লগইন রেজিস্ট্রেশন

’মুসলিম’ বনাম ‘আহলে হাদীস’

লিখেছেন: ' Talebul Elm' @ সোমবার, জুন ১৬, ২০১৪ (১০:১৩ পূর্বাহ্ণ)

[পিস টিভির বক্তা ও বাংলাদেশ আহলেহাদীস যুব সংঘের সভাপতি মুযাফফর বিন মুহসিন লিখিত ‘ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন’ (প্রকাশক : আহলেহাদীছ যুবসংঘ, রাজশাহী, মার্চ’২০১৪) বইটিতে ‘মুসলিম’ নামে পরিচয় দেয়াকে ‘নতুন আবিষ্কার’, ‘মুসলিম তত্ত্ব’ প্রভৃতি হিসেবে চিহ্নিত করে অবজ্ঞা ও নিন্দা করা হয়েছে (পৃ: ২৩০-৩৪)। তিনি ‘মুসলিম’ শব্দটির ব্যবহারের প্রতি যে, মনোভাব ব্যক্ত করেছেন, তার প্রতিবাদেই আমাদের এই উপস্থাপনা। উল্লেখ্য আমাদের কাছে ‘আহলেহাদীস’ নামটি মুসলিমদের মধ্যে ‘সুন্নাতপন্থী আলেম ও গবেষকদের জন্য প্রযোজ্য’। এ কারণে এই পরিচয়টি নিয়ে এখানে কোন বিতর্ক করা হবে না। বরং এই পরিচয়টি সঠিক প্রয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।]
Bhrantir Berajale Ekamate Din

মুসলিম নাম কি নতুন আবিষ্কার?

মুযাফফর বিন মুহসিন – ১ (‘ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন’ পৃ: ২৩০) : বর্তমানে হক্বপন্থী ও মুক্তিপ্রাপ্ত দলের পরিচিতি নিয়ে একশ্রেণীর অতি উৎসাহী ব্যক্তি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগ থেকেই হক্বপন্থীদেরকে ‘আহলেহাদীছ’, ‘সালাফী’, ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ নামে উল্লেখ করা হলেও নতুন করে আবিষ্কার করে দাবী করে হচ্ছে যে, ‘মুসলিম’ বলে পরিচয় দিতে হবে। অনুরূপভাবে জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন সম্পর্কেও একশ্রেণীর লোকের এলার্জি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ জন্য পরিশিষ্ট অংশে ‘তাওহীদের ডাক’-এর দুইটি সম্পাদকীয় যোগ করা হল। আশা করি হঠাৎ গজিয়ে উঠা ঠুনকো যুক্তি কর্মীদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।
জবাব-১ : ক) লেখক সূত্রহীনভাবে হক্বপন্থীদের নাম হিসেবে – ‘আহলেহাদীছ’, ‘সালাফী’, ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ রসূলুল্লাহ (স)এর যুগ থেকে উল্লেখ করেছেন। আমরা পরবর্তিতে দেখব, তিনি এর সমর্থনে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে ‘রসূলের যুগের’ কিছুই উল্লেখ করতে পারেন নি। ফলে তাঁর দাবীটিই অসত্য।
খ) লেখক ‘মুসলিম’ বলে পরিচয় দেয়াকে ‘নতুন করে আবিষ্কার’ বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
هُوَ سَمَّكُمُ الْمُسْلِمِيْنَ مِنْ قَبْلُ وَفِيْ هذَا
“তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম, এর আগে এবং এখানেও (কুরআনে)।” [সূরা হাজ্জ : ৭৮]
গ) লেখক ‘মুসলিম’ নামটিকে ঠুনকো যুক্তি বলে উল্লেখ করছেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলার ঘোষণা অনুযায়ী এই নামটি আল্লাহ তা‘আলা দিয়েছেন, যা কুরআনের পূর্ব থেকেই প্রতিষ্ঠিত। আমরা কিছু পরে দেখব লেখকের দাবীকৃত হক্বপন্থীদের পরিচয় – ‘আহলেহাদীছ’, ‘সালাফী’, ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’ মুসলিম বিজ্ঞ আলেমদের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য। যাঁদের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা সুন্নাত ও ইলমেকে হেফাযত করেছিলেন। সেটা ‘মুসলিম’ নামের মত উম্মাতে মুহাম্মাদী (স)-এর সর্বসাধারণের পরিচয় নয়।
ঘ) ‘তাওহীদের ডাক’-এ প্রকাশিত ‘ইসলাম বনাম ফের্কাবন্দী’ (জুলাই-আগষ্ট ২০১৩) নিয়ে আমরা আলোচনা করব, যা ঐ বইয়ের ২৩০-৩৪ পৃষ্ঠাতে আছে। অপর বিষয়টি (২৩৪-২৩৯) নিয়ে আলোচনা এখানে করা হবে না। তবে কিছু পরোক্ষ জবাব এই আলোচনাতেই দিয়ে দেয়া হবে, ইনঁশাআল্লাহ।

    কুরআনের ন্যায় ‘মুসলিমদের জামা‘আত’-কে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে

মুযাফফর বিন মুহসিন – ২ (পৃ: ২৩০) : ইসলাম মহান আল্লাহ প্রদত্ত এক সার্বজনীন জীবন বিধান। মানব জাতির সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে এর বাস্তব নমুনা বিদ্যমান। তবে এ সবের মৌলিক উদ্দেশ্য হল, মানুষকে পরীক্ষা করা। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীমে’ চলার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে ভ্রান্ত পথে চলতে নিষেধ করেছেন (আলে ইমরান ১০১, ১০৩; আন‘আম ১৫৩)।
জবাব-২ : সূরা আলে ইমরানে ১০১ নং আয়াতটিতে বলা হয়েছে : আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে সিরাতে মুস্তাক্বীমের হিদায়েত পাওয়া যাবে।
১০২ নং আয়াতটিতে বলা হয়েছে : আল্লাহকে সঠিকভাবে ভয় করতে হবে এবং মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে। (কিন্তু লেখক তা উল্লেখ করেন নি)
১০৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে : আল্লাহর রুজ্জুকে জামা‘আতবদ্ধভাবে আঁকড়ে থাকতে বলা হয়েছে। ফিরক্বা করতে নিষেধ করা হয়েছে। নবী (স) বলেছেন : كتاب الله عز وجل هو حبل الله ‘কিতাবুল্লাহ হল হাবলুল্লাহ (আল্লাহর রজ্জু)।’ [সহীহ মুসলিম, তাহ: মিশকাত হা/৬১৩১]
রসূলুল্লাহ (স) এই জামা‘আত ও ফিরক্বার ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিম্নরূপে :
تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ فَقُلْتُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا
“তুমি ‘মুসলিমদের’ জামা‘আত ও তাদের ইমামকে আঁকড়ে থাক। আমি (হুযায়ফা রা.) জিজ্ঞাসা করলাম : যদি তাদের (মুসলিমদের) জামা‘আত ও ইমাম না থাকে? তিনি (স) বললেন : “তখন সমস্ত ফিরক্বাকে ত্যাগ কর।” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত- ফিতনা অধ্যায় ১০/৫১৪৯]
অন্যত্র নবী (স) বলেছেন : ثلاث لايغل عليهن قلب رجلٍ مسلم اخلاص العمل لله والنصيحة لولاة الامر ولزوم جماعة المسلمين
“তিনটি বিষয়ে মুসলিমের অন্তর খেয়ানত করতে পারে না : ১) আল্লাহর জন্য আমলকে খালেস করা। ২) নেতৃবৃন্দের হিতাকাঙ্ক্ষী হওয়া। ৩) ‘মুসলিমদের’ জামা‘আতকে আঁকড়ে থাকা।” [তাবারানীর ‘আওসাত’ ৬/৮৪, বর্ণনাকারীগণ সিক্বাহ ও এর সনদ সহীহ। এর সাক্ষ্যমূলক র্বণনা মুসনাদে হুমায়দীতে আছে। শায়েখ আলবানী (রহ) তাঁর ‘মিশকাতে’ (১/৭৮) সনদটিকে সহীহ বলেছেন।]
এখানে ঐক্যবদ্ধ মুসলিম দায়িত্বশীলদের আঁকড়ে থাকাকে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ বলা হয়েছে। সূরা আলে ইমরানের ১০১ ও ১০৩ আয়াতে যাকে ‘সিরাতে মুস্তাক্বীম’ ও ‘আল্লাহর রুজ্জু’ বলা হয়েছে, সূরা আনয়ামের ১৫৩ আয়াতে সেটারই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ভিন্নপথ তথা ফিরক্বাদের অন্তর্ভুক্ত হতে নিষেধ করা হয়েছে। সূরা আলে-ইমরানের ১০২ ও ১০৩ নং আয়াত মিলিয়ে পড়লে বুঝা যায়, ফিরক্বাদের পথ মুসলিমদের পথ নয়। পূর্বোক্ত হাদীস দু’টির দাবীও সেটাই। এবার উক্ত আয়াতগুলো পরিপূর্ণভাবে পড়ুন। আপনার কাছে সুস্পষ্ট হবে, লেখক কেন সূরা আলে-ইমরানের ১০২ নং আয়াতটি উল্লেখ করলেন না। সূরা আলে-ইমরান ১০২ নং আয়াতটিসহ ১০৩ নং আয়াতটি নিম্নরূপ:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ -وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا
“হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত, আর মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। আর তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে জামা‘আতবদ্ধভাবে আঁকড়ে থাক এবং ফিরক্বা সৃষ্টি করো না।”
বুঝা গেল, ‘মুসলিম’ এবং ‘ফিরক্বা’ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। এ কারণে কোন মুসলিম ফিরক্বা সৃষ্টি করে না। সে `মুসলিম’ পরিচয়েই মৃত্যুবরণ করে, ফিরক্বার পরিচয়ে নয়। জামা‘আতবদ্ধ হতে হবে মুসলিম দাবীর ভিত্তিতে। আহলেহাদীস ভিত্তিক জামা‘আতবদ্ধতা ও তাঁদের ইমাম কেন্দ্রিক আনুগত্য ও বায়য়াতের কোন হাদীস নেই। তারা জামা‘আতবদ্ধ থাকার ব্যাপারে যেসব আয়াত ও হাদীস ‍উল্লেখ করে থাকে – তার সাথে ‘মুসলিম জামা‘আত’ ও তাদের ইমাম সম্পৃক্ত। অর্থাৎ সেগুলো ক্ষুদ্র কোন সংগঠনের জামা‘আতবদ্ধতা নয়। বরং সেটি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সংঘবদ্ধতা। সুতরাং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংগঠনের পক্ষে উক্ত আয়াত ও হাদীসগুলোর ব্যবহার প্রকারান্তরে মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তি বা ফিরক্বা সৃষ্টির নামান্তর। তবে মুসলিমদের মধ্যে সবসময় সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধমূলক বিভিন্ন ছোট ছোট গোষ্ঠী সংস্কারের উদ্দেশ্য থাকতেই পারে। যাদের নিজেদের দাওয়াতের সমর্থনে পূর্বোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো ব্যবহার না করে নিম্নোক্ত আয়াত উপস্থাপন করবে। যেমন – আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা দাওয়াত দেবে কল্যাণের দিকে। আর নির্দেশ দেবে সৎকাজের এবং নিষেধ করবে অসৎকাজের। আর এরাই হল সফলকাম।” [সূরা আলে ইমরান : ১০৪]
এ সমস্ত দলগুলোর কাজ হল, হক্ব বিষয়গুলো উপস্থাপন করে যাওয়া। তারাই একমাত্র মুসলিমদের আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য, যাকাত পাওয়ার হক্বদার – প্রভৃতি দাবী করার কোন এখতিয়ার তাদের নেই।


