মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর শরয়ী বিধান (২য় পর্ব)
লিখেছেন: ' sayedalihasan' @ শুক্রবার, জুন ১৭, ২০১১ (৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ)
মাল্টি লেভেল মার্কেটিং-এর শরয়ী বিধান :
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-এর শরয়ী বিধান আলোচনা করার পূর্বে ইসলামি শরী‘আতের কতিপয় বিধান ও নীতিমালা যেগুলোর ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা ও লেনদেনের বৈধতা-অবৈধতা নির্ভর করে সেগুলো আলোচনা করা দরকার। নিম্নে সংক্ষেপে তা আলোকপাত করা হলো:
(ক) ইসলামি শরী‘আতে হালাল ও হারাম উভয়টিই সুস্পষ্ট। শরী‘আত যেটা হালাল করেছে সেটাকে হারাম করা বা ঘোষণা দেয়া আবার যেটা হারাম করেছে সেটাকে হালাল ঘোষণা দেয়ার অধিকার আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কারও জন্য প্রযোজ্য নয়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনকারীদের সাবধান করে ঘোষণা দিয়েছেন,
﴿قُلۡ أَرَءَيۡتُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ لَكُم مِّن رِّزۡقٖ فَجَعَلۡتُم مِّنۡهُ حَرَامٗا وَحَلَٰلٗا قُلۡ ءَآللَّهُ أَذِنَ لَكُمۡۖ أَمۡ عَلَى ٱللَّهِ تَفۡتَرُونَ ٥٩﴾ [يونس: 59]
‘‘তুমি বল, তোমরা কি কখনো এ কথা চিন্তা করে দেখেছ, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য যে রিযক নাযিল করেছেন তার মধ্য থেকে কিছু অংশকে তোমরা হারাম আর কিছু অংশকে হালাল করে নিয়েছ; তুমি বল, এসব হালাল-হারামের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের কোনো অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহ্র প্রতি মিথ্যা আরোপ করছ? [সূরা ইউনুস, আয়াত : ৫৯]
(খ) ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি মূলনীতি হলো তা বৈধ ও অনুমোদিত। সুতরাং যে ব্যবসার ক্ষেত্রে শরী‘আতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেগুলো ছাড়া অন্য সকল ব্যবসা বৈধ। কোনো ব্যবসাকে হারাম সাব্যস্ত করতে হলে এর পক্ষে শরয়ী নিষেধাজ্ঞা থাকতে হবে। কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে শরয়ী নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ধরে নিতে হবে তা হালাল ও অনুমোদিত।
(গ) ইসলামি শরী‘আত যা যা হালাল করেছে এবং যা যা হারাম করেছে তা সম্পূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতে করেছে। যার মধ্যে মানুষের কল্যাণ রয়েছে শরী‘আত প্রণেতা শুধু তাই তাদের জন্য হালাল করেছেন এবং যার মধ্যে তাদের অকল্যাণ রয়েছে তাই তাদের জন্য হারাম করেছেন। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে হালালের কল্যাণ এবং হারামের অকল্যাণ বুঝে আসুক বা না আসুক তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা ঈমানের দাবি। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَٰلَ ٱلَّتِي كَانَتۡ عَلَيۡهِمۡۚ﴾ [الأعراف: 157]
‘‘যে তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করে; আর যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার ও শৃংখল হতে, যা তাদের ওপর ছিল।’’ [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত : ১৫৭]।
(ঘ) ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি থাকা। বেচা-কেনা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য একটি শর্ত হলো ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি ও সন্তুষ্টি। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এ মর্মে ঘোষণা করেছেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَأۡكُلُوٓاْ أَمۡوَٰلَكُم بَيۡنَكُم بِٱلۡبَٰطِلِ إِلَّآ أَن تَكُونَ تِجَٰرَةً عَن تَرَاضٖ مِّنكُمۡۚ﴾ [النساء: 29]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ’’ [সূরা আন-নিসা : ২৯]।
তবে সম্মতি ও সন্তুষ্টি বলতে সব ধরনের সম্মতি ও সন্তুষ্টিই এখানে উদ্দেশ্য নয়। বরং হাদীস থেকে জানা যায় এখানে সম্মতি ও সন্তুষ্টি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বেচা-কেনার ক্ষেত্রে শরী‘আত যে সকল নীতিমালা নির্ধারণ করেছে সেগুলোর আওতায় থেকে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি থাকা। কাজেই শরী‘আত অসংগত কোনো বিষয়ে কারও পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি ও সম্মতি থাকলেও সেটা ইসলামি শরী‘আতের বিচারে হালাল ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত হবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, মদ ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর যদি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তথাপি তা বৈধ হবে না। কারণ মদটাকে ইসলাম হারাম করেছে। অনুরূপ সুদের কারবার যদি কেউ সন্তুষ্টচিত্তে করে তথাপি তা বৈধ হবে না। কারণ ইসলাম সুদকে হারাম করেছে। আবার ব্যবসার ক্ষেত্রে যদি প্রতারণা ও ধোঁকার আশ্রয় নেয়া হয় তবে সেখানেও ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতি ও আন্তরিক সন্তুষ্টি সেটাকে বৈধ করতে পারে না। কারণ ইসলাম প্রতারণাকে হারাম করেছে।
(চলবে)