লগইন রেজিস্ট্রেশন

“কৃত্রিম প্রাণ” তৈরীর কৃত্রিম খবরে মুক্তমনাদের দেহে প্রাণের সঞ্চার!

লিখেছেন: ' সরোয়ার' @ শুক্রবার, মে ২৮, ২০১০ (১০:০৬ অপরাহ্ণ)

কর্মব্যস্ত পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে ইন্টারনেট-বিহীন কোন এক দ্বীপে অবস্থান করছিলাম। সেসময় “কৃত্রিম প্রাণ” তৈরীর খবর বিবিসি’র শিরোনামে দেখলাম। বিস্তারিত জানার আর কোন সুযোগ ছিল না। মনের মধ্যে খচমচ করতে লাগল। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল অথচ আগে থেকে তার কোন আচঁ করতে পারলাম না! চোখ বন্ধ করতেই চক্ষুপটে ভেসে উঠল মুক্তমনা-বিবর্তনবাদীদের উল্লাস-নৃত্য। বাসায় পৌছে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতেই চোখে পড়ল বাংলাদেশে বিজ্ঞানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান “মুক্তমনা”র বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে ডঃ অভিজিৎ রায় বলেন:

অবশেষে মানুষের ঈশ্বর হয়ে ওঠা: তৈরী হল প্রথম কৃত্রিম প্রাণ
খুব তরতাজা খবর। কয়েক ঘণ্টা আগেই বেরিয়েছে। কিন্তু দারুন উদ্দীপক এবং আমাদের জন্য খুবই প্রেরণাদায়ক খবর এটি। অবশেষে বিজ্ঞানী ক্রেগ ভেন্টরের প্রায় পনের বছরের ক্লান্তিহীন গবেষণা সফলতার মুখ দেখেছে। তিনি তৈরী করেছেন প্রথম “কৃত্রিম প্রাণ”।

নাস্তিকতাবাদের ভিত্তিগুলো যখন একে একে ধ্বসে পড়ছে, সেসময় এরকম খবর সত্যিই তাদের দেহে প্রাণ সঞ্চার করার মতো। এক-পশলা বৃষ্টি যেমন প্রাণের স্পন্দন জাগায় চৈত্রের খরতাপে মুমুর্ষূ শস্যখেতে। “জড় পদার্থ থেকেই প্রাণের উৎপত্তি”- এ বিশ্বাস প্রায় ২০০০ বছর পর্যন্ত বিজ্ঞানী-মহলে প্রতিষ্ঠিত ছিল। উনবিংশ শতকের শেষের দিকে ডারউইনের “অরিজিন অব স্পিসিজ” প্রকাশের পাঁচ বছর পরে বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর একটি অতি সাধারণ পরীক্ষার (যা বকনল পরীক্ষা নামে পরিচিত) মাধ্যমে হাজার বছরের বিশ্বাসকে চূর্ণ করে দেন। এই চরম সত্যকে মেনে নিতে বিবর্তনবাদ-মৌলবাদীদের অনেক সময় লেগেছিল, কেননা বিবর্তনবাদের ভিত্তিই হচ্ছে ‘জড় পদার্থ থেকেই প্রাণ বা জীবের উৎপত্তি’। বিবর্তনবাদীরা কিন্তু তাদের বিশ্বাসে হাল ছাড়েনি। পঞ্চাশের দশকে স্ট্যানলি মিলারের বিখ্যাত ‘প্রাণের উৎপত্তি’ এক্সপেরিমেন্টের উল্লাসও এক সময় ভাটা পড়ে। অপরদিকে ডারউইনের প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে “উষ্ণ পুকুর তত্ত্বের” (Warm little pond hypothesis tested) উপর পড়েছে বিজ্ঞানের চরম কষাঘাত। এজন্য বিবর্তনবাদীরা প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কিত প্রশ্ন যারপর নাই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং বলে থাকেন প্রাণের উৎপত্তি বিবর্তনবাদ তত্ত্বের অংশ নয়! এ বিষয়ে বেশী জোড়াজোড়ি করলে শেষমেষ তারা ভীনগ্রহের দিকে তাকিয়ে থাকে! বিবর্তনবাদের মডার্ন গুরু অক্সফোর্ড প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স ভীনপ্রহ থেকেও প্রাণের উৎপত্তি হতে পারে বলে ইদানিং বিশ্বাস করা শুরু করেছেন! সম্প্রতি স্টিফেন হকিন্সও এই মিছিলে যোগ দিয়েছেন!

