ডারউইনবাদীদের নিয়ে যৌক্তিক বিনোদন ব্লগ
লিখেছেন: ' এস.এম. রায়হান' @ রবিবার, নভেম্বর ২১, ২০১০ (১২:০০ পূর্বাহ্ণ)
ব্লগটিকে ডারউইনবাদীদের জন্য সাধারণভাবে এবং বাংলা ডারউইনবাদীদের জন্য বিশেষভাবে উৎসর্গীকৃত। আমার লেখাতে ‘ডারউইনবাদী’ বলতে তাদেরকেই বুঝানো হয় যারা ডারউইনের তত্ত্বকে বিজ্ঞানের নামে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও জুদায়ো-খ্রীষ্টান-ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে প্রচার করে – ডারউইনের তত্ত্বের সত্যতা নিয়ে সংশয়কারীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয় – এবং গালিগালাজ ও ব্যক্তি আক্রমণ থেকে শুরু করে দলবদ্ধ আক্রমণ পর্যন্ত করা হয়। যদিও ডারউইনবাদীদের নিয়ে লিখতে গেলে বিনোদনের কোন শেষ নেই তথাপি ব্লগটিকে নির্দিষ্ট কিছু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। উল্লেখ্য যে, শিরোনামে ‘বিনোদন ব্লগ’ নাম দেওয়া হলেও সত্যিকারের বিনোদনমূলক কিছু না পেলে তার জন্য লেখক দায়ী থাকবেন না। দেরি না করে শুরু করা যাক তাহলে…!
১. ডারউইনবাদীদের শরীরে নাকি শতাধিক নিষ্ক্রিয় অঙ্গের অস্তিত্ব আছে, যেগুলো নাকি এখন আর কাজে লাগে না। তো পাঠক! এবার আপনারাই বলুন – যাদের শরীর ব্যাড ডিজাইন আর শতাধিক নিষ্ক্রিয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভরপুর তাদের কথার মধ্যে যৌক্তিক বা তথ্যপূর্ণ কিছু থাকতে পারে কিনা? তাদের কোন কথাকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে কিনা? তাদের মাথা থেকে প্রলাপ ছাড়া যৌক্তিক বা তথ্যপূর্ণ কিছু তো বেরুনোর কথা না!
২. ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’ এর প্রবক্তাদের সাথে বাকযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার পর থেকে ডারউইনবাদী নাস্তিকরা ‘ইন্টেলিজেন্ট’ ও ‘ডিজাইন’ শব্দ দুটি শোনার সাথে সাথে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন। অথচ প্রফেসর স্টিফেন হকিং-এর সম্প্রতি প্রকাশিত “The Grand Design” বইতে ‘ডিজাইন’ শব্দটা থাকা সত্ত্বেও তারা এই বইকে নাস্তিকতার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য লাফালাফি শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে আবার তাদের মহাগুরু রিচার্ড ডকিন্স ইতোমধ্যে ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার’ এর অস্তিত্বও স্বীকার করেছেন। পাঠক! কেমন লাগে বলুন তো!
৩. ডারউইনবাদীরা নিজেদেরকে বানর জাতীয় লেজওয়ালা প্রজাতির কাজিন বা নিকট-আত্মীয় প্রমাণ করার জন্য বেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সাথে লেজওয়ালা প্রজাতির নাকি তেমন কোন পার্থক্যই নেই। তো তা-ই যদি হয় তাহলে আমরা যেমন লেজওয়ালা প্রজাতির কিচিরমিচির বা কথা-বার্তাকে কোন গুরুত্ব দেইনা তেমনি ডারউইনবাদীদের কিচিরমিচির বা কথা-বার্তাকেও কিন্তু গুরুত্ব দেওয়ার যৌক্তিক কোন কারণ থাকতে পারে না! কী বলেন পাঠক?
৪. ডারউইনবাদীরা নিজেদেরকে লেজওয়ালা প্রজাতির নিকট-আত্মীয় বলে দাবি করলেও এ পর্যন্ত নিদেনপক্ষে একজন ডারউইনবাদীকেও পাওয়া যায়নি – যে কিনা তার লেজওয়ালা নিকট-আত্মীয়কে বিবর্তন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে কিছু জানতে চেয়েছেন। পাঠক! এ কেমন নিকট-আত্মীয়! নিকট-আত্মীয়দের প্রতি এতটা অবজ্ঞা কেন!
৫. যেখানে ডারউইনবাদীদের সাথে লেজওয়ালা প্রজাতির খালি চোখে দেখা যায় এমন অনেক মিল আছে – যেমন: উভয়েরই এক মাথা, দুই কান, দুই চোখ, এক নাক, দুই হাত, দুই পা, ইত্যাদি আছে; উভয়েরই পুংলিঙ্গ-স্ত্রীলিঙ্গ আছে; উভয়েই বাচ্চা প্রসব করে; উভয়ের শরীরেই রক্ত আছে; উভয়েরই পরিপাকতন্ত্র আছে; উভয়েই খাদ্য গ্রহণ করে; উভয়েই মল-মূত্র ত্যাগ করে; উভয়েই ঘুমায়; উভয়েই মারা যায়; ইত্যাদি – সেখানে ডারউইনবাদীরা ডিএনএ দিয়ে লেজওয়ালা প্রজাতির সাথে নিজেদের সাদৃশ্য দেখানোর চেষ্টা করেন – যে ডিএনএ-কে খালি চোখে দেখা যায় না! ব্যাপারটাকে হাস্যকর মনে হয় না?
৬. ডারউইনবাদীদের আদি পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা নাকি গাছে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য লেজ ব্যবহার করতো। গাছ থেকে নীচে নেমে আসার পর নাকি লেজের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে – যদিও কেন ও কীভাবে প্রথমে লেজ গজালো আর কীভাবেই বা আবার সেই লেজ বিলুপ্ত হয়ে গেল তা কখনোই বলা হয় না! ডারউইনবাদীরা যে সত্যি সত্যি লেজওয়ালা প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছে তার স্বপক্ষে তাদের একটি ‘বৈজ্ঞানিক প্রমাণ’ হচ্ছে লেজওয়ালা মানব শিশু! ডারউইনবাদীদের হারিয়ে যাওয়া লেজ দেখুন:
৭. ডারউইনবাদীরা লোমশ প্রাইমেটদের থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই নাকি তাদের গায়ে লোম রয়ে গেছে! তাহলে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়ালো: ডারউইনবাদীরা মাথা-ওয়ালা প্রাইমেটদের থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই তাদের গায়ে মাথা রয়ে গেছে! চোখ-কান-ওয়ালা প্রাইমেটদের থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই তাদের গায়ে চোখ-কান রয়ে গেছে! বুদ্ধিমত্তাহীন প্রাইমেটদের থেকে বিবর্তিত হয়েছে বলেই তারা বুদ্ধিমত্তাহীন রয়ে গেছে!
৮. বিবর্তনবাদ তত্ত্বের পক্ষে বাংলা ডারউইনবাদীদের বেশ জোরালো একটি যুক্তি হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘা বাঘা অধ্যাপকরা যেহেতু বিবর্তনবাদ তত্ত্বে বিশ্বাস করেন এবং নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু বিবর্তনবাদ পড়ানো হয় সেহেতু বিবর্তনবাদ তত্ত্ব অবশ্যই সত্য হবে!
