প্রশ্ন: নং (১) মুহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব সম্বন্ধে জানতে চাই
লিখেছেন: ' সাপোর্ট টিম [ পিস ইন ইসলাম ]' @ রবিবার, মার্চ ৬, ২০১১ (১১:৩০ পূর্বাহ্ণ)
প্রশ্নঃ মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব কে ছিলেন? অনেকে ওনাকে মুজাদ্দিদ বলে দাবী করে যাদেরকে ওহাবী বলা হয়। তিনি কি অহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আলেম ছিলেন? তাদের সাথে কি সুন্নি আকীদার কোন পার্থক্য আছে? থাকলে সেই প্রধান পার্থক্য গুলি কি কি
প্রশ্নকারী: হুমাইদ।
উত্তরঃ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব সৌদী আরবের একজন আলীম ছিলেন। তিনি ১১১৫ হিজরী মোতাবেক ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে সৌদী আরবের উয়াইনায় জন্ম গ্রহন করেন। শৈশবে শিক্ষা উয়াইনায় সমাপ্ত করে হিজাজ ও মদীনায় গমন করেন এবং সেখানকার বড় বড় আলেমদের নিকট লেখাপড়া করেন। এছাড়াও তিনি ইরাকের বছরা নগরীতে কিছুকাল অবস্থান করেন এবং ইলম অর্জন করেন।
তার পিতা আব্দুল ওহাব ইবনে সুলাইমান ইবনে আলী আততামীমী হাম্বলী মাযহাবের একজন আলেম ছিলেন এবং সেই মাযহাব অনুসারে ফতওয়া দিতেন।
সেই সূত্রে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব হাম্বলী মাযহাবের অনুসরণ করতেন। বিশেষ করে তিনি হাম্বলী ফিকহের ইমাম ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী ছিলেন। কঠোর ভাবে তার তাক্বলীদ করতেন। তার যামানায় আরবের অধিবাসীরা গাছ পুজা, পাথর পুজা, গম্বুজ পুজা ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন শিরিকি ও বিদাতী কর্মকান্ডে আরবরা অভ্যস্থ হয়ে পড়েছিল। তিনি এসব শিরকী ও বিদাতী কর্মকান্ডের বিরূদ্ধে সোচ্চার হন এবং এ ব্যাপারে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার এ ভূমিকা সবার নিকট গ্রহনযোগ্যতা লাভ করেছিল।
কিন্তু এক পর্যায়ে তিনি কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করেন যা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। তিনি এমন বাড়াবাড়ি করেন যা ইবনে তাইমিয়া ও করেননি।
যথা যে স মস্ত জিনিষ মানুষের অভ্যাসের সাথে সম্পৃক্ত, যে গুলির সাথে শরিয়তের সম্পৃক্ততা নেই। এগুলিকেও তিনি বিদাআত ও হারাম বলতেন।
তিনি লেখা পড়া শেষ করার পর যখনে আরবে শিরিকের বিরূদ্ধে আন্দোলন শুরূ করেন, তখন এর পূর্বে তিনি সমাজে বিভিন্ন মানুসের সাথে মতবিনিময় করেন। এতে অনেক মানুষ তার ভক্ত হয়। এবং তার হাতে বাইয়াত হয়, এরাই ওয়াহাবী নামে পরিচিত। তাদের দাবী অনুসারে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব মুজাদ্দিদ হতে পারেন। কিন্তু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতে তিনি মুজাদ্দিদ নন। একজন মুজাদ্দিদের জন্য যে সকল শর্তাবলী দরকার তা তার মধ্যে ছিলনা। তাই তাকে কখনো মুজাদ্দিদ বলা যায়না।
ওয়াহাবীদের সাথে সুন্নি আক্বীদার মিল নেই। এর মাঝে অনেক পার্থক্য। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল।
*যে সব বিষয় মানুষের অভ্যাসের সাথে সম্পৃক্ত, অর্থাৎ যা মানুষ অভ্যাস বশত করে থাকে যে গুলির সাথে শরিয়তের হুকুম তথা জায়েয-নাজায়েয, হালাল হারামের কোন সম্পর্ক নেই এ গুলিকেও ওয়হাবিরা বিদাত মনে করে ।
*শরিয়তের অনেক হুকুমের ব্যাপারে ওহাবীরা বাড়াবাড়ি করে থাকে। যেমন আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে মাকরূহ অথবা মুবাহ এরকম ব্যাপারকেও ওয়াহাবিরা হারাম এমনকি যারা এগুলি করে তাদেরকে মুশরিক বলে সাব্যস্ত করে। এর উদহারণ হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা মতে ধুমপান করা মাকরূহে তাহরিমী। কিন্তু ওয়াহাবিরা ধুমপান করাকে হারাম বলে। এমন কি তাদের কেউ কেউ ধুমপান কারীকে মুশরিক বলেছেন।
*আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা হল কবীরা গুনাহ যে করে সে ফাসেক কিন্তু তাকে কাফের বলা যাবেনা। পক্ষান্তরে ওয়াহাবীরা তাদের কে কাফের ঈমান হারা বলে।
*রওযা যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা শরীফ যাওয়া আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে পূণ্যের কাজ। কিন্তু ওয়াহাবিরা বলে বিদাত।
সূত্রঃ বাদশাহ আঃ আযীয জীবন ও কর্ম পৃষ্টা:৪৮-৫২
আনওয়ারূল বারী শরহে বুখারী খন্ড:১৯, পৃষ্টা:৫৭২
উত্তরদাতা।
মোঃ মিজানুর রহমান।
হাদিস গবেষণা কেন্দ্র, বসুন্ধরা, ঢাকা।