‘সিরাতে মুস্তাক্বীম’ হল ফিরক্বা ও ইখতিলাফ (মতপার্থক্য) মুক্ত মুসলিমদের পথ

মুযাফফর বিন মুহসিন – ৩ (পৃ: ২৩০) :

সৎ আমলের নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত আমল সম্পর্কে জাহান্নামের হুমকি দিয়েছেন (কাহফ ১০৩-১০৬)। আল্লাহর উক্ত পথনির্দেশ নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করে আত্মসমর্পণ করবে বলে তিনি নাম রেখেছেন মুসলিম (হজ্জ ৭৮)। কিন্তু মুসলিম নামে ভূষিত হওয়া সত্ত্বেও ছিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বিচ্যুত হয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ)-কে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘আপনি বলুন! নিশ্চয় এই সোজা পথটি আমার পথ। তোমরা এই পথেরই অনুসরণ করবে। অন্যান্য পথের অনুসরণ কর না। অন্যথা এই সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। এ ব্যপারে আল্লাহ তোমাদেরকে অছিয়ত করছেন, যেন তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর (আন‘আম ১৫৩; আহমাদ হা/৪১৪২)। উক্ত আয়াতে অন্য যাবতীয় পথ বর্জন করে একটি পথে চলতে বলা হয়েছে।
কিন্তু মুসলিম নামে ভূষিত হওয়া সত্ত্বেও জিদ ও গোঁড়ামীর কারণে ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীম’ থেকে বিচ্যুত হয়ে দিকভ্রান্তরা দলে দলে বিভক্ত হয়েছে (শূরা ১৪; আন‘আম ১৫৯)।

[দাগানো অংশটুকু ‘তাওহীদের ডাক’ জুলাই-আগষ্ট’১৩-তে ছিল (দ্র: সম্পাদকীয়)। পরবর্তিতে প্রকাশিত আলোচ্য বইটিতে বাদ দেয়া হয়েছে। শেষ প্যারাটি ‘তাওহীদের ডাকে’ ছিল না]

জবাব-৩ : সূরা কাহফের ১০৩ ও ১০৪ নং আয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী ১০৫ ও ১০৬ নং আয়াতে যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা কাফের। কেননা তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা আল্লাহর আয়াত ও আখিরাতের প্রতি কুফরি করতো এবং রসূল (স) ও আয়াত নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রুপ করত। এদের সাথে সূরা হজ্জের ৭৮ নং আয়াতটির কোন সম্পর্কই নেই। কেননা শেষোক্ত আয়াতে যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারী নয়, আবার রসূল ও আয়াতকে অস্বীকারকারী নয়। বরং সম্পূর্ণ বিপরীত। লেখক কিভাবে সূরা দু’টির আয়াতের মধ্যে মূলভাব দেখিয়ে সম্পর্ক সৃষ্টি করলেন!? – যা ইলমের সাথে কোন সম্পর্ক রাখে না।
অতঃপর লেখক সূরা আন‘আমের ১৫৩ নং আয়াতটি উল্লেখ করেছেন। এর দাবী হল, সিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর থাকা ও ভিন্নপথে না যাওয়া। তা ছাড়া নিচের আয়াতটি থেকে বুঝা যায়, সত্যিকার ঈমানদারদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ইখতিলাফ ও ফিরক্বাভিত্তিক মতপার্থক্য থেকে হেদায়েত দান করেন। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ইখতিলাফ থেকে রক্ষা করে সিরাতে মুস্তাকীমের পথে পরিচালিত করেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ (118) إِلَّا مَنْ رَحِمَ رَبُّكَ وَلِذَلِكَ خَلَقَهُمْ
“তোমাদের রব ইচ্ছা করলে মানুষকে একটি উম্মাত করতে পারতেন। কিন্তু তারা ইখতিলাফ করতেই থাকবে, তবে যারা রহমতপ্রাপ্ত (তারা ছাড়া)। এজন্যেই তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”[সূরা হুদ : ১১৮-১৯]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
فَهَدَى اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ وَاللَّهُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
“অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নিজ ইচ্ছায় ঈমানদারদেকে হিদায়েত দিলেন তাদের মধ্যকার হক্বের ব্যাপারে ইখতিলাফকৃত বিষয়গুলোতে, আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সিরাতে মুস্তাক্বীমের হিদায়েত দান করেন।” [সূরা বাক্বারাহ : ২১৩; পূর্ণাঙ্গ আয়াতটি পড়ুন, বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হবে]
এ থেকে বুঝা গেল, যারা ইখতিলাফ ও ফিরক্বাবাজি করে, তারা রহমত ও হিদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ কারণে সূরা আলে-ইমরানের ১০২ নং আয়াতটিতে মু’মিনদেরকে ‘মুসলিম’ হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে বলা হয়েছে। অন্যত্র সিরাতে মুস্তাক্বীম প্রাপ্ত লোকদেরকে ‘মুসলিম’ শব্দেও ভূষিত করা হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ (161) قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
“বলুন! অবশ্যই আমার রব আমাকে সিরাতে মুস্তাক্বীমের প্রতিষ্ঠিত দ্বীন দিয়েছেন, যা একনিষ্ট মিল্লাতে ইবরাহীমের অন্তর্ভুক্ত, আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। বলুন : আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরন আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আর আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে – আমিই যেন প্রথম মুসলিম হই।” [সূরা আন‘আয়ম : ১৬১-১৬২]
পুনরায় বুঝা গেল, যারা দলে দলে বিভক্ত হয়েছে – তারা কুরআনের দাবীকৃত মু’মিন বা মুসলিম নয়। এ কারণে আমরা বাস্তব জীবনে দেখি, ফিরক্বাগুলো মু’মিন বা মুসলিম নামের চেয়ে নিজেদের বৈশিষ্ট্যগত নামকে বেশী ব্যবহার করে থাকে। এমনকি ঐ নামের পক্ষে বাতিল পন্থায় দলিল উপস্থাপন করে।
লেখক ‘সিরাতে মুস্তাকীম’ বলতে হক্ব দল বুঝেছেন। আর ‘মুসলিমদের’ সম্পর্কে বলেছেন ‘জিদ ও গোঁড়ামীর কারণে সিরাতে মুস্তাক্বীম থেকে বিচূত হয়ে দিকভ্রান্তরা দলে দলে বিভ্রান্ত হয়েছে।’ অথচ শেষোক্ত আয়াতে মুসলিমরাই সিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর রয়েছে বলে সুস্পষ্ট হয়। এখানে শাব্দিক মারপ্যাঁচে কিভাবে মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও তাকে সিরাতে মুস্তাক্বীম বা হক্ব থেকে আলাদা করা যায়, সেটাই লেখক নিজ লেখনীর কৌশলে করার চেষ্টা করেছেন।


আয়াতের ও হাদীসের সঠিক প্রয়োগে জ্ঞানের অভাব

মুযাফফর বিন মুহসিন – ৪ (পৃ: ২৩১) : প্রশ্ন হতে পারে মুসলিমদের মাঝে এত বিভক্তি ও দলাদলি কেন? এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ চাইলে তোমাদেরকে এক উম্মতভুক্ত করতেন। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে যে বিধান দিয়েছেন, সে ব্যাপারে পরীক্ষা করার জন্য তা করেননি। সুতরাং তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কর। আল্লাহর দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থল। আর তোমরা কী বিষয়ে মতভেদ করছ সে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন’ (মায়েদাহ ৪৮)।* উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি ব্যতীত সবই জাহান্নামে যাবে। উক্ত জান্নাতী দলের পরিচয় সম্পর্কে বলেন, ‘আমি এবং আমার ছাহাবীরা যার উপর আছি তার উপর যারা থাকবে’ (তিরমিযী হা/২৬৪১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সেটা হল, ‘জামা‘আত’ বা ঐক্যবদ্ধ একটি দল’ (আবুদাঊদ হা/৪৫৯৭)।
অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ইসলামের সূচনা হয়েছিল অল্প সংখ্যক মানুষের মাধমে। পুনরায় ইসলাম অল্প সংখ্যক মানুষের মাঝে ফিরে যাবে। তবে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের ‘তুবা’ নামকে গাছের সুসংবাদ। তারা হল, যারা আমার মৃত্যুর পর আমার সুন্নাতকে সংস্কার করবে, যখন মানুষেরা তাকে নষ্ট করবে’ )মুসলিম হা/৩৮৯; আহমাদ হা/১৬৭৩৬; ছহীহাহ হা/১৯৮৫ ও ২৫১৪)। **
উক্ত হাদীছগুলোতে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের পথিকদের তিনটি পরিচয় ফুটে উঠেছে। আর উক্ত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জান্নাতী দল ক্বিয়ামত পর্যন্ত হক্বের উপর বিজয়ী থাকবে। তাদেরকে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না (মুসলিম হা/৫০৫৯)।***

[‘তাওহীদের ডাকে’ তারকা (*) চিহ্নিত অংশগুলো ছিল নিম্নরূপ:
*সুতরাং তোমরা কল্যাণের দিকে প্রতিযোগিতা কর। তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল আল্লাহ। আর তোমরা কী বিষয়ে মতভেদ করছ সে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন’ (মায়েদাহ ৪৮)।
**এই অংশটি ‘তাওহীদের ডাকে’ ছিল না।
***রাসূল (ছাঃ) উক্ত হাদীছদ্বয়ে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের পথিকদের দুইটি পরিচয় তুলে ধরেছেন। আর উক্ত জান্নাতী দল ক্বিয়ামত পর্যন্ত হক্বের উপর বিজয়ী থাকবে। তাদেরকে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না (মুসলিম হা/৫০৫৯)। ]