৯. ডারউইনবাদীরা সব সময় “বীটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশ” নীতি অনুসরণ করেন। তারা নির্দিষ্ট কোন যুক্তিতে স্থির থাকতে পারেন না – যেহেতু তাদের বিশ্বাসের যৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক কোন ভিত্তি নেই। উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক তারা মানব দেহের অ্যাপেনডিক্সকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে ফতোয়া দিয়ে বিবর্তনের পক্ষে ‘প্রমাণ’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অ্যাপেনডিক্সের প্রয়োজনীয়তা বিজ্ঞান দিয়েই প্রমাণ করে দেখালে তারা আবল-তাবল কিছু বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন এবং শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি আক্রমণও শুরু হয়ে যায়। অতঃপর যদি জিজ্ঞেস করা হয় অ্যাপেনডিক্সের কোন কাজ না থাকা মানেই লেজওয়ালা প্রজাতি থেকে উদ্দেশ্যহীন পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে বলে প্রমাণ হয় কিনা। তখন স্বাভাবিকভাবেই পিছুটান দিয়ে বলা হয়, “বিবর্তন প্রমাণ করার জন্য অ্যাপেনডিক্সের কোন দরকার নেই। আরও অসংখ্য ভাবেই সেটা প্রমাণিত।” যাকে বলে ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন! দেখুন:
১০. ডারউইনবাদীরা বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে গাছ থেকে ভূমিতে অ্যাপেল পড়ার মতো সত্য বলে দাবি করার পরও এবং বৈজ্ঞানিক মহলে ইতোমধ্যে স্বীকৃত হয়েছে বলার পরও দেখা যায় তারা প্রচুর পরিশ্রম করে মাটির নীচে থেকে প্রাপ্ত হাড়-হাড্ডি’র ক্ষুদ্র অংশবিশেষ দিয়ে নিজেদের মতো ড্রয়িং করে মাঝে মাঝে ‘ইউরেকা ইউরেকা’ বলে মিডিয়া জুড়ে রীতিমতো সোরগোল বাধিয়ে দেয়!
১১. বিবর্তনবাদের সমালোচকদের মধ্যে কেউ কেউ কৌতুকচ্ছলে কিংবা ধরা যাক না জেনে বানর প্রজাতি থেকে মানুষ বিবর্তিত হওয়ার কথা বলে হাসি-ঠাট্টা করে থাকেন। কেউ কেউ আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন এই বলে যে, বানর প্রজাতি থেকে যদি মানুষ বিবর্তিত হয়ে থাকে তাহলে এখনো অনেক বানর প্রজাতি থাকা সত্ত্বেও সেগুলো থেকে মানুষ বিবর্তিত হচ্ছে না কেন। খুবই যৌক্তি প্রশ্ন। অথচ এই কথা শোনার সাথে সাথে ডারউইনবাদীরা তেড়ে এসে বলা শুরু করেন, “হেঃ! হেঃ! বিবর্তন সম্পর্কে আপনাদের কোন ধারণাই নাই! জীববিজ্ঞানের উপর ব্যাসিক একটা বই পড়ে নিলে হয় না? বানর থেকে তো মানুষ বিবর্তিত হয়নি! বরঞ্চ মানুষ ও বানর একটি ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’ থেকে বিবর্তিত হয়েছে।” কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’ কি মানুষ নাকি বানর নাকি অন্য কিছু ছিল – সেটা কখনোই পরিষ্কার করে বলা হয় না। তবে রিচার্ড ডকিন্স এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “Monkeys and we come from a common ancestor and that common ancestor would probably have been called the monkey.” ডারউইনবাদীদের আত্মপ্রতারণার নমুনা দেখলেন তো। একই কথা তাদের সাদা চামড়ার ধর্মগুরু বললে ঠিক আছে কিন্তু অন্য কেউ বললে অজ্ঞ ও হাসি-তামাসার পাত্র হয়ে যায়!
১২. ডারউইনবাদীরা নিজেরাই বিবর্তনে বিশ্বাস করেন না। কেননা বানর প্রজাতি থেকে মানুষ বিবর্তিত হওয়ার কথা বলা হলে তারা ক্ষেপে যেয়ে বলেন, বানর থেকে তো মানুষ বিবর্তিত হয়নি! তার মানে তারা বলতে চান যে বানর প্রজাতি থেকে মানুষের বিবর্তন সম্ভব নয়। সম্ভব মনে করলে তো ক্ষেপে যাওয়ার কথা না। আর তা-ই যদি হয় তাহলে বিবর্তনবাদে সংশয়বাদীরাও তো একই কথা বলে আসছেন – অর্থাৎ এক প্রজাতি থেকে ধীরে ধীরে ভিন্ন প্রজাতির বিবর্তন হয়নি বা হওয়া সম্ভব নয় বা তার পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। কী বলেন পাঠক? ডারউইনবাদীরা যে কোন্ ইউটোপিয়ার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে বুঝতেই পারছেন।
১৩. এই পৃথিবীর শতভাগ মানুষ তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিদেনপক্ষে কয়েক হাজার বছর ধরে স্বচক্ষে যা দেখে আসছেন তা হচ্ছে: মানুষ থেকে মানুষ-ই হয়; গরু থেকে গরু-ই হয়; ছাগল থেকে ছাগল-ই হয়; বাঘ থেকে বাঘ-ই হয়; বিড়াল থেকে বিড়াল-ই হয়; হরিণ থেকে হরিণ-ই হয়; কুকুর থেকে কুকুর-ই হয়; সিংহ থেকে সিংহ-ই হয়; হাতি থেকে হাতি-ই হয়; বাঁদর থেকে বাঁদর-ই হয়; গরিলা থেকে গরিলা-ই হয়; মুরগীর ডিম থেকে মুরগী-ই হয়; ইলিশ মাছের ডিম থেকে ইলিশ-ই হয়; কুমিরের ডিম থেকে কুমির-ই হয়; টিকটিকির ডিম থেকে টিকটিকি-ই হয়; তিমি থেকে তিমি-ই হয়; পিপীলিকা থেকে পিপীলিকা-ই হয়; মৌমাছি থেকে মৌমাছি-ই হয়; আমের বীজ থেকে আমের-ই গাছ হয়; আপেলের বীজ থেকে আপেলের-ই গাছ হয়; কাঁঠালের বীজ থেকে কাঁঠালের-ই গাছ হয়; ইত্যাদি; ইত্যাদি; ইত্যাদি। ব্যতিক্রম কিছু হয়েছে কিনা জানা নেই – তবে সেরকম কিছু হয়ে থাকলে সেটিকে অপ্রাকৃতিক বা অস্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয়। এই যখন দিনের আলোর মতো বাস্তবতা তখন ডারউইনবাদীদের অন্ধ-বিশ্বাস অনুযায়ী ক্ষুদ্র একটি জীব থেকে নাকি পুরো উদ্ভিদজগত ও প্রাণীজগত বিবর্তিত হয়েছে! তাদের কাছে এটি নাকি গাছ থেকে ভূমিতে অ্যাপেল পড়ার মতোই সত্য ঘটনা!
১৪. ডারউইনবাদীরা যৌক্তিক সমালোচনা আর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে যখন বুঝতে পারলেন যে বাস্তবে এক প্রজাতি থেকে ধীরে ধীরে ভিন্ন প্রজাতি বিবর্তিত হওয়া সম্ভব নয় তখন সবকিছুকে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পেছনে নিয়ে গেলেন! ভাবসাব দেখে মনে হবে যেন মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পেছনে নিয়ে গেলেই সব কিছু এমনি এমনি হয়ে যাবে! যেমন তারা যখন দেখলেন যে বাঁদর জাতীয় লেজওয়ালা কোন প্রজাতি থেকে ধীরে ধীরে মানুষের বিবর্তন সম্ভব নয় তখন বলা শুরু করলেন যে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে বাঁদর ও মানুষ উভয়েই একটি ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’ থেকে বিবর্তিত হয়েছে! এই ‘সাধারণ পূর্বপুরুষ’-কে ঠেলে ঠেলে কোথায় যে নিয়ে যাওয়া হবে কে জানে! শেষ পর্যন্ত ‘প্রথম ব্যাকটেরিয়া’-তে যাওয়া ছাড়া মনে হয় কোন উপায় নেই!
১৫. বাংলা ডারউইনবাদীদের মধ্যে কারো কারো দাবি অনুযায়ী বিবর্তনবাদ নাকি আল্লাহ, গড, বা দেবদেবী ব্রহ্মা আছে কিনা তা নিয়ে কাজ করে না। অন্যদিকে আবার কারো কারো দাবি অনুযায়ী বিবর্তন দিয়ে নাকি প্রাণীজগত থেকে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার হাত কেটে ফেলা সম্ভব! উল্লেখ্য যে, স্রষ্টার হাত কেটে ফেলতে হলে নিদেনপক্ষে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসী হতে হবে। অথচ এরা কেউই স্রষ্টায় বিশ্বাসী নন!
