কুরআন সুন্নাহর প্রতি ধৃষ্টতা পোষণকারী দেব নারায়ন
লিখেছেন: ' সাপোর্ট টিম [ পিস ইন ইসলাম ]' @ শুক্রবার, অগাষ্ট ৬, ২০১০ (১২:২৭ অপরাহ্ণ)
[ লেখাটি লেখকের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা এখানে প্রকাশ করলাম ]
আধুনা বিশ্বে বিরাজমান সব অশান্তি অরাজকতা সৃষ্টি এবং ইসলাম ও মুসলমানদেরকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে বিলীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ইয়াহুদী খৃষ্টান ও তাদের দোসররা [ এখানে সবাইকে বুঝানো হয়নি, যারা এসবে জড়িত তাদেরকে বুঝানো হয়েছে ] । তাদেরই দুরভিসন্ধি ও অশুভ চক্রান্তের অংশ বিশেষ হিসেবে পবিত্র কুরআনের প্রতি দেব নারায়নের এই চরম ধৃষ্টতা। খোদার শ্বাশ্বত চিরন্তনবাণী, চিরবিশুদ্ধ বর্ণনার চ্যালেঞ্জ করে রিট করার অধিকার সে কোথায় পেয়েছে? তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ
ধৃষ্টতা ইয়াহুদী চক্রান্ত বাস্তবায়ন ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণারই নামান্তর। জাহেলি যুগে আরব বিশ্বে নাস্তিক কবি সাহিত্যিকরাও স্বতঃসিদ্ধ বিশুদ্ধ এই কুরআনের চ্যালেঞ্জের সামনে হার মেনেছে। ইসমাইল (আঃ) এর কুরবানী সর্ম্পকীয় বিষয়ে পবিত্র কুরআনের বর্ণিত ঘটনার বিরুদ্ধে রিট করে দেব নারায়ন সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে, প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ করেছে ইসলাম ও কুরআনের বিরুদ্ধে। হাইকোর্ট তার রিট শুনানির জন্য গ্রহণ করে আমাদের হৃদয়ে আরো কষ্ট বৃদ্ধি করেছে। অবিলম্বে এই রিট খারিজ করে দেব নারায়নকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আল্লাহ্ পাক হযরত ইব্যাহীম (আঃ) কে যে পুত্র কুরবানী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি ইসমাইল (আঃ) নাকি ইসহাক (আঃ) এর ব্যাখ্যায় দেব নারায়ন ইয়াহুদী খৃষ্টানদের স্বার্থান্বেষী মতামত পেশ করার হীন প্রচেষ্টা করেছে। আল কুরআনে এর লেশ মাত্র নেই। মুসলিম মিল্লাতের দেড় হাজার বছরের ইতিহাস, কুরআন সুন্নাহর স্বতঃসিদ্ধ বাণী হযরত হাজেরা (আঃ) পবিত্র মক্কা শরীফে শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) কে নিয়ে পরম করুনাময়ের নির্দেশে নির্জন ভূমিতে বসবাস করেন। পানিশূণ্য উপত্যকায় ইসমাইল (আঃ) এর পদাঘাতে সৃষ্টি হয় জমজম কূপ। কিশোর ইসমাইল (আঃ) কে নিয়ে ইব্রাহীম (আঃ) পবিত্র মক্কা ঘরের পূর্ণ নির্মাণ করেন। এরই মধ্যেই আল্লাহ্ পাক ইব্রাহীম (আঃ) প্রতি ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানী করার নির্দেশ দেন। তিনি ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানী করার উদ্দেশ্যে মক্কা শরীফের অদূরে মিনায় নিয়ে যান। পথিমধ্যে শয়তান তাকে তিন বার ধোঁকা দেয়ার হীন প্রচেষ্টা চালায়। এসবই ঘটেছে পবিত্র মক্কা শরীফে। এর কোন ঘটনায় ইসহাক (আঃ) এর সংশ্লিষ্টতা নেই, নেই সেখানে তার অস্তিত্ব মাত্র। বরং সেকালে তো ইসহাক (আঃ) এর জন্মও হয় নি। তাই দেব নারায়নের ব্যাখ্যার সূত্র কোথায়? সূত্রের কোন লেশ নেই, প্রমান নেই। আছে শুধু ইয়াহুদী খৃষ্টানদের স্বার্থ বাস্তবায়ন আর তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করার চক্রান্ত মাত্র।
পবিত্র কোরআনের দলীল ১ :
