হাদীসের সংক্ষিপ্ত পরিভাষা যা আমাদের সকলের জানা উচিৎ
লিখেছেন: ' shahedups' @ বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১১ (৮:৫২ অপরাহ্ণ)
সহীহ হাদীস: যে মুত্তাসীল হাদীসের সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবীঈ পূর্ন আদালত ও যাবতা গূন সম্পন্ন এবং হাদীসটি যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত।
হাসান: যে হাদীসের কোন রাবীর যারতগুনে পরিপুর্নতার অভাব রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলা হয়। কিকহবিদগণ সাধারনত সহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরীআতের বিধান নির্ধারন করেন।
যঈফ: যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুনসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে। রাবীর দুর্বলতার কারনেই হাদীসকে দুর্বল বলা হয়, অন্যথায় নবী করীম (সাঃ)-এর কোন কথাই যঈফ নয়।
মাওযূ: যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ হাদীস বলে। এরুপ ব্যক্তির বর্ণিত হাদীস গ্রহনযোগ্য নয়।
মারূফ ও মুনকার: কোন দুর্বল রাবীর বর্ণিত হাদীস অপর কোন মকবুল (গ্রহনযোগ্য) রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিরোধী হলে তাকে মুনকার বলা হয় এবং মকবুল রাবীর হাদীসকে মারূফ বলা হয়। মুনকার হাদীস হাদীস গ্রহনযোগ্য নয়।
মাতরূক: যে হাদীসের রাবী হাদীসের ক্ষেত্রে নয় বরং সাধারন কাজে-কর্মে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহন করে বলে খ্যাত, তার বর্নিত হাদীসকে মাতরূক হাদীস বলা হয়। এরূপ ব্যক্তির বর্নিত হাদীসও পরিত্যাজ্য।
মুবহাম: যে হাদীসের রাবীর উত্তমরূপে পরিচয় পাওয়া যায় নি, যার ভিত্তিতে তার দোষগুন বিচার করা যেতে পারে-এরূপ রাবীর বর্ণিত হাদীসকে মুবহাম হাদীস বলে। এই ব্যক্তি সাহাবী না হলে তার হাদীসও গ্রহনযোগ্য নয়।
মুতাওয়াতির: যে সহীহ হাদীস প্রত্যেক যুগে অধিক লোক রিওয়ায়াত করেছেন যাদের পক্ষে মিথ্যার জন্য দলবদ্ধ হওয়া সাধারনত অসম্ভব তাকে মুতাওয়াতির হাদীস বলে। এই ধরনের হাদীস দ্বারা নিশ্চিত জ্ঞান লাভ হয়।
হাদীসে কুদসী: এ ধরনের হাদীসের মূলকথা সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে প্রাপ্ত এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করে যেমন আল্লাহর তার নবী (সাঃ) কে ইলহাম কিংবা স্বপ্নযোগে অথবা জিবরাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে তা জানিয়ে দিয়েছেন, মহানবী (সাঃ) তা নিজ ভাষায় বর্ননা করেছেন।
মুত্তাফাক আলায়হ: যে হাদীস একই সাহাবী থেকে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (রঃ) উভয়ে গ্রহন করেছেন, তাকে মুত্তাফাক আলায়হ বলে।
হাদীসের কিতাবসমূহের স্তরবিভাগ:
হাদীসের কিতাবসমূহকে মোটামুটিভাবে ৫টি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (রঃ) তার ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা’নামক কিতাবে এরূপ ৫ স্তরে ভাগ করেছেন।
১ম স্তর: এ স্তরের কিতাবসমূহে কেবল সহীহ হাদীসই রয়েছে। এ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটি: ‘মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। সকল হাদীস বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে একমত যে, এ তিনটি কিতাবের সমস্ত হাদীসই নিশ্চিতরূপে সহীহ।
২য় স্তর: এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারণত: সহীহ ও হাসান হাদীসই রয়েছে। যঈফ হাদীস এতে খুব কমই আছে। নাসাঈ,আবূ দাঊদ শরীফ ও তিরমিযী শরীফ এ স্তরের কিতাব। সুনান দারিমী, সুনান ইবন মাযাহ এবং শাহ ওয়ালী উল্লাহ (রঃ)-এর মতে মুসনাদ ইমাম আহমদকেও এ স্তরে শামিল করা যেতে পারে। এই দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল মাযহাবের ফকীহগন নির্ভর করে থাকেন।
৩য় স্তর: এ স্তরের কিতাবে সহীহ, হাসান, যঈফ, মারূফ ও মুনকার সকল প্রকারের হাদীসই রয়েছে। মুসনাদ আবী ইয়া’লা. মুসনাদ আবদুর রাযযাক, বায়হাকী, তাহাবী ও তাবরানী (রঃ)-এর কিতাবসমূহ এ স্তরের অন্তর্ভুক্ত।
৪র্থ স্তর: হাদীস বিশেষজ্ঞগনের বাছাই ব্যতীত এ সকল কিতাবের হাদীস গ্রহন করা হয় না। এ স্তরের কিতাবসমূহে সাধারনত: যঈগ হাদীসই রয়েছে। ইবন হিব্বানের কিতাবুয যুআফা, ইবনুল-আছীরের কামিল ও খতীব বাগদাদী, আবূ নুআয়ম-এর কিতাবসমূহ এর স্তরের কিতাব।
৫ম স্তর: উপরিউক্ত স্তরে যে সকল কিতাবের স্হান নাই সে সকল কিতাবই এ স্তরের কিতাব।
সহীহায়নদের বাইরেও সহীহ হাদীস রয়েছে:
বুখারী ও মুসলিম শরীফ সহীহ হাদীসের কিতাব। কিন্তু সমস্ত সহীহ হাদীসই যে বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে তা নয়। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেছেন: ‘আমি আমার এ কিতাবে সহীহ ব্যতীত কোন হাদীসকে স্হান দেই নাই এবং বহূ সহীহ হাদীসকে আমি বাদও দিয়েছি।’
এ রূপে ইমাম মুসলিম (রঃ) বলেন: ‘আমি এ কথা বলি না যে, এর বাইরে যে সকল হাদীস রয়েছে সেগুলি সমস্ত যঈফ।’ কাজেই এ ২ কিতাবের বাইরেও সহীহ হাদীস ও সহীহ কিতাব রয়েছে। শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী (রঃ) এর মতে সিহাহ সিত্তাহ, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ও সুনান দারিমী ব্যতীত নিম্নোক্ত কিতাবসমূহও সহীহ (যদিও বুখারী ও মুসলিমের পর্যায়ের নয়)।
জাযাকাল্লাহ।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন