লগইন রেজিস্ট্রেশন

কবর, মাযার ও মৃত্যু সম্পর্কীত কতিপয় বিদ’আত। পর্ব ০১

লিখেছেন: ' shahedups' @ শনিবার, জুলাই ৩০, ২০১১ (৩:৫৬ অপরাহ্ণ)

কবর, মাযার ও মৃত্যু সম্পর্কীত কতিপয়

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
আকাশে ঘন কালো মেঘের আড়ালে অনেক সময় সূর্য্যের কিরণ ঢাকা পড়ে যায়। মনে হয় হয়ত আর সূর্য্যের মুখ দেখা যাবে না। কিন্তু সময়ের ব্যাবধানে নিকশ কালো মেঘের বুক চিরে আলো ঝলমল সূর্য্য বের হয়ে আসে। ঠিক তেমনি বর্তমানে আমাদের সমাজের দিকে তাকালে দেখা যাবে বিদ’আতের কালিমা ইসলামের স্বচ্ছ আসমানকে ঘিরে ফেলেছে। যার কারণে কোন কাজটা সুন্নাত আর কোন কাজটা বিদ’আত তা পার্থক্য করাটাই অনেক মানুষের জন্য কঠিন হয়ে গেছে। যা হোক শত রকমের বিদ’আতের মধ্য থেকে এখানে শুধু কবর, মাযার ও মৃত্যু সম্পর্কীত কয়েকটি প্রসিদ্ধ বিদ’আত তুলে ধরা হল। যদিওএ সম্পর্ক আরও অনেক বিদ’আত আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। যদি এতে আমাদের সমাজের বিবেকবান মানুষের চেতনার দুয়ারে সামান্য আঘাত হানে তবেই এ প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
১) মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা:
আজকেআমাদের সমাজে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী সন্তান-সন্ততি ইত্যাদির মৃত বার্ষিকী অত্যন্ত জমজমাট ভাবে পালন করা হয়ে থাকে। সেখানে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে বিশাল খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়। যদিও গরীব শ্রেণীর চেয়ে অর্থশালীদের মধ্যে এটা পালন করার ব্যাপারটি বেশি চোখে পড়ে কিন্তু আমরা কজনে জানি বা জানার চেষ্টা করি যে, মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা কারো মৃত্য উপলক্ষ্যে শোক দিবস পালন পালন করা জঘন্যতম বিদ্‌’আত? অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ উপলক্ষ্যে শামিয়ানা টাঙ্গানো, ঘর-বাড়ী সাজানো, আলোকসজ্জা করা এবং কুরআন তেলাওয়াত বা বিভিন্ন তাসবীহ-ওযীফা ইত্যাদি পাঠ করে সেগুলোর সাওয়াব মৃতব্যক্তির রূহের উদ্দেশ্যে বখশানো বিদ’আত। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) বলেন, “মৃত ব্যক্তিকে ছায়া দিতে পারে কেবল তার আমল; তাঁবু টানিয়ে ছায়া দেয়া সম্ভব নয়।”
অনুরূপভাবে জানাযা দিয়ে ফিরে আসার পর জানাযায় অংশগ্রহণকারীদেরকে, যে সমস্ত মানুষ শোক জানাতে আসে তাদেরকে অথবা ফকীর-মিসকীনদের খানা খাওয়ানো, বৃহস্পতিবার, মৃত্যু বরণ করার চল্লিশ দিন পর অথবা মৃত বার্ষিকীতে খাওয়ার অনুষ্ঠান করা, মীলাদ মাহফিল করা, ‘চার কুল’ এর ওযিফা পড়া ইত্যাদি সবই হারাম এবং বিদ’আতী কাজ। কারণ, নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নত এবং সাহাবীগণের কার্যক্রমে এ সব কাজের কোন প্রমাণ নেই। এ সব জীবিকা উপার্জন, অর্থ অপচয় এবং ধ্বংশের মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নয়।
২) চল্লিশা পালন:
