লগইন রেজিস্ট্রেশন

কোরআন ও হাদীসের আলোকে মুনাফীকের চরিত্র। পর্ব ০৩।

লিখেছেন: ' shahedups' @ বুধবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১১ (৩:১২ অপরাহ্ণ)

১৩. গাইরুল্লাহর নিকট বিচার ফায়সালা নিয়ে যাওয়া:
মুনাফিকদের অন্যতম স্বভাব হল, তারা বিচার ফায়সালার জন্য আল্লাহর রাসূল সা. এর নিকট যেত না। তারা তাদের কাফের বন্ধুদের নিকট বিচার ফায়সালার জন্য যেত। যাতে তারা তাদের প্রতিপক্ষকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করতে সক্ষম হয়। কারণ, তারা জানতো যদি ন্যায় বিচার করা হয়, তখন ফায়সালা তাদের বিপক্ষে যাবে। আর রাসূল সা. কখনোই ন্যায় বিচার ও ইনসাফের বাহিরে যেতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা দাবী করে যে, নিশ্চয় তারা ঈমান এনেছে তার উপর, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি এবং যা নাযিল করা হয়েছে তোমার পূর্বে। তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করতে। আর শয়তান চায় তাদেরকে ঘোর বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত করতে। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা আস যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে’, তখন মুনাফিকদেরকে দেখবে তোমার কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে ফিরে যাচ্ছে”। [সূরা নিসা: ৬০, ৬১]
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, যখন মুনাফিকদের আল্লাহ তা‘আলার সুস্পষ্ট ওহীর বিধান, আল্লাহর কিতাব ও রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সুন্নাতের দিকে বিচার ফায়সালার জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তারা পলায়ন করে এবং তুমি তাদের দেখতে পাবে, তারা এ থেকে সম্পূর্ণ বিমুখ। আর যখন তুমি তাদের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে পারবে, তখন তুমি দেখতে পাবে তাদের মধ্যে ও বাস্তবতার মধ্যে বিশাল তফাৎ। তারা কোন ভাবেই আল্লাহর পক্ষ হতে অবতীর্ণ ওহীর আনুগত্য করে না।[10]

১৪. মুমিনদের মাঝে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা: মুনাফিকরা চেষ্টা করে কিভাবে মুমিনদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করা যায়। তারা সব সময় মুমিনদের মাঝে অনৈক্য, মত বিরোধ ও ইখতেলাফ লাগিয়ে রাখে। তারা একজনের কথা আরেক জনের নিকট গিয়ে বলে। চোগলখোরি করে বেড়ায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যদি তারা তোমাদের সাথে বের হত, তবে তোমাদের মধ্যে ফ্যাসাদই বৃদ্ধি করত এবং তোমাদের মাঝে ছুটোছুটি করত, তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির অনুসন্ধানে। আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে তাদের কথা অধিক শ্রবণকারী, আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত”। [সূরা তওবা: ৪৭]
অর্থাৎ, ﴿لَوۡ خَرَجُواْ فِيكُم مَّا زَادُوكُمۡ إِلَّا خَبَالٗ﴾ যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধে বের হত, তবে তারা তোমাদের ক্ষতি ছাড়া কোন উপকারে আসত না। কারণ, তোমাদের মধ্যে ফ্যাসাদই বৃদ্ধি করত। কারণ, তারা হল, কাপুরুষ ও অপদস্থ সম্প্রদায়। তাদের মধ্যে যুদ্ধ করা ও কাফেরদের মোকাবেলা করার মত কোন সাহস তাদের নাই। ﴿وَلَأَوۡضَعُواْ خِلَٰلَكُمۡ يَبۡغُونَكُمُ ٱلۡفِتۡنَةَ﴾ আর তারা তোমাদের মাঝে ছুটোছুটি করত, একবার এদিক যেত, আবার ওদিক যেত, একজনের কথা আরেক জনের নিকট গিয়ে বলত, চোগলখোরি করত, বিদ্বেষ চড়াত এবং তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির অনুসন্ধানে থাকত যা তোমাদের জন্য অকল্যাণ ও অশান্তি ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনত না। وَفِيكُمۡ سَمَّٰعُونَ لَهُمۡۗ আর তোমাদের মধ্যে রয়েছে এমন লোক, যারা তাদের কথা অধিক শ্রবণকারী, অর্থাৎ, তাদের আনুগত্য-কারী, তাদের কথাকে পছন্দ-কারী ও তাদের হিতাকাংখি। যদিও তারা তাদের প্রকৃত অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে তারা অবগত নয়। ফলে এ সব অপকর্মের কারণে মুমিনদের মাঝে বড় ধরনের ফ্যাসাদ ও বিবাদ তৈরি হতে পারে। যা তোমাদের পরাজয়ের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালান করবে।[11]

