কার্ডিওলজি জার্নাল ষড়যন্ত্র তত্ত্ব: মুক্তমনা ধর্মগুরুর মিথ্যাচার নাকি অজ্ঞতা?
লিখেছেন: ' সরোয়ার' @ বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১০ (৩:১৪ অপরাহ্ণ)
এই পোষ্টের নেপথ্য জানার জন্য পড়তে হবে শাহবাজ সাহেবের লেখা দে ডিড বার্ক ফর এ হোয়াইল! সম্প্রতি বিজ্ঞান-ভিত্তিক জার্নাল, The International Journal of Cardiology-তে “The heart and cardiovascular system in the Qur’an and Hadeeth” (2010 Apr 1;140:19-23) শিরোনামে একটি রিভিউ পেপার প্রকাশিত হয়। রিভিউ পেপারের অথার হচ্ছেন- Marios Loukas, Yousuf Saad, R. Shane Tubbs, and Mohamadali M. Shoja. প্রথম অথার হচ্ছেন St. George’s University-এর প্রফেসর Marios Loukas. তিনি বর্তমানে Neuroanatomy and Clinical anatomy জার্নালের অ্যাসোসিয়েট এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যান্য অথারের মধ্যে প্রফেসর R. Shane Tubbs (University of Alabama, Birmingham) – যিনি ৪০০’র বেশী পিয়ার রিভিউড জার্নাল পেপারের অথার হিসেবে অবদান রেখেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক জার্নাল Clinical Anatomy and Child’s Nervous System-এর এডিটর এবং আরো চল্লিশের অধিক জার্নালের অ্যাডহক এডিটর হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।
“The heart and cardiovascular system in the Qur’an and Hadeeth.” International Journal of Cardiology (2010 Apr 1;140(1):19-23. Epub 2009 Aug 25.
Abstract: Descriptions of the human anatomy derived from religious texts are often omitted from the medical literature. The present review aims to discuss the comments and commentaries made regarding the heart and cardiovascular system as found in the Qur’an and Hadeeth. Based on this review, it is clear that these early sources both had a good comprehension of these parts of the body. মূল পেপারটি পড়তে পারেন এখানে
‘মুক্তমনা’ ধর্মের গুরু ডঃ অভিজিৎ রায় এই পেপারটিকে ইস্যু করে (যদিও পেপারটি তখনও অফিসিয়ালি পাবলিশ হয়নি) আন্তর্জাতিকভাবে ইসলাম বিরোধী ক্যাম্পেইন করেন। বাংলা ভাষা-ভাষী মুসলিম বিরোধী মুক্তমনারা অপ্রাসঙ্গিকভাবে মিথ্যাচার করেছেন। তারা খুব চেষ্টা করেছিলেন যেন রিভিউ পেপারটি চাপের কারণে শেষ মুহুর্তে প্রকাশে বিরত থাকে। মুক্তমনাদের আক্ষেপের অন্যতম কারণ হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষ। তারা হর-হামেশা কোরান ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও হাসি-তামাশা করেন। এটা প্রকাশের সাথে তাদের মুখ রক্ষা ব্যাপার জড়িত ছিল। অবশেষে তাদের হীন-উদ্দেশ্য সফল হয়নি, পেপারটি যথা-রীতি প্রকাশিত হয়েছে!
The International Journal of Cardiology প্রকাশিত হয় Elsevier নামক প্রকাশনা সংস্থা থেকে। ডঃ অভিজিৎ রায় (বায়োইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি) উত্তেজিত ও আবেগপ্রবণ হয়ে স্বভাবগতভাবে অভিযোগ করেন যে Elsevier ঐ পেপার প্রকাশ করার জন্য পেট্রোডলার ঘুষ নিয়েছে। এর আগেও তিনি মরিস বুকাইলি ও স্বনামধন্য ভ্রুণ বিজ্ঞানী কীথ মূরকে ঘুষখোর হিসেবে আখ্যায়িত করেন, কেননা তারা কোরানে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কিছু সত্যকে দেখতে পেয়েছেন। তিনি নিজের অ্যাকাডেমিক কোয়ালিফিকেশনকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন:
I myself wrote journal papers during my academic years; and I know that acceptance of a paper in reputed biomedical science journals takes at least three/four months. Why the International Journal of Cardiology was so eager to accept for final publication such useless paper within five days? Is huge flow of petrodollar involved by any chance? Recent news shows that The global B2B giant Reed Elsevier’s CEO Ian Smith is leaving after just eight months in the position, and will be replaced by Erik Engstrom (pictured), currently CEO of Elsevier. No specific reason was given for Smith’s departure, though the company itself has been reeling from the global recession. So, Elsevier group is not doing great. They need money, they need huge amount. This is where probably ‘The heart and cardiovascular system in the Qur’an and Hadeeth’ type paper plays a vital role.
