লগইন রেজিস্ট্রেশন

কুরআনে ইফতারের ওয়াক্ত বা সময়

লিখেছেন: ' Talebul Elm' @ শনিবার, জুন ২১, ২০১৪ (৩:২৬ অপরাহ্ণ)

[হাদীস অস্বীকারকারী ও শিয়া সম্প্রদায় যতগুলো ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে তার মধ্যে ইফতারের ওয়াক্ত অন্যতম। নিচে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো। হাদীসে সূর্যাস্ত হওয়ার মুহূর্ত থেকেই রাতের আগমন ও ইফতারের শুরুর সময় ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু তারা হাদীস থেকে দলিল নিতে চায় না, এ কারণে আমরাও হাদীস উপস্থাপন করা থেকে দূরে থাকছি। অথচ প্রমাণিত হবে, হাদীসের দাবীকেই কুরআনের আয়াত সমর্থন করছে। অবশ্য আলোচনার শেষে মাত্র একটি হাদীস উপস্থাপনার মাধ্যমে আয়াতগুলোর দাবীর সাথে কিভাবে হাদীস পরিপূরক হল, সেটা উপস্থাপন করেছি।]

আল্লাহ তা‌‌‘আলা সিয়াম পালন প্রসঙ্গে বলেন : ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ “(সাহারী করে) অতঃপর সিয়াম পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত।” (সূরা বাক্বারাহ : ১৮৭)
এখানে রাত পর্যন্ত ( إِلَى اللَّيْلِ) বাক্যটিকে শিয়া ও হাদীস অস্বীকারকারী সম্প্রদায় নিজেদের পক্ষে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করছে। তারা বলছে, অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত রাত হয় না। এজন্যে অন্ধকার হওয়ার পুর্বে ইফতার করা বৈধ নয়।

অথচ রাত ও দিন দুই ভাগে বিভক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَىٰ ـ وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّىٰ “রাত, যখন সে অন্ধকারাচ্ছন করে। আর দিন, যখন সে আলোকোজ্জ্বল হয়।” (সূরা লাইল : ১-২ আয়াত)
অর্থাৎ রাত ১) অন্ধকারাচ্ছন্ন, ২) অন্ধকারাচ্ছন্ন নয়। তেমনি দিন ১) আলোর প্রখরতামুক্ত, ২) আলোর প্রখরতাযুক্ত।

এখানে সুস্পষ্ট যে, রাত দিনকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে। আর রাত আগমন করা ছাড়া সে দিনকে আচ্ছন্ন করতে পারে না। সুতরাং রাতের আগমন এমন সময় হয় যখন দিনের চিহ্ন থাকে। কিন্তু রাত ক্রমেই তাকে আচ্ছন্ন করে। এজন্যে মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে ‘রাতের প্রথমাংশ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন – আল্লাহ তা‘আলা বলেন : وَاَقِمِ الصَّلوةَ طَرْفِىَ النَّهَارِ وَزُلْفًا مِّنَ الَّيْلِ “আর দিনের দুই অংশে সালাত আদায় কর এবং রাতের প্রথমাংশে।” [সূরা হুদ : ১১৪]

زُلْفٌ (যুলফুন) শব্দের অর্থ – রাতের অগ্রভাগ। আর زُلَفٌ (যুলাফুন)- শব্দের অর্থ : রাত ও দিনের মধ্যকার সময়। [আরবি-বাংলা অভিধান (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন), ১ম খণ্ড।]

আবার ঈশার সালাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে : اَقِمِ الصَّلوةَ لِدُلُكِ الشَّمْسِ اِلَى غَسَقِ الَّيْلِ “সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত সালাত আদায় কর।” [সূরা বানী ইসরাঈল : ৭৮]

غَسَق الَّيْلِ অর্থ : অন্ধকারাচ্ছন্ন বা তমসাচ্ছন্ন রাত, রাত অন্ধকার হওয়া। [খলিলুর রহমান মুমিন, আল-কুরআনের অভিধান, ইসলামিক সেন্টার ঢাকা]

কিন্তু সিয়াম পালনের শেষ অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে : ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ “অতঃপর রাত পর্যন্ত তোমরা সিয়াম পালন কর।” [সূরা বাক্বারাহ : ১৫৭]

এখানে إِلَى اللَّيْلِ ‘রাত পর্যন্ত’ বলা হয়েছে, কিন্তু غَسَقِ الَّيْلِ ‘অন্ধকার রাত পর্যন্ত’ বলা হয় নি। আমরা পূর্বের আয়াতগুলো থেকে জেনেছি, রাত বলতেই অন্ধকার অবস্থাকে বুঝায় না। বরং রাতের প্রাথমিক অবস্থা এমন যে, তখন অন্ধকার থাকে না। যেহেতু সিয়াম ভঙ্গের ক্ষেত্রে غَسَقِ الَّيْلِ ‘অন্ধকার রাত পর্যন্ত’ বলা হয় নি, এ কারণে যারা অন্ধকার হওয়ার পরে সিয়াম ভঙ্গ বা ইফতার করে – তাদের আমলটি সহীহ নয়।

