মুল্যবান উপদেশ – – ইমাম সুফিয়ান আস-সাওয়ারী ( রাহিমাহুল্লাহ)
লিখেছেন: ' shahedups' @ বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১১ (৪:০৮ অপরাহ্ণ)
ইমাম সুফিয়ান (রাহিমাহুল্লাহ ) বলেন:
সর্বাবস্থায় সত্য কথা বল। মিথ্যা বলা ও প্রতারণা থেকে বিরত থাক এবং মিথ্যাবাদী ও প্রতারকদের সাথে মেলামেশা করবে না কারণ এইসবই পাপ কাজ।
প্রিয় ভাই, কথাবার্তা বা কাজকর্মে রিয়ার (লোক দেখানো নেক আমল) ব্যাপারে সাবধান কেননা রিয়া এক ধরনের শিরক। অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি প্রকাশ কর না, অহংবোধের জন্য অনেক সময় নেক আমল ও পরিত্যক্ত হয়।
তার থেকেই শুধু দ্বীনের শিক্ষাগ্রহণ কর যে দ্বীনের বিধিনিষেধের প্রতি আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল। যে আলেম দ্বীনের বিধিবিধানের প্রতি উদাসীন তাঁর তুলনা সে রুগ্ন চিকিৎসকের মত যে নিজের রোগ সারাতে অক্ষম। তেমনিভাবে যে নিজের মঙ্গলের জন্য ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে না সে কিভাবে অপরে মঙ্গলের জন্য সাহায্য করবে?
প্রিয় ভাই, তোমার দ্বীন তোমার নিজের মাংস ও রক্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।( কেননা দ্বীনের বিধিনিষেধের প্রতি মনযোগী না হলে তার জন্য তোমাকে শাস্তিভোগ করতে হবে যা প্রয়োগ করা হবে তোমার রক্ত – মাংসেরই উপর) তোমার হৃদয়ের জন্য অন্তঃকরণ প্রয়োজন। অন্তরের প্রতি সদয় হও। তুমি যদি এর প্রতি সদয় না হও, তাহলে এতে রহমতের কোন চিহ্ন পাবে না।
তাদের সাহচার্যে থাকার চেষ্টা কর যারা দুনিয়াবী ভোগ-বিলাস থেকে ( একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্য) দূরে থাকতে উপদেশ দেয় ও আখিরাতের কল্যাণের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করে। দুনিয়াবী সফলতাই যাদের ধ্যান-জ্ঞান তাদের থেকে দূরে থাক; এই ধরনের ব্যাক্তি তোমার দ্বীনের প্রতি অবিচল থাকাকে দুর্বল করে দিবে এবং তোমার অন্তরকে দূষিত করবে।
মৃত্যুকে সব সময় স্মরণ করবে এবং তেমনিভাবে আল্লাহর কাছে সব সময় তোমার অতীতের সব গুনাহ মাফ করার জন্য দোয়া করতে থাকবে। আল্লাহর কাছে সর্বদা নিরাপদ থাকার (শয়তানের ফাঁদ , মারাত্মক রোগ, ফিতনা-ফ্যাসাদ ইত্যাদি থেকে) জন্য দোয়া করবে।
প্রিয় ভাই, উত্তম চরিত্র গঠন কর। জামায়াতের (আহলে-সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত) বিরোধীতা কর না। আহলে সুন্নাহর সাথে একত্রে থাকাই একমাত্র মঙ্গল ও নিরাপত্তা। যে ব্যক্তি সর্বদা দুনিয়াবী সফলতার পেছনে ছুটতে থাকে তার অবস্থা ঐ ব্যাক্তির মত যে একটা গৃহ নির্মাণ করে অপরটি ধ্বংস করে।( কারণ সে দুনিয়াবী সফলতার জন্য আখিরাতের সাফল্যর প্রতি উদাসীন)
দ্বীনের ব্যাপারে কেউ উপদেশ চাইলে তাদেরকে আন্তরিক উপদেশ দাও। কখনো এমন কোন উপদেশ দিতে কার্পন্যবোধ করবে না যা ঐ ব্যাক্তিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যাবে। যদি তুমি তোমার মুসলিম ভাইকে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালবাস তাহলে তাকে তোমার সম্পদ থেকে উদার হস্তে দান কর। বিতর্ক, ঝগড়া-বিবাদ ও কোন্দল থেকে দূরে থাক অন্যথায় তুমি হয়তোবা অন্যায়কারী, সীমালঙ্ঘনকারী অথবা প্রতারকদের একজন হয়ে যেতে পার।
