আমাদের প্রভূ কি নিকটে আছেন না দূরে আছেন
লিখেছেন: ' shahedups' @ বৃহস্পতিবার, অগাষ্ট ১৮, ২০১১ (৪:৫২ অপরাহ্ণ)
একজন পল্লীবাসী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করে, “হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রভূ কি নিকটে আছেন না দূরে আছেন? যদি নিকটে থাকেন তবে চুপে চুপে ডাকবো আর যদি দূরে থাকেন তবে উচ্চৈঃস্বরে ডাকবো।”এতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নীরব হয়ে যান। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় (মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম
“এবং যখন আমার কোন বান্দা আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দাও- নিশ্চয় আমি সন্নিকটবর্তী; কোন আহ্বানকারী যখনই আমাকে আহ্বান করে তখনই আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে থাকি; সুতরাং তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমাকে বিশ্বাস করে- তা হলেই তারা সিদ্ধ মনোরথ হতে পারবে” – (সূরা বাকারাহ-১৮৬)
একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, সাহাবীদের রাদিয়াল্লাহু আনহুম “আমাদের প্রভূ কোথায় রয়েছেন” এই প্রশ্নের উত্তরে এটা অবতীর্ণ হয়। (ইবনে জারীর) । হযরত আতা’ রাহিমাহুল্লাহ বলেন যে, যখন “তোমাদের মালিক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো…” (৪০:৬০) এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন জনগণ জিজ্ঞেস করে, “আমরা কোন সময় প্রার্থনা করবো?” তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (ইবনে জুরাইজ)
হযরত আবু মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,”আমরা এক যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা প্রত্যেকে উঁচু স্থানে উঠার সময় এবং উপত্যকায় অবতরণের সময় উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর ধ্বনি করতে করতে যাচ্ছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট এসে বলেন, ‘হে জনমণ্ডলী! নিজেদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর। তোমরা কোন কম শ্রবণকারী ও দূরে অবস্থানকারীকে ডাকছো না। যাঁকে তোমরা ডাকতে রয়েছো তিনি তোমাদের যানবাহনের স্কন্ধ অপেক্ষাও নিকটে রয়েছেন। হে আবদুল্লাহ বিন কায়েস! তোমাকে কি আমি বেহেশতের কোষাগারসমূহের সংবাদ দেবো না? তা হচ্ছে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এই কলেমাটি”।(মুসনাদ-ই-আহমাদ)
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘আমার বান্দা আমার উপর যেরূপ বিশ্বাস রাখে আমিও তার সাথে ঐরূপ ব্যবহার করে থাকি। যখন সে আমার নিকট প্রার্থনা জানায়, আমিও তার সঙ্গেই থাকি’। (মুসনাদ-ই-আহমাদ)
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ‘আমার বান্দা যখন আমাকে স্মরণ করে এবং আমার যিকরে তার ওষ্ঠ নড়ে উঠে, তখন আমি তার সাথেই থাকি’ (ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ এটা বর্ণনা করেছেন)।’ এই বিষয়ের আয়াত কুরআনে বর্ণিত রয়েছে। ঘোষণা হচ্ছে, “যারা খোদাভীরু ও সৎ কর্মশীল নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে রয়েছেন।”
হযরত মূসা আলাইহি সালাম ও হযরত হারূন আলাইহি সালাম কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, অর্থাৎ ‘আমি তোমাদের দু’জনের সাথে রয়েছি, আমি শুনছি ও দেখছি।’ উদ্দেশ্য এই যে, মহান আল্লাহ প্রার্থনাকারীদের প্রার্থনা ব্যর্থ করেন না। এরকমও হয় না যে, তিনি বান্দাদের প্রার্থনা হতে উদাসীন থাকেন বা শুনেন না। এর দ্বারা আল্লাহ তা’আলা প্রার্থনা করার জন্যে তাঁর বান্দাদেরকে উৎসাহ দিয়েছেন এবং তাদের প্রার্থনা ব্যর্থ না করার অঙ্গীকার করেছেন। হযরত সালমান ফারিসী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বান্দা যখন আল্লাহ তা’আলার কাছে হাত উঁচু করে প্রার্থনা জানায় তখন সেই দয়ালু আল্লাহ তার হাত দু’খানা শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন”। (মুসনাদ-ই-আহমাদ)।