অপর একটি আয়াত থেকে বুঝা যায়, রাত সূর্য বা দিন উভয়কে আচ্ছন্ন করে। যেমন – আল্লাহ তা‘আলা বলেন : وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا “রাতের শপথ! যখন সে তাকে (সূর্য/দিনকে) আচ্ছন্ন করে।” [সূরা শামস : ৪]

আরবি ব্যাকরণের রীতি অনুযায়ী ‘হা’ যমীর এখানে সূরাটির ১ নং আয়াতে উল্লিখিত ‘শামস’ বা সূর্যের সাথে সম্পর্ক দেখালে সূর্যাস্ত থেকেই রাতের শুরুর ব্যাখ্যা নেয়া যায়। সেক্ষেত্রে আয়াতটির দাবী হয়, সূর্যাস্তের সাথে সাথেই রাতের শুরু হল। তেমনি ৩ নং আয়াতের ‘নাহার’ বা দিনের সাথে সম্পর্ক দেখান হলে, সেখানে দিনকে আচ্ছন্ন করার অর্থও নেয়া যায়। আর রাতের আগমন ছাড়া কখনই উক্ত বিষয়গুলো ঘটা সম্ভব নয়। সুতরাং অন্ধকার রাতের পূর্বেই সূর্য ও দিনকে আচ্ছন্নকারী রাতের আগমন ঘটে।

এ কারণেই আরবি অভিধানে রাতের নিম্নরূপ সঙ্গা দেয়া হয়েছে : من مغربها إلى طلوع الفجر “(রাত হল) সূর্যাস্ত থেকে ফজর উদয় পর্যন্ত।” (মু’জামুল ওয়াসিত)

এ পর্যায়ে হাদীসের বাণী লক্ষ্য করুন, ইবনে উমার (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَا هُنَا وَغَرَبَتْ الشَّمْسُ فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ
“যখন রাত সে দিক থেকে ঘনিয়ে আছে এবং দিন এ দিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন সায়িম ইফতার করবে।” [সহীহ বুখারী – কিতাবুস সিয়াম]

উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল, আল্লাহর নির্দেশ রাত পর্যন্ত সিয়াম পুর্ণ করা – এর দাবী হল, সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা। অন্ধকার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা না করা। এটাও বুঝা গেল, হাদীসের সাথে কুরআন ও আরবি অভিধান কোনটিরই বৈপরীত্য নেই। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।

    প্রশ্ন :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
فَلَا أُقْسِمُ بِالشَّفَقِ – وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ
“ আমি ক্বসম করছি সন্ধ্যার। আর ক্বসম রাতের এবং তাতে যা কিছু একত্রিত হয়।” [সূরা ইনশিক্বাক্ব : ১৬-১৭]
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সন্ধ্যা ও রাত্রিকে পৃথক করেছেন। সুতরাং সন্ধ্যা ও রাত্রি এক নয়। এ কারণে সন্ধ্যার সময় সিয়াম ভঙ্গ বা ইফতার করাও বৈধ নয়।

জবাব : তরজমাতে ভুল হয়েছে। شفق – এর অর্থ হল : حمرة تظهر فى الأفق حيث تغرب الشمس
“লালিমা – যা সূর্যাস্তের পর আকাশে দৃশ্যমান হয়।” [মু’জামুল ওয়াসিত]

এ কারণে তরজমাটি হবে : “আমি ক্বসম করছি (সন্ধ্যার) লালিমার….।”

তাছাড়া পরবর্তী অংশ “ ক্বসম রাতের এবং তাতে যা কিছু একত্রিত হয়।” এই একত্রিত হওয়ার কাজটি সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়। যেমন – পাখিরা অন্ধকার রাত হওয়ার পূর্বেই নিজ নিজ ঘরে একত্রিত হয়। কাজেই বুঝা যাচ্ছে, সন্ধ্যার সময়েই যেহেতু সবকিছুর একত্রিত হওয়া শুরু হয়, এ কারণে সন্ধ্যা থেকেই রাতের শুরু। কেননা অন্ধকার রাতে অধিকাংশ পশু-পাখি পথ হারিয়ে ফেলে। এজন্যে রাতের শুরু হয় সন্ধ্যা থেকেই। আর এ কারণে সন্ধ্যাতেই ইফতার করতে হবে। কখনই অন্ধকার রাত্রিতে নয়। আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।

[উৎস : হাদীস কেন মানতে হবে? ( বর্ধিত সংস্করণ : হাদীস অস্বীকারকারীদের জবাবে) লেখক : কামাল আহমাদ, ঈষৎ পরিবর্তিত]

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৫৬৬ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (ভোট, গড়: ৪.০০)

২ টি মন্তব্য

  1. লেখার জন্য ধন্যবাদ। মাজহাবের আলেমগণথে রেফারেন্স দিলে আরো ভালো হতো।

  2. ভাই, আসলে যাদের বিরুদ্ধে লেখা তারা তো হাদীসই মানেন না। এ কারণে অন্য কোন মনিষীর রেফারেন্স দেয়াটা তাদের মোকাবেলায় পরিপূরক হয় না। তবে যেখানে মাযহাবী ভাইদের উদ্দেশ্যে লিখব, সেখানে মাযহাবী আলেমদের রেফারেন্স দেব ইনঁশাআল্লাহ।