প্রশ্ন: ঈমান সম্পর্কে?
লিখেছেন: ' সাপোর্ট টিম [ পিস ইন ইসলাম ]' @ মঙ্গলবার, মে ২৪, ২০১১ (১১:১৩ অপরাহ্ণ)
প্রশ্ন: ঈমান কি? উল্লেখ যোগ্য মুতাকাদ্দিমীন, মুতাআখখিরীণদের বক্তব্য জানতে চাই। বক্তব্য ও কিতাবের নাম দিবেন।
প্রশ্নকারী মাসুদ আহমদ।
উত্তর: ঈমানের আলোচনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জঠিল ও কঠিন। তাই উলামায়ে মুতাকাদ্দিমীন ও মুতাআখখিরীনদের মধ্যে এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে।
ঈমানের শাব্দিক অর্থ:
আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার রহ: বলেনঃ ঈমানের শাব্দিক অর্থ হল বিশ্বাস করা।(ফতহুল বারী খ: ১,পৃ:৬০)
ঈমানের পারিভাষিক অর্থ: পূর্ব বর্তী ওলামাগণ যেমন: ইবনে ওয়াইনা, সাওরী, জুরাইজ, মুজাহিদ, মালেক ইবনে আনাস প্রমুখের নিকট ঈমান হলো: অন্তরে এক আল্লাহর বিশ্বাস স্থাপন, মুখে উচ্ছারণ বা স্বীকার এবং তা আমলে পরিণত করার নাম ঈমান। (ফতহুল বারী খ: ১,পৃ:৬১)
মুতাআখ্যিরীণ ওলামাদের উক্তি:
*আশআ’রিয়া ও অধিকাংশ ইমামগণ যেমন কাজী আ: জাব্বার, আবু ইসহাক ইসপাহানী, ও হুসাইন ইবনে ফজল প্রমুখ গণের নিকট ঈমান হলো: শুধু বিশ্বাসের নাম অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনীত অত্যাবশকীয় সমস্ত বিষয়ের উপর যা সবিস্তারে উল্লেখ্য এর উপর সবিস্তারে, আর যা সমষ্টিগত ভাবে উল্লেখ্য এর উপর সমষ্টিগত ভাবে কোন রকম দলীল ব্যতিরেকেই দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা। (ইরশাদুস সারী খ:১, পৃ:১২০ উমদাতুল কারী খ:১,পৃ:১৬৩)
*খাওয়ারেজ সম্প্রদায়ের নিকট ঈমান হল: অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং তা আমলে পরিণত করার নাম। অর্থাৎ তাদের নিকট এ তিনটি অংশের সমষ্টির নাম ঈমান। তাই যে ব্যক্তি আমল ছেড়ে দিবে অথবা কবিরা গুনাহে লিপ্ত হবে, সে কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। (উমদাতুল কারী খ:১,পৃ:১৬৫ আনওয়ারুল বারী খ: ১, পৃ: ৬৯)
*মু’তাযালা সম্প্রদায়ের নিকট ঈমান হল: অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং তা আমলে পরিণত করার নাম। তাদের নিকটেও এ তিনটি কাজ ঈমানের মৌলিক অংশ। তাই যে ব্যক্তি আমল ছেড়ে দিবে অথবা গুনাহে লিপ্ত হবে তাকে ঈমানদার এবং কাফের কোনটাই বলা যাবেনা। বরং সে ফাসেক হয়ে যাবে। তাই সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে। (ফতহুল বারী খ: ১,পৃ:৬১ উমদাতুল কারী খ:১,পৃ:১৬৫ আনওয়ারুল বারী খ: ১, পৃ: ৬৯)
*মুর্জিয়া সম্প্রদায়ের নিকট ঈমান হল: অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার করা উভয়টির নাম। তাদের নিকট আমলের কোন প্রয়োজন নাই। তাই নেক আমল করা আর না করা উভয়টি বরাবর। (ফতহুল বারী খ: ১,পৃ:৬১ উমদাতুল কারী খ:১,পৃ:১৬৪ আনওয়ারুল বারী খ: ১, পৃ: ৬৯)
