কোরানের কথা—২(বয়ানুল কোরানের আলোকে)
লিখেছেন: ' Abdus Samad' @ শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১১ (৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ)
কোরানের একককে আয়াত বলা হয়। রসুল সঃ এর নির্দেশ মোতাবেক আয়াত নির্নীত হয়েছে। কোথাও মাত্র একটি শব্দই একটি আয়াত যেমন; ‘অয়াল আসরে’, আবার কোথাও কয়েকি হরফই একটি আয়াত, যেমন; ‘আলীফ লাম মীম’, আবার কোথাও কয়েকটি বাক্য মিলেই একটি আয়াত হয়েছে, যেমন; ‘আয়াতুল কূরসী’। অতএব, সাধারণতঃ আমরা বাক্য বা ‘ভার্স’ বলতে যা বুঝি তা কোরানের ক্ষেত্রে অচল। তাই কোরানের আয়াতকে আয়াত বলাই সমিচীন; তেমনই সুরাকে চ্যাপটার না বলে সুরা বলা, কারণ অধ্যায় বা চ্যাপটারে, কোন একটি বিষয়ের বর্ণনা শেষ হয়ে যায়, কিন্তু কোরান তার ব্যাতিক্রম, একই বিষয় বিভিন্ন সুরায় বার বার ভিন্ন ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
কোরানের আয়াত গুলি দুই ভাবে বিন্ন্যস্ত করা হয়েছে,যার একটি; ‘মোহকামাত’ অর্থাৎ সুস্পষ্ট। আর অন্যটি;’মোতাশাবেহাত’বা রূপক(বোধগম্যের বাইরে)।কিছু কিছু রূপক আয়াতের রহস্য,বিজ্ঞ্যানের নব নব আবিষ্কারের দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।বাকি গুলোর জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।আল্লাহ বলেন;-’অচিরেই আমি মহাশূন্যে ও তোমাদের মাঝে এমন কিছু নিদর্শন দেখাব, যাতে তোমরা সংশয় মুক্ত হবে যে, এ কোরান সত্য ৪১/৫৩।
কোরান বেদূঈনদের সরল খাঁটি আরবী ভাষায় অবতীর্ন করা হয়েছে।তৎকালীন মক্কা ব্যবসায়ের প্রান কেন্দ্র হওয়ায়,বিভিন্ন ভাষা ভাষীর আনাগোনায়,মক্কার আরবী আঞ্চলীকতার দূষনে দূষীত হয়,কিন্তু বেদূঈনদের আরবী দূষনের বাইরেই থেকে যায়।
কোরানের অন্তরনিহীত মর্ম দুই ভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যায়,আরবী ভাষায় সাধারণ জ্ঞ্যান সম্পন্ন পাঠক কোরান পড়ার পরর,কোরান সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা পেতে পারে।একে ‘তাজাক্কুর’ বলা হয়।এই উপলব্ধিটাকে পানির উপরিভাগে ভাসমান তেলের সাথে তুলনা করা হয়েছে।অন্যটি যূগোপযোগী নিহীত তথ্য উদঘাটনের জন্য,অধ্যবসায়ের সাথে কোরানের গভীরতায় অনুসন্ধান চালানো।আল্লামা ইকবাল বলেছেন;-’কোরাঁ মে হো গোঁতা জং এয় মর্দে মুসলমাঁ’।তাঁর দর্শনের মূলমন্ত্র ছিল এই কোরান।আল্লার রসুল বলেছেন;-কোরানে রয়েছে অতীতের বর্ণনা,বর্তমান ও ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা,কোরান এমনই এক রত্নখনী,যার রত্ন কোনদিনই শেষ হবার নয়।কোরান এমনই এক গ্রন্থ যার বিষ্ময়ের সমাপ্তি নেই।
কোরান এমনই এক গ্রন্থ যা বার বার পড়লেও এক ঘেয়েমী মনে হয়না।এ ব্যাপারে ইমাম শাফী রঃ এর একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে;-’ইজমা’র বিষয়ে কোরানের নির্দেশনা তালাশ করতে একাধারে তিনি তিনশত বার কোরান শেষ করেও কোন হদীস পেলেননা তিনশত একবারের বার পেয়ে গেলেন;-অইয়াব তাগী গায়রা সাবিলীল মুমিনীনা———