পবিত্র কুরআনে এ ঘটনা আলোচনার প্রথমেই উল্লেখ করেছে যে, ইব্রাহীম (আঃ) একটি পুত্র সন্তানের জন্য আল্লাহর নিকট আবেদন করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ্ পাক তাকে একটি সহনশীল পুত্র সন্তান প্রদান করেন। ঐ সন্তান যখন পিতার সঙ্গে কাজ কর্মে সহযোগিতার বয়সে উপনীত হয় তখন তাকেই কুরবানী করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।
[সূরা সাফফাতঃ ১০০, ১০১, ১০২] ।
এখানে দুটি বিষয় উপলব্ধি করা যায় -
(এক) ইব্রাহীম (আঃ) যে পুত্রকে কুরবানী করে ছিলেন ঐ পুত্র তিনি আল্লাহ্র কাছে দু’আ করে চেয়ে নিয়েছিলেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় যে, ইব্রাহীম (আঃ) এর তখন কোন পুত্র সন্তান ছিল না, তাই তিনি পুত্র সন্তানের জন্য দুআ করে ছিলেন। ঐ দুআর মাধ্যমে তিনি যে সন্তান লাভ করেন তিনিই হলো তার প্রথম সন্তান। যাকে তিনি কুরবানী করতে আদিষ্ট হয়েছিলেন। আর সব মুফাসসির ও ঐতিহাসিকদের ঐক্য মতে ইসমাইল (আঃ) হলেন ইব্রাহীম (আঃ) এর বড় পুত্র। যার জন্ম ইব্রাহীম (আঃ) এর ৮৬ বছর বয়সে আর ইসহাক (আঃ) এর জন্ম হলো ইব্রাহীম (আঃ) এর ৯৯ বছর বয়সে। তাই তাওরাত কিতাবের বর্ণনায় ইব্রাহীম (আঃ) তার প্রথম পুত্র বা একমাত্র পুত্রকে কুরবানী করতে আদিষ্ট হয়েছিলেন বলে উল্লেখ্য আছে। তিনি হলেন ইসমাইল (আঃ)। [তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩-১৬, কাবীব ২৫-১৫৫]
পবিত্র কোরআনের দলীল ২ :
(দুই) ইব্রাহীম (আঃ) এর দুআর বিনিময়ে তাকে যে পুত্র সন্তান প্রদান করা হয়েছিল, আল্লাহ্ পাক ঐ সন্তানের বিশেষ গুণ হিসাবে উল্লেখ্য করেন
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ
‘আমি তাকে একটি সহনশীল পুত্র সন্তানের সুসংবাদ প্রদান করলাম’। [সূরা সাফফাতঃ ১০১]
অর্থ্যাৎ ঐ পুত্র সন্তানের বিশেষ গুণ হবে সহনশীলতা । তাকেই পরের আয়াতে কুরবানী করার নির্দেশ প্রদান করা হয় এবং পরবর্তী আয়াতে উল্লেখ্য আছে যাকে কুরবানী করার নির্দেশ শুনানো হয়েছিল তিনি বলে ছিলেন ‘আমাকে অবশ্যই সহনশীল পাবেন ’। [সূরা সাফফাতঃ ১০২] কুরআন হাদীসের ঐক্যমতে প্রমাণিত হয় যে, ইব্রাহীম (আঃ) এর সহনশীল পুত্র হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেন ইসমাইল (আঃ)। যা কুরআনে করীমের অপর আয়াতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ্য আছে
وَإِسْمَاعِيلَ وَإِدْرِيسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِينَ
‘ইসমাইল ও ইদ্রীস ও যালকিফল সবাই সহনশীল ছিলেন’। [সূরা আম্বিয়াঃ ৮৫]
পবিত্র কোরআনের দলীল ৩ :
আল্লাহ্ পাক সূরায়ে সাফফাতের ১০০ নাম্বার আয়াত থেকে ১১১ নাম্বার আয়াত পর্যন্ত ইব্রাহীম (আঃ) কে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ প্রদান ও তার কুরবানী সম্পর্কীয় বিষয় আলোচনা করেন। অতঃপর ১১২ নাম্বার আয়াতে অপর একটি সুসংবাদ বা ইসহাক (আঃ)) কে প্রদানের সুসংবাদ উল্লেখ্য করেন। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় যে, সুসংবাদ ভিন্ন ভিন্ন্। দ্বিতীয়টি যেহেতু ইসহাক (আঃ) সম্পর্কীয় সুসংবাদ তাই প্রথমটি অনিবার্যই ইসমাইল (আঃ) সম্পর্কীয় সুসংবাদ হবে। আর তাকেই কুরবানীর আদেশ হয়েছিল বলে উক্ত আয়াতে উল্লেখ্য করা হয়েছে। (তাফসীরে আযওয়াউল বয়ান ৬/৪৪৮)
পবিত্র কোরআনের দলীল ৪ :
