লগইন রেজিস্ট্রেশন

সেক্যুলারিজম যখন ভন্ডামী

লিখেছেন: ' শামীম' @ শনিবার, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১০ (৫:৫০ অপরাহ্ণ)

সেক্যুলারিজমের বাংলা হওয়া উচিত ধর্মনিরপেক্ষতা, যার মানে এমন এক পদ্ধতি যা রাষ্ট্রকে বিশেষ কোন ধর্মকে প্রমোট করতে বাধা দেয়। কিন্তু আদর্শ সেক্যুলার বলে খ্যাত রাষ্ট্রগুলিতে কি এই আদর্শ বাস্তবায়িত হচ্ছে? না বিশেষ কোন ধর্ম ঠিকই সুবিধা আদার করে নিচ্ছে? কিন্তু চরম সেক্যুলার বলে খ্যাত ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম ইত্যাদি দেশ ‘কনকর্ডাট’ (CONCORDAT) নামক একটি চুক্তি বলে কেন ক্যাথলিক ধর্মকে সুবিধা দিচ্ছে? সেক্যুলার দেশে কেন সংখালঘুরা কর্ম ক্ষেত্রে স্বাধীন নয়?

কনকর্ডাট কী?

বিগত ৯০০ বছর যাবৎ ভ্যাটিকান রাষ্ট্রিয় ব্যাপারে ক্যাথলিক ধর্মকে যুক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কখোনো সরাসরি ক্যাথলিক ধর্মকে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার মাধ্যমে, কিন্তু তা সম্ভব না হলে রাষ্ট্রের সাথে এক বিশেষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে যেখানে বিশেষ কতগুলো ব্যাপারে ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়।

কনকর্ডাট একটি বিশেষ চুক্তি যা রাষ্ট্র ও ক্যাথলিক পবিত্রভূমি ভ্যাটিকানের মধ্যে সম্পাদিত হয় যাতে ক্যাথলিক ধর্ম রাষ্ট্রে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। যেমন, কনকর্ডাট ক্যানন ল’ (ক্যাথলিকদের শরীয়া আইন)-কে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করে। ক্যানন ল’ অনুসারে বউ পিটানো বিবাহ বিচ্ছেদের কোন ভিত্তি নয়, কিন্তু ইউরোপিয়ান সিভিল ল’ অনুসারে একজন স্ত্রী ঐ একই কারনে ডিভোর্সের আবেদন করতে পারে। কনকর্ডাটভুক্ত দেশে ক্যাথলিক চার্চের বিবাহ, ইউরোপিয়ান সিভিল আইনের বদলে ক্যানন ল’ দ্বারা শাসিত হয়। যেমন পোলিশ আইনে ‘কনকর্ডাট বিবাহ’ নামে এক বিশেষ বিবাহ আছে (১৯৯৩ আর্টিকেল ১০.২)। এই কনকর্ডাট বিবাহতে ডিভোর্সের কোন বিধান নাই। ডোমিনিকান কনকর্ডাট অনুসারে ক্যাথলিক চার্চে যে কোন বিবাহই ‘কনকর্ডাট বিবাহ’ বলে পরিগনিত হয় যেখানে ডিভোর্সের কোন বিধানই নাই (১৯৫৪ আর্টিকেল ১৫.২)। ২০০৯ সালে ভ্যাটিকান এক ডিক্রির মাধ্যমে কনকর্ডাট বিবাহের বিধান আরো কঠোর করে। নতুন ডিক্রি অনুসারে ক্যানন ল’ অনুসারে বিবাহকে ‘কনকর্ডাট বিবাহের’ সমতুল্য করার প্রয়াস নেয়া হয়। ২০০৪ সালে স্লোভাকিয়ার সাথে সম্পাদিত কনকর্ডাট অনুসারে স্লোভাকিয়া ২০০৭ সালে ধর্ম-নিরেপেক্ষ মানবাধিকারের ধারনা বদল করে ভ্যাটিকান ডক্ট্রিনকে অনুসরন করে নতুন মানবাধিকারের ধারা রচনা করে।

আমি আগেই বলেছি পাশ্চাত্যের তথাকথিত অনেক সেক্যুলার দেশই কনকর্ডাটের মাধ্যমে ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন চরম সেক্যুলার খ্যাত ফ্রান্স ১৮০১ সালে প্রথম কনকর্ডাট স্বাক্ষর করে। কিন্তু ১৯০৫ সালে ফরাসী বিপ্লবের পর কনকর্ডাট বাতিল ঘোষনা করা হয় এবং সেক্যুলারিজমকে মানবাধিকারের ভিত্তি ঘোষনা করা হয়। নাজি শাষনামলে Marshal Pétain ল’ নামে বিবাহ সংক্রান্ত বিশেষ কনকর্ডাট সাক্ষরিত হয় ১৯৪২ সালে। সাম্প্রতিক কালে Trinity-of-the-Mountains নামে নতুন কনকর্ডাট সাক্ষরিত হয় ১৯৯৯ সালে। এছাড়া ২০০৮ সালে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ক্যাথলিক শিক্ষাকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়, যদিও এটি কনকডার্ট বলে স্বীকার করা হয় না। দেশ অনুযায়ী কনকর্ডাটের অবস্থা দেখুন এখানে

ফ্রীডম অব একশনঃ

নিরেপেক্ষতার অর্থ ‘ফ্রিডম অব স্পীচ’ ও ‘ফ্রীডম অব একশন’ অর্থাৎ বাক স্বাধীনতা ও কর্মের স্বাধীনতা। একটিকে ছাড়া অন্যটি অর্থহীন। কিন্তু এই বিচারে বেশীরভাগ তথাকথিত ধর্ম-নিরেপেক্ষ দেশের অবস্থা বেশ করুণ। তুরস্ককে অনেকে গর্ব করে সেক্যুলার দেশ মনে করেন, কিন্তু তুরস্কের মেয়েরা তাদের কর্ম ক্ষেত্রে স্বাধীন? তারা তাদের শিক্ষা, কর্ম ক্ষেত্রে ‘হিজাব’ পরিধান করতে পারেনা। রাষ্ট্র স্বয়ং এই কর্মের স্বাধীনতা হরনকারী। পাশ্চাত্যের অনেক দেশ আমাদের মতো গরিব দেশের সংখালঘুদের অধীকার নিয়ে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করে অস্থীর, কিন্তু তাদের দেশে স্বয়ং সংখালঘুদের কর্মে কি স্বাধীনতা আছে? ফ্রান্সের পাবলিক স্কুল গুলিতে হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ। হল্যান্ডে, বেলজিয়ামে কর্ম ক্ষেত্রে হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ। কেন? সুইজারল্যান্ডে কেন চার্চ বা সিনেগগের চুড়া বানানোতে সমস্যা নেই এবং কেবল মাত্র মসজিদের মিনার নির্মান নিষিদ্ধ হলো? ফ্রীডম অব একশন নিষিদ্ধ করে কেবল ফ্রীডম অব স্পিচ আছে বলে যারা নিরেপেক্ষতার কথা বলে তারা আসলে ধোকাবাজ।

পাশ্চাত্যের কিছু দেশ কিছু সময়ের জন্য ধর্ম-নিরেপেক্ষ ছিল। কিন্তু তাদের নিরেপেক্ষতার স্বর্ণ-যুগ খুবই ক্ষনস্থায়ী। যখনই এরা কোন সমস্যায় নিপতিত হয় সমস্ত দোষের ভাগি হয় সংখালঘুরা। ইউরোপে চাকুরী ক্ষেত্রে শুধু নামের ভিন্নতার কারনে সংখালঘুরা চাকুরী বঞ্চিত বা বৈষম্যের স্বীকার হয় এতো রীতিমত ডকুমেন্টেড! বাংলাদেশে রাষ্ট্রিয় ধর্ম ইসলাম থাকার পরও, তথাকথিত ধর্মনিরেপেক্ষ ভা্রতের চেয়ে সাম্প্রদায়ীভাবে অনেক বেশী উন্নত তাতো তসলিমা নাসরিন বা তার সমর্থকরা ছাড়া যে কেউ স্বীকার করবে।