১৬. ডারউইনবাদীদের দাবি অনুযায়ী বিবর্তনবাদ নাকি আব্রাহামিক ধর্মগুলোকে ভুল-মিথ্যা-অসার প্রমাণ করে বাতিল করে দিয়েছে – যেহেতু তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী আব্রাহামিক ধর্মগুলোর আদম-হাওয়া কাহিনী ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই নাকি আব্রাহামিক ধর্মে বিশ্বাসীরা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্যের বিরোধীতা করে! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমার মতো অনেকেই পুরো বিবর্তনবাদ তত্ত্বকেই কল্পকাহিনী আর কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দেয়। যেমন ডারউইনবাদীরা যদি মাছ থেকে সরীসৃপ হয়ে পাখির বিবর্তন, এক কীট-পতঙ্গ থেকে অন্য কীট-পতঙ্গের বিবর্তন, এক উদ্ভিদ থেকে অন্য উদ্ভিদের বিবর্তন, চতুষ্পদ কোন জন্তু থেকে তিমির বিবর্তন, ইত্যদি প্রমাণ করতে পারেন সেক্ষেত্রে কিন্তু ইসলামের কিছুই আসে যায় না। তথাপি এগুলোর বিবর্তন নিয়েও চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে।
১৭. বাংলা ডারউইনবাদীদের লেখা দেখে মনে হবে যেন একমাত্র মুসলিমরা ছাড়া ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই মহাবিশ্বের সবাই বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনী আর কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। তাদের লেখা থেকে এ-ও স্পষ্ট যে, একমাত্র জাকির নায়েক আর হারুন ইয়াহিয়া ছাড়া এই দুনিয়ার কেউই বিবর্তনবাদের বিরোধীতা বা সমালোচনা করে না। তবে ইদানিং তাদের তালিকায় সদালাপ সাইটও যোগ হয়েছে। আর যারা বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনী আর কুসংস্কারের সমালোচনা করে তারা সবাই নাকি অজ্ঞ ও ধর্মান্ধ – বিবর্তনের ব-ও বোঝে না। এমন একজন ছদ্মনামধারী মহাবিজ্জানী ও সবজান্তা শমসেরকে দেখুন:
১৮. বাংলা ডারউইনবাদীদের বিশ্বাস অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবর্তনবাদ পড়িয়ে ইসলামে বিশ্বাস করা মানে নীতিহীনতা ও সিরিয়াস ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅনেস্টি। এমনকি তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত পদার্থবিদ আব্দুস সালাম নাকি একজন অসৎ ও ছদ্মবিজ্ঞানী ছিলেন – যাঁর থেকে সাবধান থাকা উচিত।
১৯. ডারউইনবাদী নাস্তিকরা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করে বন্য পশু-পাখিদের জগৎ থেকে কিছু উদাহরণ নিয়ে এসে নৈতিকতার “বিবর্তনীয় উৎস” খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন – যদিও গৃহপালিত পশু-পাখিদের মধ্যেই ঢের উদাহরণ আছে এবং স্বয়ং বিবর্তনবাদ তত্ত্বেরই কোন ভিত্তি নেই। তো তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা যদি না থাকে – মৃত্যুপরবর্তী জীবন বলে যদি কিছুই না থাকে – তাহলে নৈতিকতার উৎস খোঁজার উপর তারা এত জোর দিচ্ছেন কেন? বলাই বাহুল্য, পশু-পাখিরা কিন্তু ডারউইনবাদীদের কাছে নৈতিকতা শিখতে আসে না। তার মানে ডারউইনবাদীরা নিজেদেরকে পশু-পাখিদের চেয়েও অধম ভাবেন – যাদের নিজস্বতা বলে কিছু নেই।