মানুষ মারা যাওয়ার চল্লিশ দিন বিদ্‌আতঃপরে মৃতের চল্লিশা উপলক্ষ্যে খানার আয়োজন করা অথবা চল্লিশদিন পর্যন্ত প্রত্যেক বৃহস্পতিবার শোক পালন করা, মৃত্যুর পর প্রথম ঈদকে বিশেষভাবে শোকদিবস হিসেবে পালন করা, সে দিন কুরআনের হাফেয বা কারী সাহেবদের ডেকে কুরআন পড়ানো এবং শোক পালনের জন্য লোকজন একত্রিত করা ইত্যাদি সবই বিদ’আত এবং হারাম।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং ইমাম ইব্‌ন মাজাহ (রহঃ) ছহীহ সনদে আব্দুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন “আমরা মৃত্যুবরণকারী সাহাবীগনের কাফন-দাফন সম্পন্ন করে মৃতের বাড়ীতে একত্রিত হওয়া এবং তাদের পক্ষ থেকে খাবারের আয়জন করাকে ‘নাওহা’ এর মতই মনে করতাম।” ইমাম আহমদ বলেন, “এটি একটি জাহেলী কাজ।” নাওহা অর্থঃ কারো মৃত্যেুতে চিৎকার করে কান্নাকাটি করা, শরীরে আঘাত করা, চুল ছেড়া, জামা-কাপড় ছেড়া …ইত্যাদি। এসব কাজ করা ইসলামে হারাম।
৩) নির্দিষ্ট কোন দিনে কবর যিয়ারতের জন্য একত্রিত হওয়া, হাফেজদের দিয়ে কুরআন খতম করিয়ে পারিশ্রমিক দেয়া ইত্যাদি।
ঈদ বা জুমার দিন পুরুষ-মহিলা একসাথে বা আলাদা আলাদাভাবে কবরের পাশে একত্রিত হওয়া, খানা বিতরণ অথবা কিছু তথাকথিত মৌলোভী বা কুরআনের হাফেজদেরকে একত্রিত করে কুরআন পড়িয়ে তাদেরকে পারিশ্রমিক দেয়া ইত্যাদি কাজ সুস্পষ্ট বিদ’আত এবং নাজায়েয।
কবর যিয়ারতের জন্য জুমা বা ঈদের দিনের বিশেষ কোন বৈশিষ্ট প্রামাণিত নয়। অনুরূপভাবে কাবরের পাশে কুরআন পড়া বা পড়ানো একাটি ভিত্তিহীন কাজ। একে জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা আরও বেশি অন্যায়।
৪) সবীনা পাঠ:
রমাযান বা অন্য মাসে সারারাত ধরে কুরআন খতম করানো এবং এজন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা রাসলুল্লাহ (সাল্লাল্ল্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল্লাম) এর শিক্ষা এবং সাহাবায়ে কেরামের নীতি বিরুদ্ধ কাজ। নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে এর দলীল নেই।
শরীয়তের দাবী হল, আমরা নিজেরা এ কুরআন পাঠ করব, নিজেদের মধ্যে তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করব এবং কুরআনের মর্ম-উদ্দেশ্য বুঝার জন্য গবেষণা করব।
রাসূল (সাল্লাল্ল্ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্ল্লাম) এর নিয়ম ছিল, তিনি রমাযানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগীর জন্য কোমর বেঁধে নামতেন, আর বাড়ীর সবাইকে জাগিয়ে রাত জাগরণ করাতেন (বুখারী ও মুসলিম)। কিন’, কুরআনের সবীনা পড়া করা অথবা হাফেজ সাহেবদের ডেকে অর্থের বিনিময়ে কুরআন পড়ানোর কোন প্রমাণ নেই।

চলবে……ইনশাল্লাহ।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৫৫ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

২ টি মন্তব্য

  1. কেউ যদি সময় বা দিন নির্দিষ্ট না করে এসব আমল করে তাহলে কোন অসুবিধা আছে কি?

    shahedups

    @মুসাফির, এর আগে একটা হাদীস বলি আর সেটা হল: নবী করীম (সা: ) বলেছেন-সেই ইবাদত আল্লাহর ও আমার নিকট অধিক প্রিয় যা কিনা নিয়মিত করা হয়। এই হাদীসের ভিত্তিতে আপনার কথা অনুসারে কোন সমস্যা নাই, ইবাদত করেন, কোরান তেলাওয়াত করেন। আল্লাহ অবশ্যি আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।