আমাকে গ্যারান্টি দিতে হবে ‘সেক্যুলারিজম’ নিজে নিরেপেক্ষ। সেক্যুলারিজম আমার কাছে একধরনের পর্দা বা বেড়া সরূপ যা ধর্মকে রাষ্ট্রের সাথে মিশতে বাধা দেয়। কিন্তু এই বেড়া যে ক্ষেত খাবেনা অর্থাৎ ধর্ম-সংহারী হবেনা তার গ্যারান্টি কে দিবে? এই শংকার কারন অভিজ্ঞতা, সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞা নয়। যারা সেক্যুলারিজমকে আদর্শ বলে চালাতে চান তারাই এই বিভ্রান্তির জন্য দায়ী।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৯৩২ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

১৯ টি মন্তব্য

  1. ফ্রান্সে নুড বিচে নগ্নভাবে অবস্থান করা যায় কিন্তু বোরখায় মুখ তথা সর্বাঙ্গ ঢেকে চলা অধুনা আইনে নিষিদ্ধ, এতে নাকি সন্ত্রাসী হামলার ভয় থাকে। একজন সন্ত্রাসী বোরখায় নিজেকে ঢেকে সবার সন্দেহ উদ্রেক করে তারপর নাকি বোমা মারে! ডাকাতেরা ব্যাঙ্কে ঢোকার আগে নাকি মাস্কে মুখ ঢেকে নেয়! কী হাস্যকর যুক্তি!
    যাক ভালই হল – আমরা অনেক দিন থেকেই বলছিলাম কাফির দেশে মুসলিমদের বসবাস হারাম। এরপরেও যদি কোন মুসলিম ফ্রান্সে থাকতে চায় তবে এই দুনিয়াটাই তাঁর জন্য স্বর্গ হোক।

    জ্ঞান পিপাষু

    @আব্দুল্লাহ,

    ইসলামে হিজাব বা পর্দা করার মূল নিয়ম কি, দয়া করে জানাবেন কি?

    সাদাত

    @জ্ঞান পিপাষু,

    সংক্ষিপ্ত উত্তর:
    ১। হিজাব :ফরজ,সর্বকালে সর্বসম্মতিক্রমে।
    ২। নিকাব :কমপক্ষে মুস্তাহাব,সর্বকালে । তবে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ফরজ বা ওয়াজিব।[নিকাব ফরজ/ওয়াজিব/মুস্তাহাব এব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও নিকাবকে ইসলামবিরোধি, ইসলাম-বিকৃতি মনে করা মারাত্মক ভুল]
    http://muttaqun.com/niqab.html

    হাফিজ

    @সাদাত,

    নিকাব বা মুখ ঢাকাও ফরজ । আলেমদের অনেক বিষয়ে মতভেদ আছে , তবে আমাদের দেখতে হবে অধিকাংশ মত কোনো দিকে । বিগত ১৪০০ বছরে সবসময় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এই প্রাকটিস ছিল মুখ ঢাকা, উম্মুল মুমিনিন থেকে শুরু করে , সাহাবা , তাবেয়ীন সকলেই মুখ ঢাকতেন ( যারা মহিলা ছিলেন ) । এসম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে গেলে অসাধারন একটি আর্টিকেল আছে সেটা দেখুন । আমার সময় থাকলে আমি এটা অনুবাদ করতাম । আপনারা কেউ করে দিলে সবাই খুব উপকৃত হবে ।

    http://www.askimam.org/fatwa/fatwa.php?askid=0d243c005780c9c2862495adbbc85ff4

    সাদাত

    @হাফিজ,

    আমি দুটো লিংক দিয়েছিলাম,সুগুলো দেখেছিলেন কি?
    আমার ২ নম্বর মন্তব্য বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নয়, বরং সর্বসময়ের জন্য সাধারণ সূত্র। এ সূত্র আমার মনগড়া নয়,এ বিষয় এখানেই ইতি টানা ভালো,বিস্তারিত আলোচনা মেইলে হতে পারে।

    হাফিজ

    @সাদাত, ধন্যবাদ

    সাদাত

    @হাফিজ,

    আপনি কি দয়া করে আমাকে একটা মেইল করতে পারেন?