হযরত আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে বান্দা আল্লাহ তা’আলার নিকট এমন প্রার্থনা করে যার মধ্যে পাপও নেই এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নতাও নেই, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাকে তিনটি জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি জিনিস দান করে থাকেন। হয়তো বা তার প্রার্থনা তৎক্ষণাৎ কবুল করে নিয়ে তার প্রার্থিত উদ্দেশ্য পুরো করেন, কিংবা তা জমা করে রেখে দেন, এবং পরকালে দান করেন বা ওরই কারণে এমন কোন বিপদ কাটিয়ে দেন, যে বিপদ তার প্রতি আপতিত হতো।” একথা শুনে জনসাধারণ বলেঃ ‘হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমরা যখন প্রার্থনা খুব বেশী করে করবো?’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘আল্লাহ তা’আলার নিকট খুবই বেশী রয়েছে’। (মুসনাদ-ই-আহমাদ)
হযরত ওবাদাহ বিন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘ভূ-পৃষ্ঠের যে মুসলমান মহা সম্মানিত ও মর্যাদাবান আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা জানায় তা আল্লাহ তা’আলা গ্রহণ করে থাকেন, হয় সে তার প্রার্থিত উদ্দেশ্য লাভ করে অথবা ঐ রকমই তার কোন বিপদ কেটে যায় যে পর্যন্ত না কোন পাপের কাজে বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নতার কাজে সে প্রার্থনা করে’। (মুসনাদ-ই-আহমাদ)
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ” যে পর্যন্ত না কোন ব্যক্তি প্রার্থনায় তাড়াতাড়ি করে, তার প্রার্থনা অবশ্যই কবুল হয়। তাড়াতাড়ি করার অর্থ এই যে, সে বলতে আরম্ভ করে -’আমি সদা প্রার্থনা করতে রয়েছি, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা কবুল করছেন না”। (তাফসীর-ই-মুআত্তা মালিক)। সহীহ বুখারী শরীফের বর্ণনায় এটাও আছে যে, প্রতিদান স্বরূপ তাকে বেহেশত দান করা হয়। সহীহ মুসলিমের মধ্যে এও রয়েছে যে, কবূল না হওয়ার ধারণা করে নৈরাশ্যের সাথে সে প্রার্থনা করা পরিত্যাগ করে, এটাই হচ্ছে তাড়াতাড়ি করা। হযরত আবূ জাফর তাবারীর (রাহিমাহুল্লাহ) তাফসীরে এই উক্তিটি হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণণা করা হয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “অন্তর বরতনসমূহের ন্যায়, একে অপর হতে বেশী পর্যবেক্ষণকারী হয়ে থাকে। হে জনমন্ডলী ! আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করবে তো কবূল হওয়ার বিশ্বাস রেখে কর। জেনে রেখো যে,উদাসীনদের প্রার্থনা আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন না” (তাফসীরে মুসনাদ-ই-আহমাদ)
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই আয়াত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেন। তখন তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা জানিয়ে বলেনঃ ‘হে আল্লাহ ! আয়েশার (রা) এই প্রশ্নের উত্তর কি হবে?’ তখন জিবরাঈল আলাইহি সালাম আগমন করেন এবং বলেন, “আল্লাহ আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলেছেন-’এর উদ্দেশ্য ঐ ব্যক্তি যে সৎ কার্যাবলী সম্পাদনকারী হয় এবং খাঁটি নিয়ত ও আন্তরিকতার সাথে আমাকে ডেকে থাকে, তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে তার প্রয়োজন পুরো করে থাকি।’ (তাফসীরে ইবনে মিরদুওয়াই)। এই হাদীসটি ইসনাদ হিসেবে গরীব (দুর্বল বা অসহায়)।
অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর বলেনঃ ‘হে আল্লাহ ! আপনি প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কবূলের অঙ্গীকার করেছেন। আমি হাজির হয়েছি, হে আমার মা’বুদ আমি হাজির হয়েছি, আমি হাজির আছি। হে অংশীদার বিহীন আল্লাহ ! আমি উপস্থিত রয়েছি। হামদ, নিয়ামত এবং রাজ্য আপনারই জন্যে। আপনার কোন অংশীদার নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি এক ও অদ্বিতীয়। আপনি অতুলনীয়। আপনি এক ও পবিত্র। আপনি স্ত্রী ও সন্তানাদি হতে দূরে রয়েছেন। না আপনার কেউ সংগী রয়েছে। না আপনার কেউ সমকক্ষ রয়েছে, না আপনার মত কেউ রয়েছে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার সাক্ষ্য সত্য।(তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই)
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইবনে আদম! একটি জিনিস তো তোমার আর একটি জিনিস আমার এবং একটি জিনিস তোমার ও আমার মধ্যস্থলে রয়েছে। খাঁটি আমার হক তো এটাই যে, তুমি শুধুমাত্র আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে আর কাউকেও অংশীদার করবে না। তোমার জন্যে নিদৃষ্ট এই যে, তোমার প্রতিটি কাজের পূর্ণ প্রতিদান আমি তোমাকে অবশ্যই দেবো। তোমার কোন পুণ্যই আমি নষ্ট করবো না। মধ্যবর্তী জিনিসটি এই যে, তুমি প্রার্থনা করবে আর আমি কবুল করবো। তোমার একটি কাজ হচ্ছে প্রার্থনা করা আর আমার একটি কাজ হচ্ছে তা কবূল করা (তাফসীর-ই-বাযযার)
প্রার্থনার এই আয়াতটিকে রোযার নিদের্শনাবলীর আয়াতসমূহের মধ্যস্থলে আনয়নের নিপূণতা এই যে, যেন রোযা শেষ করার প্রার্থনার প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মে এবং তারা যেন প্রত্যহ ইফতারের সময় অত্যধিক দু’আ করতে থাকে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “রোযাদার ইফতারের সময় যে দু’আ করে আল্লাহ তা’আলা তা কবূল করে থাকেন”। হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা) ইফতারের সময় স্বীয় পরিবারের লোককে এবং শিশুদেরকে ডেকে নিতেন ও তাদের সকলকে নিয়ে প্রার্থনা করতেন (সুনান-ই-আবূ দাউদ,তায়ালেসী)। সুনান-ই-ইবনে মাজাহর মধ্যেও এই বর্ণণাটি রয়েছে এবং ওর মধ্যে সাহাবীদের নিম্নের এর দু’আটি নকল করা হয়েছেঃ “হে আল্লাহ ! আপনার যে দয়া প্রত্যেকে জিনিসকে ঘিরে রয়েছে তা আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আপনার নিকট প্রার্থনা জানাচ্ছি যে, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন!” ।
অন্য হাদীসে রয়েছে যে, তিন ব্যক্তির প্রার্থনা অগ্রাহ্য হয় না। (১) ন্যায় বিচারক বাদশাহ (২) রোযাদার ব্যক্তি যে পর্যন্ত না সে ইফতার করে এবং (৩) অত্যাচারিত ব্যক্তির দু’আ । আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাহার মর্যাদা উচ্চ করিবেন। অত্যাচারিত ব্যক্তির বদ দু’আর কারণে আকাশসমূহের দরজাগুলো খুলে দেয়া হবে এবং আল্লাহ তা’য়ালা বলবেনঃ ‘আমার সম্মান ও মর্যাদার শপথ! বিলম্বে হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করবো। (মুসনাদ-ই-আহমাদ) জামে’উত তিরমিযী, সুনান-ই-নাসায়ী ও ইবনে মাযাহ)
- উৎসঃ তাফসীর ইবনে কাসীর; সূরা বাকারাহ, আয়াত -১৮৬
সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
@রাসেল আহমেদ, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহ।
@anamul haq, আমিন।
পড়ে খুব ভাল লাগল, আপনাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনার লেখা গুলি আমার ভাল লাগে।