সকল ক্ষেত্রে এবং সবসময় ধৈর্য্য ধারন কর। ধৈর্য্য মানুষকে এমন এক সফলতার দিকে নিয়ে যায়, যা বেহেশতে যাওয়ার পথকে সুগম করে। রাগান্বিত হবে না কেননা রাগ ও ক্ষোভ ভ্রান্ত পথে নিয়ে যায় যা জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে।
আলেমদের সাথে বিতর্ক কর না তাতে তুমি তাঁর কাছে অবজ্ঞার পাত্র হবে। আলেমদের সান্নিধ্য পাওয়া এক ধরনের রহমত এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের থেকে দূরে থেকে জ্ঞান অর্জন না করার ফলাফল হচ্ছে আল্লার ক্রোধে পতিত হওয়া। নিশ্চয়, আলেমরা হচ্ছে নবীদের কোষাধাক্ষ্য, এবং উত্তরাধিকারী।
দুনিয়াবী ভোগ-বিলাস থেকে বিমুখ হও (সন্নাস্যীদের মত না !, মধ্যপন্থা অবলম্বন কর) । ফলে আল্লাহ তোমার অন্তরের চক্ষুকে প্রস্ফুটিত করবে যা দিয়ে এই দুনিয়ার ভুল-ত্রুটি দেখতে পাবে। ওয়ারা (Wara) দের অন্তর্ভুক্ত হও ( ওয়ারা হচ্ছে সে সমস্ত ব্যাক্তি যারা সন্দেহজনক বিষয় পরিত্যাগ করে এবং এমনকি কিছু হালাল বিষয় ও ত্যাগ করে যা হারামের দিকে নিয়ে যাবে এই ভয়ে।) এবং (বিচারের দিনে) আল্লাহ তোমার হিসেব-নিকাশ সহজ করে দিবে।
সন্দেহজনক বিষয় থেকে মুক্ত থাক এবং সন্দেহজনক বিষয়কে যেসব বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই তা দিয়ে পরিবর্তন করে দাও। ফলে তুমি নিজেকে নিরাপদ অনুভব করবে। এভাবে সন্দেহজনক বিষয়কে নিশ্চিত বিষয় দিয়ে পরিবর্তন করে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি নিরাপত্তা লাভ করবে।
সৎ কাজের আদেশ দাও – অসৎ কাজে নিষেধ কর – তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে প্রিয় হবে। মন্দ কর্মসম্পাদনকারীকে ঘৃনা কর। সাধ্যমত মন্দ কাজ প্রতিহত কর। তুমি যদি ঈমানের দিকে শক্তিশালী হতে চাও – তাহলে তুমি অতি আনন্দে উচ্ছসিত হইওনা। দুনিয়াবী ব্যাপারে কিছু সফলতা পেলে অল্পতে আনন্দ প্রকাশ কর। আখিরাতের ব্যাপারে মনযোগ দাও; যদি তুমি তা কর; দুনিয়াবী ব্যাপারে আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট।
আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার (পার্থিব ও আখিরাতের ক্ষেত্রে) জন্য প্রার্থনা কর। যদি আখিরাতের জন্য কিছু করতে স্থির কর – যেমন : দান-সদকা – তাহলে দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা অন্যথায় শয়তান তোমার সংকল্পকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং ক্রমে তা পূর্ণ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিমিতভাবে আহার কর। কাজের চেয়ে অতিরিক্ত আহার করা (ইসলামে) অপছন্দনীয়। কোন উদ্দেশ্য ছাড়া বা ক্ষুধার্ত নাহলে আহার করিওনা। মৃত্যর আগ পর্যন্ত আল্লাহকে প্রতিনিয়ত স্মরণ না করে অবিরতভাবে উদর-পূর্তি করিওনা।
ভুল করার প্রবনতা হ্রাস করতে সচেষ্ট হও। কেউ তাঁর ভুলের জন্য অনুতপ্ত হলে তা গ্রহন কর এবং অন্যর ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিও। ঐ ধরনের ব্যক্তি হওয়ার চেষ্টা কর যার থেকে মানুষ শুধুমাত্র ভালো কিছু আশা করে এবং যার থেকে মন্দ লোকজন নিজেকে নিরাপদ মনে করে। রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করিওনা এবং যারা সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তাদের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হও। যার তোমার প্রতি অন্যায় করেছে তাদেরকে ক্ষমা করা। তাহলে তুমি রাসুল ও শহীদের সঙ্গী হবে।