*জাহমিয়া সম্প্রদায়ের নিকট ঈমান হল: অন্তরে শুধু এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নাম। আর মুখে স্বীকার করা ঈমানের কোন মূল অংশ নয়, এমন কি পূর্বশর্ত ও নয়। তাই যে ব্যক্তি অন্তরে আল্লাহকে বিশ্বাস করার পর মুখে অস্বীকার করবে এবং সে যদি ঐ অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে পরিপূর্ণ ঈমানদ্বার হিসেবে গন্য হবে।(উমদাতুল কারী খ:১,পৃ:১৬৪ আনওয়ারুল বারী খ: ১, পৃ: ৭০)
*কাররামিয়্যা সম্প্রদায়ের নিকট ঈমান হল: শুধু মুখে উচ্চারণ বা স্বীকার করার নাম। তাই অন্তরের বিশ্বাস ও আমল কোনটাই ঈমানের জন্য আবশ্যকীয় নয়। (আল মিনহাজ খ:১,পৃ:১০৪ ফতহুল বারী খ:১, পৃ: ৬১)
*ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ, ইমাম আওযায়ী, ইমাম বুখারী রহ: ও অন্যান্য মুহাদ্দিস গণের নিকট ঈমান হল: অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার, এবং তা আমলে পরিণত করার নাম ঈমান। তবে এ তিনটি অংশের স্থান সমান সমান নয়। বরং অন্তরের বিশ্বাস করার স্থান হলো গাছের শিকরের ন্যায়। যা না থাকলে ঈমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর আমলের স্থান হল নামাযের ওয়াজিবাতের মত (যা ছুটে গেলে ও নামায হয়ে যায়)। ফলে আমল ছেড়ে দিয়ে কবিরা গুনাহে লিপ্ত হলে তাকে মুমীনে ফাসেক বলা হবে। তবে আসল অংশ (অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস) বাকি থাকার কারনে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়া থেকে মুক্তি পাবে। (উমদাতুল কারী খ:১,পৃ:১৬৫ আনওয়ারুল বারী খ: ১, পৃ: ৬৯)
*ইমাম আবু হানিফা রহ:, ফুকাহাগণ, ও অধিকাংশ মুতাকাল্লিমীনগণের নিকট ঈমান হল: অন্তরে আল্লাহর বিশ্বাস, এবং মুখে স্বীকার উভয়ের নাম (আর আমলের মাধ্যমে সেই ঈমানের সৌন্দর্যতা বাড়ে)।
বি: দ্র: ফুকাহাগণ ও ইমাম আবু হানিফা রহ: নিকট মুখে স্বীকার করা হল ঈমানের অতিরিক্ত রুকুন যা অবিচ্ছেদ্য অংশ ও বটে। আর মুতাকাল্লিমীনগণের নিকট ইহা ঈমানের জন্য তার উপর শরীয়তের বিধি-বিধান প্রয়োগ করার জন্য শর্ত। (ইরশাদুস সারী খ:১, পৃ:১২০ উমদাতুল কারী খ:১,পৃ:১৬৪)
মোট কথা হল: এই ব্যাপারে আহলে হক্বদের মাঝে কোন মতানৈক্য নাই। কারণ যারা বলেছেন যে আমল ঈমানের অংশ, তাদের উদ্দেশ্য হলো যে আমলের দ্বারাই ঈমান পরিপূর্ণ হয়, সৌন্দয্য বাড়ে। আর যারা বলেছেন আমল ঈমানের অংশ নয়, তাদের উদ্দেশ্য হলো যে, ঈমান থাকাবস্থায় সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবেনা। বরং পরবর্তীতে সে জান্নাতে চলে যাবে। তাই বিশ্বাসই হল আসল ঈমান (ফতহুল মুলহিম খ:১, পৃ: ৪৪৩)