১৫. মিথ্যা শপথ করা, কাপুরুষতা ও ভীরুতা:
মুনাফিকরা অধিক হারে মিথ্যা শপথ করে। তাদের যখন কোন অপকর্মের জন্য জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তারা তা সাথে সাথে অস্বীকার করে এবং তারা তাদের নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য মিথ্যা শপথ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তারা আল্লাহর কসম করে যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত, অথচ তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তারা এমন কওম যারা ভীত হয়। যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল, বা কোন গুহা অথবা লুকিয়ে থাকার কোন প্রবেশস্থল পেত, তবে তারা সেদিকেই দৌড়ে পালাত”। [তওবা: ৫৬, ৫৭]
আয়াতের ব্যাখ্যা:
আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে মুনাফিকদের আকুতি, তাদের হৈ-চৈ ও তৎপরতা সম্পর্কে জানিয়ে দিয়ে বলেন, وَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ إِنَّهُمۡ لَمِنكُمۡ আর তারা আল্লাহর নামে কঠিন কসম করে বলে যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত, অথচ বাস্তবতা হল, وَمَا هُم مِّنكُمۡ তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং وَلَٰكِنَّهُمۡ قَوۡمٞ يَفۡرَقُونَ তারা হল এমন এক সম্প্রদায় যারা ভীরু। আর মুমীনরা হল সাহসী বীর, তারা কখনোই ভয় পায় না। তাদের ভয়ই তাদেরকে শপথ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
لَوۡ يَجِدُونَ مَلۡجَا যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল, বা مَغَٰرَٰتٍ কিল্লা পেত যেখানে গিয়ে তারা আত্মরক্ষা করতে পারত, বা مُدَّخَلٗا কোন পাহাড়ের গুহা অথবা যমিনে লুকিয়ে থাকার কোন প্রবেশস্থল বা গর্ত পেত, তবে তারা সেদিকেই দৌড়ে পালাত। তারা কখনোই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত না। আল্লাহ বলেন, لَّوَلَّوۡاْ إِلَيۡهِ وَهُمۡ يَجۡمَحُونَ অর্থাৎ, তারা তোমাদের রেখে সে আশ্রয়স্থলের দিকে দৌড়ে পালাত। কারণ, তারা যে তোমাদের সাথে মিলিত হয়, তা তোমাদের ভালোবাসায় নয় বরং বাধ্য হয়ে। বাস্তবে তারা চায় যে, যদি তোমাদের সাথে না মিলে থাকতে পারত! কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনের জন্য আলাদা বিধান থাকে। অর্থাৎ তাদের বিষয়ে সব কিছু জানার পরও তোমরা যে তাদের সাথে যুদ্ধ কর না বা তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নাও না, তা একটি বৃহত্তর স্বার্থের দিক বিবেচনা ও একটি বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে। অন্যথায় তাদের অপরাধ কাফের ও মুশরিকদের চেয়েও মারাত্মক। এ কারণে তারা সব সময় দুশ্চিন্তা, সিদ্ধান্তহীনতা ও পেরেশানিতে থাকে। আর ইসলাম ও মুসলিমরা সব সময় ইজ্জত, সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করে থাকেন। আর যখনই মুসলিমরা খুশি হয়, তা তাদের বিরক্তির কারণ হয়। তারা সব সময় পছন্দ করে, যাতে তোমাদের সাথে মিলতে না হয়। তাই আল্লাহ বলেন, ﴿لَوۡ يَجِدُونَ مَلۡجَا أَوۡ مَغَٰرَٰتٍ أَوۡ مُدَّخَلٗا لَّوَلَّوۡاْ إِلَيۡهِ وَهُمۡ يَجۡمَحُونَ﴾ অর্থাৎ, যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল, বা কোন গুহা অথবা লুকিয়ে থাকার কোন প্রবেশস্থল পেত, তবে তারা সেদিকেই দৌড়ে পালাত।[12]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
“ আর যখন তুমি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখবে, তখন তাদের শরীর তোমাকে মুগ্ধ করবে। আর যদি তারা কথা বলে, তুমি তাদের কথা (আগ্রহ নিয়ে) শুনবে। তারা দেয়ালে ঠেস দেয়া কাঠের মতই। তারা মনে করে প্রতিটি আওয়াজই তাদের বিরুদ্ধে। এরাই শত্রু, অতএব এদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করুন। তারা কিভাবে সত্য থেকে ফিরে যাচ্ছে”। [সূরা মুনাফিকুন:৪]
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন,
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন,
· দেহের দিক দিয়ে তারা খুব সুন্দর,
· মুখের দিক দিয়ে তারা খুব সাহিত্যিক,
· কথার দিক দিয়ে তার খুব ভদ্র,
· অন্তরের দিক দিয়ে তারা সর্বাধিক খবিস নাপাক
· ও মনের দিক দিয়ে খুবই দুর্বল।
· তারা খাড়া কাঠের মত খাড়া করা, যাতে কোন ফল নাই। গাছগুলোকে জড়ের থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে, ফলে সে গুলো একটি দালানের সাথে খাড়া করে রাখা হয়েছে, যাতে পথচারীরা পা পৃষ্ট না করে। [13]

