একজন সাধারণ মুসলিম কি নিজে নিজে আল-কুরআন কিংবা হাদিস অধ্যয়ন করবে না? শুধু আলিমদের মুখাপেক্ষী থাকবে? (নাবী- রাসুলগণের প্রকৃত উত্তরাধিকারী আ’লিম কারা? – ৬)
লিখেছেন: ' taalibul_ilm2011' @ সোমবার, মে ২১, ২০১২ (১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ)
আল্লাহ বলেন :
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَأَنْفِقُوا خَيْرًا لِأَنْفُسِكُمْ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (سورة التغابن 1664:)
কাজেই তোমরা আল্লাহকে তোমাদের সাধ্যমত ভয় কর, তোমরা (তাঁর বাণী) শুন, তোমরা (তাঁর) আনুগত্য কর এবং (তাঁর পথে) ব্যয় কর, এটা তোমাদের নিজেদেরই জন্য কল্যাণকর। (সূরাহ্ আত্-তাগাবুন ৬৪:১৬)
তাই সামর্থ অনুযায়ী আল্লাহকে ভয় করার দাবী অনুযায়ী একজন মুসলিম যথাসাধ্য আল-কুরআন এবং হাদিস অধ্যয়ন করে বুঝার চেষ্টা করবেন, বুঝার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, আরবী শিখার চেষ্টা করবেন, ইলম অর্জনের চেষ্টা করবেন। তাছাড়া এখানে আরো কয়েকটি ব্যাপার রয়েছে -
প্রথমতঃ আল্লাহ নিজে আল-কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে বলেছেন। আল্লাহ বলেন :
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِنْدِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا (سورة النساء 824:)
তারা কি কুরআনের মর্ম বিষয়ে চিন্তে-ভাবনা করে না? যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে আসত, তবে তাতে তারা অবশ্যই বহু অসঙ্গতি পেত। (সূরাহ্ আন্-নিসা : ৮২)
আল্লাহ আরো বলেন :
كِتَابٌ أَنْزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ (سورة ص 2938: )
এটি একটি কল্যাণময় কিতাব তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি যাতে তারা এর আয়াতগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে, আর জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরাহ্ স-দ ৩৮ : ২৯)
তিনি আরো বলেন :
أَفَلَمْ يَدَّبَّرُوا الْقَوْلَ أَمْ جَاءَهُمْ مَا لَمْ يَأْتِ آبَاءَهُمُ الْأَوَّلِينَ (سورة المؤمنون 6823: )
তাহলে তারা কি (আল্লাহ্র) এ বাণী সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? কিংবা তাদের কাছে এমন কিছু (নতুন বস্তু) এসেছে যা তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আসেনি? (সূরাহ্ আল-মু’মিনূন ২৩ : ৬৮)
তাই একজন মুসলিম যথাসম্ভব আল-কুরআন ও সহীহ হাদিস অধ্যয়ন করবেন, এ বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করবেন।
দ্বিতীয়তঃ যেহেতু একজন সাধারণ মুসলিমের যে কোন ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল আয়াত ও হাদিস জানা থাকে না তাই তিনি সাধারণ পরিস্থিতিতে নিজে নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না কিংবা কোন ফতোয়া বের করবেন না। বরং তারা যারা এ ব্যাপারে আলিমদের স্মরণাপন্ন হবেন। আল্লাহ বলেন :
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (سورة النحل 4316: )
তোমরা যদি না জান তাহলে আল্লাহ্র কিতাব সম্পর্কে যারা অবগত তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। (সূরাহ্ আন্-নাহ্ল ১৬ : ৪৩)
এই শিক্ষাই আল-কুরআনে দেয়া হয়েছে নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহাবীগণ (রাঃ) কর্তৃক বারংবার প্রশ্ন করার ঘটনা উল্লেখ করার মাধ্যমে। যেমন আল্লাহ বলেন :
وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاءِ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ (سورة النساء 127 4:)
লোকেরা তোমার কাছে নারীদের সম্বন্ধে বিধান জানতে চাচ্ছে। বলে দাও, ‘আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে তোমাদেরকে বিধান জানিয়ে দিচ্ছেন… (সূরাহ্ আন্-নিসা ৪:১২৭) আল্লাহ আরো বলেন :
يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلَالَةِ (سورة النساء6 174: )
লোকেরা তোমার কাছে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করছে; বল, আল্লাহ তোমাদেরকে পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্পর্কে ফাতাওয়া দিচ্ছেন… (সূরাহ্ আন্-নিসা ৪ : ১৭৬)
তৃতীয়তঃ একজন সাধারণ মুসলিম আ’লিমদেরকে জিজ্ঞেস করবে বটে, কিন্তু তাদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না, তাঁরা আল্লাহর দেওয়া হালালকে হারাম করলে কিংবা হারামকে হালাল করলে, তাদেরকে এ ব্যাপারে মেনে নিবে না।
আল্লাহ বলেন :
اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ (سورة التوبة 319: )
আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে তারা তাদের ‘আলিম আর দরবেশদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছে …… (সূরাহ্ আত্-তাওবাহ ৯ : ৩১)
আর এটা তো জানা কথা কিছু কিছু জিনিস আছে, যা ‘ইসলামের জরুরী জ্ঞান’ (الْمَعْلُومِ بِالضَّرُورَةِ) – যা না জানার কোন অযুহাত কিংবা কারণ কোন মুসলিমই দেখাতে পারবেনা। যেমন : সুদ হারাম, জ্বিনা হারাম, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া না করা, আল্লাহর আইন ও হুকুমের বিপরীত অন্য কোন মানুষের আইনকে উত্তম মনে না করা, মিথ্যা ইলাহ তথা তাগুতদের পরিত্যাগ করা ইত্যাদি।
যে কোন আ’লিম এসব ব্যাপারে বিপরীত কাজ করার পর তাকে মেনে নিলে তাকে রবের আসনে বসানো হবে। তাই এসব জরুরী এবং সাধারণ বিষয়সমূহ জানার জন্যও একজন সাধারণ মুসলিমের জন্য আল-কুরআন ও সহীহ হাদিস অনুবাদ পড়া উচিত।
চতুর্থতঃ যে কোন একজন আ’লিমকেই সব সময় জিজ্ঞেস করতে একজন মুসলিম বাধ্য নন। যোগ্যতা সম্পন্ন, তাকওয়াবান যেকোন আলিমকেই তিনি চাইলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এমনকি যে কোন এক শহরের কিংবা দেশের আলিমদেরকে জিজ্ঞাসা করতেও একজন মুসলিম বাধ্য নন। সুযোগ ও সামর্থ থাকলে তিনি অন্য দেশের আলিমদের স্মরণাপন্নও হতে পারেন।