ধুমপান একটি অপরাধ (হারাম): কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে
লিখেছেন: ' shahedups' @ রবিবার, মে ২২, ২০১১ (৩:৪৬ অপরাহ্ণ)
আমরা সকলে জানি ধুমপান স্বাস্হের জন্য ক্ষতিকর।কথাটা অনেকে সেচ্ছায় বলেন অনেকে বলেন বাধ্য হয়ে।যাই হোক ধুমপানের ক্ষতির তোলনাই শ্লোগানতা খুবই হালকা। কারন ধুমপান শুধু স্বাস্হের জন্য ক্ষতিকর নয়, মস্তিস্কের জন্য ক্ষতিকর, আত্মার জন্য ক্ষতিকর, স্বভাব চরিত্তের জন্য ক্ষতিকর, পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশি সমাজ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমার কাছে এর চাইতে বড় ক্ষতির দিক হল ধুমপানের মাধ্যমে ইসলামের নীতি ও আদর্শ লংঘন।
আমাদের দেশের অনেক ধর্মপ্রান মুসলমানদেরকে দেখা যায় ধুমপান করতে।মাথায় টুপি ও গালে দাড়ি আছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে কিন্তু নামাজ শেষে আবার ধুমপান ও করে। তাদেরি যদি এ অবস্হা হয় তাহলে বেনামাজি ও যুবকদের কি অবস্হা চিন্তা করে বলা মুসকিল। এ সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ধর্মীয় নেতাদের এবং যুবকদের যখন আপনি বলবেন যে ধুমপান জায়েয নয় তখন তারা তা মানতে চাননা।তারা তখন অনেক যুক্তি দেখায়। তারা বলেন:আল-কুরআনে তো বলা হয়নি ‘তোমরা ধুমপান করোনা।’ হাদীসেও কোথাও নেই যে ‘ধুমপান করা যাবেনা’, তাহলে ধুমপান ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ হল কিভাবে?
এ প্রশ্নটির উওর দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
“তিনি তোমাদের জন্য আলাল করে দেন ভাল ও উওম বস্তু আর হারাম করে দেন খারাপ ও ক্ষতিকর বস্তু।”
(আল-আরাফ: ১৫৭)
এ আয়াতের ভিত্তিতে এমন অনেক জিনিস আছে যা হারাম হয়েছে অথচ তা কুরআনে ও হাদীসে নাম ধরে বলা হয়নি। যেমন-আমরা সাপ খাইনা।কেন খাইনা?কুরআনে ও হাদীসে কি কোথাও আছে যে তোমরা সাপ খেওনা?নেই ঠিকই, কিন্তু উপরের আয়াতের ভিত্তিতে তা আরাম হয়ে গেছে।কেননা তা ক্ষতিকর ও খারাপ।ধুমপান ক্ষতিকর ও খারাপ।এ বেপারে দুনিয়ার সুস্হ বিবেক সম্পন্ন সকল মানুষ একমত।কোন স্বাস্হ্য বিজ্ঞানী দ্বি-মত পোষন করেননি। তারপরেও যদি কেহ বলেন, ধুমপান শরীয়তের নিষিদ্ধ বস্তুর মধ্যে পরেনা তাহলে তাকে ঔ ডায়াবেটিস রোগির সংগে তুলনা করা যায় যিনি ডাক্তারের নির্দেষে চিনি ত্যাগ করলেও ঠিকই কিন্তু রসগোল্লা, চমচম, সন্দেশ সবই খেলেন আর বললেন কই ডাক্তার তো এগুলো নিষেধ করেননি!
আল-কুরআনের আলোকে ধুমপান:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
“তিনি তোমাদের জন্য হালাল করে দেন ভাল ও উওম বস্তু আর হারাম করে দেন খারাপ ও ক্ষতিকর নোংরা (খাবাইস) বস্তু।”
(আল-আরাফ: ১৫৭)
আর ধুমপান নিশ্চই খাবাইস এর অন্তর্ভূক্ত, তাই তা পান করা বৈধ (হালাল) নয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
“তোমরা নিজেদের জীবন ধ্বংসের সম্মূখীন করোনা।”
(আল-বাকারা: ১৯৫)
এ আয়াতের দাবিতেও ধুমপান নিষেধ।কেননা ধুমপানের কারনে অনেক জীবন বিধংসী রোগ ব্যাধী হয়ে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মদ ও জুয়া হারাম করতে গিয়ে ইরশাদ করেন-
“তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিন, উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ।আর তার মধ্যে মানুষের উপকারিতাও আছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারের চেয়ে বড়।”
(আল-বাকারা: ২১৯)
আল্লাহ তআলার এ বানী দ্বারা বুঝে আসে মদ জুয়ার মধ্যে উপকারিতা থাকা সত্তেও তা হারাম করেছেন। তাহলে ধুমপান তো মদ জুয়ার চেয়েও জঘন্য।কারন তাতে কোন ধবনের উপকার নেই।বরং ১০০ ভাগই ক্ষতি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামিদের খাবারের বর্ননা করতে গিয়ে ইরশাদ করেন-
“এতা তাদের পুষ্টিও যোগাবেনা ও ক্ষুধা নিবারণ করবেনা।”
(আল-গাশিয়াহ: ০৭)
ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্টই রয়েছে যে তা পান কারির পুষ্টিও যোগায়না,ক্ষুধাও নিবারণ করেনা। ধুমপানের তুলনা জাহান্নামের খাবারের সাথই তুলনা করা যায়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
