ডঃ জাফর ইকবালের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে মুক্তমনাদের টানাহেঁচড়া
লিখেছেন: ' সরোয়ার' @ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০, ২০১০ (১০:১৮ পূর্বাহ্ণ)
জনপ্রিয় লেখক ডঃ জাফর ইকবাল কি আল্লাহতে বিশ্বাস করেন? মুক্তমনাদের কাছে এটি একটি মিলিয়ন ডলারের মতো দামী প্রশ্ন। কেননা মুক্তমনারা উনাকে সমগোত্রীয় ভেবে আত্নতৃপ্তি অনুভব করেন এবং তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজকে পুঁজি করে তারা বাংলাদেশে নাস্তিকতার বীজকে বৃক্ষে রূপ দিতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন। সে লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য প্রনয়ন করছেন সুদূরপ্রসারী দিক-নির্দেশনা। কিন্তু জাফর ইকবাল সাহেব রচিত বই এর কিছু উক্তি তাদের চিরায়ত বিশ্বাসকে টলে দিয়েছে! যার ফলে তারা সন্দিহান যে আসলেই কি তিনি তাদের ভাবধারার নাস্তিক, যাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মকে (মূলত ইসলাম) ধরণীর ধরা থেকে বিলীন করে দেওয়া। তাদের ওয়েবসাইটের প্রবন্ধ ও মন্তব্য পড়লে নিশ্চিত হতে পারেন যে ডঃ জাফর ইকবাল ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নন। কেননা মুক্তমনাদের ভাবধারা অনুযায়ী বিবর্তনবাদে বিশ্বাসীরা কখনো আল্লাহ বা গডে বিশ্বাস করতে পারে না। সম্প্রতি “ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন, জাফর ইকবাল স্যার ও আমার কিছু ব্যক্তিগত ভাবনা” নামক লেখাতে এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।
ডঃ জাফর ইকবাল যে বিবর্তনবাদের কট্টর সমর্থক তার প্রমাণ হিসেবে একজন মুক্তমনা তুলে ধরেন এভাবেঃ
…প্রথম আলো এখন “স্বপ্ন” নামের একটা সাপ্লিমেন্ট বের করে যেখানে জাফর ইকবাল প্রায়ই ভক্তদের সাথে কথা বলেন। সেখানে একবার ঢাকার বাইরের এক পাঠক জিজ্ঞস করেছিলেন যে তিনি বিবর্তবাদে বিশ্বাস করেন এবং তার এ “বিশ্বাস” কতটুকু যৌক্তিক। জাফর ইকবাল সরাসরি বলে দেন যে বিবর্তনবাদ একটা ফ্যাক্ট, এখানে বিশ্বাসের কিছু নেই।
ডঃ জাফর ইকবাল কি ডীইস্ট বা প্রত্যাদেশবিরোধী আস্তিক অথবা খাঁটি নাস্তিক (মুক্তমনা)- তা নিয়ে মুক্তমনাদের বেশ মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা মুক্তমনারা ডঃ জাফর ইকবাল এর বইয়ে কিছু উদ্ধৃতি খুঁজে বের করেছেন তা বিবর্তনবাদের বিপক্ষে যেতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়। এ থেকে মুক্তমনারা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের (আইডি) মৃদু গন্ধ পাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, আইডি-তে বিশ্বাসীরা গডের অস্তিত্বে অবিশ্বাস করে না। এ প্রসঙ্গে এক মুক্তমনা বলেনঃ