চরম বাস্তবতা হচ্ছে গ্লোবাল মন্দার কারণে অনেক নামী-দামী পাবলিশিং মিডিয়া (যেমন The New York Times, সুত্র) বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। Elsevier পাবলিশিং গ্রুপের অবস্থাও বেশ খারাপ হয়েছিল। এ-বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন।
ডঃ অভিজিৎ রায়ের ‘গুরুতর’ অভিযোগ হচ্ছে – যেখানে কোন জার্নালে একটি পেপার অ্যাকসেপ্ট হতে ৩-৪ মাস সময় লাগে সেখানে এই ‘useless paper’-কে মাত্র ৫ দিনে অ্যাকসেপ্ট করা হয় কীভাবে! অতএব এখানে ঘুষ (পেট্রো-ডলার) জড়িত। এজন্য তারা জার্নালের এডিটর, ইসলাম, মুসলিম, ও মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে অপপ্রচারণা করছে। ডঃ রায় দাবী করেন এভাবে:
Why the International Journal of Cardiology was so eager to accept for final publication such useless paper within five days? Is huge flow of petrodollar involved by any chance?
আশ্চার্যজনক হলেও সত্য যে তিনি এত গুরুতর অভিযোগ করেছেন সম্পূর্ণ অজ্ঞতার ভিত্তিতে! ডঃ অভিজিৎ রায় সম্ভবত বৈজ্ঞানিক জার্নালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তেমন জানেন না। এটাও হতে পারে যে তিনি জেনে-বুঝে সাধারণ মানুষের বৈজ্ঞানিক জার্নাল সম্পর্কে অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তার অভ্যাসগত মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার মতে কোনভাবেই ৫ দিনে কোন পেপার পাবলিকেশনের জন্য বিবেচিত হতে পারে না। বাস্তবতা হচ্ছে তার চেয়েও কম সময়ে পেপার অ্যাকসেপ্ট হতে পারে! এর উদাহরণ হিসেবে Elsevier প্রকাশনা সংস্থা থেকে বহুল প্রচারিত Biophysical Biochemical Research Communication (BBRC) নামে জার্নাল উল্লেখ করতে চাই। প্রথম স্ক্রীনশটে দেখুন উল্লেখিত পেপারটি সাবমিট করার আট দিনের মধ্যেই অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে! দ্বিতীয় স্ক্রীনশটের পেপারটি পাঁচ দিনের মধ্যেই অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। এদুটো আর্টিকলই হচ্ছে রিসার্চ আর্টিকল (Original research article)। অন্যদিকে “The heart and cardiovascular system in the Qur’an and Hadeeth” নামক রিভিউ পেপারটি সাবমিট করা হয়েছে মে মাসের (২০০৯) ৭ তারিখে। তা প্রকাশের জন্য বিবেচিত হয়েছে মে মাসের ১২ তারিখে। এজন্য সময় লেগেছে ছয় দিন। কিন্তু অনলাইনে এসেছে আগষ্টের ২৬ তারিখে, অর্থাৎ অনলাইনে আসতে তিন মাসের বেশী সময় লেগেছে! তারপরে এটি কোন রিসার্চ আর্টিকল নয়। অথচ উপরে উল্লেখিত রিসার্চ পেপারগুলো অনলাইনে আসতে যথাক্রমে আট দিন ও পাঁচ দিন লেগেছে! এখন আপনারাই বিবেচনা করুন এই অপ-প্রচারের কারণ। খুব মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারী অনেকেই নিজেদেরকে পিএইচডি ডিগ্রীধারী ঘোষণা দিয়ে মুক্তমনার ধর্মগুরুর অজ্ঞতার মিছিলে শরীক হয়েছেন!!
