লগইন রেজিস্ট্রেশন

ইসলামে প্রতিবেশীর গুরুত্ব

লিখেছেন: ' sayedalihasan' @ রবিবার, জুলাই ২৪, ২০১১ (৩:১৭ অপরাহ্ণ)

সাধারণভাবে বাড়ীর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয় । তবে কখনও কখনও সফর অথবা কাজের সঙ্গীকেও প্রতিবেশী বলা হয়। প্রতিবেশীই হচ্ছে মানুষের সবচে’ নিকট জন , যিনি তার খবরাখবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশি জানেন। তাই ইসলাম ধর্মে প্রতিবেশীর অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং তার অধিকারকে খুব বড় করে দেখা হয়েছে। তো প্রতিবেশীর গুরুত্ব ও মর্যাদা, প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা তুলে ধরবো।

আগেই বলেছি যে, বাড়ীর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদেরকে প্রতিবেশী বলা হয়। তবে এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, নিজের বাড়ীর চতুর্দিকে চল্লিশ ঘর পর্যন্ত হচ্ছে প্রতিবেশীর সীমানা। আবার কেউ বলেন, যে তোমার সাথে ফজর পড়ল সেই তোমার প্রতিবেশী, ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হচ্ছে , নিজের বাড়ীর পাশে যার বাড়ী সেই আসল প্রতিবেশী। সে হিসেবে নিজ বাড়ীর সাথে লাগানো বা কাছাকাছি প্রতিবেশীর প্রতি, দূরের প্রতিবেশীর চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে প্রতিবেশীর প্রতি কেন এত গুরুত্ব দিতে হবে ? এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও রাসূল (সাঃ) কি বলেছেন, সে সম্পর্কে খানিকটা আলোচনা করা যাক।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা আন নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ”তোমরা সবাই আল্লাহর ইবাদত কর। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না । পিতা-মাতার সাথে ভাল ব্যবহার কর । নিকটাত্মীয়, এতীম- মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয়-সম্পর্কীয় প্রতিবেশী, আত্মীয়তা বিহীন প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সহচর, তোমাদের মালিকানাধীন দাসী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো ।
অন্যদিকে রাসুল (স.) বলেছেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমাকে প্রতিবেশী সম্পর্কে এতো বেশী অসীয়ত করছিলেন যে, এক পর্যায়ে আমার ধারণা হয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা মনে হয় প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী করে দেবেন।

প্রতিবেশীর ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসের বক্তব্যের পর এবার আমরা প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরবো।
প্রথমত : কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া যাবে না। অর্থাৎ তাকে অভিশাপ দেওয়া, গালী দেওয়া, তার গীবত করা, তার বাড়ির সামনে আবর্জনা ফেলা, তাকে বিরক্ত করা, ছেলে মেয়েদেরকে তার ঘরের জিনিস নষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করা বা বাধা না দেওয়া- এসব করা যাবে না। মহানবী (সা) এ সম্পর্কে বলেছেন, যে আল্লাহর প্রতি এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। তিনি আরো বলেছেন, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার কষ্ট থেকে মুক্ত নয়।

প্রতিবেশীর প্রতি অন্য কর্তব্যগুলো হলো : প্রয়োজনে সাহায্য করা, কোন জিনিস ব্যবহার করতে চাইলে তা দেয়া। প্রতিবেশীকে উপহার দেওয়া, তার বাড়িতে খাবার ইত্যাদি পাঠানো ইত্যাদি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেছেন, যখন তুমি তরকারী রান্না করবে তাতে বেশি করে পানি দেবে এবং তোমার প্রতিবেশীকে তা থেকে কিছু দেবে। এছাড়া প্রতিবেশী ঋণ চাইলে তাকে ঋণ দেয়া, তার প্রয়োজনে তাকে সাহায্য সহযোগিতা করার ব্যাপারেও ইসলামে তাগিদ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে ব্যক্তি মুমিন নয় যে পেট ভরে খায়, অথচ তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।

একজন মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের অনেক অধিকার রয়েছে। সেসব অধিকার কিন্তু আমরা প্রথমেই প্রতিবেশীর ব্যাপারে আদায় করতে পারি। তাহলে ইসলামের নির্দেশ যেমন মানা হবে তেমনি প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্কও বৃদ্ধি পাবে। এসব অধিকার বা কর্তব্যের কয়েকটি হলো, প্রতিবেশীকে সালাম দেওয়া, তার সালামের উত্তর দেয়া, কেউ অসুস্থ হলে তার সেবা-সুশ্রুষা করা, বিভিন্ন উপলক্ষে তাকে দাওয়াত দেয়া এবং তার দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করা ইত্যাদি।