বাজারে অতিরিক্ত যাওয়া-আসা করিওনা। শয়তান – মানুষ / জ্বীন – বাজার বেশি অবস্থান করে। যখন তুমি বাজারে থাকবে – তখন সৎ কাজের আদেশ করা ও মন্দে কাজের নিষেধ করা তোমার জন্য আবশ্যকীয় – কিন্তু তুমি সেখানে শুধু মন্দ কাজেই দেখতে পাবে। বাজারে এক পাশে দাঁড়িয়ে বলঃ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইবাদতের যোগ্য সত্তা নেই। তাঁর কোন শরীক নেই; সবকিছুর একমাত্র মালিক। তিনি সকল প্রশংসার যোগ্য। তিনিই জীবন দান করেন এবং তার হাতেই সবার মৃত্য। সমস্ত মঙ্গল তাঁর হাতে এবং তিনি সব কিছু করতে সক্ষম। কোন শক্তি বা সামর্থ্য নেই আল্লাহর ইচ্ছা ব্যাতিত – তিনি সুমহান ও সর্ব শক্তিমান।
পার্থিব ব্যাপারে দুনিয়ার মোহগ্রস্ত ব্যাক্তিদের সাথে কোন্দলে জড়িয়ে পড়িও না। ফলে আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করবে এবং এইসব ব্যক্তিরাও পছন্দ করবে।
এবং বিনয়ী হও – যখন তুমি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, সৎ কর্ম সম্পাদন কর, ফলে তুমি নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্যের (শারিরিক ও আধ্যাত্মিক) নিশ্চয়তা পাবে।
ক্ষমাশীল ব্যাক্তি হওয়ার চেষ্টা কর – তাহলে তুমি তাই পাবে যা তুমি চাও। দয়াশীল হও – তাহলে অন্যরা তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করবে।
প্রিয় ভাই, তোমার দিন-রাত প্রতি ঘণ্টাকে অকারণে নষ্ট কর না। তোমার নিজের জন্য ও বিচারের দিনের জন্য এই মুল্যবান সময় সদব্যাবহার কর। প্রিয় ভাই, বিচারের দিনে আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট না হলে – সেদিন তোমার তৃষ্ণা নিবারণ হবে না এবং আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না যদি তুমি তার অনুগত না হও। বেশি বেশি নফল ইবাদত কর কারণ নফল ইবাদত সমূহ আল্লাহর নিকটবর্তী করে।
দানশীল হও – তাতে তোমার দোষ-ত্রুটি গোপন করা হবে। আল্লাহ তোমার হিসাবকে বিচারের দিনে সহজ করে দিবেন। অধিক পরিমানে নেক আমল কর এবং আল্লাহ তোমার কবরের পরিবেশকে সহজ করে দিবে এবং পরিতৃপ্ত করবে। সকল মন্দকাজ থেকে বিরত থাক – এতে ঈমানের মাধুর্য অনুভব করবে। সৎ ও ধার্মিক লোকদের সাহচার্যে থাক – আল্লাহ তোমার দ্বীনের ব্যাপারগুলো সহজ করে দিবেন। দ্বীনের ব্যাপারে যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত(মুত্তাকী) তাদের পরামর্শ নাও। নেক আমল করার ব্যাপারে অগ্রগামী হও – আল্লাহ তোমাকে তাঁর অবাধ্য হওয়া থেকে রক্ষা করবেন।
প্রতিনিয়ত আল্লাহ স্মরণ কর – আল্লাহ তোমাকে দুনিয়াবিমুখীতা (ভোগ-বিলাসের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থী) করবে। মৃত্যুকে স্মরণ কর – এতে আল্লাহ তোমার পার্থিব বিষয় সমূহকে সহজ করে দিবেন। বেহেশতের জন্য আকঙ্খা – এতে আল্লাহ তাঁর অনুগত হতে সাহায্য করবেন। জাহান্নামের শাস্তির ভয়ে ভীত হও – এতে আল্লাহ এই দুনিয়ার কষ্ট সহ্য করা সহজ করে দিবেন।
শুকরিয়া,জাযাকাল্লাহ,