বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা – ১
লিখেছেন: ' এস.এম. রায়হান' @ রবিবার, এপ্রিল ২৫, ২০১০ (১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ)
চার্লস ডারউইনের প্রস্তাবিত বিবর্তনবাদ তত্ত্ব প্রকৃতপক্ষেই সত্য কিনা – এই বিষয়টাকে এক পাশে রেখে ডারউইনবাদীদের বিশ্বাস ও তথাকথিত যুক্তি-প্রমাণ নিয়েই মূলতঃ আলোচনা-সমালোচনা করা হবে। ডারউইনবাদীদের মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগের “কাল্পনিক জগৎ” থেকে বাস্তব জগতে এসে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই তাদের বিজ্ঞানের নামে অপবিজ্ঞান, কল্পকাহিনী, কুসংস্কার, ও প্রতারণার গোমর ধরা পড়ে। এটি বোঝার জন্য যেমন আইনস্টাইন হওয়ার দরকার নেই তেমনি আবার গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ণবিদ্যা, ও জীববিদ্যার উপর ডক্টরেট উপাধি থাকারও কোন প্রয়োজন নেই। সামান্য বুদ্ধিমত্তা আর সাধারণ বোধ-ই যথেষ্ট।
ডারউইনবাদী নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়া-সদৃশ সরল একটি জীব থেকে উদ্দেশ্যহীন পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজাতি যেমন মাছ, পশু-পাখি, সরীসৃপ, কীট-পতঙ্গ, উদ্ভিদ, ও মানুষ সহ সকল প্রকার প্রজাতি মন্থর গতিতে বিবর্তিত হয়েছে। প্রজাতিগুলোর মধ্যে যেমন জলচর, স্থলচর, উভচর, ও উড়ন্ত প্রজাতি আছে তেমনি আবার স্তন্যপায়ী ও অস্তন্যপায়ী প্রাজাতিও আছে। এই বিবর্তনে স্রষ্টার যেমন কোন ভূমিকা নেই তেমনি আবার এটি পৃথিবীর ঘূর্ণন কিংবা গাছ থেকে মাটিতে অ্যাপেল পড়ার মতই সত্য ঘটনা! তার মানে বৈজ্ঞানিক মহলে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নিয়ে সংশয়-সন্দেহ করা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বা যাওয়া উচিত। আর তা-ই যদি হয় তাহলে পৃথিবীর ঘূর্ণন কিংবা গাছ থেকে মাটিতে অ্যাপেল পড়া নিয়ে কেউ সংশয় প্রকাশ করলে যেমন একই সাথে অযৌক্তিক ও হাস্যকর শুনাবে তেমনি বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নিয়ে কেউ সংশয় প্রকাশ করলেও কিন্তু একই সাথে অযৌক্তিক ও হাস্যকর মনে হওয়ার কথা। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে পৃথিবীর ঘূর্ণন কিংবা গাছ থেকে মাটিতে অ্যাপেল পড়ার মতো প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে দাবি করার পরও এবং বৈজ্ঞানিক মহলে ইতোমধ্যে স্বীকৃতও হয়েছে বলার পরও দেখা যায় যে ডারউনবাদীরা প্রচুর পরিশ্রম করে মাটির নীচে থেকে প্রাপ্ত হাড়-হাড্ডি’র ক্ষুদ্র অংশবিশেষ দিয়ে নিজেদের মতো করে ড্রয়িং করে কিছু একটা ‘প্রমাণ’ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন! বিভিন্ন মিডিয়া জুড়ে মিশনারী পন্থায় রীতিমতো ক্যাম্পেন করা হচ্ছে! পাশাপাশি আবার বিজ্ঞানের নামে জুদায়ো-খ্রীষ্টান-ইসলাম এর সৃষ্টিতত্ত্বের বিরুদ্ধে নিয়মিত অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে। তাহলে ঘটনা কী! অন্য কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে এরকম কিছু তো কখনো শোনা যায়নি। বড় কোন ঘাপলা আছে নিশ্চয়!
