হানাফী ফতোয়া : সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার শুরু না করা মাকরুহ
লিখেছেন: ' Talebul Elm' @ রবিবার, জুন ২৯, ২০১৪ (৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ)
সালাফী বা আহলে হাদীসদের পক্ষ থেকে হানাফীদের প্রতি একটি অভিযোগ হল, তারা সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করে না। অথচ হানাফী মুফতি শফী (রহ) লিখেছেন : (স্ক্রীন শট)
“ইফতারি : সূর্যাস্ত নিশ্চিত হওয়ার পর ইফতারিতে দেরী করাটা মাকরুহ। অবশ্য যখন মেঘ বা অন্যান্য কারণে সন্দেহ হয়, তখন দুই-চার মিনিটি অপেক্ষা করাটা ভাল। তবে সাবধানতার জন্য তিন মিনিট সবসময় অপেক্ষা করা উচিত।” [জাওয়াহিরুল ফিক্বহ ৩/৫২২ পৃ:]
অপর একজন হানাফী মুফতী মুহাম্মাদ কিফায়াতুল্লাহ দেহলভী (রহ) লিখেছেন :
غروب آفتاب کے بعد وقت افطار شروع ہو جاتا ہے اور یہی نماز مغرب کا وقت ہے افطار میں دوچار منٹ تاخیر ہو جائے تو اس کی گنجائش ہے(۱)
———-
۱۔ مگر بہتر یہ کہ جیسے ہی افطار کا وقت ہے فورا افطار کریں
“সূর্যাস্তের পরে ইফতারের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যায়, আর এটাই মাগরিবের সালাতের ওয়াক্ত। ইফতারে দু-চার মিনিট দেরী হলে, সেটার অবকাশ আছে।”
অতঃপর টীকাতে লিখেছেন : “তবে উত্তম হল, যখনই ইফতারের ওয়াক্ত হয়, তৎক্ষণাৎ ইফতার করা।” [কিফায়াতুল মুফতী, ৪/২৪৮-২৪৯ পৃ:, উত্তর নং : ২৭১; আরো দ্র: উত্তর নং : ২৭৬]
বুঝা যাচ্ছে, হানাফীগণ সাধারণভাবে আহলে হাদীসদের মত সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করাকেই উত্তম বলে মনে করে। তবে তারা সন্দেহের ক্ষেত্রে দেরী করার অবকাশের সুযোগটি রেখেছেন। অনেক সময় ইফতারের আয়োজনের ক্ষেত্রে দু-চার মিনিট দেরী হওয়াটা কি অস্বাভাবিক? যেমন- কেউ হয়তো পেশাব-পায়খানার কাজে ব্যস্ত ছিল। এ কারণে এই ওজর বা অসুবিধাকে সামনে রেখেই মুফতীগণ উপরোক্ত ফতোয়া দিয়েছেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, হানাফীগণ সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ইফতার করাকে উত্তম বলেছেন। স্থানীয় কোন ভুল হানাফী মাযহাবের স্থায়ী নীতি হিসেবে চিহ্নিত করাটা মারাত্মক অপবাদ। যেমন –
আমাদের দেশে প্রত্যেক দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলগুলোতে আবহাওয়া দফতরের নির্ধারিত সূর্যাস্তের সময় উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি ৫-৭ মিনিট পর ইফতারীর ও মাগরিবের সালাতের সময় দেয়া থাকে। সাধারণ মানুষ এই ভুলকে আঁকড়ে ধরে বসে আছে। যা স্থানীয় ভুল। হানাফী মাযহাবের মতামত নয়। যা নিচের হাদীসগুলো উপস্থাপনা থেকে আরো সুস্পষ্ট হবে, ইনঁশাআল্লাহ।
অস্ত যাবার খবর নিশ্চিত হওয়ার পরপরই ইফতার করা
সাহাল বিন সা‘দ (রা) ও আবূ দারদা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে,
“كان النبى ﷺ إذا كان صائما أمر رجلا فأوفى على شيء فإذا قال غابت الشمس أفطر”.
যখন নবী (স) সায়িম থাকতেন তখন কাউকে উঁচু স্থানে দাড়ানোর নির্দেশ দিতেন। যখন সে বলতো সূর্য ডুবেছে তখনই তিনি (স) ইফতার করতেন।” (মুস্তাদরাকে হাকিম- সাহাল বিন সা‘দ (রা) থেকে, তাবারানী আবূ দারদা থেকে, সহীহ জামেউস সগীর লিলআলবানী হা/৪৭৭২)
এ থেকে বুঝা গেল সূর্যাস্তের খবরদাতা নিকটবর্তী অপেক্ষাকৃত কোন উঁচু স্থানে ছিল। নবী (স) তাকে আযান দিতে বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি (স) সেই নির্দেশ দেন নি।
মুফতী কিফায়াতুল্লাহ (রহ) লিখেছেন :
اذان کی مشروعیت نماز کے لئے افطار کے لئے نہیں ۔۔۔۔۔۔
“আযানের বিধানটি সালাত বা নামাযের জন্য প্রযোজ্য, ইফতারের জন্য নয়। …” [কিফায়াতুল মুফতী ২৪৮ পৃ:, টীকা নং ২]
সালাফী শায়েখ আলবানী (রহ) হাদীসটি বর্ণনার পর বলেন :
أننا نرى الناس اليوم ، قد خالفوا السنة ، فإن الكثيرين منهم يرون غروب الشمس بأعينهم ، و مع ذلك لا يفطرون حتى يسمعوا أذان البلد ، جاهلين ….
