কোরআন ও হাদীসের আলোকে মুনাফীকের চরিত্র। শেষ পর্ব।
লিখেছেন: ' shahedups' @ শনিবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১১ (৫:২৫ অপরাহ্ণ)
২৬. মুমিনদের মুসিবতে খুশি হওয়া:
মুমিনরা যখন কোন মুসিবতে পতিত হয়, তখন মুনাফিকরা খুব খুশি হয়। তারা সব সময় মুমিনদের ক্ষতি কামনা করে এবং তাদের মুসিবতের অপেক্ষায় থাকে। কারণ, তারা তাদের অন্তরে মুমিনদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা মারাত্মক। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে। শোন, তোমরাই তো তাদেরকে ভালবাস এবং তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না। অথচ তোমরা সব কিতাবের প্রতি ঈমান রাখ। আর যখন তারা তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’। আর যখন তারা একান্তে মিলিত হয়, তোমাদের উপর রাগে আঙ্গুল কামড়ায়। বল, ‘তোমরা তোমাদের রাগ নিয়ে মর’! নিশ্চয় আল্লাহ অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত। যদি তোমাদেরকে কোন কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন তাদের কষ্ট হয়। আর যদি তোমাদেরকে মন্দ স্পর্শ করে, তখন তারা তাতে খুশি হয়। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছু ক্ষতি করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে, তা পরিবেষ্টনকারী”। [সূরা আলে-ইমরান ১১৮-১২০]
আয়াতের সারমর্ম:
আল্লাহ তা‘আলা তার মুমিন বান্দাদেরকে মুনাফিকদের অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। অর্থাৎ আল্লাহ মুনাফিকদের অন্তরে কি আছে এবং তারা তাদের দুশমনদের জন্য কি গোপন করেন, তা জানিয়ে দেন। মুনাফিকরা তাদের সাধ্য অনুযায়ী কখনোই মুমিনদের বন্ধু বানাবে না। তারা সব সময় তাদের বিরোধিতা ও ক্ষতি করতে চেষ্টা করবে। মুমিনদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকবে। আর তারা মুমিনদের কষ্টের কারণ হয় বা তাদের কোন মুসিবত হয় এমন কাজই করতে থাকবে।[25]
২৭. যখন আমানত রাখা হয় খিয়ানত করে যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, আর যখন প্রতিশ্রুতি দেয়, তা ভঙ্গ করে আর যখন ঝগড়া করে অকাট্য ভাষায় গাল-মন্দ করেঃ
মুনাফিকদের কিছু মৌলিক গুণ আছে, যেগুলো একটি সমাজ, দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এ সব গুণগুলো থেকে বেঁচে থাকা আমাদের সকলের জন্য একান্ত অপরিহার্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তাদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করে যে, যদি আল্লাহ তার স্বীয় অনুগ্রহে আমাদের দান করেন, আমরা অবশ্যই দান-খয়রাত করব এবং অবশ্যই আমরা নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হব । অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ দান করলেন, তারা তাতে কার্পণ্য করল এবং বিমুখ হয়ে ফিরে গেল। সুতরাং, পরিণামে তিনি তাদের অন্তরে নিফাক রেখে দিলেন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে, তারা আল্লাহকে যে ওয়াদা দিয়েছে তা ভঙ্গ করার কারণে এবং তারা যে মিথ্যা বলেছিল তার কারণে”। [সূরা তওবা: ৭৫-৭৭]
আয়াতের সারমর্ম:
আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, মুনাফিকরা আল্লাহ তা‘আলাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, যদি আল্লাহ তা‘আলা তার করুণা দ্বারা তাদের ধন-সম্পদ ও অর্থ বিত্ত দান করেন, তবে সে আল্লাহর রাহে খরচ করবে। আর সে নেককার লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের যখন ধন-সম্পদ দেয়া হল, তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তারা যে সদকা করার দাবি করছিল তা পূরণ করেনি। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ অপকর্মের শাস্তি স্বরূপ তাদের অন্তরে নিফাক ঢেলে দেন। যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে অর্থাৎ কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তা তাদের অন্তরে স্থায়ী হবে। আমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি এ ধরনের নিফাক হতে।[26]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়। তারা আল্লাহকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে [বলে মনে করে] অথচ তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে এবং তারা তা অনুধাবন করে না”। [সূরা বাকারাহ: ৮]
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, মুনাফিকদের বড় পুঁজি হল, ধোঁকা দেয়া ও প্রতারণা করা। তাদের সম্পদ হল, মিথ্যা ও খিয়ানত। তাদের মধ্যে দুনিয়ার জীবনের উপর যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। উভয় দল, তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা নিরাপদ। ﴿يُخَٰدِعُونَ ٱللَّهَ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَمَا يَخۡدَعُونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمۡ وَمَا يَشۡعُرُونَ﴾ তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ধোঁকা দেয় এবং যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনছে তাদের ধোঁকা দেয়, মূলত: তারা তাদের নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয় কিন্তু তারা তা অনুধাবন করে না।[27]
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন,
চারটি গুণ যার মধ্যে একত্র হবে, সে সত্যিকার মুনাফেক। আর যার মধ্যে এ তিনটি গুনের যে কোন একটি থাকবে সে যতদিন পর্যন্ত তা পরিহার না করবে তার মধ্যে নেফাকের একটি গুণ অবশিষ্ট থাকল। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে। আর যখন কোন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তা লঙ্ঘন করে, আর যখন ওয়াদা করে তা খিলাফ করে, যখন ঝগড়া-বিবাদ করে, সে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে।[28]
ইমাম নববী রহ. বলেন, এক দল আলেম এ হাদিসটিকে জটিল বলে আখ্যায়িত করেন। কারণ, এখানে যে কটি গুণের কথা বলা হয়েছে, তা একজন সত্যিকার মুসলিম যার মধ্যে কোন সন্দেহ বা সংশয় নাই তার মধ্যেও পাওয়া যেতে পারে। যেমন, ইউসুফ আ. এর ভাইদের মধ্যেও এ ধরনের গুণ পাওয়া গিয়েছিল। অনুরূপভাবে আমাদের আলেম, ওলামা, পূর্বসূরি ও মনীষীদের মধ্য হতে অনেকের মধ্যে এসব গুণ বা এর কোন একটি পাওয়া যাওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। তাই বলে তারাতো মুনাফেক নয়। এর সমাধানে ইমাম নববী বলেন, আলহামদু লিল্লাহ এ হাদিসে তেমন কোন অসুবিধা নাই। তবে আলেমগণ হাদিসের বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেন, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ আলেমগণ যা বলেছেন, তা হল, মূলত: এ চরিত্রগুলো হল, নেফাকের চরিত্র। যাদের মধ্যে এ সব চরিত্র থাকবে সে মুনাফিকদের সাদৃশ্য হবে, তাদের চরিত্রে চরিত্রবান হবে। কারণ, নিফাক হল, তার ভিতরে যা আছে, তার বিপরীতটিকে প্রকাশ করা। যার মধ্যে উল্লেখিত চরিত্র গুলো পাওয়া যাবে, তার ক্ষেত্রে নেফাকের অর্থটিও প্রযোজ্য। সে যাকে ওয়াদা দিয়েছে, যার সাথে মিথ্যা কথা বলছে, যার আমানতের খিয়ানত করছে এবং যার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে, তার ব্যাপারে সে অবশ্যই মুনাফেকি করছে। তার সাথে সে অবশ্যই বাস্তবতাকে গোপন করছে। এ অর্থে লোকটি অবশ্যই মুনাফেক। কিন্তু সে ইসলামের ক্ষেত্রে মুনাফেক নয় যে, মুখে ইসলাম প্রকাশ করল আর অন্তরে কুফরকে লালন করল। আর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার বাণী দ্বারা এ কথা বলেননি যে, সে খাঁটি মুনাফেক ও চির জাহান্নামী হবে এবং জাহান্নামের নিম্নস্তরে তার অবস্থান হবে। এ অর্থটিই বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য। আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফীক দান করুন। আমীন!
