কাফিরদের সাথে মিত্রতার বন্ধন প্রমান করে এমন ২০ টি নিদর্শন। পর্ব ০২।
লিখেছেন: ' shahedups' @ মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১১ (৬:৫৬ অপরাহ্ণ)
৬. কাফিরদের কুফরি বিশ্বাসের প্রশংসা- প্রশস্তি
কাফিরদের কুফরি বিশ্বাসের প্রশংসা- প্রশস্তি করার মধ্য দিয়ে তাদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের বিষয়টি প্রতীয়মান হয়৷ আল্লাহ (সুবহানাহুওয়া তায়ালা) বলেন: “তারা ইচ্ছা পোষণ করে যে, আপনি তাদের সঙ্গে এক ধরণের সমঝোতায় (ধর্মীয় বিষয়ে সৌজন্যতাসহকারে) আসেন, সুতরাং তারাও আপনার সঙ্গে সমঝোতা করবে”৷ (৬৮ : ৯) যখন মুসলিমরা কাফিরদের শক্তিমত্তায় অনেকবেশি শক্তিশালী দেখতে পায় তখন তারা তা দেখে বিমূঢ় হয়ে পড়ে এবং এটি তাদের মনে এই ধারণার জন্ম দেয় যে, কাফিররা তাদেরথেকে সর্বদিক থেকেই শ্রেষ্ঠতর : সুতরাং তারা কাফিরদের মুকাবিলায় তাদের দ্বীনের শিক্ষা পরিত্যাগ করে, এবং এভাবে তারা বিচ্যুত হয়েপড়ে, এই ভয়ে যে, পাছে লোকে তাদের ‘ফ্যানাটিক’ বলে৷ নবী (সঃ) এরকম লোক দেখে উলেখ করেছেন, “তোমরা সেইজাতিসমূহের অনুসরণ করবে যারা তোমাদের পূর্বে ছিল, এবং অনুসরণ করবে শিরায়-শিরায়, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে, এমনকি তারাযদি তোমাদের গোখরে সাপের গর্তেও নিয়ে যায়, তোমরা তার অনুসরণ করবে৷ আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ! (আপনি কি বুঝাতে চান) ইহুদী এবং খৃষ্টানদের ? তিনি বললেন, ‘তারা ছাড়া আর কে’ ? কাফিরদের এই অতিতোষণেরফাঁদটি শয়তান সুকৌশলে পেতে রেখেছে যাতে করে শয়তান মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে,মুসলিমদের শয়তানের পক্ষ থেকে পেতে রাখা এই অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙিক্ষত ফাঁদ থেকে সর্তকতার সঙ্গে দূরে থাকতে হবে এবংতাকে আত্মসচেতন হতে হবে৷ আর তাকে এই জ্ঞান দিতে হবে যে, আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসারে আল্লাহর পথে অটল থাকলে সে-ইটিকে থাকবে এবং মূলতঃ সে-ই হবে শক্তিশালী৷
৭. কাফিরদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা
কাফিরদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা তাদের সাথে মৈত্রী বন্ধনের নিদর্শক৷ আল্লাহ (সুবঃ) বলেন: “হে মুমিনগণ ! তোমাদেরআপনজন ব্যতীত অন্য কাউকেও অনরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না৷ তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ত্রুটি করবে না ; যাতোমাদের বিপন্ন করে তাই তারা কামনা করে ৷ তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন রাখে তাআরো গুরুতর ৷ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি, যদি তোমরা অনুধাবন কর ৷” (৩;১১৪) এইআয়াতটি নাযিল হয়েছিল মুসলিমদের সেই দল সম্পর্কে যারা মুনাফিক এবং ইয়াহুদিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক বজায় রাখত, কেননা সেসময়ে তারা (মুনাফিক ও ইয়াহুদি) তাদের (মুসলিমদের ) প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিল ৷ আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করে মুসলিমদেরকাফির-মোনাফিকদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে নিষেধ করলেন৷ অন্তরঙ্গতা শব্দটি দ্বারা বিশ্বাস ও আস্থার নৈকট্য বুঝানো হয়৷পৃথিবীতে বরাবরই এমন কিছু লোক থাকে যারা মানুষের কাছে অন্যদের থেকে বেশি বিশ্বস্ত হয়৷ মুসলিমরা যেন কাফিরদের অন্তরঙ্গ ওবিশ্বস্ত মনে করে প্রতারিত না হতে পারে সে লক্ষেই আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) মুসলিমদের কাফিরদের আসল রূপটি পূর্বেইউন্মোচিত করলেন৷ আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন, ‘তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে কিছু মাত্র পিছপা হবে না’৷ রাসূলেরসময়ে কাফিররা মুসলিমদের সম্পর্কে যা কিছু আবিষ্কার করতো তা-ই বাকি সকল কাফিরদের মাঝে রটিয়ে দিতো৷ আবু দাউদে বর্ণিতআছে, নবী (সঃ) বলেন, “একজন ব্যক্তির দ্বীন তার সহচর বন্ধুদের মতই হয়ে থাকে, সুতরাং তোমাদের যে কেউ যেনসতর্ক হয় কাকে সে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে৷”
৮. কাফিরদের অনুগত হওয়া
কাফিরদের ইচ্ছা-আকাংখার আনুগত্য তাদের সঙ্গে মৈত্রীর আরেকটি নিদর্শন৷ আল্লাহ (সুবঃ) বলেন “আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না”। (১৮:২৮)