একবছর আগেও সমকামিতা সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল খুব নেগেটিভ। এটাকে পশ্চিমা বিশ্বের ভ্রষ্ট নৈতিকতার ফসল মনে করতাম। মুক্তমনায় অভিজিত রায়ের সিরিজ টা পড়ার পরে এ সম্পর্কে আমার ধারণায় আমূল পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে একদিন জাফর ইকবাল স্যারের প্রেত উপন্যাসটা পড়তে গিয়ে চোখ আটকে যায় একটা বাক্যে, শয়তান উপাসনার পুনজাগরণ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, “পাশ্চাত্য দেশে জাতি-দ্বেষ,নাৎসীবাদ, সমকাম কোনো কিছুই আর বেআইনী নয়, তাই শয়তান উপাসনায় আপত্তি কিসের?” চমকে গেলাম। উনিই যদি এই ধরণের চিন্তাধারা পোষণ করেন তবে সেটার প্রভাব তাঁর হাজার-হাজার (আক্ষরিক অর্থেই) ভক্ত পাঠকের উপর পড়তেই পারে।
…..এছাড়া তাঁর একাধিক সায়েন্স ফিকশন গ্রন্থের অনেক বাক্য থেকেই ইনটেলিজেন্ট ডিজাইনের আভাস বের করে আনা সম্ভব। …বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানচর্চা’ প্রবন্ধে চার্চ কর্তৃক বিজ্ঞানীদের উপর গ্যালিলিও এর নির্যাতনের বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে বিজ্ঞান ব্যবহার করে ধর্মচর্চা বা ধর্ম ব্যবহার করে বিজ্ঞান চর্চার ফল শুভ হয় না। আমিও সহমত। কিন্তু পরের লাইনগুলো দেখুন, “গবেষণা করে দেখা গেছে যে, চতুরতার সাথে দুর্নীতি করা হলে আইনের সাথে কোনো ঝামেলা ছাড়াই বড় অঙ্কের অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। এ রকম একটি ‘বৈজ্ঞানিক তথ্য’ উপস্থিত থাকার পরও আমরা কিন্তু সব সময়ই সবাইকে সৎ ভাবে বেঁচে থাকার একটি ‘বৈজ্ঞানিক’ উপদেশ দেই এবং নিজেরাও অবইজ্ঞানিকভাবে সৎ থাকার চেষ্টা করি।”
পড়ার সাথে সাথেই কয়েকটা প্রশ্ন জাগে। তাহলে নৈতিকতা কি বিজ্ঞান বিরোধী? বিজ্ঞান কি মানুষের নৈতিকতার উৎস হতে পারে না বা একে ব্যাখ্যা করতে পারে না! ঐ অনুচ্ছেদের পরবর্তী একটা উক্তি হল, “কাজেই সবকিছুকে বিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে হবে তা নয়।” ইন্টলেজেন্ট ডিজাইনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত!
….আরেকটা প্রবন্ধ ডিএনএঃপ্রকৃতির নীল নকশা। এ প্রবন্ধসহ আরো নানা প্রবন্ধে ডিএনএকে Blue Print of Life বলে মন্তব্য আছে।যেটা বৈজ্ঞানিক সহলে আর ব্যবহৃত হয় না।কারণ Blue Print এবং ডিএনএ এর মধ্যে উপমাটি খুব দূর্বল। …এই বার আরো আশ্চর্য হওয়ার পালা! “হারিয়ে যাওয়া ভর” প্রবন্ধে তিনি বলেন, “হিলিয়াম নিউক্লিয়াসের হারিয়ে যাওয়া ভর যদি 0.006 থেকে 0.008 এর ভেতরে না হলে বিশ্বভ্রমান্ড তৈরিই হত না।সবচেয়ে মজার ব্যাপার শুধু এই সংখ্যাটি নয় প্রকৃতিতে আরো অনেক সংখ্যা আছে যে গুলো অল্প একটু পরিবর্তন হলেই এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডটি হয় এভাবে তৈরি হত না,আর যদিও বা তৈরি হতো সেটি হতো এমন বিদঘুটে জগৎ যে জগতে বুদ্ধিমান প্রানী দূরে থাকুক প্রাণের বিকাশই ঘটা সম্ভব হত না।দেখে শুনে মনে হয় প্রকৃতি বুঝে খুব সতর্কভাবে এই সংখ্যাগুলো বেছে নিয়েছে যেন বিবর্তনের ভেতর দিয়ে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী এই পৃথিবীতে জন্ম নিতে পারে।”