জবাব-৪ : লেখকের উদ্ধৃত সূরা মায়েদাহ-এর ৪৮ নং আয়াতাংশটি পড়লে বুঝা যায়, কল্যাণের জন্য বিভিন্ন উম্মাত করা হয়েছে। যেন তাদের মধ্যে কল্যাণের প্রতিযোগিতা থাকে। এরপরে মতভেদের বিষয়ে কোন নিন্দা বা আযাবের কথা বলা হয় নি। কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে আখিরাতে ঐ সমস্ত মতভেদের বিষয়কে চূড়ান্তভাবে জানানোর কথা বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে অন্যত্র ইখতিলাফ বা মতবিরোধকে নিম্নোক্ত আয়াতে আযাবের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা ফিরক্বা করেছে ও ইখতিলাফ করেছে – তাদের কাছে বাইয়েনাত (সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণ) আসার পর। তাদের জন্য রয়েছে ভয়ানক আযাব।” [সূরা আলে-ইমরান : ১০৫]
এই শেষোক্ত আয়াতটির সাথে লেখকের উল্লিখিত হাদীসগুলোর ব্যাখ্যার সম্পর্ক আছে। কিন্তু লেখকের উল্লিখিত আয়াতটির শাব্দিক তরজমার সাথে হাদীসগুলোর সরাসরি সম্পর্ক দেখছি না। কেননা সেখানে কল্যাণের কথাই ব্যক্ত হয়েছে। তবে মতবিরোধের বিষয়টি আমাদের শেষোক্ত্ (আলে ইমরান : ১০৫) আয়াতটি দ্বারা ব্যাখ্যা নিলে- লেখকের উপস্থাপনাটি সঙ্গত হয়, অন্যথায় নয়।
লেখকের হাদীস তিনটির প্রথম দু’টির দাবী হল, জান্নাতী দলটি রসূলুল্লাহ (স) ও সাহাবীদের অনুসারী জামা‘আত। যা কুরআনের মাধ্যমে আরো সুস্পষ্ট হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
“যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে হিদায়েত প্রকাশিত হওয়ার পর এবং মু’মিনদের পথের বিরোধী পথে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কত নিকৃষ্ট স্থান।” [সূরা নিসা : ১০৫]
এখানে পূর্বের হাদীসটির ন্যায় মু’মিনদের পথের বিরোধিতাকারীকে জাহান্নামী বলা হয়েছে। যা মূলত নবী (স) ও সাহাবীদের জামা‘আত। কেননা এই জামা‘আতের বিরোধী পথে চলা মূলত ইসলাম বিরোধী পথে চলা। যার শাস্তি দুনিয়াতে মৃত্যুদণ্ড। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (রা) বলেন :
قال رسول الله  لا يحل دم امري مسلم يشهد ان لا اله الا الله واني رسول الله الا باحدي ثلاثٍ النفس بالنفس والشيب الزاني والمفارق لدينه ، التارك للجماعة
“রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন: কোন মুসলিমের রক্ত হালাল নয় – যে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল। অবশ্য তিনটি বিষয়ের কোন একটি করলে (তাকে হত্যা করা হালাল হয়) – ১) হত্যার বদলে হত্যা, ২) বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করলে, এবং ২) আল-জামা‘আত ত্যাগ করলে।” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত (এমদা) ৭/৩২৯৯]
লক্ষণীয়, লেখকের উল্লিখিত দ্বিতীয় হাদীসটিতে এই ‘আল-জামা‘আত’-কে জান্নাতী দল বলা হয়েছে। অন্যত্র এই ‘আল-জামা‘আতের’ পরিচয় নিম্নোক্তভাবে দেয়া হয়েছে। আয়েশা (রা) বলেন:
ماحل دم احد من اهل هذه القبلة الا من استحل ثلاثة اشياء قتل النفس والثيب الزاني المفارق جماعة المسلمين او الخارج من جماعة المسلمين [رواه ابن ابي شيبة ٤٢٨⁄٦ وسنده صحيح]
“আহলে ক্বিবলার রক্ত হালাল নয়। অবশ্য তিনটি ক্ষেত্রে (রক্ত) হালাল হয় – ১) জানের বদলে জান, ২) বিবাহিত ব্যক্তি যেনা করলে, এবং ৩) জামা‘আতুল মুসলিমীন থেকে খারিজ (ত্যাগকারী) ব্যক্তিকে।” [ইবনে আবী শায়বাহ ৬/৪৬৮ –এর সনদ সহীহ]
বুঝা গেল, যে হাদীসটিতে জান্নাতি বলতে ‘আল-জামা‘আত’-কে বুঝানো হয়েছে। সেটাই কুরআন ও অন্যান্য সহীহ হাদীসে জামা‘আতুল মুসলিম বা মু’মিনদের পথকে বুঝানো হয়েছে। এ কারণে নবী (স)ও আমাদেরকে নিম্নোক্ত নামে পরস্পরকে সম্বোধন করতে বলেছেন :
فَادْعُوْا بِدَعْوَى اللهِ الَّذِيْ سَـمَّاكُمُ الْـمُسْلِمِيْنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ، عِبَادَ اللهِ
“সুতরাং তোমরা (নিজেদেরকে) ডাকো যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা ডেকেছেন। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন – মুসলিমীন, মু’মিনীন, ইবাদুল্লাহ।” [তিরমিযী – কিতাবুল আমসাল ; ইমাম তিরমিযী বলেন : হাদীসটি হাসান-সহীহ-গরীব। শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।(তাহ: তিরমিযী হা/২৮৬৩)]
এতো ব্যাপক সংখ্যক হাদীসের প্রতি লেখকের কেন এই বিদ্বেষমূলক লেখা – সেটা সত্যিই দুশ্চিন্তার কারণ।
লেখক তিনটি হাদীস থেকে যে বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করেছেন – তার মধ্যে ‘আহলেহাদীস’ কথাটি একটিবারের জন্যও আসে নি।

হাদীসের সূত্র ব্যবহার করে নিজের বুঝকে উপস্থাপনা

মুযাফফর বিন মুহসিন – ৫ : অতএব আমাদেরকে রাসূল (ছাঃ) প্রদর্শিত সরল সোজা জান্নাতী পথে চলতে হবে এবং হক্বপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। কারণ হক্বপন্থী জামা‘আতের সাথে অবস্থানকে শরী‘আত অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে (বুখারী হা/৭০৮৪; আহমাদ হা/১৮৪৭২; ছহীহাহ হা/৬৬৭)।

[এই অংশটি ‘তাওহীদের ডাকে’ আছে। কিন্তু বইটির ২৩১ পৃষ্ঠাতে নেই।]

জবাব-৫: লেখকের উল্লিখিত ক) বুখারীর হাদীসটিতে রয়েছে : ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন বা মুসলিমদের জামা‘আত।’[সহীহ বুখারী (তাওহীদ প্রকাশনী) হা/৭০৮৪]
খ) আহমাদ ও সহীহাহ-এর হাদীসটিতে রয়েছে : ‘আল-জামা‘আত।’ কিন্তু লেখক উক্ত শব্দগুলো কেন উল্লেখ করলেন!? লেখকের সূত্র উল্লেখ থেকে বুঝা যায়, তিনি খুব ভালভাবেই জানেন ‘আল-জামাআত’-ই ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’। যেভাবে কিছু পূর্বে হাদীস থেকে হাদীস দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উল্লেখ্য ‘আল-জামা‘আত’ শব্দটি যেভাবে ‘জামাআতুল মুসলিমীন’ বা মুসলিম সর্বসাধারণের জ্ন্য ব্যবহৃত হয়েছে। তেমনি ‘আল-জামা‘আত’ শব্দটি বিশেষ অর্থ যেমন – মুসলিম দায়িত্বশীল বা আলেম-উলামা প্রভৃতি অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে।

‘আহলুল ইলম’-ই ‘আহলুল হাদীস’

মুযাফফর বিন মুহসিন – ৬ (পৃ: ২৩১):
রাসূল (ছাঃ)-এর পরিচিতির আলোকে ছাহাবায়ে কেরাম ও পূর্বসুরী মুহাদ্দিছগণ উক্ত পথ ও আক্বীদার কয়েকটি নাম মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন। (১) সালাফী। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবী তথা পূর্বসুরীদের অনুসারী হিসাবে `সালাফী’। (বুখারী হা/৬২৮৬; মুসলিম হা/৬৪৬৭; ফাতাওয়া আলবানী পৃ: ২)।
(২) আহলুল হাদীছ বা (৩) আছহাবুল হাদীছ। ছাহাবায়ে কেরাম কুরআন ও হাদীছের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন বলে আহলেহাদীছ বা আছহাবুল হাদীছ। আর কুরআন ও হাদীছ উভয়কে শরী‘আতে হাদীছ বলা হয়েছে (যুমার ২৩; মুসলিম হা/২০৪২, শু‘আবুল ঈমান হা.১৭৪১) (৪) আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত। এখানে দুই হাদীছে বর্ণিত দুইটি গুণ এক সঙ্গে যুক্ত হয়েছে (মুক্বাদ্দামা মুসলিম হা/২৭; আবুদাঊদ হা/৪৫৯৭) (৫) আহলুল ইলম (বুখারী ২/১০৭৮ পৃঃ, হা/৭৩১২; ছহীহাহ হা/২৭০-এর আলোচনা)।
রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর থেকে সকল যুগের বরেণ্য মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম হক্বপন্থীদেরকে উক্ত নামেই চিহিত করেছেন উল্লেখ করেছেন। ভিন্ন কোন নাম বলেননি।রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর থেকে সকল যুগের বরেণ্য মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম উক্ত নামগুলোই উল্লেখ করেছেন। ভিন্ন কোন নাম বলেননি।

[দাগানো অংশগুলো ‘তাওহীদের ডাকে’ ছিল না। উক্ত শেষ প্যারাাটি ছিল নিম্নরূপ :
“রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর থেকে সকল যুগের বরেণ্য মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরাম উক্ত নামগুলোই উল্লেখ করেছেন। ভিন্ন কোন নাম বলেননি (বিস্তারিত দ্রঃ আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০-এর আলোচনা)।”