Elsevier প্রকাশনা সংস্থা ১২৫ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান। এটি স্থাপিত হয় ১৮৮০ সালে। এর হেডকোয়ার্টার নেদারল্যান্ডে অবস্থিত। এখান থেকে ২০০০ জার্নাল প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠান অনলাইন সার্ভিস থেকে প্রায় ৪.২ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ অর্জন করে। তাদের প্রকাশিত বিখ্যাত জার্নালগুলোর মধ্যে কিছু অন্যতম জার্নাল হচ্ছে- The Lancet, Cell, Current Opinion series, Trends series ইত্যাদি। এখানে থেকে প্রায় ২০,০০০ বই প্রকাশিত হয়। বিখ্যাত বইগুলোর মধ্যে Gray’s Anatomy অন্যতম। তাদের প্রকাশনাকে সাফল্যমন্ডিত করতে ৭০,০০০ এডিটরিয়াল বোর্ড মেম্বাব, তিন লক্ষ রিভিউয়ার নিয়োজিত আছেন। এক নজরে-
- Publish around 2,000 journals and close to 20,000 books and major reference works.
- 7,000 journal editors, 70,000 editorial board members, 300,000 reviewers and 600,000 authors.
- 250,000 articles a year.
- Employs more than 7,000 people in over 70 offices across 24 countries.
এখন আপনারাই বলুন এই প্রকাশনা সংস্থার শত বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা অর্জিত সন্মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বাংলা ভাষা-ভাষী বিজ্ঞানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মুক্তমনা’। তারা দাবী করছে যে প্রতিষ্ঠানটি নাকি টাকার অভাবে পেট্রো-ডলারে ঘুষ খেয়ে “The heart and cardiovascular system in the Qur’an and Hadeeth” নামক রিভিউ আর্টিকলটি প্রকাশ করে! তার জন্য নাকি এই প্রতিষ্ঠানের CEO পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে! প্রত্যেক বছরে প্রকাশিত আড়াই লক্ষ আর্টিকলের মধ্যে একটি আর্টকলের জন্য CEO-এর আজ কী করুণ পরিণতি!!
আন্তর্জাতিকভাবে তারা এই আর্টিকলের নামে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী ক্যাম্পেইন করছে! তাদের এই ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ কতই না গভীরে যা কিনা আবার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের নামে!
নোটঃ লেখাটি সদালাপে প্রথম প্রকাশিত হয়। সেখানে এ বিষয়ে অনেক তথ্যপুর্ন আলোচনা হয়েছে।
“The heart and cardiovascular system in the Qur’an and Hadeeth.” International Journal of Cardiology (2010 Apr 1;140(1):19-23. Epub 2009 Aug 25.
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য, অবশ্যই মুল্যবান।
আর এরো সাথে আমরা জার্নালটির অরিজিনাল লেখা দেখতেও আগ্রহী , অনুবাদ করে দেয়া যায় কিনা ?
@হাফিজ,
মূল পেপারটি পড়তে পারেন এখানে:
http://www.alhasso.com/The%20Heart%20and%20cardiovascular%20system%20in%20the%20Quran%20and%20Hadeeth.pdf
Thank you. Nice information.
