বিবর্তনবাদ তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা – ৮
লিখেছেন: ' এস.এম. রায়হান' @ রবিবার, জুলাই ১৮, ২০১০ (১২:১৫ অপরাহ্ণ)
শুধুমাত্র এই পৃথিবীর বুকেই মিলিয়ন মিলিয়ন প্রকারের জীব-জন্তু ও উদ্ভিদ প্রজাতি আছে। এ পর্যন্ত কত মিলিয়ন প্রজাতি যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার সঠিক কোন হিসাব নাই। তাদের মধ্যে হাজার হাজার প্রকারের ফল-মূলের গাছ আছে। হাজার হাজার প্রকারের ফুলের গাছ আছে। হাজার হাজার প্রকারের ফল-ফুল-বিহীন গাছ আছে। লক্ষ লক্ষ প্রকারের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী আছে। হাজার হাজার প্রকারের কীট-পতঙ্গ আছে। হাজার হাজার প্রকারের সরীসৃপ আছে। হাজার হাজার প্রকারের পাখি আছে। হাজার হাজার প্রকারের সরাসরি ডিম পাড়া অস্তন্যপায়ী প্রজাতি আছে। হাজার হাজার প্রকারের সরাসরি বাচ্চা দেয়া স্তন্যপায়ী প্রজাতি আছে। পাশাপাশি মানুষ তো আছেই। প্রাণী জগত ও উদ্ভিদ জগতের মধ্যে এক প্রজাতি থেকে অন্য এক প্রজাতি বিভিন্ন দিক থেকে যে কতটা আলাদা – তা সহজেই অনুমেয়। বুদ্ধিমান মানুষ সহ বিভিন্ন পশু-পাখির শরীর যে কতটা জটিল ও সূক্ষ্ম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে গঠিত – সেটাও সবারই জানা। প্রজাতিগুলোর শারীরিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য একই রকম বা সমসত্ত্ব তো নয়-ই বরঞ্চ একে-অপর থেকে অসাধারণভাবে আলাদা। মানুষ সহ প্রায় প্রত্যেকটি পশু-পাখির স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্যও আছে।
উপরের বিষয়গুলো নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই যে কোন যুক্তিবাদী মানুষ মেনে নিতে বাধ্য হবেন যে, একটি মাত্র সরল জীব থেকে উদ্দেশ্যহীন পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে এত কিছু বিবর্তিত হওয়া অসম্ভব। পরিবেশগত কারণে প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটু-আধটু এদিক-সেদিক হতেই পারে – যাকে বলে ক্ষুদ্র পরিবর্তন। যেমন গায়ের রঙ ও আকার-আকৃতির পরিবর্তন। তবে প্রত্যেকটি প্রজাতির জন্য আলাদা আলাদা অরিজিন লাগবে – অনেক ক্ষেত্রে আবার একই সাথে এক জোড়া পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ লাগবে। একটি মাত্র অরিজিন থেকে এত কিছু বিবর্তিত হতেই পারে না। আর প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগতের প্রত্যেকটি প্রজাতির জন্য যদি আলাদা আলাদা অরিজিন লাগে তাহলে যে কোন যুক্তিবাদী মানুষ স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজাতির আলাদা আলাদা অরিজিন এমনি এমনি সৃষ্টি হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
এই দিনের আলোর মতো সত্যকে মেনে নিতে না পেরে এবং যৌক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতভম্বতা এড়াতে খুব জোরে-সোরে প্রচার চালানো হয়েছে এই বলে যে, সকল প্রকার প্রজাতি একটি মাত্র অরিজিন থেকে বিবর্তিত হয়েছে! কিন্তু এটি আদৌ কোন প্রমাণিত সত্য নয় – প্রমাণ করাও আসলে অসম্ভব। অতএব বিবর্তনবাদ তত্ত্বের একদম মূলেই বিশাল কল্পনা ও প্রতারণা রয়ে গেছে, যেটি অনেকেই হয়তো ভেবে দেখেননি। কোন রকম প্রমাণ ছাড়াই সকল প্রকার জীব-জন্তু ও উদ্ভিদের অরিজিনকে যেহেতু ব্যাকটেরিয়া-সদৃশ সরল একটি জীবের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে সেহেতু অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করা শুরু করেছেন যে, ব্যাকটেরিয়ার মতো অতি সরল একটি জীব এমনি এমনি সৃষ্টি হতেও পারে! আর তা-ই যদি হয় তাহলে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টারও কোন দরকার নেই! আলাদীনের প্রদীপের মতো অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন প্রাকৃতিক নির্বাচন-ই সবকিছু করবে! আহ! কত সহজ-সরল সমীকরণ! কিন্তু তাদের এই প্রতারণা যারা ধরতে পেরেছেন তারাই কেবল বুঝতে পারবেন সমীকরণটা আসলে কত জটিল!
ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে প্রমাণ করতে হলে ফসিল দিয়েই প্রমাণ করতে হবে। কারণ একটি প্রজাতি থেকে ভিন্ন একটি প্রজাতির মন্থর গতিতে বিবর্তনের যে গাল-গল্প শুনানো হচ্ছে সেগুলো আসলে অতীত ঘটনা। এই অতীত ঘটনাগুলোকে প্রমাণ করতে হলে ফসিল রেকর্ড ছাড়া অন্য কোন যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক পন্থা নেই। এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে পেরে নিও-ডারউইনিজম এর নামে যা করা হচ্ছে তা হচ্ছে:
-বিভিন্ন কলা-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিবর্তনবাদকে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিকুলামের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন এসে দাবি করা হচ্ছে এই বলে যে, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু বিবর্তনবাদ পড়ানো হয় সেহেতু বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অবশ্যই সত্য হবে! বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয় পড়ানো হলেই নাকি সেটি এমনি এমনি সত্য হয়ে যাবে!
-বিবর্তনবাদকে জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, এন্টি-বায়োটিক, মেডিসিন, ক্যান্সার, ডিএনএ, ও জীববিদ্যার উপর গবেষণাকে বিবর্তনবাদের নামে চালিয়ে দিয়ে বিবর্তনবাদকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা নির্ভরশীল একটি তত্ত্ব হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
যাহোক, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, অ্যান্টি-বায়োটিক, মেডিসিন, ক্যান্সার, ডিএনএ ইত্যাদির উপর গবেষণা বা গবেষণালব্ধ ফলাফলকে কেউ অস্বীকার করেন বলে মনে হয় না। তবে এগুলো যে বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে কোন প্রমাণও নয় তার ব্যাখ্যা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। যেমন হাইটেক ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে ল্যাবে ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে মিউটেশন ঘটিয়ে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে কোন ভাবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে না যে, বান্দর জাতীয় কোন প্রাইমেটস থেকে মন্থর গতিতে মানুষ বিবর্তিত হয়েছে কিংবা অস্তন্যপায়ী প্রজাতি থেকে মন্থর গতিতে স্তন্যপায়ী প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে। শিয়ালের বাচ্চাকে বারংবার কুমিরের বাচ্চা বলে চালিয়ে দিলেই তো আর শিয়ালের বাচ্চা সত্যি সত্যি কুমিরের বাচ্চাতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে না!
[...] অন্যান্য পর্ব পড়ুন: [পর্ব-২|পর্ব-৩|পর্ব-৪|পর্ব-৫|পর্ব-৬|পর্ব-৭|পর্ব-৮|পর্ব-৯] ! রিপোর্ট করুন ! Processing your request, Please wait…. [...]