ফ্রি থিঙ্কার বানরের বংশধরেরা, তাদের ফ্রি থিঙ্কারের আড়ালের বাস্তবতা কি?
লিখেছেন: ' Selim Al Din' @ মঙ্গলবার, নভেম্বর ১১, ২০১৪ (১১:১১ পূর্বাহ্ণ)
১) “মুক্তমনা” শব্দটার অর্থ কি?
২) কারা নিজেদের “মুক্তমনা” দাবি করে?
৩) তারা কি সব ক্ষেত্রেই মুক্তমনা?
৪) “মুক্তমনা” দাবির পেছনের কারণ কি?
৫) সবাই কি “মুক্তমনা” হতে বাধ্য?
১) “মুক্তমনা” শব্দটা অনেকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যা মানুষের চিন্তা-চেতনা, আচরণ, অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে এমন কিছু লোক আছে, যারা কিনা নিজেদেরকে বানরের বংশধর পরিচয় দিতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তারা এই তথাকথিত মুক্তমনার একটা সংঙ্গা বের করেছে। আর এই “মুক্তমনা” সংঙ্গা তাদের বিকৃত চিন্তা, বিপদজ্জনক দাবি ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। তাহলে “মুক্তমনা” শব্দটির অর্থ কি?
“মুক্তমনা” বলতে বুঝায় এমন একটি সত্যাগ্রহী অন্তর, যা কুসংষ্কারকে মাড়িয়ে সত্যের অভীমুখে রওনা হয়। যে অন্ধ আনুগত্য, বাপ-দাদার রীতিনীতি আর অসত্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। “মুক্তমনা” অর্থ এই নয় যে, সাইন্স বলেছে চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ আর আপনি “মুক্তচিন্তা” করে বলে বসলেন পৃথিবীর কোন উপগ্রহ নেই।
কিন্তু আফসোসের বিষয় যে, নিজেদের বানরের বংশধর দাবিকারীগণ “মুক্তমনা” সংঙ্গার ফেইক অংশটুকুই গ্রহণ করেছে। আপনি যদি “মুক্তচিন্তা” করে সত্য থেকে বিচ্যুত হন, তবে সেটাকে মুক্তচিন্তা না বলে “মূর্খচিন্তা” বললে ভুল হবে না। কারণ মানুষের ব্রেইন দেওয়া হয়েছে এই কারণে যে, কোনটা সত্য, কোনটা মিথ্যা তা যাচাই-বাছাই করার জন্য।
২) শুধুমাত্র এন্টি ইসলামিক ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিষ্ট এবং তাদের আদর্শিক গুরুরাই “মুক্তমনা” শব্দটা ব্যবহার করে থাকে। এদের মধ্যে আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরী আছে।
৩) না তারা সব ক্ষেত্রে “মুক্তমনা” নয়। শুধু যে তারা সব ক্ষেত্রে “মুক্তমনা” নয় ব্যাপারটা এরকম নয়। বরং অন্যসব ক্ষেত্রে তারা চরম “বদ্ধমনা”। ওবাক হবার কিছু নেই। এটাই সত্য কথন। তারা যে চরম “বদ্ধমনা” তার কিছু প্রমাণঃ
a) তারা রষ্ট্রের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যশীল এবং নিজেদের ছাড়া বাকি সবাইকে দেশের শত্রু ভাবে।
b) তারা রাষ্ট্রের প্রতিটি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শুধুমাত্র রাষ্ট্র যে সকল ধর্মীয় আইন বাস্তবায়ন করেছে সেগুলো বাদে।
c) তারা পহেলা বৈশাখ, পূজা, বসন্তবরণ অনুষ্ঠানকে কুসংষ্কার মনে করে না।
d) তারা মঙ্গল শোভাযাত্রা, বেদীতে ফুল দান, নীরবতা পালনকে কুসংষ্কার বলে সাব্যস্ত করে না।
এখন,
ক) যদি ঈদ পালন কুসংষ্কার হয়, তবে পহেলা বৈশাখ পালন কেন কুসংষ্কার হবে না?
খ) যদি হজ্জ পালন কুসংষ্কার হয়, তবে মঙ্গল শোভাযাত্রা করা কেন কুসংষ্কার হবে না?
গ) যদি নামাজ পড়া কুসংষ্কার হয়, তবে বেদীতে ফুল দেওয়া কেন কুসংষ্কার হবে না?