অন্য এক মুক্তমনা এ প্রসঙ্গে বলেনঃ
খুব ভাল একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছ। এটা নিয়ে আসলেই কিছু আলোচনা হওয়া উচিত। জাফর ইকবালের লেখার স্টাইলে আইডি-র গন্ধ পাচ্ছি, এটাও বুঝতে পারছি যে তিনি আইডি-র সমর্থক নন। আইনস্টাইনের উদাহরণ দিয়ে শেষ লাইনে যা বলেছ সেটার সাথেও পুরোপুরি একমত। তার ভাষার খেলায় জাফর ইকবাল আরেকটু যত্নবান হলে হয়তো পাঠকের সুবিধা হবে।…..সমকামিতা নিয়ে করা জাফর ইকবালের মন্তব্য খুব বাজে লাগল। এ নিয়ে তার ডিটেল মতামত জানা উচিত। যদিও আমার মনে হয় জনমত রক্ষার খাতিরে এ নিয়ে তিনি কখনোই মুখ খুলবেন না।
এসব মন্তব্য থকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মনে-প্রাণে বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী হলে সমকামিতাকেও নীতিগতভাবে সমর্থন করতে হবে। তাদের বিশ্বাস-ই হচ্ছে না, ডঃ জাফর ইকবাল সাহেবের মতো মানুষ সমকামিতাকে নেগেটিভ দৃষ্টিতে দেখেন, যদিও উনি বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী! চরমভাবে মুসলিম বিদ্বেষী “মুক্তমনা”র প্রতিষ্ঠাতা ডঃ অভিজিত রায় অভিমত দেন এভাবেঃ
খুব প্রয়োজনীয় একটা লেখা লিখেছ পথিক। একটুখানি বিজ্ঞান পড়ে আমার প্রথমে ভাল লাগলেও পরে আমি আর বন্যা অনেক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে তোমার মতোই উপসংহারে পৌছেছিলাম। আসলে বইটির অনেক বাক্যেই খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রচ্ছন্নভাবে আইডি-এর দিকে চলে যায়। মাঝখানে একবার ভেবেছিলাম বইটির রিভিউ লিখি, কিন্তু পরে আর সময়াভাবে লেখা হয়নি। পথিকের রিভিউটি অনেক প্রত্যাশা মেটাবে। ….এখন দুইটি ব্যাপার হতে পারে। এক জাফর ইকবাল না বুঝেই এ ধরনের বাক্য ব্যবহার করেছিলেন। হয়তো এর গূঢ় প্রভাবগুলো ভবিষ্যতে কি প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে তা ভেবে দেখার ফুরসত পানিনি। আর দ্বিতীয় কারণটি এই হতে পারে যে- তিনি আসলেই ওভাবে বিশ্বাস করেন। কোন এক অদৃশ্য অপার্থিব কিছু কিংবা কোন রহস্যময় ডিজাইনার আসলেই আছে। তাই তিনি প্রচ্ছন্নভাবে (সরাসরি নয়) তার অস্তিত্বকে জায়েজ করার স্বপক্ষে কিছু বিভ্রান্তিকর যুক্তি দেন। এটা হলে ব্যাপারটা আরো ভয়ানক।……সমকামিতা নিয়ে জাফর ইকবালের মনোভাব (যদি সত্যই এগুলো তিনি বলে থাকেন) তার জ্ঞানের দীনতা প্রকাশ করে। এ ব্যাপারে একটি মজার কথা বলি। শুধু জাফর ইকবাল নন, তার ভাই হুমায়ূন আহমেদও একই ধারণা পোষন করতেন সমকামিতা সম্বন্ধে।
অন্য আরেক জন ব্যথাতুর মুক্তমনা খানিকটা আবেগ প্রবণ হয়ে বলেনঃ
শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যার যেভাবেই হোক ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের কিছু উপাদান তাঁর বিভিন্ন বইয়ে নিয়ে এসেছেন। ব্যাপারটি অত্যন্ত দুঃজনক। আমরা জাফর স্যারের দিকে চেয়ে একটা প্রগতিশীল, উন্নত ও সেক্যুলার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। কিন্তু তাঁর লেখা যদি আই ডি ওয়ালাদের প্রতিনিধিত্ব করে তবে তাকে শুধু ‘দুঃখজনক’ নয় বরং ‘অন্যকিছু’ বলতে ইচ্ছে করছে।
ডঃ জাফর ইকবাল প্রত্যাদেশবিরোধী আস্তিক (যারা ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস করেন না) কিনা এ প্রসঙ্গে জনৈক মুক্তমনা বলেনঃ
জাফর ইকবাল স্যার সম্পর্কে আমার ধারণা উনি একজন বিশুদ্ধ ডিইস্ট বা প্রত্যাদেশবিরোধী আস্তিক। ডিইস্টদের আমি সংশয়বাদী হিসেবে স্বীকার করি না এবং তাদের মনোভাব বৈজ্ঞানিক চিন্তাপদ্ধতির সাথে সংঘাতপূর্ণ।……। কিংবা আজকাল এক নতুন শ্রেণীর মুক্তচিন্তক দেখছি! যারা বিবর্তনসহ সব বৈজ্ঞানিক তত্বই মেনে নেন, ধর্মগ্রন্থে এসবের খোঁজও করেন না, কিন্তু সবকিছুর পেছনেই এক অদৃশ্য মহাশক্তির ইন্ধন খুঁজে পান। একে এরা সরাসরি খোদাও বলেন না। বস্তুত, এটা গড ইন গ্যাপ্স ছাড়া কিছুই না! জাফর ইকবাল স্যার সম্ভবত এই গোত্রের। ইসলামকে তিনি প্রায়ই উদার-সহিষ্ণু প্রমাণের অপচেষ্টা করে থাকেন।
শিক্ষানীতি, বিবর্তনবাদ এবং ডঃ জাফর ইকবাল
শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে এক মুক্তমনার মনে করেনঃ
প্রথম কথা হলো, আমি নিজেও মনে করি স্যারের এইসব ব্যাপারে আরও অনেক সতর্ক হওয়া উচিত। তুমি এখানে হাজার বলেছো, আমার তো মনে হয় লক্ষ মানুষ তার লেখার অনুরাগী। সুতরাং এইসব সেনসিটিভ ইস্যু (সমকামীতা, আইডি, ফাইন টিউনিং) তে তাঁর আরো মনোযোগী হওয়া উচিত। তবে কথা অবশ্য উনি তো আর এইসব নিয়ে লিখছেন তাঁর অন্যলেখায় হয়তো চলে এসেছে যা ভুল মেসেজ দেয়।…। বন্যাপারা দেশে থাকতে শিক্ষানীতি ইস্যুতে আমি জাফর ইকবালের সাফাই গেয়েছিলাম খুব করে। বলতে চেয়েছিলাম- ধূম করে তো আর কিছু বদল হয়না, উনি ধীরে ধীরে করছেন। ধূম করে করলে কেউ তার কথা শুনতোনা।
কোমলমতি শিশু-কিশোদের মনে “বিজ্ঞানের” আড়ালে নাস্তিকতা প্রচারে সুদুর-প্রসারী পরিকল্পনা
কী উপায়ে শিশু-কিশোদের মনে নাস্তিকতার বীজ বপন করা যায় তার কর্মকৌশল আলোচনা প্রসঙ্গে ডঃ জাফর ইকবালের এক ভক্ত বলেনঃ
জাফর স্যারের আমি এক ভক্ত, আসলে শুধু ভক্ত বললে এতে কম বলা হয়। আমার আজকে যে অবস্থান, অর্থাৎ আমার সব সিদ্ধান্ত,ঘটনা – এসবের পেছনে জাফর স্যারের লেখার এক বিরাট অবদান আছে। … এজন্যই তিনি সরাসরি ধর্মের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছুই লিখতে/বলতে চান না। কারন ছোট বেলায় সব মানুষই ধর্মের স্বপক্ষে জ্ঞান নিয়ে বেড়ে উঠে। তখন তার মাথায় এত সব জটিলতা কাজ করে না। সেই সময় ছেলেপেলেরা হয় আবেগী, অভিজ্ঞতার চেয়ে আবেগকে প্রাধান্য দেয়। যার ফলে তাদের জানা বোঝার বাইরে কোন কিছু তাদের কে আঘাত করলে সেটা তাদের মনে স্থায়ী বিরুপ প্রভাব তৈরি করে। জাফর স্যার যদি ধর্মের বিপক্ষে সরাসরি কিছু লেখেন, তাহলে তিনি তার অগনিত শিশু কিশোর ভক্ত হারাবেন। যার ফলাফল মোটেই ভালো হবে না। কারন, তার লেখা নাস্তিকতা কে তুলে না ধরলেও শিশুকিশোরদের ধর্ম নিরপেক্ষ ও ধৈর্যশীল করে তোলে। ….।