আর রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর বাণী:
[সে খালেস মুনাফেক] এ কথার অর্থ হল, এ চরিত্রগুলোর কারণে লোকটি মুনাফিকদের সাথে অধিক সাদৃশ্য রাখে। আবার আরো কতক আলেম বলেন, রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর এ বাণী ঐ লোকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যার মধ্যে এ চরিত্রগুলো প্রাধান্য বিস্তার করছে। আর যার মধ্যে প্রাধান্য বিস্তার করেনি তবে মাঝে মধ্যে পাওয়া যায়, সে এ হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয়। মুহাদ্দিসগণ হাদিসের এ অর্থটিকেই গ্রহণ করেছেন।[29]
২৮. সময় মত সালাত আদায় না করা:
মুনাফিকরা সময় মত সালাত আদায় করে না। জামাতে ঠিক মত হাজির হয় না। তারা সালাতের জামাত কায়েম হওয়ার শেষ সময় আসে আবার সর্বাগ্রে চলে যায়।
আলা ইবনে আব্দুর রহমান রা. হতে বর্ণিত, একদিন তিনি বছরায় আনাস ইবনে মালেকের বাড়ীতে প্রবেশ করেন। আর আনাস ইবনে মালেক তখন যোহরের সালাত আদায় করে বাড়ীতে ফিরেন। তার ঘর ছিল মসজিদের একেবারে পাশেই। আলা ইবনে আব্দুর রহমান বলেন, আমরা তার নিকট প্রবেশ করলে, তিনি আমাদের বলেন, তোমরা কি আসরের সালাত আদায় করছ? আমরা তাকে বললাম, আমরাতো কেবল যোহরের সালাত আদায় করে ফিরলাম। তখন তিনি বললেন, তাহলে তোমরা আসরের সালাত আদায় কর। তারপর আমরা দাঁড়ালাম এবং আসরের সালাত আদায় করলাম। আমরা সালাতের সালাম ফিরাইলে তিনি বলেন, আমি রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলতে শুনেছি মুনাফিকদের সালাত হল, তারা বসে বসে সূর্যের অপেক্ষা করতে থাকে। তারপর সূর্য যখন শয়তানের দুটি শিংয়ের মাঝে অবস্থান করে, তখন তারা তাড়াহুড়া করে সালাতে দাঁড়ায়, কাকের ঠোকরের মত চার রাকাত সালাত আদায় করে, তাতে আল্লাহর যিকির বা স্মরণ খুব কমই করা হয়ে থাকে।[30]
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, তারা সালাতকে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে না। সালাতকে একদম শেষ ওয়াক্তে নিয়ে যায়, যখন সালাতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তারা ফজর আদায় করে সূর্য উদয়ের সময়, আসর আদায় করে সূর্যাস্তের সময়। আর তারা সালাত আদায় করে কাকের ঠোকরের মত করে। তাদের সালাত হল, দেহের সালাত, তাদের সালাত অন্তরের সালাত নয়। তারা সালাতের মধ্যে শিয়ালের মত এদিক সেদিক তাকায়।[31]
২৯. জামাতে সালাত আদায় করা হতে বিরত থাকা:
মুনাফিকরা জামাতে সালাত আদায় হতে বিরত থাকে। তাদের নিকট জামাতে সালাত আদায় করা অতীব কঠিন কাজ। তাই মুমীনদের উচিত, তারা যেন জামাতে সালাত আদায় করবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, কিয়ামতের দিন সে একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, সে যেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতসমূহের জন্য আহ্বান করা হলে, তা যথাযথ সংরক্ষণ করে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নবীর জন্য হেদায়েতের বিধান চালু করেন। আর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত হল, হিদায়েতেরই বিধান। তোমরা যদি তোমাদের সালাতসমূহকে ঘরে