যাহোক, ব্যাকটেরিয়া-সদৃশ সরল একটি জীব যে কোথা থেকে এলো সেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে না যেয়েও যে কোন যুক্তিবাদী মানুষ ডারউইনবাদীদের এই দাবিকে স্রেফ অপবিজ্ঞান ও কল্পকাহিনী বলে উড়িয়ে দেয়ার কথা। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সেটাই যদি স্বাভাবিক হয় তাহলে পশ্চিমা বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা এই ধরণের অপবিজ্ঞান ও কল্পকাহিনীকে বিজ্ঞানের নামে পৃথিবীর ঘূর্ণন কিংবা গাছ থেকে মাটিতে অ্যাপেল পড়ার মতো প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে বিশ্বাস করছেন কেন? বিষয়টি নিয়ে যারা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা-ভাবনা করেছেন তাদের কাছে মোটেও অস্বাভাবিক মনে হওয়ার কথা নয়। যেমন বিভিন্ন ধর্মীয় ও আইডিওলজিক্যাল গ্রুপ যে কারণে বিবর্তনবাদ তত্ত্বে বিশ্বাস করে, কিংবা নিদেনপক্ষে ডারউইনবাদীদের সাথে বাহাসে যেতে চায় না, তার কারণ জানাটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা যাক।
নাস্তিক গ্রুপ: নাস্তিকতার যেহেতু ভিত্তি বলে কিছু নেই সেহেতু নাস্তিকদের কাছে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব হচ্ছে ঘোর অমাবস্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদের মতো কিছু একটা – যেখানে সত্য-মিথ্যার কোন বালাই নেই। অতএব তারা যে কোন প্রকারে এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে।
কম্যুনিস্ট গ্রুপ: তাদের নাস্তিক্য ও বস্তুবাদী দর্শনের সাথে যেহেতু বিবর্তনবাদ তত্ত্ব খাপ খেয়ে গেছে সেহেতু তাদের পক্ষ থেকে কোন রকম প্রতিবাদ-প্রতিরোধের প্রশ্নই ওঠে না – হোক না সেটা সত্য বা মিথ্যা। অতএব তারাও এই মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে। প্রকৃতপক্ষে নাস্তিক বা কম্যুনিস্টদের মধ্যে কেউ বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে পারে না। কেননা তাদের কাছে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব একটি ধর্মের মতো হয়ে গেছে।
ইহুদী গ্রুপ: এরা মূলতঃ নাস্তিক বা সেক্যুলারিস্ট হয়। খুব কম ইহুদীই হয়ত পাওয়া যাবে যারা একই সাথে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও তাদের ধর্মগ্রন্থকে স্রষ্টার বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে। অধিকন্তু, একদিকে তাদের ধর্মগ্রন্থের অসারতা অন্যদিকে আবার ভূ-রাজনৈতিক কারণে তারা ডারউইনবাদীদের সাথে সহজে বিতর্কে যায় না।
চাইনিজ-জাপানিজ-কোরিয়ান গ্রুপ: এরা মূলতঃ বস্তুবাদী ও প্রকৃতি উপাসক। অনেক ধরণের কুসংস্কারে বিশ্বাস করলেও তারা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না বললেই চলে। ফলে তাদের পক্ষ থেকেও তেমন কোন প্রতিবাদ আশা করা যায় না।
বৌদ্ধ-জৈন গ্রুপ: যদিও বৌদ্ধ-জৈন ধর্মাবলম্বীরা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না তথাপি তারা মৃত্যুপরবর্তী জীবন ও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে। কিন্তু স্রষ্টা ছাড়া মৃত্যুপরবর্তী জীবন ও পাপ-পূণ্যের উপর ভিত্তি করে জন্মান্তরবাদ যে কীভাবে সম্ভব কে জানে! যাহোক, তারা যেহেতু স্রষ্টার অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না সেহেতু জন্মান্তরবাদকে ব্যাখ্যার জন্য তাদের কাছে নাস্তিক্য দর্শন “উদ্দেশ্যহীন পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন” এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে কোন রকম সংশয়-সন্দেহ কিংবা বাক-বিতণ্ডাতে না যেয়েই তারা ডারউইনবাদীদের দাবিকে লুফে নিয়েছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিবর্তনবাদের সাথে জন্মান্তরবাদের যৌক্তিক কোন সম্পর্ক নেই। যেমন ডারউইনবাদীদের দাবি অনুযায়ী বিবর্তনবাদ হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে শারীরিক বিবর্তন – যার সাথে আত্মার কোন সম্পর্ক নেই – এবং এই বিবর্তন আসলে অগ্রগামী তথা উন্নতিশীল। অন্যদিকে জন্মান্তরবাদ হচ্ছে পাপ-পূণ্যের উপর ভিত্তি করে আত্মার বিবর্তন – উন্নতি কিংবা অবনতি যে কোনটি হতে পারে – অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবনতিই হওয়ার কথা – এবং সর্বোপরি জন্মান্তরবাদ হচ্ছে জন্ম-মৃত্যুর একটি চক্র। অতএব দেখা যাচ্ছে বিবর্তনবাদ ও জন্মান্তরবাদ দুটি সাংঘর্ষিক মতবাদ হওয়া সত্ত্বেও বৌদ্ধ-জৈন ধর্মাবলম্বীরা বিবর্তনবাদকে জন্মান্তরবাদের ব্যাখ্যা হিসেবে বিশ্বাস করেন!