তাই আমি লক্ষ্য করে দেখেছি যে, তার কাছে কেউ ধর্মের কথা তুললেই তিনি তা সুকৌশলে কাটিয়ে যান। কারন তার একটি ভুল/অতিসত্য/কড়া কথা তার হাজার হাজার ভক্তের মন ভেঙে দিতে পারে। যার ফলে তারা জাফর স্যারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে, যার ফলাফল হবে ভয়াবহ। কারন বাচ্চাদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনা প্রবেশ করানোর পেছনের রাস্তাটাতে স্যার নিজে একাই যুদ্ধকরে যাচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে যদি ঝামেলা বাঝে তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের।
‘বিবর্তনের পথ ধরে’ বই এর লেখিকা, বন্যা আহমেদ বাচ্চাদের অন্তরে কীভাবে বিজ্ঞানের নামে মুক্তমনাদের ভাবধারা প্রথিত করা যায় সে প্রসঙ্গে বলেনঃ
এটা নিয়ে প্রায় বছর ২-৩ ধরে আমি বিভিন্নজনের সাথে কথা বলছি, এবার দেশে গিয়েও এইটা আমার আলোচনার অন্যতম মূল বিষয়বস্তু ছিল, স্যাম্পল কিছু জনপ্রিয় বই নিয়ে গিয়েছিলাম সাথে করে এমনকি প্রকাশকের সাথে কথাও বলে এসেছি। দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে যখন শুধু রূপকথার বই এর ছড়াছড়ি দেখলাম তখন আরও মনে হয়েছে এই কাজটা এখনই করা দরকার। কিন্তু দেশে না থাকার কারণে এতদিন কাজটা হয়ে ওঠেনি, কিন্তু এবার মনে হয় হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আর সেই সাথে বিভিন্ন ধরণের মিডিয়া প্যাকেজ তৈরি, মাসিক পত্রিকা বের করা, ইত্যাদি অনেক কিছু নিয়েই কথা চলছে।
মুক্তমনা ভাবধারা প্রচারের এ মুহুর্তের কর্মপন্থা ঠিক করতে যেয়ে, একজন মুক্তমনা বলেনঃ
এজন্য প্রথমে যদি কোন ভাবে তাদের মধ্যে আমাদের লেখকরা একটা জায়গা করে নিতে পারেন তাহলে কাজটা কিছুটা সহজ হবে। প্রথম প্রথম যদি কিছু জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলোর বাচ্চাদের পাতায় বিজ্ঞানের কিছু মজার লেখা বা ম্যাজিক তুলে দিয়ে ওগুলোর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যখ্যা দেয়া, ডাইনোসর থেকে শুরু করে আজকের ব্যাঙের হাড়ের ছবি+ রঙ্গিন ছবি ও তাদের পারস্পারিক তুলনা মজার ভাষায় (গল্পের মত বিজ্ঞান- যেমন “যে গল্পের শেষ নেই”) ধর্মকে এড়িয়ে তুলে দিতে হবে। এভাবে প্রথমে বাচ্চাদের মনে আমাদের লেখকদের স্থান করে নিতে হবে। তাহলে তখনই শুধুমাত্র বাচ্চারা আমাদের লেখকদের বই কেনার সাহস পাবে।
