল্লেখ্য তাদের ওয়াজে ইউসুফ জুলেখার কিচ্ছা সহ অন্যান্য কিচ্ছা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না । বাহারী উপাধী আর মাথায় পাগড়ীপরে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে । যদি এই সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে কওমী মাদ্রাসা একসময় শয়তানের কারখানায় পরিনত হবে ।
জানিনা, এই লেখাটা কওমী মাদ্রাসার কোন নীতিনির্ধারকের কাছে যাবে কী না । তারপরও লিখলাম নিজের মনের কথা ।
@halimsyl, দারুন বিশ্লেষণ।