প্রতিবেশীর দুঃখ-কষ্টে যেমন সহমর্মিতা দেখাতে হবে তেমনি তার ভাল কোন সংবাদ যেমন-সন্তান জন্ম নিলে, তার সন্তান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে,কারো বিয়ে হলে এবং এ জাতীয় উপলক্ষে তাকে মোবারকবাদ জানানো এবং বরকতের দোয়া করতে হবে।
আমরা যদি নবী পরিবারের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তাঁরা নিজের পরিবারের চেয়ে প্রতিবেশীদের প্রতি বেশী লক্ষ্য রাখতেন,তাদের মঙ্গলের জন্য আল্লাহর দরবারে দেয়া করবেন। এ সম্পর্কে এবারে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা শোনাচ্ছি।

“প্রতিদিন শেষ রাতে ছেলেটির ঘুম ভেঙ্গে যায়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করে মা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন। ছেলেটিও অভ্যাসবশত বিছানা থেকে উঠে ওজু করে মায়ের পাশে নামাজে দাঁড়ায়। মায়ের সাথে নামাজ পড়ার সময় সে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে। মা নামাজ শেষে মোনাজাত করছেন, কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন প্রতিবেশীদের মঙ্গলের জন্য,তাদের গোনাহ মাফের জন্য। কিন্তু নিজেদের জন্য কিছুই প্রার্থনা করছেন না!
এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর ছেলেটি তার কৌতুহল দমিয়ে রাখতে পারলো না। সে মাকে জিজ্ঞেস করলো, “মা, মোনাজাতের সময় তুমি কেবল পাড়া-প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনা করো। তোমার নিজের জন্য বা আমাদের কারও জন্য তো দোয়া করো না! এর কারণ কি? ”

স্নেহময়ী মা এবার ছেলেকে আদর করে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, বাছা আমার! আমি কেন ওরকম করি ? তুমি জেনে রেখো, প্রতিবেশীর হক আগে। প্রতিবেশীর মঙ্গল কামনা করলে, তাদের খোঁজখবর নিলে আল্লাহ তায়ালা খুব খুশী হন। তাই আমি তাদের জন্য দোয়া করি। তবে তোমাদের জন্যও দোয়া করি। তবে প্রতিবেশীর অধিকার আগে,এটা মনে রাখবে-কেমন ?
পাঠক! আপনারা নিশ্চয়ই এই মহিয়সী মা ও তাঁর ছেলেটির পরিচয় জানতে চাচ্ছেন! হ্যাঁ বলছি, এই মহিয়সী মা ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যা হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ) এবং যে ছেলেটির কথা বলা হলো তিনি হলেন ইমাম হাসান। হযরত ফাতিমারই আদরের সন্তান।

প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও অনেকেই প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, তাদেরকে অযথা কষ্ট দেয়।

একবার একজন আনসার সাহাবী মদীনায় একটি নতুন বাড়ী কিনে সেখানে বসবাস করতে লাগলেন। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি টের পেলেন যে, তার প্রতিবেশী লোকটি সুবিধার নয়। তাই তিনি রাসূলুল্লাহ্র কাছে হাজির হয়ে বললেন, ” হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিছুদিন আগে একটি বাড়ী কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেছি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, আমার প্রতিবেশী শুধু একজন অভদ্র লোকই নয়, সে অত্যন্ত ঝগড়াটে। আমি বারবার চেষ্টা করেও তার অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। ”
সব শুনে মহানবী হযরত আলী , সালমান, আবু যর ও মেকদাদ (রাঃ) এর মতো চারজন বিশিষ্ট সাহাবীকে বললেন, তোমরা মসজিদে গিয়ে নারী-পুরুষ সকলের মধ্যে উচ্চস্বরে ঘোষণা করবে যে, যে ব্যক্তির ঝগড়াটে চরিত্রের কারণে তার প্রতিবেশী কষ্ট পাবে, সে ঈমানদার নয়।
রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী পর পর তিনবার এ ঘোষনাটি দেয়া হলো। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর পবিত্র হাত চারদিকে ঘুরিয়ে বললেন, ” চারদিকের চল্লিশ ঘরের লোক প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য হবে। ”

প্রতিবেশীর ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল। এ আলোচনা তখনই স্বার্থক হবে যখন আমরা প্রতিবেশীদের সাথে উত্তম আচরণ করবো, তাদের দুঃখে দুঃখী হবো এবং তাদের সুখে সুখী হবো।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৪২২ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

১ টি মন্তব্য

  1. হযরত ফাতিমা (সাঃ আঃ) এবং যে ছেলেটির কথা বলা হলো তিনি হলেন ইমাম হাসান। আমার মনে হয় ফাতিমা রা: হবে? এব্যাপারে আপনার কোন কথা থাকলে আলোচনা করতে পারেন।