উল্লেখযোগ্য কিছু পয়েন্ট:
- পিয়ার রিভিউড বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত কোন পেপারের বিরুদ্ধে এভাবে ‘মুক্ত ক্যাম্পেইন’ সম্ভবত মানব জাতির ইতিহাসে এই প্রথম – যেটি পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক পন্থা এবং অসভ্যতার মধ্যে পড়ে। তাও আবার চিহ্নিত ইসলাম- ও মুসলিম-বিদ্বেষীদের দ্বারা ইসলাম- ও মুসলিম-বিদ্বেষী সাইটগুলোতে এই ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে।
- কোন প্রমাণ ছাড়াই জার্নালের এডিটরকে পেট্রোডলারে ঘুষ খাওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে – যেটি পুরোপুরি অনৈতিক।
- পেপারের কনটেন্টস ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক ও আবোল-তাবোল অনেক কিছু নিয়ে এসে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা হয়েছে – যেটি পুরোপুরি অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক।
- পেপারের অথারদেরকে ‘ইসলামিস্ট’ বলে গালিগালাজ করা হয়েছে – যেটি অ্যাডহোমিনেম অ্যাটাকের মধ্যে পড়ে।
- ক্যাম্পেইনের সাথে জড়িত কারোরই সেই এড়িয়াতে উল্লেখ করার মতো এক্সপার্টিজ নেই।
পাঠকদের অবগতির জন্য:
- বৈজ্ঞানিক জার্নালে একটি পেপার সাবমিট করা মানে এই নয় যে, সেই পেপার প্রকাশ হতেই হবে।
- বৈজ্ঞানিক জার্নালে একটি পেপার প্রকাশ হওয়া মানে এই নয় যে, সেই পেপার পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক এবং ভবিষ্যতে কোন ভুল-ভ্রান্তি বা অবৈজ্ঞানিক তথ্য বের হতে পারে না।
- কোন বৈজ্ঞানিক জার্নালের রিভিউয়ার কর্তৃক একটি পেপার প্রত্যাখ্যাত হওয়া মানে এই নয় যে, সেই পেপার পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিক বা আবর্জনা জাতীয় কিছু। না, তা মোটেও নয়। প্রকৃতপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক জার্নালে একটি পেপার প্রকাশ হবে কি-না – তা নির্ভর করে মাত্র ৩-৫ জন রিভিউয়ারের উপর। এমন অনেক কেস আছে যেখানে দেখা যায় কোন একটি জার্নালের রিভিউয়ার কর্তৃক একটি পেপার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর একই পেপার অন্য কোন জার্নালের রিভিউয়ার কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।
- বৈজ্ঞানিক জার্নালে একটি পেপার প্রকাশ হওয়ার পর কোন মহল থেকে হুমকি-ধামকি বা ঘুষের মাধ্যমে সেই পেপারকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা মানে এই নয় যে, সেই পেপার মূল্যহীন বা অবৈজ্ঞানিক প্রমাণিত হয়েছে। যেমন আলোচ্য পেপারের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না – যেখানে কিছু অসভ্য মৌলবাদীদের পক্ষ থেকে জার্নালের এডিটরকে ইসলাম, মুসলিম, ও মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আজেবাজে ধারণা সহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকিও দেয়া হচ্ছে।
যারা চার্লস ডারউইনের “প্রজাতির উৎপত্তি” নামক বইটি পড়েছেন তারা হয়তো জানেন যে এটি কোন বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ নয়। বইটিতে ডারউইনের নিজস্ব মতবাদ বা তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে – যেগুলোকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে প্রমাণ করা হয়নি। ডারউইনবাদীরা বিগত দেড়শ বছর ধরে ডারউইনের সেই তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন – এবং সেটি করতে যেয়ে এ পর্যন্ত অনেক বড় বড় প্রতারণার আশ্রয় পর্যন্ত নেয়া হয়েছে।
