আলিম এর সংজ্ঞা (নাবী- রাসুলগণের প্রকৃত উত্তরাধিকারী আ’লিম কারা? – ৮)
লিখেছেন: ' taalibul_ilm2011' @ বৃহস্পতিবার, মে ২৪, ২০১২ (১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ)
৫। আলিম এর সংজ্ঞা : নীচে আল-কোরআন, সুন্নাহ এবং পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলদের দৃষ্টিতে আলিমদের কয়েকটি সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করা হলোঃ
৫.১. আলিম তিনিই, যিনি আল্লাহকে ভয় করেন।
আল্লাহ বলেন :
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ (سورة فاطر 2835:)
আল্লাহ্র বান্দাহ্দের মধ্যে তারাই তাঁকে ভয় করে যারা আলিম। (সূরাহ্ ফাত্বির ৩৫ : ২৮)
عن ابن عباس قوله( إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ) قال: الذين يعلمون أن الله على كل شيء قدير.] تفسير الطبري. 20/462 – تفسير ا بن كثير[6/544-
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, ু(তারা ঐ সকল লোক) যারা জানে যে নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবানচ। (তাফসির আত তাবারী- ২০/৪৬২, তাফসীর ইবনে কাসীর- ৬/৫৪৪)
وعن ابن مسعود، رضي الله عنه، أنه قال: ليس العلم عن كثرة الحديث، ولكن العلم عن كثرة الخشية.] تفسير ا بن كثير[6/545-
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সত্যিকার ইলম্কে (জ্ঞানকে) মুখস্ত এবং বর্ণনা করার পরিমাণ দিয়ে পরিমাপ করা হয় না বরং সত্যিকার ইলম হলো তাকওয়ার (আল্লাহ ভীতি) বহিঃপ্রকাশ।’ (আবু নাঈম হতে বর্ণিত, তাফসীর ইবনে কাসীর ৬/৫৪৫)
وقال الربيع بن أنس: من لم يخش الله تعالى فليس بعالم.)تفسير القرطبي(
রবী ইবনে আনাস (রা.)?? বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে না, সে আলিম নয়।’ (তাফসীর আল কুরতুবী - ১৪/৩৪৩)
وقال مجاهد: إنما العالم من خشى الله عزوجل.) تفسير القرطبي(
আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) এর সুযোগ্য ছাত্র, মুজাহিদ (র.) বলেন : ‘কেবল সেই আলিম, যে আল্লাহকে ভয় করে।’ (তাফসীর আল কুরতুবী - ১৪/৩৪৩)
শায়খ সোহরাওয়ার্দি (র.) বলেন : ‘এ আয়াতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যার মধ্যে আল্লাহ ভীতি নেই, সে আলিম নয়।’ (তাফসীর মাজহারী)
وقوله تعالى : { إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاء } يقتضي أن كل من خشى اللّه فهو عالم؛ فإنه لا يخشاه إلا عالم ويقتضي ـ أيضاً ـ أن العالم من يخشى اللّه ـ كما قال السلف .
ইবনে তাইমিয়া (রঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এই আয়াত অনুযায়ী এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই আলিম যে আল্লাহকে ভয় করে। অতএব, আলিম ছাড়া কেউ আল্লাহকে ভয় করে না। এ আয়াতের আরো দাবী হলোঃ আলিম হচ্ছেন তিনিই যিনি আল্লাহকে ভয় করেন যেমন পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণ বলেছেন (মাজমু আল ফাতাওয়া- ১৪/২৯২)
كلما كانت المعرفة به أتمّ والعلم به أكمل، كانت الخشية له أعظم وأكثر.