এবং “হে মু’মিনগণ ! যদি তোমরা কাফিরদের আনুগত্য কর তবে তারা তোমাদেরকে বিপরীত দিকে ফিরিয়ে দিবে এবংতোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে৷” (৩:১৪৯)
আল্লাহ (সুবঃ) আরও বলেনঃ “নিশ্চয়ই শয়তানেরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে প্ররোচনা দেয়৷ যদিতোমরা তাদের কথামত চল তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে৷”(৬:১২১) ইবনে কাছির এই সর্বশেষ আয়াতসম্পর্কে বলেন,যখন অন্যদের কথা মত আল্লাহ এবং তাঁর শরীয়াকে তাদের বক্তব্যের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা হয় তখনইতা শির্ক হয়ে যায়৷ এটি এই আয়াতেও প্রতিয়মান হয়, “তারা (ইহুদী ও খৃষ্টানরা) তাদের রাব্বী ও সন্নাসীদের আল্লাহর পাশেতাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছে”
৯. কুরআন তাচ্ছিল্যকারীদের সঙ্গে একত্রে বসা
কাফিরদের সঙ্গে বসলে যখন তারা কোরানকে তাচ্ছিল্য করে তখন তাদেরই দলভুক্ত হতে হয়৷ আল্লাহ আমাদেরকে তা করতে নিষেধকরেছেন৷ আল্লাহ (সুবঃ) বলেন: “কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি তো অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহরআয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তাকে বিদ্রূপ করা হচ্ছে তখন যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হবে তোমরা তাদেরসাথে বস না, অন্যথায় তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে৷ মুনাফিক এবং কাফিরদের তো আল্লাহ জাহান্নামে একত্রকরবেন৷” (৪:১৪০)
ইবনে জারীর আত তাবারী ব্যাখ্যা করেন যে, এর অর্থ হল এই যে, যদি আপনি তাদের এ কাজ করতে দেখেন এবং এ সম্পর্কে কিছুই নাবলেন, তখন এটি সুস্পষ্ট হয় যে , আপনার আনুগত্য তাদের জন্য যা আপনাকে তাদের মত করে দেয়৷ তিনি আরো বলেন,এই আয়াতেরমাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি পরিষ্কার ভাবে কাফিরদের ধর্মদ্রোহী যাবতীয় কর্মকান্ডে বসার ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷
অনুরূপভাবে নবী (সাঃ) বলেন,”যারা ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত তাদের বাড়ী যেও না, অন্যথায় তোমরা অনুরূপ দুর্ভাগ্যের জন্য ক্রন্দন করবে,নতুবা তা(দুর্ভাগ্য) তাদের কাছে যেভাবে এসেছে তোমাদের কাছেও অনুরূপভাবে আসবে৷”(বুখারী)
১০. মুসলিমদের উপর কাফিরদের কতৃত্ব প্রদান
মুসলিমদের উপর কাফিরদের কতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে মুসলিমদের কাফিরদের সঙ্গে মিত্রতায় আবদ্ধ হতে বাধ্য করা হয় ৷ কেননাকতৃত্বশীল কাফিরদের প্রতি আনুগত্যের কারনে তাদের কুফরী কর্মকান্ডের বিরোধিতা করা মুসলিমদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে৷ আরতাদের কর্তৃত্ব মেনে নেয়ার অর্থ হল তাদের পদ মর্যাদার প্রতি স্বীকৃতি জ্ঞাপন করা যা ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে কোন ক্রমেই সঙ্গতিপূর্ণনয়৷ আল্লাহ বলেনঃ “এবং কখনই মু’মিনদের বিরূদ্ধে কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখবেন না৷” (৪:১৪১)
১১. কাফিরদের উপর বিশ্বাস স্থাপন
কাফিরদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার অর্থ হল তাদেরকে নিজেদের মিত্র বা বন্ধু মনে করা৷ অথচ, স্বয়ং আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা)এদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ আল্লাহ (সুবঃ) বলেন “কিতাবিদের মধ্যে এমন লোক আছে যে,বিপুল সম্পদ আমানত রাখলেও ফেরত দিবে, আবার এমন লোকও আছে যার নিকট একটি দিনারও আমানত রাখলেতার পিছনে লেগে না থাকলে সে ফেরত দিবে না, তা এ কারণে যে, তারা বলে,’ নিরক্ষরদের প্রতি আমাদের কোনবাধ্যবাধকতা নেই’৷ এবং তারা জেনেশুনে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে৷” (৩:৭৫)
১২. কাফিরদের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করা
কাফিরদের কার্যক্রমের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, তাদের পোষাকের অনুসরণ কিংবা তাদের লেবাস ও ফ্যাশনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেনিজেদের লেবাসের ষ্টাইল পরিবর্তন করা_এই জিনিসগুলি তাদের সঙ্গে মিত্রতার বিষয়টিকে পরিষ্কার করে৷(মুজমুআত তাওহীদ)
১৩. কাফিরদের কাছে টানা ও কাফিরদের সাহচর্যে আনন্দ অনুভব করা
তাদের কাছে নিজেদের অন্তর্নিহিত অনুভূতি ব্যক্ত করা, তাদেরকে কাছে টানা এবং তাদের সম্মান করা তাদের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনেরইপরিচয় বহন করে৷ (মুজমুআত তাওহীদ)
চলবে………..