    হাফিজ

    @সাদাত, অবশ্যই পারি , আপনি এমনভাবে প্রশ্ন করলেন যেন টাকা ধার চাচ্ছেন :)

    আপনার মেইল আই ডি কি ?

    জ্ঞান পিপাষু

    @হাফিজ,

    আলহামদুলিল্লাহ,
    এই প্রথম কোন আলেম কে বলতে শুনলাম যে, নিকাব বা মুখ ঢাকাও ফরজ ।

    আপনাদের উন্নতি দেখে আমার ভালো লাগছে, ধন্যবাদ।

    হাফিজ

    @জ্ঞান পিপাষু,
    আপনি কাকে আলেম বুঝিয়েছেন সেটা পরিস্কার না । আমি আলেম না আর এটা আমার বক্তব্য না । আমি রেফারেন্স দিয়েছি ।
    আর আপনি প্রথম শোনা মানে এই নয় , এ বিষয়টা প্রথম উচ্চারিত হোলো । এর অর্থ হলো যারা ফরজ বলছেন , তাদের বক্তব্য হয়ত আপনি পড়ে দেখেন নি ।

    আপনাদের উন্নতি দেখে আমার ভালো লাগছে, ধন্যবাদ।

    আন্তরিকভাবে ভালো লাগলে আলহামদুলিল্লাহ , তবে প্রচ্ছন ইংগিত বোধহয় অন্য কোনো দিকে ।

    দ্য মুসলিম

    @হাফিজ,

    প্রথম অংশটুকু পড়লাম। সত্যিই মর্মান্তিক। যদিও আমার ইংরেজী এতটা ভালোনা তারপরও চেষ্টা করবো অনুবাদ করে প্রকাশ করতে। ধন্যবাদ।

    জ্ঞান পিপাষু

    @সাদাত,

    ফরজ কাকে বলে দয়া করে বলবেন কি?

    সাদাত

    @জ্ঞান পিপাষু,

    জানার জন্য প্রশ্ন করলেন নাকি শেখানোর জন্য?
    দেখুন নিকাব নিয়ে আমি নিজস্ব কোন মত এখানে দেই নাই। নিকাব নিয়ে যে দুটো মত আছে, সেদুটোই তুলে ধরেছি। আমার ব্যক্তিগত নীতি হলো: যেসব বিষয়ে আলেমদের মতবিরোধ থাকে, আমি তার একটাকে অনুসরণ করি, কিন্তু অন্যটাকে ভুল বলি না।

    আপনার বিগত মন্তব্যগুলো দেখে মন হয়েছে, আপনি নিকাবকে ইসলাম-বহির্ভূত বা মনগড়া কিছু মনে করেন। তাই আমি বলেছি আলেমদের মধ্যে নিকাব মুস্তাহাব না ওয়াজিব না ফরজ এ নিয়ে মতভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু নিদেনপক্ষে নিকাব যে মুস্তাহাব এ নিয়ে মতভেদ নেই।

    সাদাত

    @জ্ঞান পিপাষু,
    http://www.muhajabah.com/whyniqab.htm

    জ্ঞান পিপাষু

    @সাদাত,

    অনুগ্রহ করে সরাসরি, কুরান এবং সহিহ হাদীস থেকে রেফারেন্স দিলে আনন্দিত হব। ধন্যবাদ। (F)

  2. স্বাগতম, সুন্দর বলেছেন ।

  3. ইউরোপ সবসময় ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে মুখে যতই ন্যায়-নীতির খৈ ফুটাক না কেন।
    অন্য ধর্ম সেকুলারিজম মেনে নিলেও ইসলাম তার নিজ বৈশিষ্টের কারণেই সেকুলারিজম কখনই মেনে নেবে না। তুরস্কে দীর্ঘদিন সেকুলারিজম প্রচলিত ছিলো কিন্তু ইসলাম ঠিকই শক্তিশালীভাবে আবির্ভুত হয়েছে সেখানে। যারা ইসলাম বোঝে, ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে মানে তারা কখনই সেকুলারিজম সাপোর্ট করবে না।

    হাফিজ

    @তালহা তিতুমির, সহমত ।

    দ্য মুসলিম

    @তালহা তিতুমির,

    সহমত।