১৬. তারা যা করেনি তার উপর তাদের প্রশংসা শুনতে পছন্দ করত:
মুনাফিকরা যে কাজ করে না তার উপর তাদের কোন ভৎসনা মানতে রাজি না। এমনটি তারা কাজ না করে সে কাজের প্রশংসা শুনতে চায়। আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবান্তর চাহিদার নিন্দা করে বলেন,
“যারা তাদের কৃতকর্মের প্রতি খুশী হয় এবং যা তারা করেনি তা নিয়ে প্রশংসিত হতে পছন্দ করে, তুমি তাদেরকে আযাব থেকে মুক্ত মনে করো না। আর তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব”। [সূরা আল-ইমরান: ১৮৮]
আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, মুনাফিকদের একটি জামাত রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর যুগে রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন কোন যুদ্ধে বের হত, তখন তারা যুদ্ধে যাওয়া হতে বিরত থাকতো। আর তারা রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নির্দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না গিয়ে আত্ম-তৃপ্তিতে ভুগত। আর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] যখন যুদ্ধ হতে ফিরে আসতো, তখন তারা তার নিকট গিয়ে মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করিয়ে অপারগতা প্রকাশ করত এবং তারা মিথ্যা শপথ করত। আর তারা পছন্দ করত, যাতে তারা যে যুদ্ধে যায়নি তার জন্য যেন তাদের প্রশংসা করা হয়। তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন, “যারা তাদের কৃতকর্মের প্রতি খুশী হয় এবং যা তারা করেনি তা নিয়ে প্রশংসিত হতে পছন্দ করে…”।[14]

১৭. মুনাফিকরা নেক আমলসমূহের দুর্নাম করত:
মুনাফিকরা মুসলিমদের ভালো কাজগুলোকে মানুষের সামনে খারাপ করে তুলে ধরত। যতই ভালো কাজই হোক না কেন তাতে মুনাফিকরা তাদের স্বার্থ খুঁজত। যদি তাদের স্বার্থ হাসিল হত তখন তারা চুপ থাকতো আর যখন তাদের হীন স্বার্থ হাসিল না হত তখন তারা বদনাম করা আরম্ভ করত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তাদের মধ্যে কেউ আছে, যে সদকা বিষয়ে তোমাকে দোষারোপ করে। তবে যদি তাদেরকে তা থেকে দেয়া হয়, তারা সন্তুষ্ট থাকে, আর যদি তা থেকে দেয়া না হয়, তখন তারা অসন্তুষ্ট হয়”। [সূরা তওবা: ৫৮][15]
আয়াতের ব্যাখ্যা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,﴿وَمِنۡهُم مَّن يَلۡمِزُكَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ﴾ মুনাফিকদের একটি জামাত আছে, যখন তুমি সদকা বণ্টন কর, তখন তারা সদকা বিষয়ে তোমাকে দোষারোপ করে অর্থাৎ তোমার উপর দোষ চাপায় ও তোমার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে এবং তুমি যে বণ্টন করেছ, সে বিষয়ে তারা তোমাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়। মূলত: তারাই দোষী ও মিথ্যুক। তারা দ্বীনের কারণে কোন কিছুকে অপছন্দ করে না, তারা অপছন্দ করে নিজেদের স্বার্থের জন্য। এ কারণে যদি তাদেরকে যাকাত দেয়া হয়, তারা সন্তুষ্ট থাকে, ﴿وَإِن لَّمۡ يُعۡطَوۡاْ مِنۡهَآ إِذَا هُمۡ يَسۡخَطُونَ﴾ আর যদি তা থেকে তাদের দেয়া না হয়, তখন তারা অসন্তুষ্ট হয়।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
“যারা দোষারোপ করে সদকার ব্যাপারে মুমিনদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছা দানকারীদেরকে এবং তাদেরকে যারা তাদের পরিশ্রম ছাড়া কিছুই পায় না। অতঃপর তারা তাদেরকে নিয়ে উপহাস করে, আল্লাহও তাদেরকে নিয়ে উপহাস করেন এবং তাদের জন্যই রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব”। [সূরা তওবা: ৭৯]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাদেরকে যখন সদকা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হল, তখন আমরা বাড়ী থেকে বহন করে সদকার মালামাল নিয়ে আসতাম। সামর্থ্য অনুযায়ী কেউ বেশি নিয়ে আসত, আবার কেউ কম নিয়ে আসত। আবু আকীল অর্ধ সা নিয়ে আসল আর অপর এক ব্যক্তি তার চেয়ে কিছু বেশি নিয়ে আসল। তখন মুনাফিকরা বলল, আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ সদকার প্রতি মুখাপেক্ষী নন, আর দ্বিতীয় লোকটি যে একটু বেশি নিয়ে আসছে, তার সম্পর্কে বলল, সে তা কেবলই লোক দেখানোর জন্যই করছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের কথার প্রেক্ষাপটে এ আয়াত নাযিল করেন- [যারা দোষারোপ করে সদকার ব্যাপারে মুমিনদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছা দানকারীদেরকে এবং তাদেরকে যারা তাদের পরিশ্রম ছাড়া কিছুই পায় না।...][16]
সব সময় তাদের বাড়াবাড়ি এবং তাদের অনাচার থেকে কেউ নিরাপদে থাকে না। এমনকি যারা সদকা করে তারাও তাদের অনাচার থেকে নিরাপদ নয়। যদি তাদের কেউ অনেক ধন-সম্পদ নিয়ে আসে, তখন তারা বলে, এ তো লোক দেখানোর জন্য নিয়ে আসছে। আর যদি সামান্য নিয়ে আসে, তখন তারা বলে, আল্লাহ তা‘আলা তার সদকার প্রতি মুখাপেক্ষী নয়।[17]

