তওবা’র বিস্ময়কর ঘটনা
লিখেছেন: ' sayedalihasan' @ রবিবার, জুন ১৯, ২০১১ (৪:০২ অপরাহ্ণ)
‘তওবা’ শব্দটির সাথে কম-বেশী সবাই পরিচিত। তওবা শব্দের আভিধানিক অর্থ- ফিরে আসা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, যে সকল কথা ও কাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তা থেকে ফিরে এসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাকে তওবা বলে। তওবা করার জন্য কয়েকটি শর্ত মানতে হয়। যেমন-পাপ কাজটি পরিহার করা, আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে পাপ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআনে তওবা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ”হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।” অন্যদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির উট জনমানবহীন প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়ার পর আবার তা ফিরে পেলে যেমনি আনন্দিত হয় তেমনি কেউ তওবা করলে আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশী আনন্দিত হন ।
দুনিয়ায় এমন অনেক ব্যক্তি ছিলেন এবং এখনো আছেন যারা অসংখ্য পাপ করার পরও আন্তরিকভাবে তওবা করার কারণেই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন।
খোরাসানে এক স্বাধীনচেতা যুবক বাস করতো। সে ছিলো পিতামাতার একমাত্র সন্তান। যুবকটির নাম ছিলো আব্দুল্লাহ। রাত-দিন সে খেলাধুলা, গানবাজনা আর আনন্দ-ফুর্তিতে লিপ্ত থাকতো। ধীরে ধীরে তার কিছু মদ্যপ বন্ধু-বান্ধব জুটে গেল। তাদের সাথে মেলামেশা করতে করতে সেও আস্তে আস্তে মদ খাওয়া শুরু করলো।
যুবক আব্দুল্লাহর এ অবস্থা দেখে তার পিতা-মাতা দিন-রাত অস্থির থাকতো, তাদের খাওয়া-দাওয়া আর ঘুম-নিদ্রা সবই যেনো হারাম হয়ে গেলো। সারাদিন তারা শুধু আফসোস করতো আর কেঁদে কেঁদে প্রাণ উজাড় করতো। ছেলেকে সুপথে আনার জন্য তারা অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু সব চেষ্টাই বৃথা গেল। কারণ মানুষের মন পরিবর্তন করার ক্ষমতা কোন মানুষের নেই; তা করতে পারেন একমাত্র আল্লাহ। তারপরও যে যাই পরামর্শ দিতো, পিতা-মাতা তাই করতো আর আল্লাহ কাছে ছেলের জন্য দোয়া করতো।
এক রাতের ঘটনা। আব্দুল্লাহ তার বন্ধু-বান্ধবসহ মদের আড্ডাখানায় আনন্দ-ফুর্তিতে মেতে উঠেছে। গান-বাজনার আসর বেশ জমে উঠেছে। সবাই যখন নেশার ঘোরে মত্ত তখন আব্দুল্লাহর দু’চোখে নেমে এলো ঘুম। ক্ষনিকের জন্য বালিশে মাথা রাখলো আব্দুল্লাহ। হঠাৎ সে এক আশ্চর্য স্বপ্ন দেখলো। সে দেখলো, একটি বাগান। চোখ জুড়ানো সেই বাগানের একটি গাছের ডালে বসে আছে একটি সুন্দর চড়ুই পাখি। পাখিটি তার সুরেলা মিষ্টি আওয়াজে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত পড়ছে। যার অর্থ হলো, ‘এখনো কি সে সময় আসেনি- যখন আল্লাহপাকের কথা শুনে মুমিন বান্দাদের অন্তর আল্লাহর ভয়ে কেঁপে উঠবে এবং তাতে নম্রতা সৃষ্টি হবে।’
এ স্বপ্ন দেখে আব্দুল্লাহ চমকে উঠলো। ঘুম থেকে জেগে উঠার সময় তার মুখে উচ্চারিত হলো, ‘হে আল্লাহ! সে সময় এসে গেছে। হে আমার মহান স্রষ্টা, সে সময় উপস্থিত হয়ে গেছে।’
ছোট্ট এ স্বপ্নটি আব্দুল্লাহর মনে এক বিরাট পরিবর্তন সৃষ্টি করলো। এরপর সে মদের বোতল ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেললো। দোতারা, সেতারা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেললো। তারপর গোসল করে মনকে স্থির করে তওবা করলো। দৃঢ়চিত্তে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করলো যে, আর কোনদিন সে আল্লাহর নাফরমানি করবে না, আর কোনদিন কোন খারাপ কাজের কাছেও যাবে না।
ঐ দিনের পর থেকে যুবক আব্দুল্লাহ এমন পবিত্র জীবন যাপন করতে লাগলো যে, তাকে দেখলে মনে হতো-তার দ্বারা যেনো কোনদিন কোন গুনাহের কাজ সংঘটিত হয়নি। নির্ভেজাল তওবা একেই বলে।
সুপ্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই যুবকটির পরবর্তী জীবন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন! হ্যাঁ, এ যুবক আব্দুল্লাহই সেই মহান ব্যক্তি- দুনিয়ার মানুষ যাকে আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ) নামে চেনে। নির্ভেজাল তওবা তার জীবনের মোড় পরিবর্তন করে দিয়েছে। ‘খোরাসানী স্কলার’ হিসেবে পরিচিত এ আলেম হাদিস শাস্ত্রে এত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন যে, আজও অনেকে তাঁকে হাদিসের ইমাম হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকে।(তথ্যসুত্র:রেডিও তেহরান)