একইভাবে কোরানও একটি তাত্ত্বিক গ্রন্থ। তো ডারউইনবাদীরা যেভাবে ডারউইনের তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন – ইসলামে বিশ্বাসীরাও তেমনি কোরানের তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। ডারউইনবাদীদের অ্যাপ্রোচ যদি ‘বৈজ্ঞানিক’ হয় তাহলে ইসলামে বিশ্বাসীদের অ্যাপ্রোচ ‘অবৈজ্ঞানিক’ বা ‘ছদ্ম-বৈজ্ঞানিক’ হবে কেন? প্রথম ক্ষেত্রে যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সমস্যা থাকবে কেন? বরঞ্চ ডারউইনের “প্রজাতির উৎপত্তি” নামক বইটিতে এমন কিছু বক্তব্য আছে যেগুলো ইতোমধ্যে অবৈজ্ঞানিক, অমানবিক, ও হাস্যকর প্রমাণিত হয়েছে। ডারউইনবাদীরা নিজেরাই এই বইটির নাম সহজে আর মুখে নেয় না। ডারউইনের সেকেলে ও হাস্যকর তত্ত্বকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে নিও-ডারউইনিজম প্রস্তাব করা হয়েছে।
যাহোক, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। প্রত্যেকেই চায় ভাল কিছু অন্যের সাথে শেয়ার করতে। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়ম হচ্ছে, আপনি যদি মনে করেন যে আপনার কাছে তথ্যপূর্ণ কিছু আছে তাহলে সেটিকে বৈজ্ঞানিক মহলে উপস্থাপন করুন। বৈজ্ঞানিক মহলে উপস্থাপন করলেই যে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে বা বৈজ্ঞানিক হয়ে যাবে – তা কিন্তু নয়। তবে শর্ত হচ্ছে আপনাকে উপস্থাপন করতেই হবে। বৈজ্ঞানিক মহলে লিখিতভাবে উপস্থাপন না করে এমনি এমনি কিছু দাবি করে বেড়ালে সেটিকে বৈজ্ঞানিক মহল থেকে মোটেও পাত্তা দেয়া হবে না।
মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী কোরান-হাদিসে শেয়ার করার মতো কিছু তথ্য আছে। ফলে তারা সেগুলোকে লিখিতভাবে বৈজ্ঞানিক মহলে উপস্থাপন করেছেন। বাকিটুকু বৈজ্ঞানিক মহলের ব্যাপার। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও চাইলে তাদের ধর্মগ্রন্থের উপর পেপার লিখে বৈজ্ঞানিক মহলে উপস্থাপন করতে পারেন। তারা সেটা করছেন না কেন। ধর্মগ্রন্থকে গডের বাণী হিসেবে বিশ্বাস করে সেটিকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে লজ্জা কীসের! নাকি বৈজ্ঞানিক মহলে জার্নাল পেপার আকারে উপস্থাপন করার মতো তাদের ধর্মগ্রন্থে কিছু নাই।
দু-জন আন্তর্জাতিক মানের অ্যাকাডেমিক স্কলার সহ চার জন স্কলার মিলে লিখিত একটি পেপারকে যারা ‘useless paper’ বলে উড়িয়ে দেয় তাদের উদ্দেশ্য আর অ্যাকাডেমিক লাইনে অভিজ্ঞতা নিয়ে যে কেউ হাসাহাসি করবেন। তিন-চার জন স্কলার মিলে তৈরী করা একটি পেপার বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ না হলেও সেটি যে আবর্জনা জাতীয় কিছু হতে পারে না – তা অ্যাকাডেমিক লাইনের যে কারো বুঝার কথা। যেভাবে দাবি করা হয়েছে – পেপারটি যদি সত্যি সত্যি সেরকম বা তার কাছাকাছি কিছু হতো তাহলে তারা এই পেপারকে বৈজ্ঞানিক মহলে উপস্থাপনই করতেন না। কারণ এখানে ব্যক্তিগত রেপিউটেশনের ব্যাপার-স্যাপার জড়িত। বৈজ্ঞানিক জার্নাল তো আর বাংলা ব্লগ নয় যে – সেখানে নিজের নাম-পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন ছদ্মনামে যাচ্ছেতাই লিখেও অন্ধ মুরিদদের কাছে সাধু-সন্ন্যাসী সেজে থাকা যাবে।