বিবর্তনবাদের স্রষ্টা ডারউইন বলে গেছেন যে তার তত্ত্ব প্রমাণের জন্য জীব সৃষ্টির পর্যায়ক্রমিক ধাপ বা ট্র্যানজিশনাল স্পিসিজ দেখাতে হবে। প্রায় ১৬০ বছর ধরে এই ইলুসিভ ট্র্যানজিশনাল স্পিসিজের ফসিলের সন্ধানে পৃথিবীর যত্রতত্র খোড়াঁখোড়িঁ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত কল্পিত “ট্র্যানজিশনাল স্পিসিজ” বা “মিসিং লিঙ্ক” এর টিকিটিও খোজ পাওয়া যায়নি। “মিসিং লিঙ্ক” যে কেন দরকার তা কিন্তু বিবর্তনবাদ মৌলবাদীরা ভালভাবেই বুঝে! এজন্য হয়ত অনেকে রাতে ঘুমাতে পারে না। কেননা কোন ভাঙ্গাচোরা হাড্ডি-গুড্ডি বা মাথার খুলি পাওয়া গেলে তা নিয়ে কিছুদিন মিডিয়াতে হৈচৈ করতে দেখা যায়। ইদা (Ida) নামক ফসিলকে “Eighth Wonder of the world” বলে মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করা হয়। তারপর আর্ডি (Ardi) আবিষ্কারের পর অনেক বিবর্তনবাদী মানব সভ্যতার ইতিহাসকে নতুন করে লিখার ঠিকাধারী হাতে নিয়েছিলেন! এখন আবার মাতামাতি হচ্ছে সাডিবা নিয়ে। এ-সমস্ত ফসিল কাহিনী যুগ-যুগ থেকে মিডিয়াতে আসা-যাওয়া করছে। ফসিল নিয়ে হয়েছে আবার অনেক নাটকীয়তা ও প্রতারণা।

“কৃত্রিম প্রাণ” প্রতিবেদনে মিডিয়া অতিরঞ্জনের বিপদ-সীমা অতিক্রম করে। এই ফুলানো-ফাঁপানো শুরুটা হয় ক্রেগ ভেন্টরের মাধ্যমে। তিনি উদ্ধতভাবে ঘোষণা করেন, “Our cell has been totally derived from four bottles of chemicals.” বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন না, যা তার গবেষণা-প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পরবর্তীতে বিবর্তনবাদ/বস্তুবাদ ভাবধারায় প্রভাবান্বিত মিডিয়া এর উপর ভিত্তি করে মনের মাধুরী মিশিয়ে খবর পরিবেশন করে যাতে বিজ্ঞানের চাইতে বিজ্ঞানের নামে তাদের সংকীর্ণ বস্তুবাদী/বিবর্তনবাদী ভাবধারাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিছু নমুনা:

And man made life (The Economist)

Scientists create artificial life in laboratory (TIMES)

Scientists create a living organism (Financial Times)

‘Artificial life’ breakthrough announced by scientists (BBC)

Craig Venter creates synthetic life form (Guardian)

Researchers Say They Created a ‘Synthetic Cell’ (New York Times)

Scientists Create Synthetic Life In Lab (Sky News)

‘Frankenstein’ doc creates life (UK Sun)

Mankind Creates First Synthetic Genome, Officially Replaces God (Vanity Fair)

বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে বস্তুবাদী/বিবর্তনবাদী ভাবধারা প্রচার ও প্রসারের মূলে রয়েছে মধ্যযুগীয় চার্চ-বাস্তুবাদী আইডিওলজিক্যাল সংঘর্ষ। চার্চের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ব্যহত হচ্ছিল। গ্যালিলিওকে তার বৈজ্ঞানিক মতবাদের জন্য শাস্তি দিয়েছিল। বস্তুবাদীরা বিজ্ঞানের নামে শতাব্দীর পর শতাব্দী গ্যালিলিওর ইস্যুটিকে ব্যবহার করছে নিজের ভাবধারা প্রচারে। চার্চ যখন-ই নড়াচড়া শুরু করে, বস্তুবাদীরা গ্যালিলিও – সমতল পৃথিবী – ছয় হাজার বয়সের পৃথিবী – ইত্যাদি দিয়ে তাদের শুট করে ধরাশায়ী করে থাকে। যার ফলে সমাজে চার্চের প্রভাব শূন্যের কোঠায়। এজন্য চার্চ বা ক্রিস্টিয়ান ধর্ম তাদের কাছে গৌণ। বস্তুত, ধর্মগুলোর মধ্যে একমাত্র ইসলাম তার স্বকীয়তা বজায় রাখতে পেরেছে। বস্তুবাদী/বিবর্তনবাদী/মুক্তমনাদের বর্তমানে একমাত্র টার্গেট হচ্ছে ইসলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গ্যালিলিওর কাঁধে বন্দুক রেখে এখন তারা ইসলামকে শুট ডাউন করার চেষ্টা করছে!

