লগইন রেজিস্ট্রেশন

সুরা ফাতেহার অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর, ডাঃ ইসরার আহমদ সাহেবের, উর্দু; ‘বয়ানুল কোরআন’ এর আলোকে। আব্দুস সামাদ।

লিখেছেন: ' Abdus Samad' @ শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১১ (৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ)

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম, আরম্ভ করছি আল্লার নামে, যিনি পরম করুনাময় ও অতিশয় দয়ালু। আয়াতে বিসমিল্লায় ১৯ টি অক্ষর আছে। কোরানের প্রতিটি সুরার প্রথমে (সুরা তওবা বাদে) আয়াতে বিসমিল্লাহ আছে। পবিত্র কোরানে ১১৪ টি সুরা আছে। ১১৩টি সুরার সূচনায় আয়াতে বিসমিল্লাহ আছে। ১৯ সংখ্যাটি কোরানের অলৌকিকত্বের একটি বিশেষ ভুমিকায় অবস্থান করে। কোরানের সূচনাতেই ১৯ সংখ্যা বিশিষ্ট আয়াতটি স্থাপিত হল। এই প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য যে, সুরা নমলের ৩০ আয়াতে আল্লাহ আয়াতে বিসমিল্লাহ স্থাপন করে তার সংখ্যা ১১৩+১=১১৪ পুরা করলেন, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ফাতেহা শব্দের অর্থ উন্মুক্ত করা বা খোলা। মিফতাহ শব্দ যা একই শব্দাগত, অর্থ চাবি। সুরা ফাতেহা কোরানের সূচনা সুরা তাই এর নাম সুরা ফাতেহা। এসুরার আরও কয়েকটি নাম রয়েছে;-যেমন, শাফীয়া, কাফিয়া, উম্মুল কোরআন, কাসাসুল কোরআন, এ সুরার আর এক নাম সালাত। এতে সাতটি আয়াত রয়েছে। আয়াতের ব্যাপারে ইমামগনের মাঝে মতভেদ আছে, কেউ কেউ বিসমিল্লাকে সুরার অংশ করে,শেষের দু আয়াতকে এক করে সাত আয়াত বলেন। আবার কেউ বিসমিল্লাহকে বাইরে রেখেই সাত আয়াত গোনেন।মূলত সাত আয়াতে মতভেদ নেই। যারা বিসমিল্লাকে সুরার অংশ বলেন, তারা শব্দযোগে পড়া নামাজে বিসমিল্লাহ শব্দ করে পড়েন। আবার যারা বিসমিল্লাহকে বাইরে রাখেন, তারা শব্দযোগে পড়া নামাজে তা চুপি চুপি পড়েন। (১) الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ আর্থাৎ; সমস্ত প্রশংসা ও যাবতীয় কৃতজ্ঞতা সেই মহান আল্লার, যিনি বিশ্ব ব্রম্ভান্ডের অধিপতি।আলম শব্দের অর্থ দুনিয়া বা বিশ্ব । আলামীন বহুবচনে, অর্থাৎ বিশ্ব ব্রম্ভাণ্ডের, চন্দ্র, সূর্য্য , গ্রহ, নক্ষত্র,গ্যলাক্সী, ছায়াপথ, ইত্যাদী দৃশ্য-অদৃশ্য যাবতীয়ের। (হামদ শব্দটি তারিফ ও শোকর এর যৌগিক শব্দ)(২) الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِঅর্থাৎ;-পরম করুনাময় ও অতিশয় দয়ালু। প্রথম আয়াতে যে রবের (প্রতিপালক)কথা বলা হয়েছে,পরের আয়াত গুলোতে সেই রবের বৈশিষ্টগুলো বর্ননা করা হচ্ছে। (৩) مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِঅর্থাৎ;-প্রতিদান দিবসের মালিক। কেমন রব? যিনি কর্মফল প্রদানের দিনের একছত্র মালিক। দীন শব্দটির অর্থ-বদলা বা প্রতিদান।(কামা তাদীনো, তুদানো, যেমন করবে তেমন পাবে)। প্রশ্ন হতে পারে-আল্লাহতো সর্বাবস্থায় সব কিছুরই মালিক, তবে কেন বিশেষ ভাবে ঐ দিনের কথা বলাহল? বাহ্যিক জীবনে আল্লাহ মানুষ কে ব্যবহারিক দ্রব্যাদি,ধন-সম্পদের আংশিক মালিকানা, এই দুনিয়ায় দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু শেষ বিচারের দিন সমস্ত আংশিক মালিকানা বিলুপ্ত করা হবে। এমনকি যে হাত, যে পা আমার ছিল সেও আমার আজ্ঞা বহ অধীন থাকবেনা। হুংকার শোনা যাবে;-‘ লে মানিল ইয়াওম?’– আজকের দিনটি কার? উত্তর শোনা যাবে-‘ লিল্লাহীল ওয়াহিদীল কাহহহার।‘– এক মাত্র সেই আল্লার যিনি সর্বত্র ব্যাপি। প্রথম তিনটি আয়াতে যা বলা হয়েছে তা আল্লাহকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে, কিন্তু তা গায়েবানা আন্দাজে, আয়াতে কোন শাব্দীক বিধেয় নাই। চতুর্থ আয়াতে তা বিদ্যমান।