হিন্দু গ্রুপ: হিন্দুরাও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। তবে ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তাদের মধ্যে মূলতঃ দুটি গ্রুপ আছে: স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী গ্রুপ; সর্বেশ্বরবাদ তথা প্যান্থিইজমে বিশ্বাসী গ্রুপ, যাদের বিশ্বাস অনুযায়ী পুরো মহাবিশ্বটাই হচ্ছে গড বা ঈশ্বর। দ্বিতীয় গ্রুপ আসলে প্রকৃতিকেই ঈশ্বর হিসেবে উপাসনা করে থাকে। ফলে দ্বিতীয় গ্রুপের পক্ষ থেকে বিবর্তনবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না আসাটাই স্বাভাবিক। যৎসামান্য যে প্রতিবাদ আসে সেটা মূলতঃ সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসী গ্রুপ থেকে, যাদের সংখ্যা হয়তো খুবই নগন্য। তাদের মধ্যে কিছু কট্টর সমালোচকও আছেন যারা স্বয়ং চার্লস ডারউইনকেই মূর্খ ও অবিজ্ঞানী বলেন। বিবর্তনবাদ তত্ত্ব আসলে হিন্দুইজমের সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে সরাসরি ও পুরোপুরি সাংঘর্ষিক (Like fundamentalist Christians and Jews, they dismiss evolution. Unlike the latter, who believe the world has existed only six to ten thousand years, fundamentalist Hindus believe it has been going for billions and billions of years – far more than geology allows, in fact. And human beings, and indeed all living creatures, have been here all along. Source Michael Cremo is a member of ISKCON who wrote Human Devolution: A Vedic alternative to Darwin’s theory, published by ISKCON’s Bhaktivedanta Book Publishing, which holds the view that man has existed on the earth in modern form far longer than that offered by the currently accepted fossil evidence and genetic evidence. Cremo suggests that Darwinian evolution should be replaced with “devolution” from the original unity with Brahman. Source)। তবে কিছু কিছু কারণে হিন্দুরা অনেকটাই চেপে যাওয়া নীতি অনুসরণ করে: তাদের ধর্ম অনুযায়ী মানুষকে অতিপ্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যেমন ব্রহ্মার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে চার প্রকার মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে, যেটিকে বিজ্ঞান বা বিবর্তনবাদ তত্ত্ব দিয়ে কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়; তাদের ধর্ম যেহেতু অসংখ্য ধর্মগ্রন্থ ও সাংঘর্ষিক বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে সেহেতু তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস তেমন জোরালো নয়; তারা অনেক ক্ষেত্রেই পশ্চিমা বিশ্বের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে; বিবর্তনবাদকে যেহেতু খ্রীষ্টানিটি ও ইসলামের বিরুদ্ধেই দেখানো হয় সেহেতু তারা তেমন একটা প্রতিক্রিয়া দেখায় না। অতএব সার্বিকভাবে তাদের পক্ষ থেকে তেমন কোন প্রতিরোধ না আসাটাই স্বাভাবিক।
খ্রীষ্টান গ্রুপ: চার্লস ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে প্রাথমিকভাবে বাইবেলের সৃষ্টি তত্ত্বের বিপরীতেই দাঁড় করানো হয়েছিল। কিন্তু ডারউইনের মৃত্যুর অনেক পর সেটিকে ইসলামের বিরুদ্ধেও দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সাথে মূল দ্বন্দ্ব হচ্ছে খ্রীষ্টানদের। কিন্তু বাইবেল ও খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসের মধ্যে গুরুতর কিছু অসারতার কারণে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেও ডারউইনবাদীদের সাথে সেভাবে পেরে উঠছে না। কারণ খ্রীষ্টান স্কলাররা বিবর্তনবাদের অসারতার দিকে ইঙ্গিত করার সাথে সাথে ডারউইনবাদীরাও বাইবেল ও খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসের অসারতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। যেমন: ট্রিনিটি, যীশুর ডিভিনিটি, অরিজিনাল সিন, যীশুর ক্রুসিফিকসন ও রেজারেকশন, ছয় হাজার বছরের পৃথিবী, ভূ-কেন্দ্রিক মহাবিশ্ব, ও নূহার ইউনিভার্সাল প্লাবন সহ আরো অনেক। ফলে খ্রীষ্টান স্কলারদেরকে অনেকটাই চাপের মধ্যে থাকতে হয়। যদিও এখন পর্যন্তও তাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট প্রতিরোধ আছে তথাপি তাদের বিশ্বাসের অসারতার কারণে সেটি খুব বেশীদিন টিকে থাকতে পারবে বলে মনে হয় না। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিবর্তনবাদ তত্ত্বের বিপরীতে আইডি (Intelligent Design) প্রস্তাব করেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারছেন না।
মুসলিম গ্রুপ: মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা বিবর্তনবাদের দিকে ঝুঁকছে তাদেরকে মূলতঃ দুটি গ্রুপে ভাগ করা যায়।
১. স্বঘোষিত নাস্তিক গ্রুপ। ব্যতিক্রম দু-এক জন ছাড়া এদের প্রায় সবার মন-মগজ কোন-না-কোন মহল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এদের নিজস্বতা ও ব্যক্তিত্ববোধ বলে কিছু থাকে না। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যায় অথবা নিদেনপক্ষে যেতে পারে বলে মনে হয় – এই ধরণের যে কোন ময়লা-আবর্জনাকে এরা খুব সহজেই বিশ্বাস করে। ফলে এরা যে অন্ধভাবে বিবর্তনবাদ তত্ত্বে বিশ্বাস করবে তাতে সামান্যতমও কোন সংশয়-সন্দেহ থাকতে পারে না। সারা পৃথিবী জুড়ে নিদেনপক্ষে এক জন এক্স-মুসলিমকেও হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের সত্যতা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ করে।
২. পশ্চিমা বিশ্বে প্রবাসী গ্রুপ। এদের মধ্যে কেউ কেউ পশ্চিমা বিশ্বে যেয়ে ‘নতুন জীবন’ পাওয়ার পর ইসলামের প্রতি অনীহা প্রকাশ করা শুরু করে এবং সেই সাথে পশ্চিমা বিশ্বের আপাতদৃষ্টিতে ‘জৌলুস’ দেখে কিছুটা হীনমন্যতায়ও ভোগে। অন্যদিকে আবার ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান না থাকায় এদেরকে কুপোক্যাত করতে তেমন একটা বেগ পেতে হয় না। ‘বিজ্ঞান ও আধুনিকতা’র নামে চালিয়ে দিলেই হলো! ব্যাস! এদের মধ্যে বেশীরভাগই আবার ক্ষুদ্র কিছু সম্প্রদায়ের সদস্য। অপরদিকে মুসলিমরা সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে থাকার কারণে তাদের পক্ষ থেকেও উল্লেখ করার মতো জোরালো কোন প্রতিরোধ নেই।
পাঠক! এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন সঙ্গত কারণেই নাস্তিক গ্রুপ, মার্ক্সবাদী-কম্যুনিস্ট গ্রুপ, বৌদ্ধ-জৈন গ্রুপ, ও চাইনিজ-জাপানিজ-কোরিয়ান গ্রুপ থেকে বিবর্তনবাদ তত্ত্বের বিরুদ্ধে কোন রকম প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আসবে না। না আসাটাই স্বাভাবিক। সঙ্গত কারণে উচ্চ শিক্ষিত ও যুক্তিবাদী ইহুদী-খ্রীষ্টান গ্রুপ থেকে যৎসামান্যই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আসতে পারে। হিন্দু গ্রুপ থেকেও তেমন একটা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ আশা করা যায় না। অথচ “পশ্চিমা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক” বলতে মূলতঃ তারাই! ডারউইনবাদীদের প্রচারিত অপবিজ্ঞান আর কল্পকাহিনীকে তারা কেন বিশ্বাস করেন – তার যৌক্তিক একটি কারণ এতক্ষণে নিশ্চয় পরিষ্কার। আরো কিছু যৌক্তিক কারণও আছে। যেমন:
১. মুসলিম অধ্যুষিত কোন দেশে প্রকাশ্যে কেউ নিজেকে ইসলাম-বিরোধী ঘোষণা দিলে যেমন অবস্থা হতে পারে, পশ্চিমা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এরকম একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে যেখানে কেউ নিজেকে বিবর্তনবাদ-বিরোধী ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে তার গায়ে সৃষ্টিতত্ত্ববাদী, মৌলবাদী, পাদ্রী, পুরোহিত, মোল্লা, অপবিজ্ঞানী ইত্যাদি তকমা লাগিয়ে বিভিন্নভাবে উপহাস-বিদ্রুপ ও হেয় করা হয়। এমনকি বাংলা কিছু ব্লগেও একই ধরণের উগ্র প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