মিডিয়ার কৃত্রিম খবরে সায়েন্স জার্নালও (যেখানে ক্রেগ ভেন্টরের রি-ইঞ্জিনিয়ার্ড ব্যাকটেরিয়া প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে) সম্ভবত ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে কৃত্রিম প্রাণের বিষয়টিকে জনসাধারণকে ব্যাখ্যা করা হয় এভাবে:

Q: Does the advance really represent the creation of new life?
There are a couple of reasons why this achievement should not be called the creation of “new” life. First, the form of life that was created was not new. What was essentially done was the re-creation of an existing bacterial form of life, except that it was given a prosthetic genome (synthesized in the laboratory), and except that the genome was put into the cytoplasm of a slightly different species.

The methods used here could relatively easily be used to produce something that would be “new” in the sense of never having existed before. This would be done by introducing enough new genes (or removing enough existing genes). This is technically feasible today, and eventually taking advantage of this potential is the primary motivation for creating “synthetic cells” in the first place. However, it should be emphasized that it will probably be very difficult to make very new forms of life. This is because even the simplest form of life is very complex, so it is very difficult to predict what will happen when you substantially change their genomes.

Now, even if the synthetic genome was substantially different from any existing form of life, one might still object to calling this the creation of new life, because the synthetic cell was made by modifying an existing form of life. Almost all of the material in the synthetic cell comes from a previously existing form of life; only the genome is synthesized. In this respect, one might say that a synthetic cell qualifies as “new” life only if the whole cell is synthesized. A handful of research teams around the globe are working on trying to create fully synthetic cells (sometimes called “protocells”) using materials obtained solely from a chemical supply company. Even a living protocell would still not qualify as creation from nothing, of course, since it would be created from pre-existing materials.

পৃথিবীর সবচেয়ে নামকরা সায়েন্টিফিক জার্নাল, Nature-এ বিভিন্ন খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের এ বিষয়ে অভিমত প্রকাশিত হয়। পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির ফিলসোফার এবং বায়ো-এথিক্স বিশেষজ্ঞ Arthur Caplan’র মতে ভেন্টরের আবিষ্কার জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে হাজার হাজার বছর ধরে চলমান বিতর্কের অবসান করেছে! তিনি এভাবে বলেন-

Venter and his colleagues have shown that the material world can be manipulated to produce what we recognize as life. In doing so they bring to an end a debate about the nature of life that has lasted thousands of years. Their achievement undermines a fundamental belief about the nature of life that is likely to prove as momentous to our view of ourselves and our place in the Universe as the discoveries of Galileo, Copernicus, Darwin and Einstein.

অন্যদিকে নবেল বিজয়ী বায়োলজিষ্ট David Baltimore মনে করেন ভেন্টর তার গবেষণা-প্রাপ্ত ফলাফলের অতিরঞ্জন করেছেন। তিনি অভিমত প্রকাশ করেন এভাবে:

He has “overplayed the importance” of his results, which represent “a technical tour de force” rather than a scientific breakthrough. Venter “has not created life, only mimicked it.

বোস্টন ইউনিভার্সিটর বায়োইঞ্জিনিয়ার ও সিন্থেটিক বায়োলজিতে বিশেষজ্ঞ James Collins, ক্রেগ ভেন্টরের আবিষ্কার সম্পর্কে বলেন:

An important advance in our ability to re-engineer organisms, not make new life from scratch. Frankly, scientists don’t know enough about biology to create life. Although the Human Genome Project has expanded the parts list for cells, there is no instruction manual for putting them together to produce a living cell. It is like trying to assemble an operational jumbo jet from its parts list—impossible. Although some of us in synthetic biology have delusions of grandeur, our goals are much more modest.