ঘ) তারা যদি নিজেদের “মুক্তমনা” বলে দাবি করতে চাই তবে বাংলাদেশের সংবিধানের বিরোধীতা করে দেখুক। কারণ যে ব্যাক্তি ধর্মের বিরুদ্ধে মুক্তচিন্তা ব্যাক্ত করে তার রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও মুক্তচিন্তা ব্যাক্ত করা উচিত।
(যদিও এবাদাত কুসংষ্কার নয়) এই কারণে কুসংষ্কার হবে না যে, তারা আসলে ফ্রি থিংকার নয়। তারা নিজেদের কিছু উদ্দেশ্য হাসিলের উদ্দেশ্যে “মুক্তমনা” শব্দটি্র অপব্যবহার করে চলেছে।
৪) তাদের “মুক্তমনা” দাবির পেছনে কিছু শয়তানী কারণ বিদ্যামান আছে। আর এই সকল বানরের সন্তানেরা তা বাস্তবায়নের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। কি সেই কারণ যা তাদের ইসলামের ক্ষেত্রে তথাকথিত “মুক্তমনা” আর অন্য সব ক্ষেত্রে চরম “বদ্ধমনা” হতে শিখিয়েছে?
কারণঃ
a) ইসলাম সুদকে হারাম করেছে। কিন্তু এই সকল তথাকথিত ফ্রি থিংকার বানরের জাতগুলো মুক্তচিন্তা করে সুদ বৈধ করার প্রয়াশ চালাচ্ছে।
b) ইসলাম মদকে হারাম করেছে। কিন্তু এই সকল ফ্রি থিংকার বানরের জাতগুলো মুক্তচিন্তা করে মদকে বৈধ করার প্রয়াশ চালাচ্ছে।
c) ইসলাম ব্যবিচারকে হারাম করেছে। কিন্তু এই সকল ফ্রি থিংকার বানরের জাতগুলো মুক্তচিন্তা করে ব্যবিচারকে বৈধ করার প্রয়াশ চালাচ্ছে।
d) ইসলাম সমকামীতাকে হারাম করেছে। কিন্তু এই সকল ফ্রি থিংকার বানরের জাতগুলো মুক্তচিন্তা করে সমকামীতাকে বৈধ করার প্রয়াশ চালাচ্ছে।
e) ইসলাম ঘুষকে হারাম করেছে। কিন্তু এই সকল ফ্রি থিংকার বানরের জাতগুলো মুক্তচিন্তা করে ঘুষকে বৈধ করার প্রয়াশ চালাচ্ছে।
f) ইসলাম নরহত্যাকে হারাম করেছে। কিন্তু এই সকল ফ্রি থিংকার বানরের জাতগুলো মুক্তচিন্তা করে নরহত্যাকে বৈধ করার প্রয়াশ চালাচ্ছে।
g) ইসলাম নারীদের হিজাবকে ফরজ করেছে। কিন্তু এই সকল ফ্রি থিংকার বানরের জাতগুলো মুক্তচিন্তা করে হিজাবকে নিষিদ্ধ করার প্রয়াশ চালাচ্ছে।
ক) সুদভিত্তিক অর্থনীতি গঠন করলে কাদের লাভ? নিশ্চয় সম্পদশালীদের? যদি তাই হয়, তবে ফকির আর মিসকিন কেন সুদের পক্ষে প্রচারণা চালাবে? আজ বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু ইউরোপ-আমেরিকার সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ অবস্থায় সেই সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে সুদের পক্ষে প্রচারণা চালানোটাকে কিভাবে ব্যাক্ষা করা যায়?
সুদ এতই খারাপ! এতই খারাপ! এতই খারাপ যে, তা মানুষের রক্ত শুষে নেয়। সুদের তুলনা হচ্ছে আগুনের সাথে। কারণ আগুন নিচ থেকে উপর দিকে উঠে। ঠিক তেমনি সুদও তাই। নিচু লোকের পকেট থেকে টাকা উঁচু লোকের পকেটে যায়। কিন্তু যাকাত তার উদাহরণ হচ্ছে মাটির সাথে। অর্থাৎ আপনি মাটিকে যতোই উপরে নিক্ষেপ করেন না কেন তা নিচে ফিরে আসবেই। অর্থাৎ সম্পদ উঁচু লোকের পকেট থেকে নিচু লোকের পকেটে যায়।
ব্যাপারটা এভাবে ব্যাক্ষা করা যেতে পারে যে, একজন লোক যে কিনা রক্তশূণ্যতায় ভুগছে আর অপরজনের শরীরে রক্ত অতিরিক্ত হয়ে গেছে। এখন যদি অতিরিক্ত রক্তওয়ালা ব্যাক্তির থেকে রক্ত নিয়ে রক্তশূণ্যতায় ভুগা ব্যাক্তিকে রক্ত দেওয়া যায় তবে তারা দুজনেই বাঁচবে। কিন্তু যদি রক্তহীন ব্যাক্তির শরীর থেকে উল্টো রক্ত নিয়ে বেশি রক্তওয়ালার শরীরে দেওয়া হয় তবে তারা দুজনেই মারা যাবে। কিন্তু কিভাবে?
যার শরীরে রক্ত নাই সে মারা যাবে না খেয়ে। আর যার শরীরে রক্ত বেশি সে মারা যাবে সন্ত্রাসীদের (যে গরিব অভাবের তাড়নায় সন্ত্রাস হয়েছে) গুলিতে।
গরিব দেশে বাস করেও এতো জঘন্য বিষয় সুদের পক্ষে প্রচারণার আড়ালে কি সেই প্রভূ রাষ্ট্রের ডলার আছে?