ইমাম ইবনে কাসীর (র.) বলেন : ‘যার মধ্যে যে পরিমাণ আল্লাহ ভীতি হবে, সে সেই পরিমাণ আলিম হবে।’ (তাফসীর ইবনে কাসীর, ৬/৫৪৪)
সুতরাং, আলিম তিনিই, যিনি আল্লাহকে ভয় করেন।
ইবনে রজব আল হাম্বালী (রঃ) ওওয়ারাসাতুল আম্বিয়াহতে বলেনঃ ইমাম সুফিয়ান সাওরী (রঃ) সহ অধিকাংশ সলফে সালেহীনগণ আলিমদেরকে তিনভাগে ভাগ করেছেন।
ক) আলিম যিনি আল্লাহ সমপর্কে এবং তাঁর হুকুম-আহকাম সমর্কে জ্ঞান রাখেন। অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করেন এবং তার হুকুম আহকাম সম্পর্কে জানেন। তারা হচ্ছেন সর্বোত্তম পর্যায়ের। এই আয়াতে আল্লাহ তাদের প্রসংসা করেছেন।
খ) আলিম যিনি আল্লাহ সমপর্কে জ্ঞান রাখেন কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সমর্কে জ্ঞান রাখেন না। তারা আল্লাহকে ভয় করেন কিন্ত হুকুম আহকাম সম্পর্কে তাদের তেমন জ্ঞান নেই।
গ) আলিম যিনি আল্লাহ সমপর্কে জ্ঞান রাখেন না কিন্তু তাঁর হুকুম-আহকাম সমর্কে জ্ঞান রাখেন। এরা হচ্ছে মন্দ আলিম। এদের শরয়ী জ্ঞান আছে কিন্তু সেই জ্ঞান তাদেরকে অন্তরে প্রবেশ করতে পারেনি। তাদের আল্লহভীতি নেই, খুশু নেই, পূর্বসুরী সতকর্মশীলদের দৃষ্টিতে তারা নিন্দালাভের যোগ্য (مذمومون) ।
কেউ কেউ বলেছেন এরা হচ্ছে আলিমুল ফাজির বা পাপাচারী আলিম। (দেখুন মাজমু আর-রাসাইল, পৃঃ ১৯, অধ্যায়ঃ ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, শারহু হাদিস আবি দারদাহ)
৫.২. আলিম হচ্ছেন তিনিই যিনি ইলম অনুযায়ী আমাল করেন।
রাসুল (সাঃ) বলেন : ‘সত্যিকার ইলম হলো, অধ্যয়ন করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা।’ (আবু নাঈম)
عن علي ، رضي الله عنه ، قال : « قال رجل : يا رسول الله ، ما ينفي عني حجة الجهل ؟ قال : » العلم « ، قال : فما ينفي عني حجة العلم ؟ قال : » العمل «]الجامع لأخلاق الراوي وآداب السامع للخطيب البغدادي [ 1/31, 29-
আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত এক ব্যক্তি রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললোঃ আমার অজ্ঞতা দূরীভূত হওয়ার প্রমাণ কি হবে? তিনি বলনেন, ওইলমহ। সে বললোঃ আমার ইলমের প্রমাণ কি হবে? তিনি বললেন, ওআমালহ। (আল জামি আখলাকুর রাওয়ী ওয়া আদাবিস সামী- ২৯, ১/৩১)
عن الضحاك بن مزاحم ، قال : « أول باب من العلم : الصمت ، والثاني : استماعه ، والثالث : العمل به ، والرابع : نشره وتعليمه » الجامع لأخلاق الراوي وآداب السامع للخطيب البغدادي 326-
ইমাম দাহ্হাক (রঃ) হতে বর্ণিতঃ ইলমের প্রথম কথা হলোঃ চুপ থাকা, দ্বিতীয়ঃ শুনা, তৃতীয়ঃ সে অনুয়ায়ী আমাল করা, চতুর্থতঃ এর প্রচার ও শিক্ষা প্রদান। (আল জামি আখলাকুর রাওয়ী ওয়া আদাবিস সামী- ৩২৬)
وعن سفيان أن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال لكعب : من أرباب العلم ؟ قال : الذي يعملون بما يعلمون . قال : فما أخرج العلم من قلوب العلماء ؟ قال الطمع .] رواه الدارمي قال حسين سليم أسد : رجاله ثقات وإسناده صحيح [
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র.) থেকে বর্ণিত : উমর বিন খাত্তাব (রা.), হজরত কাব বিন আহবারকে জিজ্ঞেস করলেন, (প্রকৃত) আলিম কারা? তিনি বললেন : যারা ইলম অনুযায়ী আমাল করে। উমর (রা.) পুণরায় জিজ্ঞেস করলেন : কিসে আলিমদের অন্তর হতে ইলমকে বের করে দিবে? তিনি বললেন : (সম্মান ও অর্থ) লোভ।’ (সুনান আদ্ দারেমী-৫৭৫, হুসাইন সালিম আসাদের মতে এর বর্ণনাকারীগণ ওসিকাহহ এবং বর্ণনাটি সহীহ)
