ইসলামে বিবাহের দর্শন
লিখেছেন: ' sayedalihasan' @ রবিবার, অক্টোবর ৯, ২০১১ (১২:৪০ অপরাহ্ণ)
আল্লাহ তায়ালা মানুষের বংশধারাকে পতনের হাত থেকে রক্ষার জন্য নারী ও পুরুষের অস্তিত্বের মধ্যে এমন কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ব্যবস্থা করেছেন যা পরস্পরকে আকৃষ্ট করে ও সামাজিকভাবে পরিবার প্রতিষ্ঠা করে। অর্থাৎ বিবাহের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দৈহিক চাহিদাটাই মূল ও মৌলিক মানদণ্ড নয়। নারী-পুরুষ সম্পর্কে ইসলামে যা বলা হয়েছে তা হচ্ছে প্রশান্তি ও সাচ্ছন্দ যা নারী-পুরুষের মধ্যে পরস্পরের সহযোগিতার ফলে দাম্পত্য জীবনে গড়ে উঠে। আর এর ফলশ্রুতিতেই মানব প্রজন্ম পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়। মহান আল্লাহ তায়ালা দৈহিক চাহিদাকে প্রকৃতার্থে মানুষকে উৎসাহিত করার জন্য দিয়েছেন যাতে তার দায়িত্বটি বিবাহের ফলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে অব্যাহত রাখতে পারে। অন্য কথায় বৈবাহিক ব্যবস্থা একটি পুরস্কার যা আল্লাহ তায়ালা মানব দায়িত্ব হিসেবে তাকে অর্পণ করেছেন। কেননা, যদি এই চাহিদা বা তৃপ্তি না থাকত তাহলে কেউই বিবাহের দিকে ধাবিত হত না ও তার ফলশ্রুতিতে মানব প্রজন্মের পতন ঘটত। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই বিবাহের বিষয়ে দৈহিক চাহিদাকেই মূল বা আসল হিসেবে নিয়েছে আর ভবিষ্যত প্রজন্ম রক্ষার বিষয়টিকে নিয়েছে শাখা হিসেবে।
ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: বিবাহের উদ্দেশ্য হল প্রজন্মকে রক্ষা করা (যৌন চাহিদা বা দৈহিক চাহিদা একটি উছিলা বা মাধ্যম মাত্র যাতে মানুষ বিবাহের প্রতি ইচ্ছা বা আগ্রহ প্রকাশ করে আর বিবাহের ফলে মানব প্রজন্ম ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।[1]
রাসূল (সা.) বলেছেন:
তিন শ্রেণীর লোক আছে যাদের প্রতি সাহায্য করা আল্লাহ তায়ালা স্বীয় দায়িত্ব বলে মনে করেন, তাদের মধ্যে একদল হচ্ছে ঐ সব ব্যক্তি যারা পবিত্রতা রক্ষা করে ও পাপকর্মে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিবাহ করে।[2]
হযরত আলীর (আ.) সাথে হযরত ফাতিমার (সালামুল্লাহ আলাইহা) বিবাহটিও প্রজন্ম রক্ষার উদ্দেশ্যেই হয়েছিল। কিন্তু এ বিবাহের মধ্যে বিশেষ কিছু কৃতিত্ব আছে যেটা অন্যান্য যুগলদের মধ্যে নেই আর তা হচ্ছে বিশ্ব জগতে নিরুপম সন্তানগণ। সে কারণেই ইমাম রেযা (আ.) বলেছেন:
সত্যিই আসমানবাসীরা হযরত ফাতিমা (সালা.) ও হযরত আলীর (আ.) বিবাহ’তে আনন্দিত হয়েছিল ও হযরত ফাতিমা (সালা.) হতে দু’টি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করেছে যারা হচ্ছে বেহেশতের যুবকদের সর্দার এবং এই দুই সন্তানের মাধ্যমে বেহেশতবাসীদেরকে সৌন্দর্য দান করা হয়েছে।[3]
সে কারণেই রাসূলকে (সা.) বলা হল:
হে মুহাম্মদ! জানিয়ে দাও যে, (এই বিবাহের বরকতে) তাদের দু’জনের সমস্যার সমাধান হয়ে গেল ও আল্লাহ তায়ালা তাদের পবিত্র বংশধর দান করবেন।[4]
রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমাকে (সালা.) উদ্দেশ্য করে বলেন:
আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখুন (তোমাদের দাম্পত্য জীবনকে সুখ-সাচ্ছন্দে ভরে তোল ও নৈতিকতা বজায় রাখ) ও তোমাদের বংশধারাতে তোমাদের সন্তানাদিকে বরকত দান করুন।[5]
বিভিন্ন হাদীসে যেখানে হযরত ফাতিমার (সালা) বিবাহ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে তা থেকে বুঝা যায় যে, বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব প্রজন্মকে অব্যাহত রাখা। কিন্তু হযরত বাতুলের (হযরত ফাতিমার) বিষয়টির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আদর্শ স্বরূপ আর তা হচ্ছে নৈতিকভাবে পবিত্র সন্তানদেরকে লালন-পালন ও যে কোন প্রকারের অপবিত্রতা ও নোংড়ামি থেকে বিরত রাখা যেন ইহকাল ও পরকালে পিতা-মাতা এবং মুসলমানদের জন্য সৌন্দর্য স্বরূপ হয়ে থাকে।
ঐশী বিবাহ
প্রতিটি বিবাহই আল্লাহর নির্দেশিত ও নৈতিকতা ভিত্তিক। কেননা, দু’জন ব্যক্তির পরস্পর বন্ধন প্রতিটি ধর্মে এক ঐশী নির্দেশ যা বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে এসেছে। সুতরাং বিবাহকে কামনা বা বাসনা মিটানোর দৃষ্টিতে দেখার পূর্বে ঐশী বিষয় ও নৈতিক বন্ধনের প্রতি দৃষ্টিপাত করব। বিশেষ করে ঐ দু’জন ব্যক্তির বিবাহের ক্ষেত্রে যারা সকল দিক থেকে মানবতার পরিপূর্ণ উপমা ছিলেন এবং যাদের উপসি’তিতে সমস- ফেরেশ্তারা গর্ববোধ করত। এ পর্যায়ে হযরত ফাতিমা (সালা) ও হযরত আলীর (আ.) পবিত্র বন্ধনের প্রতি দৃষ্টিপাত করব:
ইমাম হোসাইন (আ.) বলেছেন:
সারসাঈল নামে এক ফেরেশ্তা রাসূলের (সা.) নিকট আসল এবং বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তায়ালা আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন যাতে নূরের সাথে নূরের বিবাহটি সম্পাদন করি।
রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন: কার সাথে কার বিবাহ?
সারসাঈল বলল: আপনার কন্যা ফাতিমার সাথে হযরত আলী ইবনে আবী তালিবের (আ.)। এই কথা বলার পর হযরত মুহাম্মদ (সা.) জিব্রাঈল, মিকাঈল ও সারসাঈলের উপসি’তিতে হযরত জাহরা’র (ফাতিমা) ও হযরত আলীর (আ.) বিবাহ সম্পন্ন করলেন। রাসূল (সা.) হযরত আলীকে (আ.) উদ্দেশ্য করে বললেন:
সুসংবাদ তোমার প্রতি হে আবাল হাসান! (আলী) সত্যিই আমি এই ধরণীতে তোমাদের বিয়ে দেওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তায়ালা ফাতিমাকে আসমানেই তোমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।
[1] বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৩, পৃ. ৬২,৭৪, ৭৫; ইলালুশ শারায়েহ, খণ্ড ২, পৃ. ২৬৭, অধ্যায় ৩৪০; সাফিনাতুল বিহার, খণ্ড ২, পৃ. ৫০০।
[2] নাহজুল ফাসাহা, হাদিস ১২১৯।
[3] বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৪৩, পৃ. ১০৫ ও ১০৩।
[4] বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৪৩, পৃ. ১০৯, ১২৭, ১২৮, ১৪১।
[5] প্রাগুক্ত, পৃ. ১১২।