পাঠক! আদা বনে শিয়াল রাজা সেজে নাস্তিকতার আড়ালে বিজ্ঞানের ইজারা নিয়ে (অপ)বিজ্ঞান আর (কু)যুক্তিবাদের নামে যাচ্ছেতাই গেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এগুলোকে যেহেতু ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করা হয় সেহেতু কিছু ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী মুরিদ বুঝে বা না বুঝে পেছন থেকে হেঁয় হেঁয় করে যাচ্ছে। অথচ বাস্তবতা কিন্তু অনেক আলাদা। পাঠকদের অবগতির জন্য আরো কিছু পয়েন্ট তুলে ধরা হলো:
- বৈজ্ঞানিক জার্নালের বিরুদ্ধে যেভাবে ক্যাম্পেইন করা হয়েছে তা মোটেও কোন বৈজ্ঞানিক পন্থা নয়। তালেবান বা শিবসেনা উগ্রপন্থীরাও এমন নিকৃষ্ট পন্থার আশ্রয় নিতে হয়তো দু-বার করে ভেবে দেখবে।
- বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত বা উপস্থাপিত কোন পেপারের বিরুদ্ধে কারো যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে জার্নালের নিয়ম-কানুন মেনে সেভাবেই অভিযোগকে উপস্থাপন করতে হবে।
- আলোচ্য পেপারে কোরানকে গডের বাণী প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়নি। ফলে সেই পেপারের বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ থাকলে শুধুমাত্র পেপারে উপস্থাপিত কনটেন্টস নিয়েই আলোচনা করতে হবে। কারণ কোরান-হাদিসের অন্য কোথাও ভুল বা অবৈজ্ঞানিক কিছু থাকা মানে তো আর পেপারে উপস্থাপিত কনটেন্টস ভুল বা অবৈজ্ঞানিক প্রমাণিত হচ্ছে না। অথচ পেপারের কনটেন্টস ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক ও আবোল-তাবোল অনেক কিছু টেনে নিয়ে এসে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে পর্যন্ত আক্রমণ করা হয়েছে। এমনও বলা হয়েছে যে, এই পেপার প্রকাশ করা হলে ধর্মীয় গোঁড়ামী আর ইসলামিক সন্ত্রাসকে উস্কে দেয়া হবে। এদের বিদ্বেষ কতটা গভীরে ভেবে দেখুন।
- অনেকেই হয়তো জানেন যে, কোরান-হাদিসের উপর ভিত্তি করে ১৯৮৫ সালে কায়রোতে ইতোমধ্যে একটি মেডিক্যাল কনফারেন্স এর আয়োজন করা হয়েছে – যেখানে কয়েকজন বিজ্ঞানী লেকচার দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই যে কোন যুক্তিবাদীর মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, “কোরান-হাদিসে যদি কিছুই না থাকে – যেভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে – তাহলে তার উপর ভিত্তি করে এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে একটি কনফারেন্স এর আয়োজন করা যায় কীভাবে? কেউ কি তৌরাত বা গসপেল বা ঋগ্বেদ বা গীতা বা ত্রিপিটক বা গীতাঞ্জলী বা হ্যামলেট এর উপর ভিত্তি করে একটি বৈজ্ঞানিক কনফারেন্স এর আয়োজন করে দেখিয়ে দিতে পারবেন?” প্রায় ডজন খানেক অমুসলিম বিজ্ঞানী কোরান-হাদিসের অনেক বক্তব্যকে সত্য বা বৈজ্ঞানিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। পাশাপাশি কিছু বিজ্ঞানী ইসলাম গ্রহণ করেও একই বিষয়গুলোকে সমর্থন করেছেন। যদিও ভেরিফাই করা হয়নি তথাপি শোনা যায় মেডিক্যাল সায়েন্সের উপর লিখা প্রফেসর কীথ এল মূরের একটি বইয়ে নাকি কোরানের আয়াতের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। তো এই যখন বাস্তবতা তখন একই বিষয়ে বৈজ্ঞানিক জার্নালে একটি পেপার প্রকাশের জন্য কত টাকা ঘুষ দেয়া হতে পারে বলে আপনাদের ধারণা? সেই টাকা দিয়ে বৈজ্ঞানিক জার্নাল কী করবে? এতবড় একটি ব্যাপার ফাঁস হয়ে গেলে সেই সুখ্যাতিসম্পন্ন বৈজ্ঞানিক জার্নালের অবস্থাটা কী দাঁড়াতে পারে? প্রমাণ ছাড়া একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালের বিরুদ্ধে এভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হলো কেন? এরা কারা? এদের উদ্দেশ্যটা কী?