দেশের বেশ কয়টি জনপ্রিয় পত্রিকাকে মুক্তমনাদের ভাবধারা প্রমোট করতে দেখা যায়। তারা এসব করে মূলত ধর্মনিরপেক্ষতা, জঙ্গিবাদ বা জামাতের নাম ভাঙ্গিয়ে। যার ফলে সাধারণ মানুষ তা সহজে বুঝতে পারেন না। মুক্তমনাদের ভাবধারাকে প্রমোট করার উদ্দেশ্যে “The Daily Star” পত্রিকা ওয়েব জগতে বহুল পরিচিত বাংলাদেশী অরিজিন চরমভাবে মুসলিম বিদ্বেষী মুক্তমনাদের সাক্ষাৎকার ছাপানো হয়, “Freethinkers of Our Time” নামে। প্রথম আলো “মুক্তমনের মানুষের অধিকারের স্বার্থেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট দরকার” শিরোনামে মুক্তমনাদের খবর ছাপে। কিছুদিন আগে ডারউইনের জন্মদিন উপলক্ষে সমকাল পত্রিকা পুরো একপেজ বরাদ্দ করেছিল মুক্তমনার আন্টি-মুসলিম লেখকদের জন্য।
মুক্তমনাদের দাবী অনুযাযী, ডঃ জাফর ইকবাল তাদের ঘরানার মানুষ। মুক্তমনার পুরাতন ওয়েবসাইটে ডঃ জাফর ইকবালের নাম ছিল তাদের উপদেষ্টা তালিকায়। মুক্তমনা ওয়েবসাইটের ২০০৬ সালের তথ্য অনুযায়ী (মুক্তমনা Rationalist Award উপলক্ষের বিবৃতি অনুসারে)-
All the renowned intellectuals of Bangladesh including Prof. Zafar Iqbal, Prof. Ghulam Murshid, Prof. Shafi Ahmed, Prof. Anu Muhammad, Prof. Hiranmay Sengupta, Prof. Shahidul Islam, Prof. Iyasmin Huq, Prof. M. Akhtaruzzaman, Prof. Akmal Hussain, Architect Shamsul Wares, Prof. AHKS Arefin, Hussain Ali, journalist Abdul Momen and Arun Dasgupta, Artist Mamunur Rashid, novelist Selina Hossen and many others attended for our cause…
ডঃ জাফর ইকবালের বই, পত্রিকার কলাম এবং টিভির সাক্ষাৎকার দেখে উনাকে সুন্দর মনের মানুষ হিসেবে আমাদের ধারণা জন্মেছে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে ডঃ জাফর ইকবাল সহ অন্যান্য বিখ্যাত নাট্যকার, কলামিষ্ট, সাংবাদিকরা “ধর্ম নিরপেক্ষতা”র নামে মুক্তমনাদের চরমভাবে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষপূর্ণ ভাবধারা প্রচার ও প্রসারে কাজ করবেন! “মুক্তমনা” ওয়েবসাইটকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে বিজ্ঞান বা সেকুলার হিউম্যানিজমের নামে তারা ইসলাম এবং নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে এত-ই কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা ও কুৎসা রটনা করে, যা কিনা সুরুচি সম্পন্ন নাস্তিকদেরও বিবেককে নাড়া দিতে বাধ্য। ধর্ম বিদ্বেষ এত-ই অসহিষ্ণু যে, পারলে নিউক্লিয়ার বোমা দিয়ে সমস্ত মুসলিমদেরকে একসাথে পৃথিবী থেকে ধংস করার উদ্ধত সাহস পোষণ করে। প্রশ্ন জাগে, ডঃ জাফর ইকবাল সাহেব সহ অন্যান্য বিখ্যাত নাট্যকার, সাংবাদিক, কলামিষ্টরা কি জেনেশুনে ও সচেতনভাবে মুক্তমনাদের ধর্মের প্রতি (প্রধানত ইসলাম) অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপূর্ণ ভাবধারাকে সমর্থন দেন? ডঃ জাফর ইকবালকে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা জনগণের সামনে পরিস্কার করতে হবে, কেননা উনাকে দেশের মানুষেরা ভালবাসে তার সুন্দর মানসিকতার জন্য। তাছাড়া, তিনি দেশের পলিসি মেকিং-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, যার প্রভাব পড়বে সবার উপর। এই অতি সংবেদনশীল বিষয়ে তার মনোভাব জানানো দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে।