২. বিবর্তনবাদকে প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে ‘আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতা’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।
৩. রিচার্ড ডকিন্স, ড্যান ডেনেট, স্যাম হ্যারিস, ও ক্রিস্টোফার হিচেন্সের মতো পশ্চিমা বিশ্বের বড় বড় নাস্তিক ও তাদের ভক্তরা অনেকদিন ধরেই ধর্মকে সাধারণভাবে এবং জুদায়ো-খ্রীষ্টান-ইসলামকে বিশেষভাবে সকল প্রকার ইভিল এর জন্য দায়ি করে আসছেন। ফলে তাদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেও কেউ কেউ বিবর্তনবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
অন্যান্য পর্ব: [পর্ব-২|পর্ব-৩|পর্ব-৪|পর্ব-৫|পর্ব-৬|পর্ব-৭|পর্ব-৮|পর্ব-৯]
আমি মনে করি,
বিবর্তনবাদ ঠিক বা বেঠিক হবার সাথে ইসলামের কিছুই হ্রাসবৃদ্ধি হবে না।
আমরা বিবর্তনবাদের সে অংশটুকু মানবো না, যা কুরআন-হাদিসের বিপরীত। অন্য অংশের ব্যাপারে দর্শকের ভূমিকা পালন করব। দেখব বিবর্তনবাদ বিবর্তিত হতে হতে কোথায় গিয়ে পৌঁছায়।
পৃথিবীতে আমরা আদম(আ.) এর বংশধররাই প্রথম জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী কি না, এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত করে সম্ভবত বলা যায় না। আমাদের বক্তব্য হবে আদম(আ.) কোন বানর হতে বিবর্তিত হন নাই। তার আগে কী হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা জানি না।
@সাদাত, সহমত। এ জন্য লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে, “বিবর্তনবাদ তত্ত্ব প্রকৃতপক্ষেই সত্য কি-না– এই বিষয়টাকে এক পাশে রেখে ডারউইনবাদীদের বিশ্বাস ও তথাকথিত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নিয়েই মূলতঃ আলোচনা-সমালোচনা করা হবে।” কিন্তু আপনি যদি ডারউইনবাদীদের লেখা পড়েন তাহলে দেখবেন যে তারা প্রতিনিয়ত প্রচার করছে এই বলে যে, বিবর্তনবাদ তত্ত্ব জুদাইজম-খ্রিস্টানিটি-ইসলামকে ভুল প্রমাণ করেছে। এমনকি বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নাকি গডের অস্তিত্বকেও ‘নাই’ প্রমাণ করেছে!
@এস.এম. রায়হান,
তারা তো স্রষ্টা কী এটাই বুঝে না!
@সাদাত, সহমত ।
ইমাম মালিকের (রহ.) একটা আসার হচ্ছে এরকম:
(Ash-Shifa’ by Al-Qaadi ‘Ayaad, vol. 2, p.88)
সালাফদের থেকে এরকম আরো অনেক উক্তি পাওয়া যাবে, যার সারকথা হচ্ছে মুসলিম, হাফ-মুসলিম বা কাফির – সকলকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে ডাকার সূচনা হতে হবে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” দিয়ে। তা না হলে আমরা millions of man-hours খরচ করেও কোন অগ্রগতি করতে পাবো না – যুক্তি-তর্কের ও বাক-বিতন্ডার vicious cycle-এ ঘুরপাক খেতেই থাকবো!
বিশ্লেষন ভাল লেগেছে।
ইহুদী গ্রুপ: এ সম্ভবত তাওরাতের কথা বলতে চেয়েছেন, বাইবেল/ইঞ্জিল সম্ভবত খ্রীষ্টানদের।
@তামীম, এক অর্থে ঠিক বলেছেন। তাওরাত হচ্ছে পুরোপুরি ইহুদীদের। ইঞ্জিল (নিউ টেস্টামেন্ট) হচ্ছে পুরোপুরি খ্রীষ্টানদের। তবে বাইবেল কিছুটা আলাদা। বাইবেল হচ্ছে ওল্ড টেস্টামেন্ট আর নিউ টেস্টামেন্ট এর সমন্বয়ে একটি ধর্মগ্রন্থ। আমার জানা মতে ওল্ড টেস্টামেন্ট এর প্রথম পাঁচ চ্যাপ্টারকে তাওরাত বলা হয়। যাহোক, বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য সংশোধন করে দিলাম। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
[...] সাথে বাহাসে যেতে চায় না – সে বিষয়ে প্রথম পর্ব থেকে সুস্পষ্ট একটা ধারণা পাওয়া যাবে। [...]