কোরানের কথা–১. জনাব ডঃ ইসরার আহমদ সাহেবের উর্দু বয়ানুল কোর আনের আলোকে।
লিখেছেন: ' Abdus Samad' @ রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১১ (১২:০৯ অপরাহ্ণ)
পরম করুনাময়, অতিশয় দয়াবান আল্লার নামে আরম্ভ করছি। আল-কোরান এক মহা-গ্রন্থ। বিশ্ব মানবের পথ প্রদর্শক, গাইড লাইন, যা অতি পবিত্র উচ্চ মর্যাদাশীল কিতাবে, পূত পবিত্র্র লীপিকারের হাতে লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত রয়েছে। কোরান আল্লার বাণী, মোত্তাকি গনের পথনির্দেশক। আকাশ ও পৃথিবীতে এমন কোন রহস্য নেই যা এই সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা নেই। (২৭/৭৫) কোরান বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ গ্রন্থ, কোরান সৎ পথের দিশারী ও অবিশ্বাসীগনের জন্য ভয়াবহ বার্তা। কোরান হাবলুল্লাহিল মতিন অর্থাৎ আল্লার দেওয়া মজবুত রশি – যার এক প্রান্ত আল্লার কাছে অন্য প্রান্ত মানুষের কাছে।
কোরান বিজ্ঞান ময় গ্রন্থ। (৩৬/২) কোরান বিশ্ববাসীর সংবিধান। কোরান সংখ্যা তত্বের এক বিষ্ময়কর অবিচ্ছেদ্য নিপুন বাঁধনে রচিত গ্রন্থ। সর্বোপরি কোরান বিশ্ব নবীর শ্রেষ্ঠ অলৌকিক চ্যালঞ্জিং মোজেযা বা হাতিয়ার। মোজেযা তাই যাদিয়ে প্রতি পক্ষকে চ্যালেঞ্জ করে পরাজিত করা যায়। হজরত মূসা আঃ এর ছিল প্রাধান দুটি মোজেযা-হাতের লাঠির কেরামতি ও হাতের তালু নির্গত শুভ্র রশ্মি, যাকে লেসার রশ্মি বলে ধারণা করা হয়। হজরত ঈশা আঃ এর ছিল একাধিক মোজেযা। আল্লার অনুমতি ক্রমে, মৃতকে জীবিত, অন্ধকে চক্ষুস্মান, অসুস্থকে সুস্থতা দান ইত্যাদি।
বিশ্ব নবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মোজেযা আল কোরান যা ১৪০০ বছর যাবৎ চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছে, রচনা কর এমন একটি সুরা কোরানের মত; আল্লা ছাড়া যাকে খুশী সাথে নিয়ে ২/২৩, আজও চ্যালেঞ্জ হয়েই রয়েছে। অথচ মাত্র তিন আয়াতেই সুরা হতে পারে।
কোরানে রয়েছে ১১৪টি সুরা। “ইকরা বিসমে রাব্বিকা” এর মাধ্যমে কোরান নাজিল শুরু হয়,শেষ হয়, “আল ইয়ামা আকমালতো——–অ রাজিতো লাকুমুল ইসলামা দীনা” এর মাধ্যমে। দীর্ঘ ২৩ বছর যাবৎ অল্প অল্প করে, কখনও কয়েকটি আয়াত, কখনও পূর্ণ সুরা হজরত জীবরাঈ আঃ এর মারফত নবীর অন্তরে অবতীর্ণ হতে থাকে। খণ্ড খণ্ড আয়াত গুলি আল্লার নির্দেশে জীবরাঈ আঃ এর পরামর্শ মত সঠিক যায়গায় সংযোজন করে পূর্ণাঙ্গ সুরা গঠিত হয়। রসুলের দঃ মক্কা বাসের কালে অবতীর্ণ সুরা গুলিকে মক্কী আর মদিনা বাসের কালে অবতীর্ণ সুরা গুলিকে মাদানী সুরা বলা হয়।
সুরা বা আয়াত অবতীর্ণের যথা সম্ভব শীঘ্র রসুল সঃ তা ওহী লেখক গনের দ্বারা লিখিয়ে নিতেন। ওহী নবীর অন্তরে গাঁথা হয়ে যেত অতএব ভুল বা উলটা পালটা হওয়ার অবকাশ ছিলনা। নবীর সঃ বিস্মৃত হওয়ার ব্যাকুলতায় আল্লা সুখবর জানালেন- “হে নবী আয়াত স্মরণে রাখতে তোমা জিহবাকে কষ্ট দেবার প্রয়োজন নেই, আমি কোরান নাজিল করাচ্ছি, একে সংকলনন ও আবৃত্তি করানোর দায়িত্ব ও আমার। (৭৫/১৬)
উল্লেখ করা যেতে পারে কোরান নাজিলের ধারা ও বর্তমান কোরান গ্রন্থের ধারা এক নয়। আল্লাহরই নির্দেশ মত আয়াত ও সুরাগুলি সঠিক ভাবে সাজিয়ে কোরানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া হয় এবং এই ধারা মোতাবেক হাফেজগন কোরান অন্তরে ধারণ করেন। নবীর জীব্দশায় কোরান গ্রন্থাকারে ছিলনা কিন্তু অসংখ্য হাফেজ তা বর্তমান ধারা মোতাবেক অন্তরে ধারণ করে রেখেছিলেন। এ হেন হাফেজ গন বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হতে থাকলে কোরান সংরক্ষনের প্রয়োজনিয়তা সবার খেয়ালে আসে। প্রথমে অমত করলেও অধিকাংশ সাহাবী গনের মতের প্রাধান্য দিয়ে ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবুবকর সিদ্দীক, ওহী লেখক ও হাফেজ গনের সমন্নয়ে গঠিত কমিটির দ্বারা গ্রন্থাকারে কোরান লীপি বদ্ধ করান। কোন নিয়মানু বর্তিতা বা বাধ্যবাধকতা না থাকায় কোরান নকলে ক্রমে ক্রমে আঞ্চলীকতার প্রভাব পড়তে থাকে। পরবর্ত্তীতে এ সমস্যা রোধ কল্পে ইসলামের ৩য় খলিফা হজরত ওসমান রাঃ অবশীষ্ট হাফেজ ও ওহী লেখক গন দ্বারা কোরানের কয়েকটি অফিসিয়াল কপি প্রস্তুত করান, নিজেরর কাছে এক কপি রেখে বিভিন্ন শহরে কপি পাঠিয়ে নতুন কপি অনুযায়ী অনুলীপি তৈরী ও পুরাতন কপিগুলি বাজেয়াপ্ত করার ফরমান জারী করেন। হজরত ওসমান রাঃ এর ব্যবহৃত কোরান খানি বর্তমানে ইস্তামবুলের যাদু ঘরে রক্ষিত আছে বলে বলা হয়েছে। বর্তমানের কোরান গুলি উল্লেখিত কোরানেরই অনুলীপি, তাই একে মোসহাফে ওসমানী বলা হয়। গর্বের সাথে দাবী করা যেতে পারে-পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুটি কোরানের মাঝে বিন্দু মাত্র গরমিল নেই। —-চলবে—-