কোরান সংখ্যাতত্বের অবিচ্ছেদ্য এক নিপূন বাঁধনে বাঁধা।এ যেন মহামূল্যবান মতির,নিপুন কারিগর দ্বারা গ্রোথীত একটি মালা।যার একটি মতি বিচ্যুত হলে মালাটি বিপন্ন হবে।৩য় ওহী সূরা মোজম্মেলের ৫নং আয়াতে আল্লাহ ঘোষনা দিলেন;’অচিরেই আমি তোমার উপর একটি গুরু গম্ভীর বাণী অর্পণ করবো’।৪র্থ ওহী সুরা মুদস্সীর এর ৩০ তম আয়াতে বলা হয়েছে;-’অআলাইহে তিশয়াতা আশর’। অর্থাৎ তার উপর আছে উনিশ।ধারনা করাহয় এটাই সেই গুরু গম্ভীর বাণী।কারণ উনিশ সংখ্যাটির কোরানে বিশেষ ভুমিকা রয়েছে।এই উনিশকেই কোরানের সংখ্যাতত্বে একক বলে ধারণা করা হয়।
সুরা রহমানে প্রথম চারটি আয়াতে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ চারটিবিষয়ের বর্ণনা করেছেন;প্রথমটি আল্লাহর নামের শ্রেষ্ঠ নাম-’রহমান।২য়টি শ্রেষ্ঠ জ্ঞ্যান-কোরআন।৩য়টি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি-ইনসান।৪র্থটি ইনসানের শ্রেষ্ঠ ফ্যকাল্টি বয়ান অর্থাৎ ভাষা।আল্লাহ বলেন;মহীমান্নিত রমজানের রাতেই কোরান নাজিল করেছি।আমরা জানি পবিত্র কোরান দীর্ঘ ২৩ বৎসরে নাজিল সম্পন্ন হয়েছে।তবে কেমনে শুধু রমজান মাসের কথা বলা হল।শব্দ চয়নের প্রতি নজর দিলে ব্যপারটি পরিষ্কার হবে।’শাহারো রামাজানাল্লাজি উনজিলা ফিহীল কোরআন’ ।এই আয়াতে উনজিলা শব্দটি ইনজাল(মাসদার)ধাতু হতে এসেছে,যার অর্থ এক কালীন কিছু অবতীর্ণ করা২/৮৫।আবার ১৫/৯;ইন্না নাহনু নাজ্জালনাজ্জিকরা অইন্নাহু লাহু হাফিজুন’।এই আয়াতে উনজিলার বদলে নাজ্জালনা শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে যা তানজীল শব্দের রূপ।যার অর্থ ধীরে ধীরে কিছু অবতীর্ণ করা।উল্লেখ্য সমগ্র কোরান রমজান মাসের কদরের রাতে,লওহে মাহফুজে রক্ষিত উম্মুল কিতাব হতে রুহূল কুদুস অর্থাৎ হজরত জীবরাঈলল আঃ এর দপ্তরে এককালীন অবতীর্ণ করাহয়।পরে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ২৩ বৎসরে নবী মোহাম্মদের সঃ উপর হজরত জীবরাঈল আঃ ধীরে ধীরে তা নাজিল করেন
রসুল সঃ কোরানকে খতমের সুবিধার জন্য সম্ভাব্য সম আয়তনের ৭টি মনজিলে ভাগ করেন।সুরা ফাতেহাকে মুখবন্ধ হীসাবে রেখে বাকি ১১৩টি সুরাকে যথাক্রমে=৩,৫,৭,৯.১১,১৩,ও৬৫ তে বিভক্ত করেন।মনজিল গুলোতে কোন সুরাকেই দ্বিখণ্ডিত করা হয়নাই।রসুলের জিবদ্দশায় প্রতি রমজানে রসুল নাজিল কৃত অংশ হজরত জীবরাঈলের উপস্থিতিতে তারাবিতে দওরা করতেন(অনুশীলন)।শেষ রমজানে এ কাজ দুবার করেন।এখানে একথা পরিষ্কার যে,কোরানের বর্তমান ধারা তার আগেই নিরূপীত হয়েছিল ও সেই মোতাবেকই তিনি দাওরা করতেন।অনেক পরে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের আমলে বর্ণনার ভাব অনুযায়ী রূকু নির্ধারিত হয়।হরকত বা জবর,জের,পেষ,প্রভৃতিও এই সময় সংযোজন করা হয়।তারও অনেক পরে অধিক সংখ্যক পাঠক দ্বারা অধিক অল্প সময়ে কোরান খতম করার সুবিদার্থে কোরানকে সরাসরি ৩০ পারায় ভাগ করা হয়।এ বিভক্তী একাধিক সুরাকে দিখণ্ডিত করেছে। ——– চলবে———-