‘মুক্তমনা’র ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের নমুনা হিসেবে নীচের প্রবন্ধগুলো পড়া যেতে পারে:
মুক্তমনার “মডারেট মুসলিম তত্ত্ব এবং এর অসারতা” প্রসঙ্গে
ধর্মহীন মানুষ কত বিকৃত চিন্তার অধিকারী দেখুন, সমকামীতা তাদের কাছে এখন পানি-ভাত ।
আপনাকে ধন্যবাদ এই লেখার জন্য >
@হাফিজ ভাই, আমার ইসলাম বলে এসব সমকামিদেরকে ধর এবং হত্যা কর। কারন এরা এদের চেয়ে খারাপ আর কিছুই আল্লাহর জমিনে নেই। দুনিয়ার পশুপাখিকেও সমকামি হতে দেখবেন না.।.।.।।।
জাফর স্যারের বিশ্বাস যেটাই হোক সেটা ইসলামের জন্য কোনক্রমেই হুমকি নয়। যারা পথ চেনার তারা ঠিকই চিনে নেবে।
@তালহা তিতুমির,
ঠিক বলেছেন।
তালহা তিতুমির ভাই সঠিক কথাই বলেছেন। তবে মুক্তমনাদের সম্পর্কে বলতে হয় নজরুলের ভাষায়
উহারা প্রকাশ করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ
আমরা বলিব এক আল্লাহ জিন্দাবাদ
(পঙ্কক্তি দুটিতে সামান্য ভুল থাকতে পারে। আমার স্মৃতিতে এটি ভাসা ভাসা। ভুল হলে ক্ষমা করবেন)
আর আমাদের মনে রাখতে হবে-
“তোমরা মুসলিম হয়ে আমাকে ধন্য করেছ, তা মনে করো না।
বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন।”
(হুজুরাত:১৭)
@Shah Shajedur Rahman,
দুটি শব্দ বাদ গিয়েছে এবং প্রকাশ নয় প্রচার হবে :
উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ
আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ
জাজাকাল্লাহ ।
আসলে এরা যাদেরকে রেফারেন্স হিসেবে দেখায় তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলে দেখা যায় নাস্তিকরা তাদের বক্তব্যকে কিভাবে ট্যাগিং করে। এদের তো কোন ভিত্তি-ই নেই। নাস্তিকতার সারমর্মটা একেবারেই হাস্যকর। আর তা এ কারনেই যে সেমেটিক সকল ধর্মেই আল্লাহর অস্তিত্ব যে যৌক্তিকতার উপর বিশ্বাস করে অর্থাত “আপনি আছেন তো আপনার আগে কেউ” এই লজিক কে অস্বীকার করার অর্থই হলো আমি আপনি সবই অস্তিত্বহীন অথছ ঠিক আমি আপনাকে দেখছি আপনি আমাকে দেখছেন।
এখন সময় এসেছে নাস্তিকদের সাথে নীরবতা পালন করার নতুবা তাদেরকে পাশ কাটিয়ে যাবার, স্টিফেন হকিং না কোন বড় নাস্তিক বিজ্ঞানী শেষমেষ বলেছেন অন্তত তিনজন হলেও গড থাকতে পারে!!
জাফর ইকবাল নাস্তিক কি না জানি না। তবে সে যে চরম ইসলাম বিদষী তা নিশ্চিত করে বলা যায়। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আপনাদের সময় আর এখনকার সময়ের মধ্যে কি পার্থক্য দেখেন? সে জবাব দিয়েছিল, ‘আমাদের সময় এতো বোরকার প্রচলন ছিল না যা এখন দেখা যায়। এটা গভীর উদ্বেগের কারন।’