জবাব-৬: সালাফী শব্দের হাদীসটিতে আছে : নবী (স) তাঁর মৃত্যু সন্নিকটে হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে একজন সাহাবীকে বললেন : قَدِ اقْتَرَبَ فَاتَّقِى اللَّهَ وَاصْبِرِى فَإِنَّهُ نِعْمَ السَّلَفُ أَنَا لَكِ “আমি চিরবিদায়ের সন্নিকটে। সুতরাং তুমি আল্লাহকে ভয় করে চলবে এবং বিপদে সবর করবে। নিশ্চয় আম তোমার জন্য উত্তম অগ্রগমনকারী (সালাফ)।” [সহীহ বুখারী হা/৬২৮৬, সহীহ মুসলিম হা/৬৪৬৭]
সম্মানিত পাঠক! উক্ত পরিচয়ের মধ্যে কোথাও তোমাদের নাম ‘সালাফ/সালাফী’ এগুলো উল্লেখ করা হয় নি। কিভাবে উক্ত শব্দটি সালাফী শব্দের মাধ্যমে একটি সম্প্রদায়ের পরিচিতি প্রকাশের দলিল হতে পারে। অনেক বদ হানাফী আলেম নিজেরদের পক্ষে কুরআন থেকে দলিল দেয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে ‘দ্বীনে হানীফ’ (সূরা ইউনুস : ১০৫) বলে উল্লেখ করেছেন। তেমনি লেখকের দলিলগুলোর অবস্থা একই রকম। এমনকি যারা এটা ব্যবহার করেছেন তারাও নিজেদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর দেয়া নাম – মুসলিম, মু’মিন, ইবাদুল্লাহর সাথে কখনই সাংঘর্ষিক মনে করেন নি। যা লেখকের পক্ষ ‘মুসলিম তত্ত্ব’ বলে নিন্দা করা হয়েছে। তেমনি পরের দলিলগুলোর ক্ষেত্রে ‘তোমাদের নাম দেয়া হয়েছে আহলেহাদীস, আহলে সুন্নাত’ মর্মে লেখক কিছুই উল্লেখ করতে পারেন নি। কেবল মনগড়া ক্বিয়াস করে জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যা সহীহ মুসলিমের উদ্ধৃতির মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্যে পরিচয় দেয়ার কারণটি সুস্পষ্ট হয়। যেমন – তাবেঈ ইমাম ইবনে শিরীন (রহ) বলেছেন :
لَمْ يَكُونُوا يَسْأَلُونَ عَنِ الإِسْنَادِ فَلَمَّا وَقَعَتِ الْفِتْنَةُ قَالُوا سَمُّوا لَنَا رِجَالَكُمْ فَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ السُّنَّةِ فَيُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ وَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ الْبِدَعِ فَلاَ يُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ
“এমন একটা সময় ছিল যখন লোকেরা সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতো না। কিন্তু পরে যখন ফিতনা দেখা দিল তখন লোকেরা হাদীস বর্ণনাকারীদের বললো, আমাদের কাছে তোমাদের নাম বল। তারা একথা এ কারণে জানতে চাইতে, যাতে দেখা যায় তাঁরা (স্ব নামে পরিচিত বর্ণনাকারী) আহলে সুন্নাত কিনা? সেক্ষেত্রে তার হাদীস গ্রহণ করা হবে। আর যদি দেখা যায়, তারা (স্ব নামে পরিচিত বর্ণনাকারী) আহলে বিদআত, তাহলে হাদীস গ্রহণকরা হবে না।” [সহীহ মুসলিম- মুক্বাদ্দামাহ হা/২৭]
অর্থাৎ উক্ত পরিচয়গুলো তাদের জন্যে প্রযোজ্য, যাদের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন ও হাদীসের ইলমকে সামগ্রিকভাবে হেফাযত করেছেন। উল্লেখ্য সনদে বর্ণনাকারীর নাম থাকে। আহলে সুন্নাত নামটি থাকে না। যখন বর্ণনাকারী নিজের নামটি বলে, তখন পারস্পরিক পরিচিতির মাধ্যমে তারা জানতে পারতেন তিনি আহলে সুন্নাত কিনা। যা এখন করা হয় আসমাউর রিজালের মাধ্যমে।
তা ছাড়া লেখকের উল্লিখিত সূত্রের মধ্যে শেষোক্ত সহীহ বুখারীর শব্দগুলোতে প্রকৃত দিক-নির্দেশনা দেয়। ইমাম বুখারী (রহ) একাধিক স্থানে ঐ ‘আহলুল ইলম’ বলতে আলেমদেরকে বুঝিয়েছেন। তিনি সাধারণ মুসলিমদেরকে উক্ত ‘আহলুল ইলমের অন্তর্ভুক্ত করেন নি। যেমন –
بَاب قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ يُقَاتِلُونَ وَهُمْ أَهْلُ الْعِلْمِ
“অনুচ্ছেদ : নবী (স)এর উক্তি : আমার উম্মাতের মধ্যে এক দল সর্বদাই হক্বের উপর বিজয়ী থাকবে। আর তাঁরা হলেন আহলুল ইলম (দ্বীনি ইলমের অধিকারী)। [সহীহ বুখারী – কিতাবুল ই‘তিসাম (তাওহীদ প্রকাশনী ৬/৪৫৩ পৃ:)]
অপর একটি অনুচ্ছেদে ইমাম বুখারী (রহ) লিখেছেন :
…..وَكَانَتْ الْأَئِمَّةُ بَعْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْتَشِيرُونَ الْأُمَنَاءَ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ فِي الْأُمُورِ الْمُبَاحَةِ …..
“…. নবী (স)এর পরে ইমামগণ বিশ্বস্ত ‘আহলুল ইলম’-এর সাথে মুবাহ বিষয়ে পরামর্শ করতেন….।” [সহীহ বুখারী – কিতাবুল ই‘তিসাম بَاب قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى { وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ } { وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ } وَأَنَّ الْمُشَاوَرَةَ قَبْلَ الْعَزْمِ وَالتَّبَيُّنِ (তাওহীদ প্রকাশনী ৬/৪৭৮ পৃ:)]
অন্যত্র ইমাম বুখারী (রহ) ‘আল-জামা‘আত’ বলতেও ‘আহলুল ইলম’-কে বুঝিয়েছেন। [সহীহ বুখারী – কিতাবুল ই‘তিসাম (তাওহীদ প্রকাশনী ৬/৪৬৭ পৃ:)]
উল্লেখ্য পূর্বে প্রমাণিত হয়েছে, ‘আল-জামা‘আত’ বলতে মুসলিমদের মূল দায়িত্বশীলদের কথা বলা হয়েছে। আর নিঃসন্দেহে হক্বপন্থী আলেমগণও ঐ দায়িত্বশীলদের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ‘আল-জামা‘আত’ বলতে মুসলিম সর্বসাধারণ বা ‘জামাআতুল মুসলিমীন’-কেও বুঝানো হয়েছে। কিন্তু আহলে হাদীস বলতে কেবলই আহলে ইলমদেরকে বুঝানো হয়েছে।
অন্যত্র ইমাম বুখারী (রহ) বলেছেন :
…..وَمَدَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاحِبَ الْحِكْمَةِ حِينَ يَقْضِي بِهَا وَيُعَلِّمُهَا لَا يَتَكَلَّفُ مِنْ قِبَلِهِ وَمُشَاوَرَةِ الْخُلَفَاءِ وَسُؤَالِهِمْ أَهْلَ الْعِلْمِ
“…. নবী (স) তাঁদের প্রশংসা করেছেন, যাঁরা হিকমাতের সাথে বিচার করে ও হিকমাতের শিক্ষা দেন এবং মনগড়া কোন ফায়সালা করেন না। তেমনি খলীফাদের সঙ্গে পরামর্শ করা এবং আহলুল ইলমদের জিজ্ঞাসা করা। …।” [সহীহ বুখারী – কিতাবুল ই‘তিসাম, بَاب مَا جَاءَ فِي اجْتِهَادِ الْقُضَاةِ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى (তাওহীদ প্রকাশনী ৬/৪৫৫ পৃ:)]
শায়েখ আলবানী (রহ) থেকে লেখক সূত্র উল্লেখ করলেও সেখান থেকে শিক্ষা নেন নি। কেননা তিনি তাঁর ‘আস-সহীহাহ’-র উল্লিখিত ২৭০ নং হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এক স্থানে লিখেছেন : أهل العلم هم أهل الحديث لأن “কেননা আহলুল ইলমই হল আহলুল হাদীস।” [লেখক এটি উল্লেখ করলেও (ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন পৃ: ২২০), তা থেকে শিক্ষা নেন নি।
আলোচনার শেষে শায়েখ আলবানী (রহ) বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট করেছেন, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী (রহ)এর উদ্ধৃতির মাধ্যমে। এক স্থানে তিনি লিখেছেন :
.... أن أكثر المسائل الفرعية و الأصلية التي اختلف العلماء فيها ،فمذهب المحدثين فيها أقوى من مذاهب غيرهم ....
“.....নিশ্চয় অধিকাংশ উসূলি (নীতিগত) ও ফুরুয়ি (শাখাগত) মাসআলাতে আলেমদের মধ্যে ইখতিলাফ দেখা যায়। তবে এর মধ্যে মুহাদ্দিসগণের মাযহাব অন্যান্য সমস্ত মাযহাবের চেয়ে বেশী শক্তিশালী।....” [আস-সহীহাহ হা/২৭০-এর আলোচনার শেষাংশ]
এ পর্যন্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল, লেখক মুযাফফার বিন মুহসিন যে সমস্ত কিতাবের সূত্র উল্লেখ করেছেন; সেগুলোতে আলেমদের কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হলেও, তিনি সেটা স্পষ্ট করতে চান নি। অথচ শব্দগুলোকে সুনির্দিষ্ট করণের মাধ্যমে ‘আহলেহাদীস’ শব্দ নিয়ে বিতর্কের অবসান রয়েছে।

মুযাফফর বিন মুহসিন – ৭ (পৃ: ২৩২) : তাছাড়া উক্ত নামগুলো কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতি, দল মাযহাব বা স্থান কেন্দ্রীক নয়। যেমন ভ্রান্ত ফের্কাগুলো বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ব্যক্তি কেন্দ্রীক সৃষ্টি হয়েছে। (বিস্তারিত দ্রঃ আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০-এর আলোচনা)।
[এই অংশটুকু ‘তাওহীদের ডাকে’ ছিল না]

জবাব-৭: পূর্বের ‘জবাব-৬’-এ প্রমাণিত হয়েছে, এগুলো ছিল সুন্নাতের হেফাযতকারী আলেম তথা মুহাদ্দিসগণের পরিচিতি। আমরা লেখকের কথার সাথে তাল মিলিয়ে এটাও বলতে পারি, এটা কোন সংগঠনেরও নাম নয়- যেমন : ‘আহলেহাদীস আন্দোলন’ বা ‘আহলেহাদীস ‍যুবসংঘ’।

সবাই মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে – পরে পরিবেশের কারণে নানা বিকৃত নামে পরিচয় দেয়

মুযাফফর বিন মুহসিন – ৮ (পৃ: ২৩২) : মূলতঃ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের হওয়ার কারণে হক্বপন্থীগণ বিভিন্ন স্বনামধন্য নামে ভূষিত হয়েছেন।* যেমন স্বয়ং রাসূল (ছাঃ) নিজেই দু’টি পরিচয় ব্যক্ত করেছেন। তাই শুধু মুসলিম পরিচয় দেয়া রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
অনুরূপ যুগ যুগ ধরে পরিচিত হক্বপন্থীদের নীতির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় (শারফু আছহাবিল হাদীছ)। তাছাড়া মুসলিম বলে পরিচয় দেয়ারও কান প্রয়োজনীতা নেই। কারণ সকলে মুসলিম হয়েই জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় (রূম ২০; বুখারী হা/১৩৮৫)। **
[‘তাওহীদে ডাকে’ তারকা (*) চিহ্নিত অংশগুলো ছিল নিম্নরূপ :

* মূলতঃ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন স্বনামধন্য নামে ভূষিত করা হয়েছে।
**তেমনি যুগে যুগে পরিচিত ছাহাবায়ে কেরাম বা পূর্বসুরী সালাফীদের রীতিও নয়। আর এটা বলে পরিচয় দেয়ার কোন প্রয়োজনীতাও নেই। কারণ সকলে মুসলিম হয়েই জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় (রূম ২০; বুখারী হা/১৩৮৫)। ]

জবাব-৮: রসূল (স) প্রদত্ত দু’টি পরিচয় মুহাজির ও আনসার – শব্দ দু’টি মুসলিমদের মধ্যে বিরোধের কারণ হলে, সেটাকে স্বয়ং রসূলুল্লাহ (স) জাহেলিয়াত বলেছেন (বিস্তারিত হাদীস দ্র: জবাব-৯)। মুসলিম পরিচয় দেয়াকে লেখক প্রয়োজনহীন বলেছেন। অথচ নবী (স) আমাদেরকে বলেছেন :
فَادْعُوْا بِدَعْوَى اللهِ الَّذِيْ سَـمَّاكُمُ الْـمُسْلِمِيْنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ، عِبَادَ اللهِ
“সুতরাং তোমরা (নিজেদেরকে) ডাকো যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা ডেকেছেন। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন – মুসলিমীন, মু’মিনীন, ইবাদুল্লাহ।” [তিরমিযী – কিতাবুল আমসাল ; ইমাম তিরমিযী বলেন : হাদীসটি হাসান-সহীহ-গরীব। শায়েখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।(তাহ: তিরমিযী হা/২৮৬৩)]
সাহাবীগণ (রা)-কে যখন নবী (স) পরিচয় জিজ্ঞাসা করেছেন, তখন তারাও উক্ত শিক্ষার আলোকে আমল করেছেন। যেমন, বিদায় হজ্জ উপলক্ষে বর্ণিত হয়েছে :
عن ابن عباس، ان النبي صلى الله عليه وسلم. لقي ركبا بالروحاء. فقال “من القوم ؟” قالوا. المسلمون. فقالوا: من أنت ؟ قال ” رسول الله ” فرفعت إليه امرأة صبيا فقالت: ألهذا حج ؟ قال ” نعم. ولك أجر”.
“ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (স) একদল যাত্রীর সাথে রাওহা নামক স্থানে মিলিত হলেন এবং তাদের বললেন : আপনারা কে? তারা বলল : আমরা মুসলিম। অতঃপর তারা বলল : আপনি কে? রসূলুল্লাহ (স) বললেন : আমি আল্লাহর রসূল। এই সময় একটি মেয়ে একটি শিশুকে তুলে ধরে বলল : এর কি হাজ্জ আছে? উত্তরে তিনি বললেন : হ্যাঁ! তবে সওয়াব তুমি পাবে।” [সহীহ মুসলিম, বুলূগুল মারাম হা/৬৯৯]
বুঝা গেল, নবী (স) ও সাহাবীগণ নিজেদেরকে কোন নামে পরিচয় দিতে বলেছেন, কিংবা নিজেদেরকে পরিচিত করতেন। আর এঁরাই সালাফদের মূল সালাফ। এখন লেখকের উক্তি “…তাই শুধু মুসলিম পরিচয় দেয়া রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তেমনি যুগে যুগে পরিচিত ছাহাবায়ে কেরাম বা পূর্বসুরী সালাফীদের রীতিও নয়। (বইটির বর্ণনাতে : হক্বপন্থীদের নীতির সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়) …. “ বাতিল হল। লেখক বৈশিষ্ট্যগত পরিচয়ের ক্ষেত্রে যেভাবে উপস্থাপনার মাধ্যমে নিজ কর্মীদের মগজ ধোলাই করার চেষ্টা করেছেন – তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হল।
সূরা রূমের ২০ নং আয়াতটিতে মানুষ সৃষ্টির পর তাদের পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আর সহীহ বুখারীর হা/১৩৮৫ (তাওহীদ প্রকাশনী) সমস্ত শিশু ফিতরাত তথা স্বভাব ধর্মের (ইসলামের) উপর জন্ম গ্রহণ করার কথা বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, পরবর্তিতে তার পিতামাত তাকে ইয়াহুদী ও নাসারাতে পরিণত করে।
শেষোক্ত হাদীসটিতো লেখকের বিপক্ষে যায়। কেননা পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে মানুষ যেভাবে বিকৃত হয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে ইয়াহুদী, নাসারা বা মুশরিক হয় – সেই বৈশিষ্ট্যগুলোকে হাদীসটিতে নিন্দা করা হয়েছে। আর লেখকেরও এখন থেকে ইয়াহুদী, নাসারাদেরকে মুসলিম বলা উচিত। অথচ সেটা অনেক বড় ভুল সিদ্ধান্ত। কাজেই আমরা বলতে পারে, মুসলিম হিসেবে জন্মলাভ করার পর; হানাফী, মালেকী, শাফেঈ, হাম্বলী, আহলেহাদীস শব্দের ব্যবহারও অনুরূপ। কেননা লেখকের হাদীসটি অনুযায়ী মানুষ মুসলিম হিসেবে জন্মলাভ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা এ সমস্ত মাযহাবী নামে তার পরিচয় দিতে শেখায়। মুসলিমদের সৎ ও যোগ্য আলেমরা নিজেদেরকে আহলেহাদীস বলে পরিচয় দিয়েছেন। সেটা হাদীসের বিশেষজ্ঞদের জন্য নির্দিষ্ট। আর এখন মুযাফফর বিন মুহসিনের মত লেখকরা – সেটার অপপ্রয়োগ করে সর্বসাধারণকে ঐ বিশেষ বৈশিষ্ট্যে পরিচয় দিতে বলছেন। সাথে সাথে মুসলিম নামটির প্রতি ঘৃণা ছড়াচ্ছেন ও নামটির মাধ্যমে পরিচয় দেয়াকে অর্থহীন বলছেন।
লেখক নিজের বুঝ অনুযায়ী যেভাবে আয়াত ও হাদীসের অপপ্রয়োগ করেছেন – সেটা বৈধ হলে, কাদিয়ানিদের তাফসীরেরও বৈধতা দিতে হবে। তিনি এত বিজ্ঞ যে, নিজের ভাবের স্বপক্ষে আয়াত ও হাদীসকে সংক্ষেপে উল্লেখ করে অহীর দাবীকেই বিকৃত করেছেন। তাঁকে এত পণ্ডিত হতে কে বলেছে?! বরং তার কথার চেয়ে তো কুরআন ও হাদীসের হুবহু উদ্ধৃতিই জরুরি। যা আমরা শেষোক্ত উদাহরণটিতে প্রমাণ করেছি।

‘মুহাজির’, ‘আনসার’ প্রভৃতি গুণের পরিচয় মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করলে তা পরিত্যাজ্য

মুযাফফর বিন মুহসিন – ৯ (পৃ: ২৩২): এ জন্য আল্লাহ বৈশিষ্ট্যগত নামকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন মুহাজির ও আনছার। এর অর্থ তাঁদেরকে মুসলিম থেকে বের করে দেয়া নয়। বহু স্থানে মুমিন, মুত্তাক্বী, মুহসিন বলে পরিচয় তুলে ধরেছেন। তার অর্থ মুসলিম থেকে বের করা নয় বা তারা মুসলিম ছাড়াই মুহাজির ও আনছার নন। যেখানে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হতে বলা হয়েছে, সেখানে হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে বলা হয়েছে (তাফসীরে ইবনে কাছীর, সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
[দাগানো অংশটুকু ‘তাওহীদের ডাকে’ নেই।]

জবাব- ৯: মু’মিন শব্দটিও মুসলিমদের নাম হিসেবে সহীহ হাদীসে স্বীকৃত। মুহাজির, আনসার, মুত্তাক্বী, মুহসিন – এগুলো মুসলিমদের নাম নয় বরং গুণ হিসেবে স্বীকৃত। যে মুসলিম হিজরত করে নি – সে মুসলিম, কিন্তু হিজরত না করাতে সে মুহাজির নয়। তেমনি মদীনাবাসী যারা মুহাজিরদেরকে সহযোগিতা করেছিল, তারাই আনসার। এক্ষেত্রে যারা মুহাজির ছিল, তারা আনসার নয় – কিন্তু মুসলিম। তেমনি যারা আনসার ছিলেন, তারা মুহাজির ছিলেন না – কিন্তু মুসলিম ছিলেন। কাজেই বুঝা যাচ্ছে – এখানে মুসলিম বা মু’মিন হওয়াটাই মুখ্য। অন্য আমলগুলো সবার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব না হলেও – তারা সবাই মুসলিম। তাহলে কিভাবে মুসলিমের চাইতে উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোতে পরিচয় দেয়াটা বেশী গুরুত্ববহ হতে পারে?!
লেখক মুত্তাক্বী ও মুহসিন শব্দ দু’টিও মুহাজির ও আনসার শব্দ দু’টি ব্যবহারের মত মনে করেছেন। অথচ মুহাজির ও আনসারদের মত কোন গোষ্ঠী বা দল বা এলাকাকে মুত্তাক্বী কিংবা মুহসিন হিসেবে সুনির্দিষ্ট করা হয় নি। তা ছাড়া এ দু’টি বৈশিষ্ট্য মুসলিমদের নাম বা কাউকে সম্বোধন করার জন্য বিশেষণ হিসেবে প্রয়োগের কোন প্রমাণ কুরআন ও সুন্নাহতে নেই। অথচ মুসলিম, মু’মিন ও ইবাদুল্লাহ’র সমর্থনে আমরা কিছু পূর্বে হাদীস উপস্থাপন করেছি।
অনেক ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় গুণের পরিচয় যদি মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ বা দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে, তা হলে সেটাও নবী (স) থেকে নিন্দিত হয়েছে। যেমন- জাবির (রা) বলেন :
غزونا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم وقد ثاب معه ناس من المهاجرين حتى كثروا، وكان من المهاجرين رجل لعاب، فكسع أنصاريا، فغضب الأنصاري غضبا شديدا حتى تداعوا، وقال الأنصاري: يا للأنصار، وقال المهاجري: يا للمهاجرين، فخرج النبي صلى الله عليه وسلم فقال: (ما بال دعوى أهل الجاهلية؟ ثم قال: ما شأنهم). فأخبر بكسعة المهاجري الأنصاري، قال: فقال النبي صلى الله عليه وسلم: (دعوها فإنها خبيثة).
“আমরা রসূলুল্লাহ (স)এর সাথে গযওয়াতে (যুদ্ধে) শরীক ছিলাম। এ যুদ্ধে বহু সংখ্যক মুহাজির সাহাবী অংশগ্রহণ করেন। মুহাজিরদের মধ্যে একজন কৌতুক পুরুষ ছিলেন। তিনি কৌতুকচ্ছলে একজন আনসারীকে আঘাত করলেন। তাতে আনসারী সাহাবী ভীষণ ক্রুদ্ধ হন। তারা উভয় গোত্রের সহযোগিতার জন্য নিজ নিজ লোকদের ডাকলেন। আনসারী সাহাবী বললেন : হে আনসারীগণ। মুহাজির সাহাবী বললেন : হে মুহাজিরগণ, সাহায্যে এগিয়ে আসুন। নবী (স) এটা শুনে বের হয়ে আসলেন। অতঃপর বললেন : জাহেলি যুগের হাকডাঁক কেন? অতঃপর বললেন : তাদের ব্যাপার কি? তাঁকে ঘটনা জানান হল, মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীর কোমরে আঘাত করেছে। (রাবী) বলেন : নবী (স) বললেন, এ জাতীয় হাঁকডাক ত্যাগ কর। এটা অত্যন্ত খবীস (নিকৃষ্ট) কাজ।” [সহীহ বুখারী-কিতাবুল মানাকিব, باب: ما ينهى من دعوى الجاهلية (অনুচ্ছেদ : জাহেলীযুগের মত সাহায্য প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ)]
বুঝা গেল, ঐ দল বা সম্প্রদায়ের বিশেষ পরিচিতি মুসলিমদের মধ্যে বিভক্তির কারণ হলে – সেটাকে জাহেলিয়্যাতের আচরণ বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে উক্ত বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে পরস্পরকে আহবান করতে নিষেধ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে কুরআন ও সহীহ হাদীসে ‘মুসলিম’, ‘মু’মিন’, ‘ইবাদুল্লাহ’ নামগুলো দ্বারা পরস্পরকে সম্বোধন করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আফসোস লেখকের জন্য, তিনি কুরআন ও সহীহ হাদীসের সঠিক বুঝ ও তার প্রয়োগ থেকে কতইনা দূরে – বরং জাহেলি চিন্তার মধ্যে অবস্থান করছেন।
সম্মানিত পাঠক! লেখকের মন্তব্যটুকুর সাথে পুনরায় আমাদের জবাবটুকু পাঠ করুন।
ইমাম ইবনে কাসির (রহ) সূরা হা-মিম সাজদাহ-এর ৩৩ নং আয়াতটি সম্পর্কে বলেছেন :
{ وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ } أي: دعا عباد الله إليه، { وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ } أي: وهو في نفسه مهتد
“তার চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়’ –অথ: এখানে ইবাদুল্লাহদেরকে আহবান জানানো হয়েছে। … ‘আর যে আমলে সালেহ করে এবং বলে : আমি মুসলিমদের একজন’ – অর্থ : যারা নিজেরা হিদায়াত প্রাপ্ত।”
নিঃসন্দেহের মুসলিমরাই ‘ইবাদুল্লাহ’ যেভাবে নবী (স)এর হাদীস থেকে পূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। আর নিশ্চয় তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। এছাড়া আয়াতটি থেকে আরো একটি শিক্ষা পাওয়া যায়। আর সেটি হল : দাওয়াতদাতা নিজের পরিচয় হিসেবে ‘মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত বলবেন’। কোন মাযহাব, তরীকা, দল, সংঘের নামে দাওয়াত দেবেন না।
সম্মানিত পাঠক! খুব গভীরভাবে খেয়াল করুন – দাওয়াতদাতার পরিচয় ‘মুসলিম’ হওয়াকে লেখক কি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন নি??

মুসলিম নামের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ

মুযাফফর বিন মুহসিন – ১০ (পৃ: ২৩২): মূলতঃ ‘মুসলিম তত্ত্ব’ এটি নতুন থিউরী। অতি উৎসাহিত কিছু রোগাগ্রস্ত মহল এটাকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে এবং যুগ যুগ ধরে সুপরিচিত বিশ্বনন্দিত ঈর্ষণীয় উক্ত নামগুলো নিয়েই খেলা করছে। টিভিতে এ্যাড আকারে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ সমাজে প্রচলিত অসংখ্য বিদ‘আতী নাম নিয়ে ঐ মহলের ততটা মাথা ব্যথ্যা নেই।
যদিও নামকে গুরুত্ব না দিয়ে বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ অনেক ক্ষেত্রে নামের সাথে কাজের মিল থাকে না, যা বর্তমানে স্পষ্ট। সুতরাং ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীমের’ পরিচয়টা হল আসল পরিচয়।

[দাগানো অংশগুলোতে ‘তাওহীদের ডাকে’ (জুলাই-আগষ্ট’২০১৩) কিছুটা ভিন্ন ছিল। শেষের প্যারাটি সেখানে ছিল কিন্তু বইটিতে বাদ দেয়া হয়েছে।]

জবাব-১০: যেখানে আল্লাহ ‘মুসলিম’ শব্দটির ব্যাপারে বলেছেন – এ নামটি পূর্বের এবং এই কিতাবেও মু’মিনদের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। নবী (স) পরস্পরকে ‘মুসলিম’, ‘মু’মিন’ ও ‘ইবাদুল্লাহ’ বলার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সেখানে লেখক কিভাবে একে ‘মুসলিম তত্ত্ব’ বলে নিজের ঘৃণা প্রকাশ করলেন!! তিনি এই হক্ব নামগুলোর প্রচারকদেরকে ‘রোগগ্রস্ত মহল’ বলেন নি, বরং তিনি এর মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রসূলুল্লাহ (স)-কেই সম্পৃক্ত করেছেন। যা তিনি ‘মুসলিম’ নামটির প্রতি হিংসা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন।
লেখক পরবর্তিতে নিজেই বিদ‘আতী মহলদের বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করেছেন। যার মধ্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (স)এর প্রশংসা প্রাপ্ত একটি নামও নেই। ফলে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে হক্ব নামটির মাধ্যমে পরিচয় দেয়ার ক্ষেত্রে দূরে রেখেছে। তাদের কাছেও আমাদের লেখকের ন্যায় ‘মুসলিম’, ‘মু’মিন’ ও ‘ইবাদুল্লাহ’ নামটির চেয়ে নিজেদের পছন্দের বৈশিষ্ট্যগত নামই বেশী যুক্তিযুক্ত। আমাদের এই লেখার আহবান ঐ সব বিদ‘আতীদেরকে অবশ্যই আঘাত করবে,যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দেয়া নামের চেয়ে – নিজের পছন্দের মাযহাব, তরীক্বা, দল প্রভৃতির নামে পরিচয় দিয়ে থাকে। যা লেখকের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

বিদ‘আতী সম্প্রদায় নিজেদের আবিষ্কৃত নামে পরিচিত –যা অহীভিত্তিক নয়

মুযাফফর বিন মুহসিন – ১১ (পৃ:২৩২-৩৩): রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন বিদ‘আতী ও ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব ঘটতে থাকে। বর্তমানে সেই পথভ্রষ্ট দলের সংখ্যা হাযার হাযার গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম চারটি দল সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) স্পষ্ট ভাষায় ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। (ক) খারেজী। তারা হবে জাহান্নামের কুকুর (ইবনু মাজাহ হা/১৭৩)। (খ) মুরজিয়া (গ) ক্বাদারিয়া। এই দুইটি দল কাওছারের পানি পান করতে পারবে না এবং জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না (তাবারাণী আওসাত্ব হা/৪২০৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৪৪৮)। (ঘ) শী‘আ (বুখারী হা/৩১০৪; ছহীহাহ হা/২৪৯৪)। এই দলগুলো মুসলিমদেরই অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন। এছাড়া উক্ত বাতিল ফের্কাগুলোর শাখ-প্রশাখা হিসাবে রাফেযী, জাবরিয়া, জাহমিয়া, মু‘তাযিলা ইত্যাদি ফির্কাও বহুল পরিচিত। হানাফী, শাফেঈ, মালেকী, হাম্বলী নামে প্রসিদ্ধ চারটি মাযহাব চালু আছে। শুধু হানাফী মাযহাবই বিভক্ত হয়েছে অসংখ্য দলে। শরী‘আত, তরীক্বত, হাক্বীক্বত, মা‘রেফত নামে ছূফী দর্শনের জন্ম হয়েছে। দেওবন্দী, ব্রেলভী, নকশাবন্দিয়া, ক্বাদারিয়া, চিশতিয়া, মুজাদ্দেদিয়া তরীক্বার নামে ভাগাভাগি হয়েছে। দেওবন্দী, ব্রেলভী নামে বৃহৎ দুইটি ফের্কার সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ্ লক্ষ পীর-ফকীরও হানাফী মাযহাবের অনুসারী বলে দাবী করছে। যদিও তাদের পরস্পরে যেমন মিল নেই, তেমনি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর সাথেও কোন সম্পর্কে নেই। অতএব মুসলিম নামধারী দল হলেই যে সেখানে ভর্তি হতে হবে তা নয়। এজন্য ইমাম ইবনু হাযম আন্দালুসী বলেন, ‘ইসলামী দলসমূহের মধ্যে অনেক ফের্কারই ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছে। মূলতঃ সেগুলো ইসলামী দল নয়। যেমন চরমপন্থী খারেজী জোট’। অন্যত্র তিনি অনেক বাতিল ফের্কার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘ঐ দলগুলো সবই ইসলাম বহির্ভূত। আমরা তাদের প্রতারণা হতে আল্লাহ্র নিকট পরিত্রাণ ভিক্ষা করছি’ (কিতাবুল ফাছল ১/৩৭১-৭২)। আব্দুল করীম শহরাস্তানী বলেন, ‘শী‘আদের দাবীর পক্ষে কুরআনে যেমন দলীল নেই তেমনি মুসলিমদের মাঝেও নেই। কারণ তারা মুসলিম নয়’। রাফেযীদের সম্পর্কেও একই রকম মন্তব্য করেন (আল-মিলাল ২/৭৮ পৃঃ)।

[নিচে একটি দাগ দেয়ার অর্থ – ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকাটির সাথে আলোচ্য বইটির পার্থক্য বা সংযোজন।]

জবাব-১১: লেখকের উল্লিখিত ফিরক্বাগুলোর কোনটিই হাদীসে উল্লিখিত ‘মুসলিম’, ‘মু’মিন’, ‘ইবাদুল্লাহ’ নামে নিজেদের পরিচয় দেয় নি। বরং এই নামগুলো ত্যাগ করে স্বতন্ত্র পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। যার সমর্থন কুরআন ও সহীহ হাদীসে নেই। এজন্যে তাদের নামগুলো ভাল বৈশিষ্ট্যগত পরিচিতি হিসেবে ইসলামে স্বীকৃতি পায় নি। এরফলে লেখকের উদ্ধৃতিগুলোর সাথে কুরআন ও সহীহ হাদীসের মিল পাচ্ছি না।
লেখক তাদেরকে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি উক্ত উদ্ধৃতির মধ্যে তাদেরকে বলেছেন ১) ‘মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’, ২) ‘মুসলিম নামধারী দল’। আবার ‘খারেজি’ ও ‘শিয়া’ সম্পর্কে বলেছেন – মুসলিম নয়। অন্যান্য নামের পরিচয়ের পক্ষে কুরআন বা সহীহ হাদীস থেকে প্রশংসাসহ কিছুই উল্লেখ করা হয় নি। বরং মুরজিয়া ও কাদারিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে হাসান ও যঈফ সনদের হাদীসে কঠিন তিরষ্কার বর্ণিত হয়েছে। তাহলে লেখক কেন জবরদস্তি করে তাদেরকে ‘মুসলিম নামধারী’ বলতে গেলেন? যখন তাদের ঐ বিশেষ বৈশিষ্ট্যমূলক নামগুলোর একটির সাথেও ‘মুসলিম’ নামটি নেই।!!?? আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।

‘মুসলিম জামা‘আতের’ আলেমগণই আহলে ইলম/ আহলে সুন্নাহ/আহলে হাদীস

মুযাফফর বিন মুহসিন – ১২ (পৃ: ২৩৩): পূর্বের মত এখনো অসংখ্য দল গজিয়ে উঠছে। আধুনিক ব্যাখ্যার নামে নতুন নতুন উদ্ভট তথ্য দিয়ে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তবে বিশ্লেষণের বিষয় হল, হাযারো ভ্রান্ত ফের্কা ও আক্বীদা সৃষ্টি হলেও আল্লাহর গযবে তা ধ্বংস হয়েছে, মুখ থুবড়ে পড়েছে, অসংখ্য মাযহাব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শুধু ‘সালাফী’ বা ‘আহলুল হাদীছ’ আক্বীদা ও পথকে আল্লাহ হেফাযত করেছেন। ফালিল্লা-হিল হামদ। অতএব ভ্রান্ত দর্শন যতই সৃষ্টি হোক তার ধ্বংস অনিবার্য। কারণ তারা আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ)-এর দেখানো সালাফীদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বর্ণিত আক্বীদা ও আমল এবং ছাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যা ও বুঝকে তারা পরওয়া করেনি। তারা ইসলাকে টুকরো টুকরো করেছে (আন‘আম ১৫৯)। এরাই ক্বিয়ামতের মাঠে কাওছারের পানি থেকে বঞ্চিত হবে। রাসূল (ছাঃ) তাদের প্রতি অভিশাপ করবেন এবং বিতাড়িত করবেন (বুখারী হা/৬৫৮৩)।
জবাব-১২: বিভিন্ন ফিরক্বা ও বিদ‘আতী সম্প্রদায়কে খণ্ডন করে কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী সঠিক আক্বীদা ও আমলটির উপস্থাপনা – মুসলিম সর্বসাধারণের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। এ কারণে যাদের মাধ্যমে কুরআন ও সহীহ হাদীসের সঠিকতা নির্ণয় সম্ভব হয় তারাই আহলে সুন্নাত বা আহলে হাদীস। যাদেরকে ইমাম বুখারী (রহ) ও অন্যান্যরা আহলে ইলম হিসেবে সম্বোধন করেছেন। এ প্রেক্ষিতে লেখকের শেষোক্ত বক্তব্যের সাথে আমাদের কোন দ্বিমত নেই।

মুযাফফর বিন মুহসিন – ১৩ (পৃ: ২৩৩-৩৪): সুতরাং হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া কোন রাস্তায় পা দেয়া যাবে না। কারণ এগুলো সব জাহান্নামের রাস্তা। ইসলামে ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীম’ ছাড়া নতুন কোন রাস্তা সৃষ্টি করার সুযোগ নেই। আমাদেরকে ইসলামের নামে সৃষ্ট যাবতীয় দল-উপদল প্রত্যাখ্যান করতে হবে। প্রতি ছালাতের প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে সেই সরল পথের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে হবে। প্রকৃতার্থে যারা সালাফী, আহলেহাদীছ, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদায় বিশ্বাসী তাদের সাথে অবস্থান করতে হবে। ‘উলুল আমর’ হিসাবে শরী‘আত অভিজ্ঞ শ্রেষ্ঠ আলেমের দলীল ভিত্তিক নির্দেশনায় পথ চলতে হবে (নিসা ৫৯; নাহল ৪৩-৪৪), যার নির্দেশনা ছাহাবীদের সাথে মিল থাকবে।
জবাব-১৩ : এর জবাব পূর্বের (জবাব-১২)-এর মত। আর শেষোক্ত ‘উলুল আমর’ অর্থে আলেমরাই আহলুল হাদীস। তাঁদেরকে সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতটির আলোকে মানার মধ্যেই প্রকৃত হিদায়েত।

মুযাফফর বিন মুহসিন – ১৪ (পৃ: ২৩৪): আগাছার মত যত্রতত্র জন্ম নেয়া স্বঘোষিত গণবিচ্ছিন্ন মূর্খ আমীর বা নেতাকে পাত্তা দেয়া যাবে না। অতএব আমাদেরকে রাসূল (ছাঃ) প্রদর্শিত সরল সোজা জান্নাতী পথে চলতে হবে এবং হক্বপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। কারণ হক্বপন্থীদের সাথে থাকাকে শরী‘আত অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে (তাওবা ১১৯; বুখারী হা/৭০৮৪; আহমাদ হা/১৮৪৭২; ছহীহাহ হা/৬৬৭)।

[এ অংশটুকু ‘তাওহীদের ডাকে’ নেই।]

জবাব-১৪ : আমরা পূর্বের আলোচনাতে দেখেছি লেখক বারবার ‘সিরাতে মুস্তাক্বীমের’ কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি দু’টি স্থানে ‘মুসলিম’ শব্দটি সূত্রসহ উল্লেখ করেছেন। কিন্তু উভয় স্থানে নামটিকে বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছেন। যেমন সূরা হজ্জ ৭৮ আয়াতটিতে বলেছেন : ‘… আত্মসমর্পন করবে বলে তিনি নাম রেখেছেন মুসলিম (পৃ: ২৩০)। আবার ইমাম ইবনে কাসিরের সূত্রে সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩৩ আয়াতটিতে ব্যবহৃত ‘মুসলিম’ শব্দটিকে ‘হেদায়েতপ্রাপ্ত’ (পৃ: ২৩২) শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছেন। পক্ষান্তরে বিদআতী ফিরক্বাগুলোর বিভিন্ন পরিচয়কে তিনি লিখেছেন: ‘এই দলগুলো মুসলিমদেরই অন্তর্ভুক্ত’ (পৃ: ২৩২) ও ‘মুসলিম নামধারী’ (পৃ: ২৩৩)। অথচ তাদের নামের সাথে আল্লাহ বা রসূলুল্লাহ (স)-এর পক্ষ থেকে প্রশংসনীয় কোন নাম দেয়া হয় নি। পক্ষান্তরে নবী (স) থেকে ‘মুসলিম’, ‘মু’মিন’ ও ‘ইবাদুল্লাহ’ নামগুলো ও সম্বোধন প্রমাণিত।
তাছাড়া লেখক ‘মুসলিম’ নামের চেয়ে ‘আনসার’ ও ‘মুহাজির’ নামকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন “….এ জন্য আল্লাহ বৈশিষ্ট্যগত নামকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন মুহাজির ও আনসার” (পৃ:২৩২)। যা আমরা ইতঃপূর্বে খণ্ডন করেছি।
লেখকের তাঁর কর্মীদের প্রতি সূক্ষ্ম ‘মগজ ধোলাই’-এর প্রচেষ্টা অত্যন্ত নিকৃষ্ট এবং সুস্পষ্টভাবে কুরআন ও সহীহ হাদীস বিরোধী। এ কারণে লেখক হক্বপন্থী হিসেবে যা দাবী করেছেন – তা মিথ্যা ও ধোঁকা দেয়ার নামান্তর।
তিনি যে দলটির কর্মীদের উদ্দেশ্যে লেখাটি লিখেছেন – সেটাও একটি আহলেহাদীস জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন গোষ্ঠী গঠন করেছে। তা ছাড়া তিনি ‘মুসলিম’ নামে যা উল্লেখ করেছেন সেটাই ইলমের সাথে সম্পর্ক রাখে না। এ পর্যায়ে শেষোক্ত মন্তব্যগুলো তার নিজের জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে কি না, সেটা পুনঃবিবেচনা করা উচিত।

মুযাফফর বিন মুহসিন – ১৫ (পৃ: ২৩৪): নির্ভেজাল তাওহীদের অপ্রতিরোধ্য আপোসহীন কাফেলা হিসাবে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ এবং ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ রাসূল (ছাঃ) প্রদর্শিত পথে* অটল থেকে সোনালী যুগের আদর্শ পুনরুদ্ধাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব মানবতাকে সেই প্লাটফরমের দিকে আহবান করছে। তাই রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আক্বীদা বিরোধী আধুনিক কোন ভুঁইফোড় চরমপন্থী বা নরমপন্থী মতবাদকে বরদাশত করে না। সেটা কথিত ইসলামের নামে হোক বা নব্য জাহেলিয়াতের নামে হোক। এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে শিকড়হীন উদ্ভট ফের্কাগুলো এই দ্বীনী সংগঠনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে যুগে যুগে। অনেক মিডিয়া না জেনেই মিথ্যাচার করছে। অনেক সময় প্রশাসনের লোকেরা ঐ মিথ্যাচারে প্ররোচিত হয়ে বিভিন্ন কাজে বাধা সৃষ্টি করছে এবং কর্মীদের হয়রানি করছে। আমরা বিশ্বাস করি- সত্য চিরদিন বিজিত** আর মিথ্যা চিরদিন পরাজিত। নমরূদ, ফেরাঊন, আবু জাহাল চির লাঞ্ছিত, ইবরাহীম, মূসা, মুহাম্মাদ (ছাঃ) চির সম্মানিত। অতএব বাতিল ফের্কা নিপাত যাক, চির সত্য প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহ আমাদেরকে ‘ছিরাতুল মুস্তাক্বীমে’ পরিচালিত করুন- আমীন!!

[‘তাওহীদের ডাকে’ ছিল : * ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীমের’ উপর। **বিজয়ী।]

জবাব-১৫ : সম্মানিত পাঠক! ‘আহলেহাদীস যুবসংঘ’ বা ‘আহলেহাদীস আন্দোলন’ বলে – আহলে সুন্নাত/হাদীসের কোন সংগঠন সাহাবীদের থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোথাও হয় নি। কখনই ‘আহলেহাদীস’ সংগঠনের উপর বায়য়াত গ্রহণের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। যারা ‘আহলে ইলম/ হাদীস’ ছিলেন – তারা নিজেরা কখনই বায়য়াতের দাবী করেন নি। অথচ এই সংগঠনটি সেটা করছে। বরং ‘মুসলিম জামা‘আত’ বা একতাবদ্ধ জীবন-যাপনের মধ্যে থেকে কুরআন ও হাদীসের খেদমতে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গই ছিলেন ‘আহলে ইলম/হাদীস’।
উক্ত লেখার মাধ্যমে এই সংগঠনটি ‘মুসলিম’ নামটিকে নতুন আবিষ্কার হিসেবে উল্লেখ করে নিজেদের বিকৃত গবেষণা প্রকাশ ও প্রচার করেছে। তারা ‘মুসলিম’ হিসেবে জামা‘আতবদ্ধ থাকাকে ‘মুসলিম তত্ত্ব’ হিসেবে ব্যঙ্গ করেছে। এ কারণে শেষোক্ত ক্ষোভ ও ক্ষেদ প্রকাশ করেছে। আমাদের জবাবটি এটা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট যে, লেখক কুরআন ও হাদীসকে নিজের ইচ্ছেমত বিকৃত করেছেন। সুতরাং কুরআন ও সহীহ হাদীসের সঠিক ধারক ও বাহকের কাজটি উক্ত সংগঠন দ্বারা হচ্ছে – এমন আশা এখন নিরাশাতে পরিণত হয়েছে।
অতঃপর লেখক এই বইটিতে যা উল্লেখ করেছেন তা হল :
হক্ব সংগঠন : ছিরাতে মুস্তাক্বীম ও নির্ভেজাল তাওহীদী দাওয়াতের অতন্দ্রপ্রহরী (জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ২০১৪) [ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন – মুযাফফর বিন মুহসিন পৃ: ২৩৪-২৩৯]
পাঠকদের চাহিদা, প্রয়োজন ও সময়সাপেক্ষে পরবর্তিতে এই অংশেরও জবাব দেব ইনঁশাআল্লাহ। তাছাড়া আমাদের উপরোক্ত জবাবমূলক লেখাটি প্রমাণ করে, লেখকের কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে উপস্থাপনা মোটেই সঠিক নয়। যদিও সাধারণের পক্ষে সেটা বুঝে নেয়া সম্ভব নয়।

পরিশিষ্ট –১ (ফেসবুক থেকে)

[ফেসবুকে প্রচারিত ‘আহলেহাদীসদের’ তরফ থেকে আরো কিছু আপত্তির জবাব নিচে দেয়া হল]

আপত্তি – ১ : আহলে কিতাব বলতে শুধু ইয়াহুদি খ্রিস্টানদের আলিমদেরকে বোঝায় না । তাই আহলে হাদিস বলতে ‘আলিম ও সাধারণ জনগণ সবাইকে বুঝায় । ওয়াল্লাহু আ’লাম

জবাব : ‘আহলে কিতাব’ ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান উভয়কে উদ্দেশ্য করে সম্বোধন করা হয়েছে। বুঝা গেল, ‘আহলে কিতাব’ শব্দটি একক কোন জাতি বা সম্প্রদায়ের নাম নয়। বরং একটি বৈশিষ্ট্য। কারণ, তাদের কাছে আল্লাহর কিতাব ছিল। এখানে কিতাবের অনুসারীকে আহলে কিতাব বলে সম্বোধন করা হয়েছে। পক্ষান্তরে যখন ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানরা কাউকে ইয়াহুদী বা খ্রিস্টান হওয়ার দাওয়াত দিত, তার প্রত্যুত্তরে কুরআনের জবাব ছিল নিম্নরূপ :
وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ (۱٣۵) قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ (۱٣٦)
“তারা বলে ইয়াহুদী বা নাসারা হয়ে যাও – তাহলে হিদায়াত পাবে। আপনি বলুন, বরং মিল্লাতে ইবরাহীমেই হানীফ (একনিষ্ঠ) থাকব। আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তোমরা বল, আমরা ইমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, আর যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যা নাযিল হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ও ইয়াকুব ও তদীয় বংশধরের প্রতি। আর মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীদের প্রতি তাঁদের রবের পক্ষ থেকে যা দান কর হয়েছে, তৎসমূহের উপর। আমরা তাদের একজনকেও পৃথক করি না। আমরা তাঁরই জন্য মুসলিমুন।” (সূরা বাক্বারাহ : ১৩৫-১৩৬)
বুঝা গেল, আহলে কিতাব, ইয়াহুদী ও নাসারা শব্দগুলো ব্যবহৃত হলেও কেবল মুসলিম হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উক্ত শব্দগুলো তাদের বিশেষ পরিচিতি হলেও সবাইকে মুসলিম হওয়ার দিকে আহবান জানানো হয়েছে। তাদের ঐ বৈশিষ্ট্যগত নামের দিকে আহবানকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অথচ কুরআানে ঈমানদারদের সাথে স্বতন্ত্রভাবে (কুরআন আসার পূর্বের) নেক আমলদার ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকেও জান্নাতী বলা হয়েছে (বাক্বারাহ : ৬২)।

‘আহলে কিতাব’, ‘ইয়াহুদী’ ও ‘নাসারা’ শব্দগুলো ‘আমভাবে সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু ‘আহলে হাদীস’ শব্দটি কুরআন ও সহীহ মারফু‘ হাদীসে ব্যবহৃত হয় নি। পরবর্তিতে এর ব্যবহার হাদীসের বিশেষজ্ঞদের বুঝানোর জন্য সীমাবদ্ধ ছিল। যেমন মুহাদ্দিসগণ হাদীস পর্যালোচনার সময় বলেছেন: وقد تكلم بعض أصحاب الحديث ‘এ (হাদীসটির) ব্যাপারে কোন কোন আসহাবুল হাদীস আপত্তি করেছেন’ (তাহ: তিরমিযী হা/১১০২); কিংবা কখনো বলেছন : ليس بالقوي عند أصحاب الحديث ‘এটা আসহাবুল হাদীসের কাছে শক্তিশালী নয়।’ (তাহ: তিরমযী হা/৩৪৭৩)
এখন সর্বসাধারণকে আহলে/আসহাবুল হাদীস গণ্য করলে, উক্ত মর্যাদা প্রদান সম্পূণরূপে অর্থহীন হয়ে যায়। তবে এভাবে বলা যায় যে, এটার প্রয়োগ ভুল – তবে ঐ হাদীস বিশেষজ্ঞদের ইলমের অনুসারী হিসেবে আমরা নিজেদের এই পরিচয় দিচ্ছি। যা আহলে রায়দের মোকাবেলায় আমাদের বৈশিষ্ট্যগত পরিচিতি। কিন্তু এটা নাম পরিচিতি নয়। কেননা
রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
فَادْعُوْا بِدَعْوَى اللهِ الَّذِيْ سَـمَّاكُمُ الْـمُسْلِمِيْنَ الْـمُؤْمِنِيْنَ، عِبَادَ اللهِ
“তোমরা (পরস্পরকে) ডাকো যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা ডেকেছেন। তিনি তোমাদের নাম দিয়েছেন মুসলিমীন, মু’মিনীন, ইবাদুল্লাহ।”[তিরমিযী – কিতাবুল আমসাল باب
ما جاء في مثل الصلاة والصيام والصدقة, তিনি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন হা/২৮৬৩]

এরকম একটি হাদীসও আহলে হাদীসদের পক্ষে নেই। এমনকি আহলে হাদীস আজ এ হাদীস ও কুরআনের সূরা হজ্জের (هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ) ৭৮ নং আয়াতটির বিরোধিতা করে আসছে। অথচ এখানে নাম হিসেবে এসেছে মুসলিম। আর হাদীসে মু’মিন ও ইবাদুল্লাহও এসেছে। কিন্তু নাম হিসেবে কোথাও আহলে হাদীস কথাটি আসে নি। অথচ লেখকের আলোচনাটিতে এই মৌলিক ‘নাম’ শব্দটি কেন্দ্রিক কোন দলিলই উপস্থাপিত হয় নি।


আপত্তি – ২ :
** রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : হে আহলুল কুরান, তোমরা বেতর সালাত পড়ো।
জবাব : এখানে সম্বোধন করা হয়েছে। ‘আহলে কুরআন’ হিসেবে। কেননা বিতরসহ সব সালাতেই কুরআন পাঠ করা হয়। তাই মুসল্লি মাত্রই আহলে কুরআন। সর্বসাধারণকে আহলে কুরআন উক্ত অর্থে ডাকা বৈধ। এখানেও এটি নাম হিসেবে আসে নি। এসেছে কাজের পরিচিতি হিসেবে। যা মুসলিমের একটি গুণ। যেভাবে মুহাজির, আনসার প্রভৃতি নামে সম্বোধন প্রমাণিত। কিন্তু তা দ্বারা মুসলিমদের স্বতন্ত্র দাওয়াতি সংস্থাকে বুঝানো হয় নি। কেননা দাওয়াতি কাজে কেবল মুসলিম পরিচয় দিতে হবে :
দা‘ওয়াতী কাজে মুসলিম পরিচয় দিতে হবে :
وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ
“তার চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেয়, আমলে সালেহ করে ও বলে : আমি মুসলিমদের একজন।” [সূরা ৪১ হা-মীম আস-সাজদাহ : আয়াত ৩৩]

আপত্তি – ৩ : আমার প্রশ্ন : ১. হানাফী গণ দাবি করেন, যারা হাদিস সহি যইফ যাচাই করতে পারেন কেবল তারাই আহলে হাদিস। জনতা নিজেকে আহলে হাদিস বলতে পারবে না।
যদি আহলে হাদিস মানে মুহাদ্দিসগণ কে বুঝানো হয়। তবে এটাও ঠিক যে, আহলে কুরান বলতে মুফাস্সির, কারিদের বুঝানো হয়। তার মানে কি এই, রাসুল কেবল মুফাস্সিরদের বেতর পড়তে বললেন এবং আম জনতাকে বেতর পড়তে বললেন না?
জবাব : নবী (স) বিতর সালাত আদায়কারীদেরকে সম্বোধন করেছেন। তাহলে উক্ত গবেষণ কেন মুফাসসিরদের টেনে আনছেন। লেখক এখানে হানাফীদের মত বাতিল ক্বিয়াস করলেন। নবী তো সর্বসাধারণকে বিতর সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন। উনি কি কেবল মুফাসসিরদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন?

আপত্তি – ৪ : ২ . যারা মুসলিম নাম ছাড়া অন্য নাম নিতে দেন না তারা বলুন , কেন রাসুল সা.- আমাদের আহলে কুরান বললেন? তিনি কি কুরানের বিরোধিতা করলেন? তিনি কি মুসলিম নামকে যথেষ্ট মনে করতেন না ?
জবাব : তিনি বৈশিষ্ট্যগত পরিচয়ে ডেকেছেন। তিনি বলেন নি, এটা তাদের নাম। যেভাবে – মুজাহিদ, আনসার, মুহাজির প্রভৃতি পরিচয়েও ডাকা যায়। কিন্তু যার মধ্যে ঐ বৈশিষ্ট্য নেই – তাকে কি সেই বৈশিষ্ট্যে ডাকা জায়েয? ‘আহলে কুরআন’ বিতর সালাত আদায়কারীকে বলা জায়েয। কারণ সে তো বিতরে কুরআন পড়ে। আর আহলে হাদীসও বলা জায়েয – যেভাবে হাদীসের কিতাবে ব্যবহৃত হয়েছে। যার উদাহরণ সুনানে তিরমিযী থেকে কিছু পূর্বে দিয়েছি।

আপত্তি – ৫ : ** আহলে কুরান ও আহলে হাদিস একই জিনিস। যেই লাউ সেই কদু।
জবাব : আহলে কুরআন দ্বারা এখানে কুরআন আয়ত্ব আছে এমন ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তিরমিযীর ৪৫৭ নং হাদীসটি নিম্নরূপ :
أوتروا يا أهل القرآن قال إنما عنى به قيام الليل يقول إنما قيام الليل على أصحاب القرآن
“হে আহলে কুরআন! তোমরা বিতর কর।’ তিনি বলেন : এর দ্বারা ক্বিয়ামুল লাইলকে বুঝানো হয়েছে। যেভাবে বলা হয়েছে : নিশ্চয় ক্বিয়ামুল লাইল ‘আসহাবুল কুরআনের’ উপর প্রযোজ্য।” [তাহ: তিরমিযী হা/৪৫৭, (ইফা) ৪৫৮]
অর্থাৎ যাদের কুরআন আয়ত্বে আছে তাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্বিয়ামুল লাইলসহ বিতর সালাত প্রযোজ্য। পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে সেটা তাদের সাধ্যমত প্রযোজ্য। তারা সেভাবে সাধ্যমত হুকুমটি পালন করবে।
কিন্তু ‘আসহাবুল/আহলে হাদীস’ বিষয়টি মুহাদ্দিসগণের যুগে যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, তাতে সর্বসাধারণকে গণ্য করা হয় নি। এখন যদি কেউ সেটা করে, কোন বিদ‘আত, শিরক হবে না – হবে কেবল ভুল প্রয়োগ।

আপত্তি – ৬ : *** প্রচলিত আহলে কুরান ,যারা হাদিস মানে না তাদের কথা বলছি না। কেউ ধোকা খাবেন না আবার।
হাদিসটি পাবেন :
১. তিরমিযি, হা/ ৩৫৩; বেতর অধ্যায়।
২. তাহকিক তিরমিযি, আলবানী, হা/ ঐ।
৩. তাহকিক তিরমিযি, ২/ ৩১৬; হা/ ঐ; আহমাদ শাকের।
৪. আবু দাউদ, হা/ ১৪১৬ ; বেতর অধ্যায়।
৫. মাআলিমুস সুনান , ২/ ১২৮।
৬. নাসাই, হা/ ১৬৭৬; বেতর অধ্যায়।
৭. ইবনু মাজাহ, হা/ ১১৬৯।
৮. ইবনু খুযাইমাহ, হা/ ১০৬৭।
৯. বুলুগুল মারাম, হা/ ৩৮১।

জবাব : ভাই রেফারেন্সতো দিলেন – কিন্তু হাদীসটির দাবী মুহাদ্দিসগণ কি বুঝেছেন – তা আমরা উল্লেখ করেছি। একটু ভেবে দেখবেন কি, আপনি কি হাদীস বুঝেন? আপনি কি সঠিকভাবে হাদীস উপস্থাপনা করতে পেরেছেন? কক্ষনো না- তাহলে আপনি কিভাবে আহলে/আসহাবুল হাদীস হলেন??!!

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৩,৪৫৩ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৪.৩৩)

১ টি মন্তব্য

  1. লেখা ইনফোরমেটিভ, ধন্যবাদ।