কুরআনে কারীমের বর্ণনা মতে ইব্রাহীম (আঃ) স্ত্রীর প্রতি যখন ইসহাক (আঃ) কে প্রদানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তাও অভিহিত করা হয় যে, ইসহাক (আঃ) থেকে এক পুত্র সন্তান জন্ম নিবে যার নাম হবে ইয়াকুব। কুরআনের এই বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, ইসহাক (আঃ) বড় হবেন, নবুওয়াতের পবিত্র আসনে সমাসীন হবেন, তার সন্তান হবে এসব খবর পূর্ব থেকেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই ছোট বেলায়ই আবার তাকে কুরবানী করার নির্দেশ আসবে তা হতে পারে না। (তাফসীরে ইবনে কাছীর ৩/১৬)
হাদিস শরীফের দলীল ১ :
ইমাম হাকেম তার মুস্তাদরাক কিতাবে বিশুদ্ধ বর্ণনায় ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে উল্লেখ্য করেন, আল্লাহ্ পাক যাকে কুরবানী করার বিনিময়ে বেহেশতী জীব গ্রহণ করেছিলেন তিনি হলেন ইসমাইল (আঃ)। [মুস্তাদরাক ২/৫৫৪]
হাদিস শরীফের দলীল ২ :
অপর বর্ণনায় হযরত মাআবিয়া (রাঃ) এর মজলিসে একদা আলোচনা চলছিল, ইব্রাহীম (আঃ) কাকে কুরবানী করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, এ প্রেক্ষাপটে তিনি রাসূল (সাঃ) এর উপস্থিতিতে শুনা একটি ঘটনা উপস্থাপন করেন- একদিন আমরা রাসূল (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। জনৈক গ্রাম্য লোক এসে রাসূল (সাঃ) কে ‘হে দুই জবেহকৃত মানবের সন্তান’ বলে সম্বোধন করলে রাসূল (সাঃ) মৃদু হাসেন এবং এতে তিনি কোন আপত্তি করেন নি। (মুস্থাদরাক ২/৫৫৫)
দুই জবেহকৃত মানব বলতে একজন তার পিতা আব্দুল্লাহ্ এবং অপর জন তার বংশীয় পিতা ইসমাইল (আঃ)। কেননা রাসূল (সাঃ) তো ইসমাইল (আঃ) এর বংশ ধারায় জন্ম নিয়েছেন। ইসহাক (আঃ) এর বংশধারায় নয়। এতেও সুস্পষ্ট বুঝা যায়, কুরআনে করীমে যাকে কুরবানী করার নির্দেশ করা হয়েছে তিনি হলেন ইসমাইল (আঃ)।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য থাকা সত্ত্বেও যারা এই ইতিহাসকে বিকৃত এবং মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত ও দ্বিধাবিভক্ত করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও এই ন্যক্কার জনক রিট আবেদন খারিজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক:
মুফতী রফীকুল ইসলাম
হাদিস এবং তফসীর বিভাগের প্রধান
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
বসুন্ধরা , ঢাকা – ১২১২
বাংলাদেশ ।
বিশ্ব অশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্ট দেব নারায়নের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
@সালাহউদ্দীন, সহমত । এমন শাস্তি দেয়া হোক যাতে অন্যরা ভবিষ্যৎ-এ সাহস না পায় ।
লেখাটি যুক্তিপূর্ন, কোরআনের আয়াত দিয়ে অতি সুন্দরভাবে প্রমান করা হয়েছে যে “ইসমাইল (আ:)” কে কোরবানী দেয়া হয়েছিল।
আমি দেব নারায়নকে তেমন ধিক্কার দিব না, বরং আমার দেশের মহামান্য! আদালতের ছেলেখেলাকেই এ বিষয়টিতে দায়ী করবো। দেব নারয়নরা রমায়ন নিয়ে রীট করার অধিকার পাবে, করতেই পারে, কিন্তু কোন অধিকার বলে অপর ধর্মের বিষয় নিয়ে সে আদালতে আসে?!!! আর আদালত ?! কেনই বা এটা নিয়ে তার বিচার -শুনানি জুডিস করতে বসবে। প্রথমেই তো তাকে বেসিক থেকেই অপরধর্ম নিয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারনে মানহানিকর মামলায় গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। ধিক আদালত! ধিক!
সুন্দর হয়েছে