১৮. তারা নিম্নমান ও অপারগ লোকদের প্রতি সন্তুষ্টি:
মুনাফিকরা অপারগ মা’জুর লোকদের সাথে থাকতে পছন্দ করে। যারা ওজরের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারে না, তারা তাদের সাথে থাকাকে তাদের জন্য নিরাপদ মনে করে। তাই তারা রাসূল সা. এর নিকট এসে বিভিন্ন ধরনের ওজর পেশ করে। যাতে তাদের যুদ্ধে যেতে না হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যখন কোন সূরা এ মর্মে নাযিল করা হয় যে, ‘তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন এবং তাঁর রাসূলের সাথে জিহাদ কর’, তখন তাদের সামর্থ্য বান লোকেরা তোমার কাছে অনুমতি চায় এবং বলে, ‘আমাদেরকে ছেড়ে দাও, আমরা বসে থাকা লোকদের সাথে থাকব’”। [সূরা তওবা: ৮৬]
আল্লাহ তা‘আলা যারা শক্তি সামর্থ্য ও সব ধরনের উপকরণ থাকা সত্ত্বেও জিহাদে শরীক হয় না এবং তারা রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিন্দা ও দোষারোপ করেন। তারা বলে, ﴿ذَرۡنَا نَكُن مَّعَ ٱلۡقَٰعِدِينَ﴾ অর্থ, ‘আমাদেরকে ছেড়ে দাও, আমরা বসে থাকা লোকদের সাথে থাকব’ তারা তাদের নিজেদের দোষী সাব্যস্ত করতে কার্পণ্য করে না। সৈন্য দলেরা যুদ্ধে বের হলেও, তারা নারীদের সাথে ঘরে বসে থাকতেও লজ্জা করে না। যখন যুদ্ধ সংঘটিত হয়, তখন তারা খুবই দুর্বল। আর যখন তারা বেঁচে যায় তখন অতি কথন করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য এক আয়াতে বলেন,

“ তোমাদের ব্যাপারে [সাহায্য প্রদান ও বিজয় কামনায়] কৃপণতার কারণে। অতঃপর যখন ভীতি আসে তখন তুমি তাদের দেখবে মৃত্যুভয়ে তারা মূর্ছিত ব্যক্তির ন্যায় চক্ষু উল্টিয়ে তোমার দিকে তাকায়। অতঃপর যখন ভীতি চলে যায় তখন তারা সম্পদের লোভে কৃপণ হয়ে শাণিত ভাষায় তোমাদের বিদ্ধ করে। এরা ঈমান আনেনি। ফলে আল্লাহ তাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করে দিয়েছেন। আর এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। [সূরা আহযাব: ১৯]

যুদ্ধের বাইরে তারা অতি কথন করে এবং তাদের গলাবাজির আর অন্ত থাকে না। কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে তার সর্বাধিক দুর্বল ও কাপুরুষ।

চলবে,,,,,,,,,,,,ইনশাল্লাহ।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৩৭ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)