(৪) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ এই কা শব্দটাই সেই বিধেয়। অর্থ;-আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও একমাত্র্র তোমারই ইবাদত করব। নায়বুদু শব্দটি আরবী ব্যাকারণে ‘ফেলে মোজারেয়’ ,বর্তমান ও ভবিষ্যত দুটা কালকেই কভার করে। অতএব যদি বর্তমান কালে অর্থ করা হয় তবে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি।স্বীকারোক্তী করা বোঝায়। আবার যদি ভবিষ্যত কালে অর্থ করাহয় তবে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করব, অঙ্গিকার করা বোঝায়। হজরত আবু হোরায়রা রাঃ বর্নীত হাদিশে জানা যায়, আল্লাহ বলেন;- ক্বাসামতুস সালাতা বাইনী ,অবাইনা আবদী নেস ফাইনে। নেসফোহা লী, অনেসফোহা লে আবদী, অ লেআবদী মা সাআল। অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, আমি সুরা ফাতেহাকে আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। এর অর্ধেক আমার জন্য, আকি অর্ধেক আমার বান্দার। বান্দা যা চায় আমি তা দিয়ে থাকি। অ ইইয়াকা নাসতাঈন। নায়বুদু এর মত নাসতাঈনু শব্দটিও ‘ফেলে মোজারেয়’, যদি বর্তমান কালের অর্থ করলে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই, আবার ভবিষ্যত কলে অর্থ করলে মানে হবে,- আমরা এক মাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাইব। বান্দা যখন বলে, আল্হামদু লিল্লাহে রব্বিল আলামীন। আল্লাহ তখন বলেন,-আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে। আবার বান্দা যখন বলে, আররহমানির রাহীম, আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ননা করছে।বান্দা যখন বলে, মালিকে ইয়াওমিদ্দীন, আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার শেষদিনের সর্বময় কর্তৃত্বের সস্বীকারোক্তি করছে। বান্দা যখন বলে,- ইইয়াকা নায়বুদু অ ইইয়াকা নাসতাঈনন। আল্লাহ তখন বলেন, এখানেই আমার আর আমার বান্দার মাঝে বিভক্তি ও সন্ধি। চতুর্থ আয়াতের মাঝে একটি ওয়াও অক্ষর দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এই আয়াতের প্রথমাংশ সহ প্রথমের তিন আয়াতে আল্লার প্রশস্তি ও স্বীকারোক্তি, যা আল্লার জন্য। পরের অর্ধাংশ সহ সামনের তিন আয়াত বান্দার জন্য যাতে রয়েছে প্রার্থনা ও আর্জি। বলা যেতে পারে এই সুরার মাধ্রমে আমরা প্রতি নিয়ত আল্লাহর প্রশংসার স্বীকরোক্তির পাশাপাশি ওয়াদাবদ্ধ হচ্ছি ও অজান্তে আমরা তা ভঙ্গ করছি। এই প্রসঙ্গে সুরা নিসার ৪৩ নং আয়াতের প্রতি দৃষ্টি পাত করা যায়,-যেখানে মদ নিষিদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের হুকুমে আল্লা বলেন;-তোমরা নেশা অবস্থায় নামাজের কাছেও যেওনা যতক্ষন না তোমরা যা বলছ তা বুঝতে পার। অতএব বলাযেতে পারে নামাজে যাবলি তা বুঝে বলার আবশ্যিকতা রয়েছে।
(৫) اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَঅর্থাৎ; আমাদের সঠিক পথে হেদায়েত দান কর। (৬) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْঅর্থাৎ;- সেই সঠিক পথ যা নেয়ামত স্বরূপ তাদের দান করেছ। পঞ্চম আয়াতের ব্যাখ্যা ষষ্ঠ আয়াতে দেওয়া হয়েছে।’ইহদে’শব্দ দ্বারা হেদায়েতের দিক নির্দেশনা চাওয়া হচ্ছে। হেদায়েত বলতে সাধারণতঃ বোঝায় কাউকে তার গন্তব্যের দিকে অনুগ্রহের সাথে পথ প্রদর্শন করা। এর দুটি স্তর রয়েছে, সঠিক নির্দেশনর দ্বরা কাউকে তার গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করা, দ্বিতীয়টি;- সহযাত্রী হলে সংগে নিয়ে কাউকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া। দ্বিতীয়টিই উত্তম হেদায়েত,এটাই আল্লার কাছে আমাদের কাম্য। এর জন্য আল্লার রসুল আমাদের সহযাত্রীও দেখিয়ে দিয়েছেন। আল্লার রসুল