প্রশ্ন: পূরুষ ও মহিলাদের পর্দা সম্পর্কে (৪)
লিখেছেন: ' সাপোর্ট টিম [ পিস ইন ইসলাম ]' @ মঙ্গলবার, মার্চ ২৯, ২০১১ (১২:৩৪ অপরাহ্ণ)
প্রশ্ন: মেয়েরা হিজাব নিকাব ব্যবহার করে পর্দা করার কথা বলা হয় আর ছেলেদের ক্ষেত্রে চোখের পর্দার কথা বলা হয়, এ ক্ষেত্রে মেয়েদের ও একই কথা বলা হয়, তাহলে মেয়েদের ক্ষেত্রে কেন একধাপ বেশী মানতে হয়? উত্তর পেলে খুশি হব। আর পর্দা করা মেয়েদের সাথে কথা বলতে অনেকেই বিব্রত হন, কোরআনে আছে পর্দা করতে হবে এমন ভাবে যেন চেনা যায় কিন্তু বোরখা, নেকাব ব্যবহারে কোন মেয়েকেই চেনা সম্ভম নয়। কিভাবে পর্দা করলে মেয়েদের চেনা যাবে জানাবেন কি?
প্রশ্নকারী: আয়েশা সিদ্দিকা।
উত্তর: ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য চোখের পর্দা।
ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য দৃষ্টি নত রাখা জরুরী। অর্থাৎ বেগানা মেয়ের প্রতি ইচ্ছাকৃত ভাবে দৃষ্টিপাত করা ছেলেদের জন্য হারাম (আহসানুল ফতোয়া খ: ৫ পৃ: ১৯৯, এআলাউস সুনান খ:১৭ পৃ: ৮২১)। তদ্রুপ মাহরাম ব্যতিত কোন ছেলের প্রতি ইচ্ছাকৃত ভাবে দৃষ্টিপাত করা মেয়েদের জন্য হারাম (আহকামুল কোরআন খ:৩, পৃ: ৪২২)।
দলীলে শরয়ী
১ম দলীল। قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ*
*وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে। (সূরায়ে নূর আয়াত নং ৩০, ৩১)
এই আয়াতদ্বয় দ্বারা প্রমানিত হয় যে, ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য চোখের পর্দা জরুরী। কেননা আল্লাহ তায়ালা উভয়কে দৃষ্টি নত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
২য় দলীল। عن ابي هريرة رضي الله تعالى عن النبي صلى الله عليه وسلم قال ان الله كتب على ابن ادم نصيبه من الزنا مدرك ذلك لأ محالة فالعينان زناهما النظر……………الخ অনুবাদ: বনী আদমের ভাগ্যে ব্যভিচারের একটা অংশ লেখা হয়েছে। তারা তা অবশ্যই পাবে। দু চোখের ব্যভিচার হল কুদৃষ্টিতে দেখা অর্থাৎ পুরুষদের বেগানা নারীদের দেখা আর মহিলাদের মাহরাম ব্যতিত কোন পুরুষকে দেখা। (মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২৬৫৭) উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য চোখের পর্দা করা জরুরী।
উল্লেখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা যুফার আহমদ উসমানী (রহ:) বলেছেন যে কুদৃষ্টিতে দেখা জায়েয নাই। তবে বর্তমান ফেতনা-ফাসাদের যুগে, বেগানা মেয়ের প্রতি ছেলেদের দৃষ্টিপাত করা ও মাহরাম পুরুষ ব্যতিত কোন ছেলেদের প্রতি মেয়েদের দৃষ্টিপাত করা ফিকাহবিদরা হারাম করেছেন (এআলাউস সুনান খ: ১৭/ পৃ: ৪২০,৪২১)
পর্দার ক্ষেত্রে মেয়েদের একধাপ বেশি মানার কারণ:
হিজাব ব্যবহার করে পর্দা করা মেয়েদের জন্য জরুরী। কেননা আল্লাহ তায়ালা কোরআনে মেয়েদেরকে হিজাব ব্যবাহার করে পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন। يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরায়ে আহযাব ৫৯)
جلاب (জিলাব) বলা হয় লম্বা চাদর যা দ্বারা মহিলা মাথার উপর থেকে পা পর্যন্ত আবৃত হতে পারে (মাআরেফুল কোরআন)।
হিজাব নিকাব ব্যবহার করে মহিলাদের পর্দা করা, এটি যুক্তিসঙ্গত স্বাভাবিক ব্যাপার। কেননা যে জিনিসটি বেশি আকর্ষনীয় ও মূল্যবান হয়, তা বেশি ঢেকে যত্নসহকারে রাখা হয়। আর মহিলারা পুরুষের তুলনায় আকর্ষনীয় বিধায় মহিলাদের হিজাব ব্যবহার করা তাদেরই নিরাপত্তার সহায়ক।
পর্দা করা মেয়েদের সাথে কথা বলা:
বিশেষ প্রয়োজনে পর্দার অন্তরাল থেকে পর্দা করা মেয়েদের সাথে কথাবলা যাবে। বিনা প্রয়োজনে পর্দার অন্তরাল থেকেও জায়েয নয় (আহসানুল ফতোয়া ৮/৪০, এমদাদুল ফতোয়া ৪/২০০)
শরয়ী দলীল:
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاء حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ (সূরায়ে আহযাব ৫৩) উল্লেখিত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় বিশেষ প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে মেয়েদের সাথে কথা বলা যাবে।
উল্লেখিত প্রশ্নের শেষাংশের আপত্তিটি কোরআনের সঠিক অর্থ না বুঝার কারণে হয়েছে:-
কুরআনে আছে পর্দা করতে হবে এমনভাবে যেন চেনা যায়। এর অর্থ এই নয় যে পর্দা করা মেয়েদের আকৃতি বা চেহারা চেনা যায়। বরং ছহীহ অর্থ বুঝে আসবে আয়াতের শানে নুযুলের দিকে লক্ষ্য করলে يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا উক্ত আয়াতখানা নাযিল হয়েছে এ পসঙ্গে যে, মুসলমানদের দাসীরা কাজের জন্য বাহিরে গেলে দুষ্ট প্রকৃতির মুনাফেকরা উত্যক্ত করত। আর মাঝে মাঝে দাসী সন্দেহে স্বাধীন মুমীনা মেয়েদের উত্যক্ত করত এতে রাসূল (সা:) কষ্ট পেতেন। তাই এই আয়াতে স্বাধীন মুমীনা মেয়েদের এক বিশেষ ধরনের পর্দার হুকুম দেয়া হয়েছে। যে তাঁরা মাথার উপর দিক থেকে চাদর ঝুলিয়ে মুখ মন্ডল ঢেকে রাখবে যাতে দাসীদের থেকে তাদের স্বাতন্ত্র্য ফুটে উঠে ও দুষ্টদের থেকে নিরাপদ হয়ে যায় (তাফসীরে কুরতবী ১৪/২৪৩, তাফসীরে তবাবী ১০/৩৩২, আহকামুল কোরআন ৩/৪১০)
উপরোক্ত আলোচনায় বুঝে আসে স্বাধীন মুমীনা মেয়েরা হিজাব ব্যবহার করে এমন ভাবে পর্দা করবে, যেন চেনা যায় তাঁরা স্বাধীন মুমীনা মেয়ে দাসী নয়। এর অর্থ এ নয় যে তাদের আকৃতি চেনা যায়। (তাফসীরে কুরতবী ১৪/২৪৪)
উত্তর দাতা:
মাও: আব্দুর রহীম
উচ্চতর হাদীস গবেষনা বিভাগ ২য় বর্ষ
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ।