সাধারণ ভুল যেগুলো রমজানের সময় আমরা করে থাকি, পর্ব ০২
লিখেছেন: ' shahedups' @ রবিবার, অগাষ্ট ১৪, ২০১১ (২:২২ অপরাহ্ণ)
৮. ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরী বাদ দেওয়াঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “সেহরী খাও, কারণ এটার মধ্যে বরকত রয়েছে।”(বুখারী, মুসলিম)
এবং তিনি (সাঃ) বলেছেনঃ “আমাদের সাওম আর আহলে কিতাবদের সাওম পালনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে সেহরী গ্রহণ।”(মুসলিম)
৯. ইমসাক এর সময় সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেওয়াঃ
কিছু লোক রয়েছে যারা ফজরের ওয়াক্তের ১০-১৫ মিনিট পূর্বে ইমসাক পালনের জন্য সেহরী খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শেখ ইবনে উছাইমিন বলেছেনঃ “এটা বিদ’আত ছাড়া আর কিছু নয় যার কোন ভিত্তি সুন্নাহে নেই। বরং সুন্নাহ হল তার উল্টোটা করা। আল্লাহ প্রত্যুষের আগ পর্যন্ত আমাদেরকে খেতে অনুমতি প্রদান করেছেনঃ “আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে স্পষ্ট হয়।”(সূরা বাকারাঃ১৮৭)
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুম এর আযানের ধ্বনি শুনতে পাও, কারণ সে প্রত্যূষ না আসা পর্যন্ত আযান দেয় না।”
এই ইমসাক হচ্ছে কিছু সংখ্যক লোকের দ্বারা পালনকৃত আল্লাহর আদেশের অতিরিক্ত কাজ, তাই এটা ভুয়া। এটা ধর্মের নামে এক ধরনের উগ্রপন্থী আচরণ। আর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে, যারা উগ্রপন্থা অবলম্বন করে তারা ধ্বংস হয়েছে।”(মুসলিম)
১০. সেহরী না খাওয়ায় সাওম পালন না করাঃ
আমাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক রয়েছে যারা সাওম পালন করে না এই ভয়ে যে সেহরী খাওয়া হয় নি।যাহোক, এটা এক ধরনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভালোবাসা ও কাপুরূষতা। এ আর এমন কি ব্যাপার যে সামান্য কয়েক মুঠো খাবার খাওয়া বাদ হয়ে যায়? এমন না যে এর কারণে আমরা মারা যাব। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য সবকিছুকেই ছাপিয়ে যায়।
১১. ইফতার এবং সেহরির নিয়ত করা
ইফতার এবং সেহরির সময় নিয়ত এর উদ্দ্যেশ্যে মুখ দিয়েদুআউচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয়। ইফতার এবং সেহরির যে সকল দুআ আমাদের দেশে প্রতি বছর ইসলামিক ক্যালেন্ডারগুলিতে প্রকাশিত হয় সেগুলো বিদআত। ইফতার অথবা সেহরির জন্য নির্দিষ্ট কোন দুআ সহিহ হাদিস এ নেই। এক্ষেত্রে শুধু মনে মনে নিয়ত করলেই ইনশাআল্লাহ হবে।
১২. রোযা ভাঙতে দেরি করাঃ
আমাদের অনেকেই ইফতারের সময় মাগরিবের আযান শেষ হওয়া পর্যন্ত বসে থাকেন, আযান শেষ হলে রোযা ভাঙেন। সূর্য অস্ত যাবার পর আযান দেওয়ার সাথে সাথে রোযা ভাঙা সুন্নাহ সম্মত। আনাস(রাঃ) বলেন,“রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটাই করতেন।(মুসলিম)
১৩. ইফতার বেশি খেতে গিয়ে মাগরিবের নামায জামাআত ধরতে না পারাঃ
আমরা অনেকেই ইফতারিতে এত বেশি খাবার নিয়ে বসি যে সেগুলো শেষ করতে গিয়ে মাগরিবের জামাআত ধরতে পারিনা। এটা একেবারেই অনুচিত। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েক টুকরা খেজুর মুখে দিয়ে ইফতার ভেঙে অতঃপর মাগরিবের নামাজ এর জন্য চলে যেতেন। নামাজ শেষ করে এসে আমরা ফিরে এসে ইচ্ছা করলে আরও কিছু খেতে পারি।
১৪. আমাদের দুআ কবুল হওয়ার সুযোগ ছেড়ে দেওয়াঃ
সিয়াম পালনকারী ব্যক্তির দুআ রোযা ভাঙার সময় আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে থাকে। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,“তিন ধরনের ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয়না- ১)একজন পিতার দুয়া, ২)রোযাদার ব্যক্তির দুয়া, ৩)মুসাফিরের নামাজ”।(বায়হাকি)
আমরা এই সময়ে দুআ না করে বরং খাবার পরিবেশন,কথাবার্তা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমাদের চিন্তা করা উচিৎ কোনটা আমাদের দরকার- খাবার নাকি দুআ কবুল হওয়া ?
১৫. রোযা রাখা অথচ নামাজ না পরাঃ
সিয়াম পালনকারী কোন ব্যক্তি নামাজ না পরলে তার সিয়াম কবুল হয়না। রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন,“সালাত(নামাজ) হচ্ছে ঈমান এবং কুফর এর পার্থক্যকারী”।(মুসলিম)
আসলে শুধু সিয়াম নয়,সালাত(নামাজ) না পরলে কোন ইবাদতই কবুল হয়না।
রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেন,“যে আসরের সালাত পরেনা, তার ভাল কাজসমূহ বাতিল হয়ে যায়।”(বুখারি)
শুকরিয়া অনেক।
যারা রমজান মাস এলে মসজিদে আসেন আবার রমজান চলে গেলে আর মসজিদে খুজে পাওয়া যায় না -তাদের কি হবে?
ইফতারের নামে টেলিভিষণে খাবারের বিভিন্ন সৌখিন আইটমের ‘রেসিপি’ দেওয়া কতটুকু শরিয়ত সম্মত? এতে সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য কিছুটা হলেও ব্যহত হয় না কি?