কাফিরদের সাথে মিত্রতার বন্ধন প্রমান করে এমন ২০ টি নিদর্শন। পর্ব ০১।
লিখেছেন: ' shahedups' @ রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১১ (৪:৫৬ অপরাহ্ণ)
১.কাফিরদের উপর সন্তুষ্ট থাকা
কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার প্রথম ধরণটি হল কাফিরদের উপর সন্তুষ্ট থাকা বা তাদের কুফরি কর্মে রাজি-খুশি থাকা_এমনকি তাদের স্বীকৃতকুফরি কর্মকে প্রত্যাখানের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া বা সন্দেহ পোষণ করাও এর অন্তর্ভুক্ত৷ সহজ কথায়, কাফিরদের কুফরি কর্মকান্ডেরযে কোন বিষয়ের স্বীকৃতি-ই কুফরি হিসেবে গণ্য হবে৷ এটি খুবই স্পষ্ট যে, কাফিরদের যে সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাদেরসঙ্গে চলাফেরা- উঠাবসা করে সে তো তাদেরই একজন৷ এ বিষয়ে আলেমদের সর্বসম্মত মত হল, যে কাফিরদের কিংবা তাদেরকুফরী কর্মকান্ডকে ভালবাসে সে-ও কাফির৷ কেননা, হৃদয়ের ভালবাসা এবং ঘৃণা এমন দুটি জিনিস যা নিখাঁদ বা খাঁটি হলে স্বীয়বিশ্বাস-চিন্তা-চেতনা থেকে বিচূ্যত হয়ে এদিক সেদিক যেতে পারে না৷ এ অর্থে কাফিররা স্বভাবতঃই কুফরি ভালবাসবে এবংঈমানদারগণ ঈমান ভালবাসবেন৷ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন: ‘যদি তারা আল্লাহ, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁরপ্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস রাখত, তবে তারা কখনোই তাদেরকে (কাফিরদের) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না(রক্ষাকারী এবং সাহায্যকারী হিসেবে), কিন্তু তাদের অধিকাংশই ফাসিক (বিদ্রোহী, আল্লাহর অবাধ্য)৷ (৫: ৮১)
২.কাফিরদের উপর নির্ভরতা
কোন ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার জন্য কিংবা নিরাপত্তার খাতিরে কাফিরদের উপর নির্ভর করাও কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতারপরিচয় বহন করে ৷ এটি কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতার দ্বিতীয় নির্দশন৷
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এই বলে এ সম্পর্কে নিষেধ করেনঃ “মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে”। (৩:২৮)
এবং “হে মুমিনগণ ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না, তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু৷তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন হবে৷ নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কেসৎপথে পরিচালিত করেন না”৷ (৫ : ৫১)
ইবনে তাইমিয়া তার বর্ণনায় হুবহু অনুরূপ বাক্যগুলির উলেখ করে অতিরিক্ত আরেকটি আয়াতের উলেখ করেছেন:”যদি তারাআল্লাহ , নবী এবং তাঁর প্রতি যা অবতীর্ন হয়েছে তাতে বিশ্বাস রাখতো তবে তারা কখনোই তাদেরকে(কাফিরদেরকে) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না”৷ ( ৫:৮১)
৩. কুফরির কোন বিষয়ে একমত পোষণ
কুফরি কোন বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করার অর্থ হল আল্লাহর বক্তব্যের বিরূদ্ধে তাদের বক্তব্য মেনে নেয়া৷ তাদের বিশ্বাসহীনতাসম্পর্কে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন : “আপনি কি তাদের দেখেননি যাদের কিতাবের একাংশ দেয়া হয়েছিল;তারা জিব্ত ও তাগুতে বিশ্বাস করে ? এরা কাফিরদের সম্পর্কে বলে, এদের পথ মুমিনদের পথ অপেক্ষা প্রকৃষ্টতর”৷(৪:৫১)
এবং “যখন আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের নিকট রাসূল আসল, যে তাদের নিকট যা আছে তার সমর্থক; তখন যাদেরকেকিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের একদল আল্লাহর কিতাবটিকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করল, যেন তারা জানে না৷ এবংসুলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা যা আবৃত্তি করত তারা তা অনুসরণ করত”৷ (২: ১০১-১০২)
এই আয়াতের মধ্য দিয়ে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) আমাদের জানিয়েছেন কিভাবে ইহুদিরা আল্লাহর কিতাবকে পরিত্যাগকরে যাদুর অনুসরণ করেছিল৷ অনুরূপভাবে আজও মুসলিম উম্মাহর মধ্য থেকে যে বা যারাই কাফিরদের সঙ্গে যোগ দিবে এবংতাদের অপকর্মের সঙ্গী হবে সে-ই মুনাফিকির কারণে নিজের জন্য ডেকে আনবে দুঃসহ যন্ত্রণা ও আযাব৷ দুঃখজনক হলেও সত্য যে,এরপরও যারা তাদের মুসলিম মনে করে তারা তো গোলক ধাঁধায় জড়িয়ে পড়েছে৷