ইমাম সুফিয়ান সাওরী (র.) বলেন : ‘ইলমের (জ্ঞানের) মহত্ব এখানেই যে, এটা একজন মানুষকে আল্লাহকে ভয় পেতে এবং তাঁকে মেনে চলতে শিক্ষা দেয়, অন্যথায় এটা অন্যান্য সব সাধারণ ব্যাপারের মতোই।’ (ইবনে রজব (র.) হতে বর্ণিত)
وعنه صلى الله عليه وسلم أنه قال " لا يكون المرء عالماً حتى يكون بعلمه عاملاً "
৫.৩. আলিম হচ্ছেন তিনিই যার কথাবার্তা, চাল-চলন ও জীবন-পদ্ধতিতে ইলমের যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
ইমাম হাসান আল বসরী (র.) হতে বর্ণিত : ‘কোন মানুষ যখন ইলম (জ্ঞান) অন্বেষণ করে, তখন এর বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাওয়া যায়, তার বিনয়ে, তার চোখে, তার কথাবার্তায়, তার কাজকর্মে, তার ইবাদাতে এবং আল জুহুদ (পার্থিব ভোগ-বিলাস ত্যাগ করা) এর মাঝে। (আল জুহুদ ওয়ার রাকাইক - আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক (র.); আল জামি লি আখলাকির রাওয়ী ওয়া আদাবিস সামী (১/১৮৫); জামি বায়ানিল ইলম ১/১৫৬)
সুতরাং, আলিম হচ্ছেন তিনিই যার কথাবার্তা, চাল-চলন ও জীবন-পদ্ধতিতে ইলমের যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
৫.৪. একজন আলিম উপকারী জ্ঞান সম্পন্ন হবেন, অপ্রয়োজনীয়-অপকারী জ্ঞানসম্পন্ন হবেন না।
রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন,
اللهم إني أسألك علما نافعا وأعوذ بك من علم لا ينفع ]أخرجه ابن حبان (1/283 ، رقم 82) ، والطبرانى فى الأوسط (9/32 ، رقم 9050) . قال الهيثمى (10/182) : إسناده حسن . وأخرجه أيضًا : النسائى فى لكبرى (4/444 ، رقم 7867) . قال شعيب الأرنؤوط : إسناده حسن[
‘হে আল্লাহ, আমাকে উপকারী জ্ঞান দান করুন এবং আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করছি এমন জ্ঞান থেকে যা কোন উপকারে আসে নাচ (সহীহ ইবনে হিববান - ৮২ এবং তাবরানী ু ৯০৫০, নাসায়ী ওআল কাবিরহ গ্রন্থে - ৭৮৬৭)
وعن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " مثل علم لا ينتفع به كمثل كنز لا ينفق منه في سبيل الله " ) رواه الدارمي( “
যে ইলম কোন উপকারে আসে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ সম্পত্তির মতো যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহৃত হয়নিচ। (সুনান দারেমী - ৫৫৬, হুসাইন সালিম আসাদের মতে জয়ীফ, আলবানীর মতে হাসান, দেখুনঃ তাহকীক মিশকাত- ২৮০)
اللهم إنى أعوذ بك من العجز والكسل والجبن والبخل والهرم وعذاب القبر وفتنة الدجال اللهم آت نفسى تقواها وزكها أنت خير من زكاها أنت وليها ومولاها اللهم إنى أعوذ بك من علم لا ينفع ومن قلب لا يخشع ومن نفس لا تشبع وصلاة لا تنفع ومن دعوة لا يستجاب لها] أخرجه أحمد (4/371 ، رقم 19327) ، وعبد بن حميد (ص 114 ، رقم 267) ، ومسلم (4/2088 ، رقم 2722) والنسائى (8/260 ، رقم 5458) ، والطبرانى (5/201 ، رقم 5086)[
সুতরাং একজন আলিম উপকারী জ্ঞান সম্পন্ন হবেন, অপ্রয়োজনীয়, অপকারী জ্ঞানসম্পন্ন হবেন না। তিনি শুধু ইলম অর্জনের জন্য ইলম অর্জন করবেন না।
৫.৫. আলিম হচ্ছেন তিনিই যিনি মানুষকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাস করেন না, আবার তাদেরকে গুনাহ করার অনুমতিও দেন না।
وعن علي رضي الله عنه قال: إن الفقيه حق الفقيه من لم يقنطالناس من رحمة الله، ولم يرخص لهم في معاصي الله تعالى، ولم يؤمنهم من عذاب الله، ولم يدع القرآن رغبة عنه إلى غيره، إنه لا خير في عبادة لا علم فيها، ولا علم لا فقه فيه، ولا قراءة لا تدبر فيها. قال حسين سليم أسد : إسناده ضعيف] أخلاق العلماء للآجري1/55, 45- الفقيه والمتفقه للخطيب البغدادي3/177, 1055- جامع بيان العلم وفضله لابن عبد البر3/16, 958-
আলী (রা.) বলেন, ‘পূর্ণ ফকীহ সে ব্যক্তি, যে মানুষকে আল্লাহর রহমত হতে নিরাস করে না, তাদেরকে গুনাহ করার অনুমতি দেয় না, আল্লাহ আযাব হতে নিশ্চিন্ত করে না এবং আল-কুরআন পরিত্যাগ করে অন্য বিষয়ের প্রতি উৎসাহিত করে না।’ (ইমাম আল আজুরী (র.) রচিত ‘আখলাক আল উলামা’ পৃ. ৪৫, খতীব আল বাগদাদী (র.) রচিত ‘আল ফাকিহ ওয়াল মুতাফাকিহ’ ২/৩৩৮-৩৯৪, আল জামি বায়ানিল ইলম ু ৯৫৮, ৩/১৬)
৫.৬. যিনি কুরআন-হাদিসের দলিল জানেন না তিনি আলিম নন।
ইবনে আব্দুল বা’র (র.) বলেন, ‘এ ব্যাপারে উম্মাহর ইজমা (ঐক্যমত) রয়েছে যে, যদি কোন ব্যক্তি শুধু ওহীর বিধান জানে – কোনটা হালাল, কোনটা হারাম, কোনটা মুবাহ, কোনটা মাকরুহ – কিন্তু যদি এর কোন দলিল প্রমাণ না জানে, তবে ঐ ব্যক্তি হলো মুকাল্লিদ (অনুসরণকারী) এবং তাকে আলিম বলা হয় না। (দেখুন মাজমু আল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া (র.)———–এবং ইলাম আল মুওয়াক্বিয়িন, ইবনুল কায়্যিম (র.) ———————)
عرفه ابن القيم رحمه الله في تعريف جامع فقال:
العلم معرفة الهدى بدليله ما ذاك والتقليد يستويان فالعالم هو الذي يعرف العلم الحق بالدليل، والعلم قد يكون علماً واسعاً يعرف الإنسان غالب المسائل، وما لا يعرفه منها فعنده قدرة على معرفتها، وقد يكون الإنسان عالماً في مسألة واحدة، يأخذ الكتب ويبحث فيها وينظر أدلة العلماء، فيصير عالماً بها فقط، ومن هذا ما جاء به الحديث ( بلغوا عني ولو آية ) لكن غالب الوعاظ يأتون بأدلة لا زمام لها، أدلة ضعيفة يريدون بذلك تقوية الناس في الأمور المطلوبة، وتحذيرهم من الأمور المرهوبة، ويتساهلون في باب الترغيب والترهيب، وهؤلاء فيهم نفع لا شك، لكن ليسوا أهلاً لأن يتلقى عنهم العلم الشرعي، بحيث يعتمد على ما يقولون، إلا إذا قالوا: نحن نقول كذا لقوله تعالى كذا وكذا، ونقول كذا لقول النبي صلى الله عليه وسلم كذا، ويأتون بحديث صحيح فمعلوم أن من أتى بعلم وحجة فهو مقبول، لكن ابن مسعود رضي الله عنه حذر من القرَّاء بلا فقه. والمراد بالفقه أن يكون عند الإنسان حكمة فيضع الأشياء مواضعها، وأن يكون عند الإنسان دليل يكون حجة له عند الله عز وجل وأظن أنه لا يخفى على عامة الناس العالم من طالب العلم.
সুতরাং যিনি কুরআন-হাদিসের দলিল জানেন না তিনি আলিম নন। তিনি শুধু আলিমদের লেবাস ধারন করে আছেন। একজন আলিম শুধু ইসলামের বিধি-বিধানই জানবেন না বরং এসব বিধি-বিধানের আল-কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক দলিলও জানবেন।
আর তিনি যদি দলিল-প্রমাণ জানেন, তবে তা উল্লেখ করতে অসুবিধা কোথায়। অথচ আমাদের সমাজে আলিম নামধারী অনেকের মধ্যে দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করতে অনীহা দেখা যায়।
৫.৭. আলিম হওয়ার জন্য পরিচিত হওয়া জরুরী নয়।
ذكر القاضي ابن أبي يعلى في الطبقات قال: ذُكِرَ في مجلس أحمد بن حنبل: معروف الكرخي فقال بعض من حضر : هو قصير العلم، فقال الإمام أحمد : أمسك عافاك الله، وهل يراد من العلم إلا ما وصل إليه معروف.
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রঃ) এর মজলিসে একবার আল-কারখী (রঃ) এর আলোচনা হলে উপস্থিত একজন বললোঃ তাঁর ইলমে ঘাটতি আছে। তখন ইমাম আহমাদ বললেন, ওআল্লাহ তোমাকে পরিশুদ্ধ করে দিন, তুমি কি ইলম বলতে এটাই বুঝ যে, যা দ্বারা স্বনামধন্য হওয়া যায়। (————-)
অর্থাৎ প্রশ্নকারীর দৃষ্টিতে যেহেতু আল-কারখী (রঃ) এত বিখ্যাত ছিলেন না তাই তিনি তাকে ভালো আলিম হিসেবে মনে করছিলেন না। ইমাম আহমাদ (রঃ) তার এই ভুল ধারনা দূর করে দেন। তাই আলিম হওয়ার জন্য টিভিতে, মিডিয়ায়, সংবাদপত্রে খুব পরিচিত হতে হবে এমন নয়। কিংবা বড় বড় কমিটির সদস্য থাকতে হবে এমন নয়। কিংবা সবাই তাঁকে খুব বিখ্যাত বলে জানে এমন নয়।
عن هشام بن حسان ، قال : مر رجل على الحسن فقالوا : هذا فقيه ، فقال الحسن : وتدرون ما الفقيه ؟ ، إنما الفقيه العالم في دينه ، الزاهد في الدنيا ، الدائم على عبادة ربه] المدخل إلى السنن الكبرى للبيهقي397- شعب الإيمان , البيهقي [1834-
এক ব্যক্তি হাসান আল বাসরী (রঃ) এর কাছে এসে বললো, তিনি হচ্ছেন ফকীহ। তিনি বললেনঃ তুমি কি জানো ফকীহ কি? ফকীহ হচ্ছেন দ্বীনের আলিম, দুনিয়া বিমূখ, আর তাঁর রবের ইবাদাতে সদা-সচেষ্ট।
৫.৮. বিভিন্ন মাদরাসায় পড়লে কি তাহলে আ’লিম হওয়া যাবে না?
ব্যাপারটি কিছুটা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা কিংবা ইসলামী প্রতিষ্ঠানসমূহ ছাত্রদের মধ্যে ইলম ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব মাদরাসা আলিম তৈরির জন্যই কাজ করছে বলা যায়। তবে তার বিভিন্ন স্তর-বিন্যাস রয়েছে। যেমনঃ
(ক) কোন কোন মাদ্রাসায় শুধু আল-কুরআন মুখস্ত (হিফয) করানো হয়। আল-কুরআনের আয়াতসমূহের তাফসীর বা বিস্তারিত জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া, এসব মাদ্রাসার উদ্দেশ্য নয়।
(খ) কোন কোন মাদ্রাসায় শুধু বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিখানো হয়।
(গ) কোন কোন মাদ্রাসায় ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান তথা ফিকাহশাস্ত্র, তাফসীর হাদিস ইত্যাদি পড়ানো হয়। তবে অধিকাংশ সিলেবাসেই মাজহাব ভিত্তিক মাসয়ালা-মাসায়েল খুবই গুরুত্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহ যেমন তাওহীদ, আক্বীদা, শিরক, কুফর, নিফাক, ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে ও প্রর্যাপ্ত গুরুত্ব সহকারে সিলেবাসে নেই।
স্পষ্টতঃ প্রথম দুই প্রকার মাদ্রাসা থেকে পাসকৃত একজন ছাত্র হাফিজ কিংবা ক্বারী হতে পারেন। কিন্তু তাদেরকে আলিম এর সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। তৃতীয় প্রকার মাদ্রাসার থেকে পাসকৃত ছাত্র তাদের মাদ্রাসা থেকে ইলম অর্জন করার পর ‘আলিম’ হিসেবে স্বীকৃত হবেন কিনা তা নির্ভর করে তিনি আল-কুরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত আলিমের যোগ্যতা সম্পন্ন কিনা কিংবা পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলদের আলিমের সংজ্ঞায় পড়েন কিনা – তার উপর।
ইসলামে শুধুমাত্র সার্টিফিকেটের অধিকারী কাউকে আলিম বলা হয়নি।