পরবর্তীতে কোন কোন বহুল প্রচারিত মিডিয়া অতিরঞ্জনের বিষয়টির ভুল বুঝতে পেরে তা শুধরানোর চেষ্টা করে এভাবে:

Synthetic life? Synthetic hysteria more like (TIMES)
Craig Venter is not playing God yet (Gurdian)
Has Venter made us gods? (Guardian)

Carl Zimmer (যিনি নিজেও একজন বিবর্তনবাদী, তবে মৌলবাদী নন এবং একাধিক বইয়ের লেখক, যেমন Microcosm: E. coli and the New Science of Life) তার প্রবন্ধে (Artificial Life? Old News) মন্তব্য করেন এভাবে:

…We are a long way from playing God. The scientists didn’t assemble the fragments of DNA by themselves, nor did they program robots to do so. Instead, they injected the fragments into E. coli, and let the bacteria do the job themselves. Eventually, it turned out that E. coli could only build up a quarter of the genome. The scientists don’t quite know why. So they injected those big chunks of Mycoplasma DNA into yeast. Lo and behold, the yeast were able to finish up the job for the scientists. They don’t quite know how the yeast did their own biochemical magic either. I would assume that God would have this kind of stuff figured out.

ক্রেগ ভেন্টরের রি-ইঞ্জিনিয়ার্ড ব্যাকটেরিয়া বা তথাকথিত ‘কৃত্রিম প্রাণ’ তৈরীর বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি জানতে পড়ুন:

‘কৃত্রিম প্রাণ’ ও বদ্ধমনাদের আস্ফালন

আসুন, এই বেলা নাস্তিক হয়ে যাই সকলে? পর্ব-১

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৩২৮ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৫.০০)

৫ টি মন্তব্য

  1. হায় ঘটনা তো তাদের জন্য আরো জটিল হইয়া গেল মনে হয়, কারন এখন মানুষকেই মানুষের স্রষ্টা হিসেবে স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। !! :)

  2. কিন্তু তার আসল আবিস্কারটা কি , সেটা পরিস্কার হওয়া দরকার । আমার এক বন্ধু বললেন , সেল নয় , সে জেনেটিক কোডের কিছু আবিস্কার করেছে, ব্যাপারটা আমার কাছে পরিস্কার না । ভালো হতো তার মুল আবিস্কারটা আপনি পোস্ট আকারে দিলে ।

    Sorowar

    @হাফিজ,

    কিন্তু তার আসল আবিস্কারটা কি , সেটা পরিস্কার হওয়া দরকার । আমার এক বন্ধু বললেন , সেল নয় , সে জেনেটিক কোডের কিছু আবিস্কার করেছে, ব্যাপারটা আমার কাছে পরিস্কার না । ভালো হতো তার মুল আবিস্কারটা আপনি পোস্ট আকারে দিলে ।

    আশা রাখি এ বিষয়ে ছবির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করে পোষ্ট দিব ইনশাল্লাহ। তবে বুঝার জন্য নীচের বর্ননা দেখতে পারেন যা সদালাপে প্রকাশিত হয়েছে। আমার পোষ্টের নীচে এদের লিঙ্ক দেওয়া আছে।

    ভেন্টরের গবেষনাগারে কি আসলেই কৃত্রিম প্রাণ তৈরী হয়েছে? পদ্ধতিটির বিবরণ আছে ভেন্টরের ওয়েবসাইটে, পড়লে আপনারা সবাই বুঝবেন যে, বিভিন্ন ইষ্ট (Yeast, এক প্রজাতির ছত্রাক) থেকে ডিএনএ’র অংশবিশেষ নিয়ে জোড়া-তালি দিয়ে উনারা একটা ব্যাক্টেরিয়ার জিনোমে পরম্পরা কম্পিউটার এর সহায়তায় গবেষণাগারে সংশ্লেষণ করলেন; আর এটাকেই নাম দিলেন ‘কৃত্রিম প্রাণ’। এক্ষেত্রে, ডিএনএ গুলো কিন্ত মৌলিক পদার্থ থেকে (কিংবা কোন অজৈব পদার্থ থেকে) গবেষণাগারে সংশ্লেষণ করা হয়নি; এমনকি ডিএনএ গুলো জোড়া লাগানোর বিভিন্ন পর্যায়ে তারা সাহায্য নিয়েছেন জীবিত ইষ্টের। পদ্ধতির শেষাংশে আবার এই সিন্থেটিক জিনোমটি একটা জীবিত ব্যাক্টেরিয়ার ক্রোমজোমে প্রতিস্থাপিত করা হয়। আমি পুরো ব্যাপারটাকে একটা সফল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলতে রাজী আছি, কিন্তু কোনোভাবেই ‘কৃত্রিম প্রাণ’ নয়। একটা প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন এক ব্যক্তির অনেক দেহাংশ নানা স্থান/সূত্র থেকে প্রতিস্থাপিত, ফলে উনার হয়ত কৃত্রিম পা আছে, আছে যান্ত্রিক হৃদযন্ত্র, তদুপরি হয়তবা উনার যকৃত, চোখের কর্নিয়া ও শরীরের চামড়ার অধিকাংশ প্রতিস্থাপিত (পাঠকগণ নিশ্চয় অবগত আছেন যে বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসকল প্রতিস্থাপন সম্ভব)। আপনি কি তাকে ‘কৃত্রিম প্রাণ/মানুষ’ বলবেন? অবশ্যই না। কারণ, মানুষটির প্রাণ প্রতিস্থাপিত হয়নি, ফলে তিনি আগের মানুষটাই আছেন। অবশ্যই এক্ষেত্রে যেমন নতুন প্রাণ সৃষ্টি করা হয়নি, তেমনি ভেন্টরের গনেষনাগারেও নতুন প্রাণ সৃষ্টি করা হয়নি। যা হয়েছে তা হলো, নানা জীবিত সূত্র থেকে উপাদান নিয়ে আরেকটা জীবিত ব্যাক্টেরিয়াতে প্রতিস্থাপন। যদি এমন হত যে সংশ্লেষিত ডিএনএ অজৈব উপাদান থেকে তৈরী করা অজৈব পদার্থে প্রবেশ করানোতে নবপ্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে, তাহলে আমি ‘কৃত্রিম প্রাণ’ সংশ্লেষের উপাখ্যান মেনে নিতাম।