আজ এই উম্মাহর এতই বেহাল দশা যে, তারা আজ সত্যের লেশমাত্র কোন মতে ধরে আছে৷ আজ এই উম্মাহর সন্তানদের অবস্থা ঐতোতাপাখিগুলির মতো যারা কিছু না বুঝেই বুলি আওড়ায়, ‘আমি কমিউনিজম কে একটি দর্শন হিসেবে বিশ্বাস করি’, কিংবা’আমি সোশালিজমে বিশ্বাসী’ কিংবা বলে , ‘গণতন্ত্র একটি সুন্দর রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং সংবিধান সেক্যুলার হওয়াউচিত’ কাফিররা কুফরের এই মূলনীতিগুলো মুসলমানদের আবাসভূমিতে বাস্তবায়নের এজেন্ডা নিয়েছে: এবং, এই লক্ষ্যে জনগণকেএরা এ সমস্ত শয়তানি বিশ্বাসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ কেননা, কাফিরদের নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন এই উম্মাহরতরুণ-যুবক-তরুণীদের নিঃশর্ত আনুগত্য ,তাঁবেদারি ও সেবাদাসগিরি মনোভাব৷ যখন কোন মুসলিম আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলেরসুন্নাহর দিকে লোকদের ফিরে আসার জন্য আহ্বান করে, তখন এরাই তাদেরকে গণশত্রু বা জনগণের শত্রু হিসেবে ঘোষনা দেয়৷ আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন : “ইহুদী এবং খৃষ্টানরা কখনোই আপনার ওপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনিতাদের ধর্মের অনুসরণ করেন”৷ (২:১২০)
৪. কাফিরদের সান্নিধ্য অণ্বেষণ
কাফিরদের মমতা-ভালবাসা পাওয়ার চেষ্টা করার অর্থ হল তাদের সঙ্গে নিজেকে সম্পর্কযুক্ত করা৷ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এরকম কাজে নিষেধ করেন, আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন: ” আপনি এমন কোন সমপ্রদায়কে খুঁজে পাবেন না, যে আল্লাহ এবংশেষ দিবসের ভয় করে অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যারা বিরোধিতা করে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, হোক সে তার পিতা, পুত্র,ভ্রাতা কিংবা তাদের জ্ঞাতিগোত্র ৷” (৫৮:২২)
ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘আল্লাহ আমাদের সুস্পষ্ট জানিয়েছেন, কোন ঈমানদারই আল্লাহ ও রাসূলকে চ্যালেঞ্জকারীদের আনুকূল্য প্রত্যাশীহয় না৷ দুটি বিপরীত ধর্মী জিনিষ যেমন একে অপরকে তাড়িত করে, মুমিনের ঈমানও তদ্রুপ মুমিনকে এরুপ কাজ থেকে বিরত রাখে৷সুতরাং, ঈমান থাকা অবস্থায় আল্লাহর শত্রুদের প্রতি অনুকুল মনোভাব পোষণ অসম্ভব৷ যদি কেউ অনুভব করেন যে তার ভিতর এইমনোভাবের ঘাটতি রয়েছে , তাহলে বুঝতে হবে যে, তার ঈমানে গলদ রয়েছে৷’ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তোমরা কি তাদের প্রতি মমতা পোষণ করছো,অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে”৷ (৬০:১)
৫ কাফিরদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ
কাফিরদের সঙ্গে কেউ একাত্মতা প্রকাশ করলে সন্দেহাতীতভাবে সে কাফিরদের মিত্রে পরিণত হয়ে যায়৷ ৷ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়াতায়ালা) বলেন : “যারা ভ্রষ্টতা করে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করোনা, অন্যথায় অগ্নি তোমাদের স্পর্শ করবে, এবংআল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোনই রক্ষক নেই, এবং তোমরা সাহায্যও প্রাপ্ত হবে না”৷
আল কুরতুবি বলেন, ‘কোন কিছুর প্রতি একাত্মতা প্রকাশের অর্থ হল তার ওপর নির্ভর করা এবং সমর্থনের জন্য তার দারস্থ হওয়াএবং এভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরী করা যা তোমাকে তুষ্টি দেয়৷’
কাতাদাহ্ বলেন, ‘এই আয়াতের অর্থ হল, কোন মুসলিমের পক্ষেই কাফিরদের পছন্দ করা কিংবা তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করাসঙ্গত নয়৷’ যারা চিন্তা-ধারণায় পরিবর্তনশীলতাকে ভালবাসে এবং ধর্ম-বিদ্রোহীতায় উত্সাহী তারা দু’ধরণের ; তারা হতে পারে কাফিরঅথবা পুরোপুরি মুরতাদ৷ আর এর নির্ধারণ সাহচর্যের মাধ্যমেই তৈরী হয়; অর্থাত্ একজন কাফিরের বন্ধু কাফির, এবং একজন মুরতাদবা অবাধ্যের বন্ধু আরেকজন অবাধ্য৷
আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) নবীকে (সঃ) উদ্দেশ্য করে বলেন : “আমি আপনাকে অবিচলিত না রাখলে আপনি তাদেরদিকে ঝুকেই পড়তেন প্রায়; আর তা হলে অবশ্যই আমি আপনাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ এবং পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তিআস্বাদন করাতাম; তখন আমার বিরূদ্ধে আপনি কোন সাহায্যকারী পেতেন না”৷ (১৭:৭৪-৭৫) আমাদের এটি মনেরাখতে হবে যে, এভাবে সৃষ্টির সেরা নবীকে (সঃ) যে রকম ধমকের সুরে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এ ব্যাপারেসম্বোধন করেছেন, সেক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা কিরকম হতে পারে৷ (মুজমুআত তাওহীদ )
চলবে….