আদায় কর, যেমনটি এ পশ্চাৎপদ লোকটি করে থাকে, তবে তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নতকে ছেড়ে দিলে। আর যখন তোমরা তোমাদের নবীর সুন্নাতকে ছেড়ে দেবে তখন তোমরা গোমরাহ ও ভ্রষ্ট হয়ে যাবে। যে কোন ব্যক্তিই হোক না কেন, সে যখন ভালোভাবে ওজু করবে, তারপর মসজিদসমূহ হতে কোন একটি মসজিদের দিকে যাওয়ার জন্য রওয়ানা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি কদমে কদমে নেকি লিপিবদ্ধ করেন, তার মর্যাদাকে এক ধাপ করে বৃদ্ধি করেন এবং একটি করে গুনাহ ক্ষমা করেন। আমরা রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর যুগে দেখেছি একমাত্র প্রসিদ্ধ মুনাফিক ছাড়া আর কেউ সালাত হতে বিরত থাকতো না। রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর যুগে আমরা আরো দেখেছি, এক লোককে দুইজন মানুষের কাঁধে ভর করে সালাতের কাতারে উপস্থিত করা হত।[32]
আল্লামা সুমনি রহ. বলেন, এখানে মুনাফিক দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ মুনাফিক নয় যারা কুফরকে গোপন করে এবং ইসলাম প্রকাশ করে। যদি তাই হয়, তাহলে জামাতে সালাত আদায় করা ফরয হয়ে যাবে। কারণ, যে কুফরকে গোপন করে সে অবশ্যই কাফের।[33]
৩০. অশ্লীল কথা বলা ও বেশি কথা বলা:
মুনাফিকদের স্বভাব হল, তারা কথায় কথায় মানুষকে গালি দেয়, লজ্জা দেয়। যে কথা লোক সমাজে বলা উচিত নয়, ঐ ধরনের অশ্লীল ফাহেশা কথা বলাবলি করত এবং তারা তাদের মজলিশে হাসাহাসি করত।
আবু উমামাহ রা. হতে বর্ণিত রাসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেন, লজ্জা ও কথা কম বলা, ঈমানের দুটি শাখা আর অশ্লীলতা ও অতিকথন নেফাকের দুটি শাখা।[34]
ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন, হাদিসে الْعِىُّ শব্দটির অর্থ হল, কম কথা বলা আর الَبذَاءُ শব্দের অর্থ হল, অশ্লীল কথা বলা আর البيان অর্থ হল অধিক কথা বলা। যেমন বক্তা বা ওয়ায়েজরা মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য ও তাদের প্রশংসা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে এমন এমন কথা বলে যা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করে না।
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, মুনাফিকদের অবস্থা মুসলিমদের মধ্যে অচল মুদ্রার মত। যা অনেক মানুষই তাদের অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে গ্রহণ করে থাকে। আর যারা অভিজ্ঞ ও যোগ্যতা সম্পন্ন তারা অবশ্যই বুঝতে পারে এটি কি আসল মুদ্রা না নকল মুদ্রা। আর এ ধরনের অভিজ্ঞ লোকের সংখ্যা সমাজে কমই হয়ে থাকে। দ্বীনের জন্য এ ধরনের লোকের চাইতে ক্ষতি আর কিছুই হতে পারে না। এ সব লোকেরা দ্বীন ও ধর্মকে স্ব-মুলে উৎখাত করে ফেলে। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে তাদের অবস্থাকে পরিষ্কার করেন ও চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেন। একাধিক বার তাদের অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও আলোচনা তুলে ধরেন এবং তাদের ক্ষতি উম্মতকে থেকে সতর্ক করেন। এ উম্মতকে বার বার তাদের কারণে মাশুল দেয়া, এবং তাদের কারণেই এ উম্মতের উপর বড় বড় মুসিবত নেমে আসায়, তাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানার প্রয়োজন তীব্রভাবে দেখা দেয়। তাদের কথা শোনা হতে বেঁচে থাকা, তাদের এবং সাথে সম্পর্ক রাখা হতে দুরে থাকা উম্মতের উপর ফরয হয়ে গেছে। তারা কত পথিককেই না তাদের গন্তব্যের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে! তাদেরকে সঠিক পথ থেকে সরিয়ে গোমরাহি ও ভ্রষ্ট পথে নিয়ে গেছে। তারা কত মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করছে! আর কত মানুষকে তারা আশাহত করছে। তারা মানুষকে ওয়াদা দিয়ে প্রতারণা করছে এবং মানুষকে ধ্বংস ও হালাকের দিকে ঠেলে দিয়েছে।[35]
৩১. গান শ্রবণ করা:
গান-বাজনা হল মুনাফিকদের একটি অন্যতম কু অভ্যাস, যা একজন মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে সম্পূর্ণ গাফেল করে দেয়। আর এ গান বাজনাই ছিল মুনাফিকদের নিত্য দিনের সাথী। তারা সব সময় গান বাজনা শ্রবণ করে সময় নষ্ট করত। বর্তমান সময়ে এ ব্যধিটি মুসলিম যুবকদের মধ্যেও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুনাফিকদের এ ঘৃণিত স্বভাব থেকে আমাদের সবাইকে বেঁচে থাকতে হবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা. বলেন, গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে।[36]
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, মনে রাখতে হবে, নেফাকের মুল ভিত্তি হল, একজন মানুষের বাহ্যিক দিকটি তার অন্তরের অবস্থার বিপরীত হওয়া। একজন গায়ক তার দুই অবস্থা হতে পারে, সে তার গানে কারো চরিত্রকে হনন করে, ফলে সে ফাজের। অথবা সে মিথ্যা গুণগান করে তাহলে সে মুনাফেক। একজন গায়ক সে দেখায় যে, তার মধ্যে আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি আগ্রহ আছে কিন্তু তার অন্তর নফসের খায়েশাতে ভরপুর। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল যে সব গান বাজনা বাদ্য যন্ত্র ও অনর্থক গলাবাজিকে অপছন্দ করে, তার প্রতি তার ভালোবাসা অটুট। তার অন্তর এসব দ্বারাই সব সময় ভর্তি। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল যা পছন্দ করে এবং যা অপছন্দ করে তা থেকে তার অন্তর একে বারেই খালি ও বিরান। তাদের এ চরিত্র নিফাক বৈ আর কিছুই না। এ ছাড়াও নেফাকের আলামত হল, আল্লাহর যিকির কম করা, সালাত আদায়ে অলসতা করা এবং সালাতে কাকের ঠোকরের মত ঠোকর দেয়া। আর অভিজ্ঞতা হল, যারা গান করে তাদের খুব কম লোকই আছে যাদের মধ্যে এ চরিত্রগুলো পাওয়া যাবে না। গায়করা সাধারণত সালাতে অমনোযোগী ও আল্লাহর যিকির হতে গাফেল হয়ে থাকে। এ ছাড়াও নেফাকের ভিত্তিই হল, মিথ্যার উপর আর গান হল সবচেয়ে অধিক মিথ্যাচার। গানে অসুন্দরকে সুন্দর ও খারাপকে ভালো করে দেখায় আর সুন্দরকে বিশ্রী আর ভালোকে মন্দ করে দেখায়। আর এই হল, আসল নিফাক বা কপটতা। আরো বলা যায়, নিফাক হল, ধোঁকা, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার আর গানের ভিত্তিই হল এ সবের উপর প্রতিষ্ঠিত।
ভাই শাহেদ – আপনি খুব সুন্দর লিখেছেন। Is this a Translation or your own cpmpilation from authentic sources? Please share with us. Jazak Allahu Khairan Fiddarain.