“তোমরা অপচয় কর না।অপচয়কারিরা শয়তানের ভাই।”
(আল-ইসরা: ২৭)
ধুমপান একটি অপচয়। অনেক এমন অপচয় আছে যাতে মানুষের লাভ-ক্ষতি কিছুই নেই।এণ্ডলো সকলের কাছে অন্যায় ও সর্বসম্মতভাবে তা অপচয় বলে গণ্য। কিন্তু ধুমপান এমন একটি অপচয় যাতে মানুষের কোন লাভ নেই বরং ক্ষতিই বেশি।
হাদীসের আলোকে ধুমপান:
রাসূলে করীম (সা:) বলেন:-
“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদের তিনটা বিযয় ঘৃণা করেন। ১)ভিত্তিহীন ও সনদ-সূত্রবিহীন কথা-বার্তা। ২)অধিকহারে প্রশ্ন করা। ৩)সম্পদ নষ্ট করা।”
(বুখারী ও মুসলিম)
ধুমপানকারী ধুমপান করে সম্পদ নষ্ট করে তাতে কারো কোন দ্বি-মত নেই।
রাসূলে করীম (সা:) বলেন:-
“যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।”
(বুখারী)
ধুমপানকারী তার ধুমপানের দ্বারা পরিবার-পরিজন, সহযাত্রী, বন্ধু-বান্ধব ও আশে পাশের লোকজনকে কষ্ট দিয়ে থাকে। অনেকে নীরবে কষ্ট সহ্য করে মনে মনে ধুমপানকারীকে অভিশাপ দেয়। আবার দু একজন প্রতিবাদ করে বিব্রতকর অবস্হায় পরে যান।চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় এ কথা প্রমানিত যে ধুমপানকারীর প্রতিবেশি শারিরিকভাবে সমান ক্ষতিগ্রস্হ হন যতটা ধুমপানকারির নিজের হয়ে থাকে।
রাসূলে করীম (সা:) বলেন:-
“হালাল স্পষ্ট ও হারাম স্পষ্ট। এ দুইয়ের মাঝে আছে সন্দেহজনক বিষয়াবলী। (তা হালাল না হারাম) অনেক মানুষই জানেনা। যে ব্যক্তি এ সন্দেহজনক বিষয়াবলী পরিহার করল, সে তার উর্ম ও স্বাস্হ রক্ষা করল। আর যে ব্যক্তি এ সন্দেহজনক বিষয়াবলীতে লিপ্ত হল সে প্রকারান্তরে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে গেল।
(বুখারী ও মুসলিম)
তাই যারা ইসলামের দৃষ্টিতে ধুমপান নিষিদ্ধ হওয়ার কোন প্রমান পাচ্ছেন না তাদের কমপক্ষে এ হাদীসটির দিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
নবী করীম (সা:) এরশাদ করেন:-
“যে সকল কথা ও কাজ মানুষের কোন উপকারে আসেনা, তা পরিহার করা তার ইসলামের সৌন্দর্য।”
(মুসলিম)
আমরা সকলেই স্বীকার করি যে ধুমপান কোন উপকারে আসেনা বরং ক্ষতিই করে।
বাস্তবতার আলোকে ধুমপান:
কোন পাক ঘরে যদি জানালার কাচ থাকে অথবা বাল্ব থাকে তা্লে দেখা যায় ধোয়ার কারনে তাতে ধীরে ধীরে কালো আবরন পরে। এমনই ভাবে ধুমপানকারীর দাতে, মুখে ও ফুসফুসে কালো আবরন তৈরি হয়। কাচের আবরণ পরিষ্কার করা গেলেও ফুসফুসের কালিমা পরিষ্কার করা যায়না। ফলে তাকে অনেক রোগ-ব্যধীর স্বীকার হতে হ্য়। একজন অধুমপায়ী ব্যক্তির চেয়ে একজন ধুমপয়ী বেশি উগ্র মেজাজের হয়ে থাকেন। সমাজে যারা বিভিন্ন অপরাধ করে বেরায় তাদের ৯৮% ধুমপান করে থাকে। যারা মাদক দ্রব্য সেবন করে তাদের ৯৫% প্রথমে ধুমপানে অভ্যস্ত হয়েছে তারপর মাদক সেবন আরম্ভ করেছে। এমনকি ধুমপায়ী মায়ের সন্তান উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকে। (সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব ১৫-১২-২০০০ ইং)
সম্প্রতি উইনকনসিন বিশ্ব বিদ্যালয়ে ৩৭৫০ জন লোকের উপর এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে আধুমপায়ীএর চেয়ে দধুমপায়ীদের শপবনশক্তি কমার সম্ভাবনা শতকরা ৭০ ভাগ বেশি থাকে। গবেষণা করে আরো দেখেছেন যে একজন ধুমপায়ীর ধুমপান করার সময়েকোন অধুমপায়ী পাশে থাকলে তারো একই সমস্যা হতে পারে।
(সূত্র: সাপ্তাহিক আরাফাত বর্ষ ৪৫ সংখ্যা ১, ১৮ই আগষ্ট ২০০৩)
তাই আসুন সকলে মিলে আমরা আমাদের সমাজকে ধুমপান মুক্ত করার চেষ্টা করি।
তাই আসুন সকলে মিলে আমরা আমাদের সমাজকে ধুমপান মুক্ত করার চেষ্টা করি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
এই তথ্যমূলক লেখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ, আপনার কাছে আমার আরেকটি আরজ আছে। তা হলো, যদি সুযোগ হয় তাহলে আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করবেন এবং দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ দিবেন। আপনার পরামর্শের অ‡পক্ষায় রইলাম। আমার ওয়েব ঠিকানা হলো—
http://redoygoleseris.blogspot.com