খ) ইসলাম মদকে হারাম করেছে। মদ একটা সমাজকে ধ্বংস করে। মানুষের নৈতিকতার মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায়। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাবা তার শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য তার মেয়ের উপর ঝাপিয়ে পরেছে। এরকম জঘন্য, অক্ষমাযোগ্য অপরাধ আমরা চোখের সামনে ঘটতে দেখছি। যার তুলনা কেবল মাত্র পশুর সাথেই করা যাই। কিন্তু এই সকল তথাকথিত মুক্তমনা লকবধারীরা মদ নিষিদ্ধ হওয়ার বিপক্ষে প্রচারণা চালায়। এর দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, তারা কতটা বিকৃত মানুষিকতা সম্পূর্ণ।
গ) ইসলাম ব্যবিচারকে হারাম করেছে। ব্যবিচার সুখী পরিবার গঠনের অন্তরায়। ব্যবিচারের ফলাফল এতোটাই জঘন্য যে, আমেরিকায় ১৭% ভাই তাদের আপন বোনদের সাথে মিলিত হয়! (নাউজুবিল্লাহ!)। এতে করে পরিবার ধ্বংস হয়। মনুষ্যত্বের অবক্ষয় ঘটে। কিন্তু তারা সেই ফ্রি সেক্সের পক্ষে প্রচারণা চালাই। তাদের বিকৃত মস্তিষ্ক এসবের জন্য দায়ী।
ঘ) ইসলাম সমকামীতাকে হারাম করেছে। এটা এতটাই বিকৃত, এতটাই বিকৃত যে আল্লাহ একটা পুরো জাতিকে এই পাপের জন্য ধ্বংস করেছেন। সডম ও গোমরা জাতি যারা পৃথিবীতে সর্বপ্রথম এই নিকৃষ্ট প্রথার উদ্ভব ঘটায়। তাদের নবী হযরত লুত (আঃ)-এর সতর্কবানীর পরেও তারা সংশোধীত হয় নি। এর ফলে খোদায়ী গজব তাদের পাকড়াও করে। যেটা বর্তমানে জর্ডানে অবস্থিত। ডেড সি বা মৃত সাগর নামে পরিচিত। আল্লাহ জনপদটিকে উল্টিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের উপর কংকরের প্রস্থর বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন। অথচ সেই একই পাপের পুনুরাবৃত্তি করছে এরা হরহামেশেই। তাদেরও একই পরিনতি হবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের উপর হয়েছিল।
ঙ) ঘুষ ইসলাম হারাম করেছে। যা মানুষের অধীকার হরণ করে। সমাজের পেটমোটারা শুধু সুবিধা ভোগ করে আর বাকিরা পথের কাঙ্গাল। অথচ ঘুষ বন্ধের জন্য তারা কোন প্রতিবাদ করেনা। করবে কি করে তাদের যে অসৎ জীবনাচরণ, তাতে খাবে কি?
চ) ইসলামে হত্যার শাস্তি হল হত্যা। কিন্তু হত্যার শাস্তি হত্যা হলে নাকি মানবাধিকার ল্যাংটা হয়ে যায়। তারা খুনীর মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে কিন্তু নিহত ব্যাক্তির মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে না। তারা ধর্ষকের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে কিন্তু ধর্ষিতা মেয়েটির মানবাধিকার নিয়ে কোন কথা বলে না। তারা চোরের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে কিন্তু মালিকের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেনা।
কারণ তারাই সমাজের চোর, তারাই ধর্ষক, তারাই খুনী। ভাল মানুষ কখনই খুনী, চোর, ধর্ষকের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলবে না।
ছ) হিজাব ইসলামে ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু বানরের বংশগুলো উলঙ্গ সভ্যতা চাই। হিজাব নাকি সেকেলে। যত কম পোশাক ততো আধুনিক। তাহলে সবচেয়ে আধুনিক হল আফ্রিকার জঞ্জলের উলঙ্গ মানুষগুলো। আসলে এন্টি ইসলামিক তথাকথিত ফ্রি থিংকাররা চাই যাতে করে সবকিছু ভোগের পন্যের মত কাছে পাওয়া যায়। এজন্য তারা তথাকথিত নারী স্বাধীনতার ধুঁয়া তুলে মেয়েদের বাজারের পণ্য বানাতে চাই।
এ বিষয়ে কি আর কোন সন্দেহ থাকলো যে, তথাকথিত ফ্রি থিংকার লকবধারীরা নিজেদের বিকৃত জীবনাচারের বৈধতা দেবার জন্য এহেন জঘন্য বিষয়ের পক্ষে প্রচারণা চালাই এবং তাদের মাথার উপর ইউরোপ-আমেরিকার ডলার আছে?