নাবী- রাসুলগণের প্রকৃত উত্তরাধিকারী আ’লিম কারা? – ৩
লিখেছেন: ' taalibul_ilm2011' @ মঙ্গলবার, নভেম্বর ৮, ২০১১ (১:৫৮ অপরাহ্ণ)
২। ইসলামেই একমাত্র মুক্তি :
আল্লাহ বলেন :
“প্রতিটি জীবন মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করবে এবং ক্বিয়ামাতের দিন তোমাদেরকে পূর্ণমাত্রায় বিনিময় দেয়া হবে। যে ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করা হল এবং জান্নাতে দাখিল করা হল, অবশ্যই সে ব্যক্তি সফলকাম হল, কেননা পার্থিব জীবন ছলনার বস-ু ছাড়া আর কিছুই নয়”। (৩:১৮৫)
আল্লাহ আরো বলেন :
“এ দিনটি সত্য, সুনিশ্চিত, অতএব যার ইচ্ছে সে তার প্রতিপালকের দিকে আশ্রয় গ্রহণ করুক”। (৭৮:৩৯)
আল্লাহ আরো বলেন :
“আর বলে দাও, ‘সত্য এসেছে তোমাদের রব্বের নিকট হতে, কাজেই যার ইচ্ছে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করুক।’ আমি (অস্বীকারকারী) যালিমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি যার লেলিহান শিখা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে গলিত শিশার ন্যায় পানি দেয়া হবে যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, কতই না নিকৃষ্ট পানীয়! আর কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল! (১৮:২৯)
আমরা সবাই একদিন মারা যাবো। এবং গন্তব্য হচ্ছে : জান্নাত অথবা জাহান্নাম। কিন্তু আল্লাহ কাউকে জোর করে, জান্নাত কিংবা জাহান্নামের দিকে পরিচালিত করেন না। মানুষ নিজ ইচ্ছায় জান্নাত কিংবা জাহান্নামের পথে এগিয়ে যায়।
আল্লাহ বলেন :
নিশ্চয় আল্লাহ্র নিকট একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম। (৩:১৯)
আল্লাহ আরো বলেন :
“আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো তার সেই দ্বীন কবূল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। (৩:৮৫)
রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেই সত্বার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, ইহুদী-খ্রীস্টানদের যে কেউ আমার কথা শুনবে কিন্তু যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়াছি (ইসলাম) তার উপর ঈমান না এনে মারা যাবে, সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সহীহ মুসলিমঃ ১৫৩)
সুতরাং, জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে আল-ইসলাম। অন্য কোন দ্বীন-ধর্ম-জীবনব্যবস্থা-মতবাদ অনুসরণ করে, এখন আর জান্নাতে যাওয়া যাবে না।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের এই ইসলামে চলার পথ এত সহজ হবে না। কারণ আমাদের এই পথ হতে দূরে নেয়ার জন্য রয়েছে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ শত্রু। শয়তান বলেছিলোঃ
“সে বলল, যেহেতু (পথ থেকে) আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ, কাজেই আমি অবশ্যই তোমার সরল পথে মানুষদের জন্য ওৎ পেতে থাকব। তারপর আমি তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে তাদের কাছে অবশ্যই আসব, তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকর আদায়কারী পাবে না”। (৭ : ১৬-১৭)
আল্লাহ আরো বলেন :
“তুমি কি সেই লোকেদের প্রতি লক্ষ্য করনি, যাদেরকে কিতাবের অংশ দেয়া হয়েছিল? তারা নিজেরা পথভ্রষ্টতার সওদা করে আর তারা চায় তোমরাও পথভ্রষ্ট হয়ে যাও”। (৪:৪৪)
অর্থাৎ একদল লোক আবার আল্লাহ প্রদত্ত ওহীর জ্ঞান লাভ করার পরও দুনিয়ার জীবনের বিনিময়ে বিপথে চলে যায় এবং অন্যদেরকেও বিপথে পরিচালিত করতে চায়।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
“তোমরাও তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের পদাংক প্রতিটি ব্যাপারে অনুসরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুই সাপের গর্তে ঢুকে থাকে, তাহলে তোমরাও ঐ গর্তে ঢুকে ছাড়বে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, ঐ সব উম্মাত কি ইহুদী-খ্রীষ্টান? তিনি বললেন, তাহলে কারা? (সহীহ বুখারী – ৩২৬৯, সহীহ মুসলিম – ২৬৬৯)
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন :
‘আমার উম্মত ঐসব অবস্থার সম্মুখীন হবে, যা বাণী-ইসরাইল সম্মুখীন হয়েছিলো, ঠিক একজোড়া জুতার একটি-অপরটির মতো। এমনভাবে যে, যদি তাদের কেউ নিজের মায়ের সাথে জ্বিনা করে থাকে, তবে আমার উম্মতের মধ্যেও লোক থাকবে, যে নিজের মায়ের সাথে জ্বিনা করে। আর বাণী ইসরাইল বাহাত্তরটি ভাগে ভাগ হয়েছিলো, আমার উম্মত তিয়াত্তর ভাগে ভাগ হবে। তাদের প্রত্যেকে জাহান্নামী হবে, শুধুমাত্র একটি ভাগ (মিল্লাত) ছাড়া।’ সাহাবীগণ (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারা কারা, হে আল্লাহর রসুল?’ তিনি বললেন, ‘যারা আমি যে পথে আছি এবং আমার সাহাবাগণ যে পথে আছে (সে পথ অনুসরণ করবে)। (সুনান তিরমিযী-২৬৪১, অন্য সাহাবীর বর্ণনায় একই হাদিস বর্ণিত হয়েছে; আলবানীর মতে হাসান, দখেুন সলিসলিা আস্ সাহীহা – ১৩৪৮)
অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে :
“তারা হচ্ছে আল-জামাহ্” (সুনান ইবনে মাজাহ ৩৯৯২; ৩৯৯৩; কিতাবুল ফিতান)
সুতরাং এই মুসলিম জাতি নানা ধরণের বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছে-হবে এবং বহু দল-মতে বিভক্ত হয়েছে এবং হবে। যদিও এসব হাদিসে বর্ণিত ‘জাহান্নামী’ অর্থ ‘চিরস্থায়ী জাহান্নামী’ নয়, যা অন্যান্য হাদিস হতে বুঝা যায়। যেমনঃ
আবু সায়ীদ আল খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যারা জাহান্নামবাসী তারা মরবেও না আবার বাঁচবেও না। কিন্তু যে সকল (ঈমানদার) মানুষ পাপের কারণে জাহান্নামে যাবে তাদের এক ধরনের মৃত্যু ঘটানো হবে। তারা পুরে কয়লা হয়ে যাবে। তখন তাদের ব্যাপারে শুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে। তাদেরকে এক এক দল করে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। অত:পর জান্নাতের নদীতে রাখা হবে। এরপর বলা হবে হে জান্নাতবাসীরা! তোমরা তাদের উপর পানি ঢালো। ফলে তারা উদ্ভিদের মত জীবন লাভ করবে যেমন বন্যার পানির পলি পেয়ে উদ্ভিদ জন্ম লাভ করে থাকে। (সহীহ মুসলিম-১৮৫)
সুতরাং, জান্নাতে যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন ‘ইসলামের’ সঠিক রূপ তা বিশ্বাসগত (আক্বীদা) হোক বা কর্মগত (আমালে) হোক, আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে, সর্বোতভাবে ভ্রান্ত-পথ থেকে দূরে থাকতে হবে, যদি আমরা জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি পেতে চাই।
সমস্যা হচ্ছে, প্রত্যেক দল-উপদল, গোত্র, মতের লোকজন নিজেরদেরকে ঐ মুক্তিপ্রাপ্ত দল বলে মনে করে।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
“মানুষ যা দাবী করে, তাই যদি তাদেরকে দেওয়া হতো, তাহলে মানুষ (অন্য) মানুষের ধন-সম্পদ ও জীবন (বয়স) দাবী করতো। কিন্তু দলিল-প্রমাণ দেওয়ার দায়িত্ব দাবীকারীর উপরইে …..’ (সুনান আল বাইহাকী আল কুবরা – ২০৯৮৯, জামউিল উলুম ওয়াল হিকাম ১/৩১১)
তাই বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে কারা এ দাবীতে সঠিক আরও কারা ভুল তা বের করার চেষ্টা করবে।
আল্লাহ বলেন :
তারা আরো বলবে, ‘আমরা যদি শুনতাম অথবা বুঝতাম তাহলে আমরা জ্বলন- আগুনের বাসিন্দাদের মধ্যে শামিল হতাম না। (মূলক : ১০)
সুতরাং, সময় থাকতেই আমাদেরকে যথাযথভাবে শোনা ও বুঝার কাজটি করতে হবে।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
(একটু লম্বা হওয়ায় দুঃখিত, পুরো সিরিজটির ধারাবাহিকতার স্বার্থে পোস্টগুলি কিছুটা লম্বা হবে। আশা করি পাঠকরা তা সহজ ভাবে নিবেন। আর পুরো সিরিজে সবার সাহায্য, পরামর্শ, ভুল-সংশোধন ও দোয়া কামনা করি।)
শুকরিয়া।জাযাকাল্লাহ। বাংলা বানান ভূলগুলো একটু লক্ষ্য রাখবেন।