২০. বিবিসি হার্ডটক-এ ইন্টারভিউ এর সময় ডারউইনবাদী নাস্তিক রিচার্ড ডকিন্স যখন সকল প্রকার ইভিলের জন্য ধর্মকে দায়ী করছিলেন তখন ইন্টারভিউয়ার তাকে থামিয়ে দিয়ে বিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত যুদ্ধ আর গণহত্যা এবং সেই সাথে স্ট্যালিন, পল পট, ও মাও এর কথা উল্লেখ করলে রিচার্ড ডকিন্স বলেন যে, স্ট্যালিন, পল পট, ও মাও এর মতো কম্যুনিস্টরা নাকি প্রকৃত নাস্তিক ছিলেন না! তারাও নাকি এক ধরণের ‘ধার্মিক’ ছিলেন! – যদিও কম্যুনিস্ট নাস্তিকদের কল্যাণেই অনেক দেশে নাস্তিকতা আর ডারউইনবাদের প্রসার ঘটেছে। কিন্তু ‘প্রকৃত নাস্তিক’ এর সংজ্ঞাও উনি বলেননি! যেমন কেউ যদি দাবি করেন যে রিচার্ড ডকিন্সই আসলে প্রকৃত নাস্তিক নন সেক্ষেত্রে উনি কীভাবে নিজেকে প্রকৃত নাস্তিক প্রমাণ করবেন? কী বলেন পাঠক?
২১. ডারউইনবাদীরা মাছ থেকে কীভাবে ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে তার পক্ষে ‘বৈজ্ঞানিক প্রমাণ’ দেখুন। একেবারে খাসা!
২২. দুষ্ট লোকদের দাবি অনুযায়ী বাংলা ডারউইনবাদীরা নাকি সাদা চামড়াকে প্রচণ্ডরকম ভয় পায়। তারা নাকি শক্তের ভক্ত, নরমের যম। এই দাবির স্বপক্ষে অসংখ্য প্রমাণের মধ্যে নীচের কিছু প্রমাণ দেখানো হয়।
হারুন ইয়াহইয়া সাহেবের বইগুলোর লিংক : http://www.harunyahya.org/tr.m_type_list.php?langId=26
আসলে ব্যক্তিগত আক্রমণ বিবর্তনবাদীরাও করছে, বিশ্বাসীরাও করছে। বিবর্তনের সব আইডিয়া কিন্তু ফেলে দেয়ার মত না। অন্তত মাইক্রোইভোলিউশন বা এডাপ্টেশন নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। স্পেসিয়েশন বা নতুন প্রজাতির উদ্ভবের যে তত্ত্ব তারা দেয়, সেটার সপক্ষে নিজেরা্ও কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনা। কিছু কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে মডেল দেখায়, অরিজিন অফ লাইফ বা আদিপ্রাণ বলতে আসলে কী বুঝায় সেটা তাদের নিজেদের কাছেও স্পষ্ট না। প্রতিটা আইডিয়াতে অনেক গলদ আছে, (ঠিক গলদ না, অস্পষ্টতা আছে) এবং যারা বলে বিজ্ঞানে অবাস্তবের স্থান নেই, বিবর্তনবাদের এতসব অবাস্তব আইডিয়াকে তারা বিনা প্রশ্নে সমর্থন করে।
মাঝে মধ্যে আমার মনে হয়, বিবর্তনবাদ ঈশ্বরতত্ত্ব কে নাকচ করে দেয় বলে তারা নাস্তিক, নাকি নাস্তিক হিসেবে টিকে থাকার জন্য তারা বিবর্তনবাদের মত একটা অযৌক্তিক ব্যাখ্যাকে আকড়ে ধরে আছে!
@SlaveOfAllah, মাইক্রোইভোলিউশন বা এডাপ্টেশন কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আমি ম্যাক্রো-ইভ্যলুশনের সমালোচনা করে লিখি। বাকি মন্তব্যের সাথে সহমত। আর হ্যাঁ, এখানে কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ করা হয়নি। বরঞ্চ বিবর্তনবাদীদের পক্ষ থেকে কিছু ব্যক্তি আক্রমণের নমুনা দেখানো হয়েছে। এরকম নমুনা বাংলা ব্লগেই অসংখ্য আছে।