হাশরের ভয়াবহতা নিয়ে কিছু কথা পর্ব ০১
লিখেছেন: ' shahedups' @ বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৩, ২০১১ (৩:২৯ অপরাহ্ণ)
হাশরের মাঠের পরিস্থিতি হবে অত্যন্ত ভীতিকরঃ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
أَنَّهَا ذَكَرَتِ النَّارَ فَبَكَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُبْكِيكِ قَالَتْ ذَكَرْتُ النَّارَ فَبَكَيْتُ فَهَلْ تَذْكُرُونَ أَهْلِيكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّا فِي ثَلَاثَةِ مَوَاطِنَ فَلَا يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَعْلَمَ أَيَخِفُّ مِيزَانُهُ أَوْ يَثْقُلُ وَعِنْدَ الْكِتَابِ حِينَ يُقَالُ (هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابِيَهْ ) حَتَّى يَعْلَمَ أَيْنَ يَقَعُ كِتَابُهُ أَفِي يَمِينِهِ أَمْ فِي شِمَالِهِ أَمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ وَعِنْدَ الصِّرَاطِ إِذَا وُضِعَ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ
অর্থঃ “তিনি জাহান্নামের আগুনের কথা মনে করে কাঁদতে শুরু করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কাঁদছ কেন? তিনি বললেনঃ আমি জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাঁদছি। হাশরের মাঠে আপনি কি আপনার পরিবার ও আপনজনের কথা মনে রাখবেন? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেনঃ তিনটি স্থান এমন রয়েছে যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা। (১) মানুষের আমল যখন মাপা হবে। তখন মানুষ সব কিছু ভুলে যাবে। চিন্তা একটাই থাকবে, তার নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে? না হালকা হবে। (২) যখন প্রত্যেকের আমলনামা দেয়া হবে তখন কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা। আমলনামা ডান হাতে পাবে? না বাম হাতে পাবে- এনিয়ে চিন্তিত থাকবে। (৩) পুলসিরাত পার হওয়ার সময়ও সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। কেউ কাউকে স্মরণ করবে না।
উলঙ্গ অবস্থায় মানুষেরা হাশরের মাঠে উপস্থিত হবেঃ
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আমি তাঁকে বলতে শুনেছি,
يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ قَالَ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ
অর্থঃ “কিয়ামতের দিন নগ্নপদ, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমস্ত মানুষকে হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষ সকলকেই এ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে? তাহলে তো মানুষেরা একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে। প্রত্যেকেই নিজের উপায় কি হবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকানোর চিন্তাও করবেনা।
হাশরের মাঠের একদিনঃ
হাশরের মাঠের একটি দিনের পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এদিনের দীর্ঘতা দেখে মানুষ মনে করবে দুনিয়াতে তারা মাত্র সামান্য সময় বসবাস করেছিল। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
অর্থঃ “ফেরেশতাগণ এবং রূহ্ (জিবরীল আঃ) আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হবেন এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। (সূরা মাআ’রিজঃ ৪)
মাথার উপরে সূর্যের আগমণঃ
দুনিয়াতে আমরা যেই সূর্যের আলো পাচ্ছি তা বৈজ্ঞানিকদের হিসাব মতে আমাদের পৃথিবী থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে অবস্থিত। হাশরের মাঠে সূর্য মানুষের মাথার উপরে মাত্র এক মাইলের দূরত্বে চলে আসবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
تَدْنُوْ الشَّمْسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ فَيَكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أَعْمَالِهِمْ فِي الْعَرَقِ فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى حَقْوَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ الْعَرَقُ إِلْجَامًا قَالَ وَأَشَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ إِلَى فِيهِ
অর্থঃ “কিয়ামতের দিন সূর্য মানুষের মাথার উপরে চলে আসবে। মাত্র এক মাইলের ব্যবধান থাকবে। মানুষেরা তাদের নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। মানুষের শরীরের পঁচা ঘাম কারো টাখনু পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো নাকের ডগা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। একথা বলার পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখের দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।
শৃংখলাবদ্ধ অবস্থায় কাফেরদের হাশরঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوهَهُمْ النَّارُ
অর্থঃ “সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য এক পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমানসমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। আপনি ঐদিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃংখলাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাবেন। তাদের পোষাক হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমন্ডল আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮-৫০)
অতঃপর সে ভয়ানক দিনে পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে যাবে। বর্তমানে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবেনা। বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহ্ল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ نَقِيٍّ قَالَ سَهْلٌ أَوْ غَيْرُهُ لَيْسَ فِيهَا مَعْلَمٌ لِأَحَدٍ
অর্থঃ “সকল মানুষকে কিয়ামতের দিন সাদা ময়দার রূটির মত পরিস্কার একটি ভূমিতে উপস্থিত করা হবে। তাতে কারও কোন নিশানা থাকবে না। মানুষ তখন পুলসিরাতের উপর থাকবে। কেননা মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ আমিই সর্র্বপ্রথম রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আল্লাহর বাণী,
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ
অর্থঃ “সে দিন আকাশ ও যমিনের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করেছি। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ মানুষ তখন কোথায় অবস্থান করবে? তিনি বললেনঃ পুল সিরাতের উপর।
সে দিন কাফের ও পাপিষ্ঠদের একজনকে অন্যজনের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখা যাবে। প্রত্যেককে তার ¯^RvZxq লোকের সাথে একত্রিত করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
احْشُرُوا الَّذِينَ ظَلَمُوا وَأَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوا يَعْبُدُونَ
অর্থঃ “জালেমদেরকে এবং তাদের সঙ্গীদেরকে একত্রিত কর। (সূরা আস্-সাফ্ফাতঃ ২২) তাদের হাত, পা এবং ঘাড় শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখা যাবে। তাদেরকে আলকাতরার পোষাক পরিয়ে দেয়া হবে। আগুন তাদের চেহারা ঢেকে ফেলবে।