বলেছেন, পূর্ব বর্ত্তী উম্মত গনের মত আমার উম্মতগনও ৭০ দলে ভবিভক্ত হবে। মাত্র একটি দলই সঠিক পথে থাকবে। তারা কারা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন;- মা-আনা আলাইহে অ আসহাবী। অর্থাৎ যার উপর আমি ওআমার সাহাবীগন আছেন। বলাযেতে পারে,যেমন বড় বড় বই পুস্তক পড়েই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়র হওয়া যায়না, সাথে প্রয়োজন প্রাকটিক্যাল বা হাতে কলমে শিক্ষা ও অনুশিলন। তেমনই কোরআন হাদীশ পড়েই হেদায়েতের নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব নাও হতে পারে, সাথে চাই রসুল সঃ ও তাঁর সাহাবীদের জীবন চরিত অনুস্মরণ। হেদায়েতের ও চারটি স্তর রয়েছে যথা, সালেহীন, শুহাদা, সিদ্দিক্বীন,ও আম্বিয়া। সালেহীন, যারা ঈমান সহকারে ইসলামের যাবতীয় আদেশ নিষেধ গুলি নিষ্ঠার সাথে মেনে চলেন, সৎ কর্ম করেন। শুহাদা, যারা আল্লাহ ও তার দ্বীনের জন্য নিজের জীবন তুচ্ছ করেছেন। সিদ্দিক্বীন, যাদের ঈমানে কোন অবস্থায়ই কোন সন্দেহ স্থান পায়নি। বলা বাহুল্য তারা সাফল্যের সাথে নিচের স্তর গুলি পার হয়েছেন। এব্যপারে হজরত আবু বকর রাঃ এর কথা উল্লেখ যোগ্য। এক ইহুদী খবর শোনাল, ওহে আবুবকর শুনেছো, তোমাদের নবী বলছেন, গত রাতে তিনি নাকি আসমানে গিয়ে আল্লার সাথে কথা বলেছেন, বিশ্বাস না হয় নিজে কানে শুনে এস। আবুবকর রাঃ শুধু জানতে চাইলেন, একথা কে বলেছে, ইহুদী উত্তরে নবীর কথা বলায় তিনি বললেন, নবী যখন বলেছেন,তখন অবশ্যই সত্য। এ দিন হতেই তিনি হলেন সিদ্দীক। পরের স্তর আম্বিয়া কেরাম। এই সমস্ত পথের পথিক গনের পথকেই নেয়ামত বলা হচ্ছে। এ পথই আল্লার কাছে কামনা করা হয়েছে।
(৭) غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
অর্থাৎ; অভিশপ্ত ও ভ্রষ্ট পথ আমাদের দিওনা। আল্লার কাছে যেমন সৎ পথের দীশা চাওয়া হচ্ছে, তেমনই আবার যারা আল্লাহ ও তার নবী রসুল গনের দেখানো পথ পরিহার করে বিপথে বা ভ্রান্ত পথে গিয়ে, আল্লার রোষানলে পড়ে ধ্বংস হয়েছে,যেমন কওমে নূহ, কওমে লূত, কওমে সাদ, কওমে আদ সামুদ। এদের অনুসৃত জীবন ধারাকেই অভিশপ্ত পথ বলা হয়েছে। আবার ইহুদী নাসারাদের পথকে ভ্রান্ত পথ বলা হয়েছে। কেননা তারা প্রকাশীত সত পথ ত্যাগ করে ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে, আতিশয্যের বশে ঈশা আঃ কে আল্লার পর্যায়ে উন্নিত করেছে,তাকে আল্লার ঔরস জাত পুত্র বলে প্রতিষ্ঠীত করেছে। এটাই সীমা লঙ্ঘন। এই সমস্ত পথ হতে দূরে রাখার জন্য আল্লার কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে। সুরা ফাতেহার শেষে আমিন বলতে হয়। মোক্তাদী হিসাবে ইমামের পিছনে নামাজে সুরা ফাতেহা পড়া ও আমিন বলা নিয়েও ইমাম গনের মতভেদ আছে। বলা হয়েছ;- লা সালাতা লেমান লা ইয়াক রায়ু বে ফাতেহাতিল কিতাবে। অর্থাৎ ঐ নামাজ নামাজই নয় যাতে সুরা ফাতেহা পড়া হয় নাই। প্রশ্ন হচ্ছে মোক্তাদীকে ইমামের পিছনে নামাজে সুরা পড়তে হবে কিনা? কোন ইমাম বলেন, পড়তে হবেনা, আবার করও মত পড়া জরুরী। এ ব্যাপারে ইমাম মালেক রঃ এর মতটাই অধিকাংশের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়েছে। তিনি বলেছেন;- যখন ইমাম চুপে চুপে সুরা কেরাত পড়েন তখনই শুধু মোক্তাদীকে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে, যখন ইমাম শব্দ করে সুরাকেরাত পড়েন তখন মোক্তাদী, অ ইজা কোরেয়াল কুরআনো ফাসতামেয়ু লাহু অ আনসিতু লা আল্লাকুম তুরহামুন। অর্থ যখন কোরান পড়া হয় তখন তোমরা শ্রবন করো ও চুপ থাকো। এই আদেশ পালন করবে। জোরে বা আস্তে যে ভাবেই হোক আ

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
২,৫২৪ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)