    http://shodalap.com/shahbaz-nazrul/5049

    জন ক্রেইগ ভেন্টার ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা কম্পিউটারে একটি ডিএনএ ডিজাইন করেছেন। এই নক্সা অনুযায়ী প্রাকৃতিক ডিএনএ’র মূল এডেনিন, থাইমিন, গুয়ানিন এবং সাইটোসিন ক্ষারক উপাদান গুলোকে একটি ছত্রাক কোষের (Yeast cell) এর ভেতরে রেখে জোড়া দিয়ে ডিএনএ অণু তৈরি করেছেন। তারপর সেই ডিএনএ অণুটিকে একটি প্রাকৃতিক কোষের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন। এবং ভাইরাসের মতোই এই কৃত্রিম ডিএনএ-টি প্রাকৃতিক কোষের ডিএনএ-টির জায়গা দখল করে কোষ পরিচালনার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এবং প্রাকৃতিক কোষটি বিভাজিত হয়ে দেখিয়েছে যে কৃত্রিম ডিএনএ-টি আপাতঃ আসল ডিএনএ’র মতোই কাজ করছে।

    অর্থাৎ একটি কম্পিউটারের সফটওয়্যারটি শুধু পরিবর্তন করা হয়েছে, হার্ডওয়্যারটি পুরোটাই প্রাকৃতিক। ক্রেইগ ভেন্টার ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা এ কাজটি আগেও করেছিলেন তবে আগের ডিএনএ’র ক্ষুদ্র একটি অংশ ভুল ভাবে জোড়া লাগানো হয়েছিল আর সে কারণে তা কাজ করেনি। এবারে সেই ভুলটি শুধরে দেয়া হয়েছে। এ সাফল্য অর্জনে ক্রেইগ ভেন্টারকে ১৫ বছর লেগে থাকতে হয়েছে। কৃত্রিম ডিএনএ পরিচালিত এ প্রাকৃতিক কোষটি হচ্ছে মাইকোপ্লাজমা নামের একটি ছত্রাক জাতীয় কোষ- সরলতম একটি প্রাণিকোষ। ক্ষুদ্রতার দিক দিয়ে ভাইরাসের পরেই যার অবস্থান। এ উদ্ভাবন বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি মাইলফলক- মানব জাতির অর্জনের ইতিহাসেও সম্ভবত যদি তা ভেন্টারের আকাংখিত পথে মানব জাতি এবং পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণের উপকারার্থে ব্যবহৃত হয়। আর এজন্য ক্রেইগ ভেন্টার এবং তার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা অবশ্যই অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য।

    http://shodalap.com/a-murshed/5071

    হাফিজ

    @Sorowar, এখন ব্যাপারটা কিছুটা পরিস্কার হোলো । এটা বড় আবিস্কার হতে পারে তবে Existing Hardware ব্যবহার করে ডি এন এ কে কাজে লাগানো হয়েছে , কৃত্রিম প্রান এর সাথে কোনো সম্পর্কই নেই ।

    হাফিজ

    @Sorowar, ওহ আরো একটি কথা । মুক্তমনা নামের এই “বদ্ধ-পোনা” ( পোনা মাছ ) দের লাফালাফি শুধুই নিস্ফল আত্ন তৃপ্তি ।