“আমি অধিকাংশ মানুষকে এই সুন্নাতের খেলাফ আমল করতে দেখি। কেননা তাদের অধিকাংশ নিজ চোখে সূর্যাস্ত দেখে। এতদ্বসত্তেও তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ইফতার করে না যতক্ষণ না শহরের মুয়াযযিনের আযান শুনতে পায়। তাদের অজ্ঞতার দু’টি কারণ আছে….।” (আস-সহীহাহ লিলআলবানী হা/২০৮১, সংক্ষেপিত)
বুঝা যাচ্ছে, হানাফীদের মত সালাফী বা আহলে হাদীস শহরগুলোর অবস্থা একই রকম।
এ পর্যায়ে পাঠকের কাছে প্রশ্ন :
ক) আবহাওয়া দফতেরর নির্ভুল সূর্যাস্তের তথ্য জানার পর, বিভিন্ন ইফতার ক্যালেন্ডার বা পত্রিকাতে উল্লিখিত ৫-৭ মিনিট পর ইফতার শুরু করাটা কি শরি‘আতের বিরোধী হয় না?
খ) এ পর্যায়ে ওয়াক্তগুলো দু’ভাগে বিভক্ত হয়। ১) সূর্যাস্ত, ২) ইফতারের সময়। অথচ শরিআতে উভয় সময় মূলত একই হতে হবে। এ পর্যায়ে আপনি কি শরিআত লঙ্ঘন করছেন না?
গ) আপনি যখন নিশ্চিতভাবে সূর্যাস্তের সময়টি জানতে পারেন, তখন তাকে সন্দেহ করে ইফতার না করলে শরিআত পালন হয় কি? মুফতী সাহেবদের দেয়া বিশেষ কারণের ছাড়টি কি আপনার জন্য প্রযোজ্য হয়? – আল্লাহ সত্য বুঝার তাওফিক্ব দিন।
চর্ম চোখে সূর্য অদৃশ্য হবার পর অহেতুক সন্দেহ নিষিদ্ধ
‘আব্দুল্লাহ বিন আওফা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فِى سَفَرٍ فِى شَهْرِ رَمَضَانَ فَلَمَّا غَابَتِ الشَّمْسُ قَالَ « يَا فُلاَنُ انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا ». قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ عَلَيْكَ نَهَارًا. قَالَ « انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا ». قَالَ فَنَزَلَ فَجَدَحَ فَأَتَاهُ بِهِ فَشَرِبَ النَّبِىُّ ﷺ ثُمَّ قَالَ بِيَدِهِ « إِذَا غَابَتِ الشَّمْسُ مِنْ هَا هُنَا وَجَاءَ اللَّيْلُ مِنْ هَا هُنَا فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ »
“রমযান মাসে কোন এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহ (স)-এর সঙ্গী ছিলাম। সূর্য ডুবে গেলে তিনি বললেন : হে অমুক! অবতরণ কর এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলল: ইয়া রসূলাল্লাহ! এখনো দিন রয়েছে। পুনরায় তিনি বললেন : অবতরণ কর এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। তখন সে অবতরণ করল এবং ছাতু গুলিয়ে তাঁর নিকট পেশ করল। নবী (স) পান করলেন এবং হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বললেন, সূর্য যখন এদিক থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং রাত যখন এদিক থেকে ঘনিয়ে আসবে তখন সিয়াম পালনকারী ইফতার করবে।” অপর বর্ণনা আছে : يا رسول الله لو امسيت “ইয়া রসূলাল্লাহ! যদি সন্ধ্যা হতে দিতেন” অতঃপর রসূলাল্লাহ (স) একই নির্দেশ দেন এবং ঐ ব্যক্তিও পুনরায় একই কথা বলেছিল। অতঃপর হাদীসের পরবর্তী অংশের অনুরূপ।” [সহীহ মুসলিম - কিতাবুস সিয়াম باب بيان وقت انقضاء الصوم وخروج النهار (অনুচ্ছেদ : সাওমের সময় পূর্ণ হওয়া এবং দিবস সমাপ্ত হওয়া)]
হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, নবী (স) সূর্য চোখে ডুবতে দেখেই ইফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ‘এখনো দিন আছে বা সন্ধ্যা হয় নি’ এ কথাগুলো তিনি (স) পছন্দ করেন নি।
তাড়াতাড়ি ইফতার শুরু করতে হবে
সাহাল বিন সা‘দ (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : لَا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ
“মানুষ কল্যাণের সাথে থাকবে – যতদিন তারা শীঘ্র শীঘ্র ইফতার করবে।” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত (এমদা) ৪/১৮৮৭ নং]
আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (রা) বলেছেন : لاَ يَزَالُ الدِّينُ ظَاهِرًا مَا عَجَّلَ النَّاسُ الْفِطْرَ لأَنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى يُؤَخِّرُونَ
“দ্বীন (ইসলাম) ততদিন প্রভাবশালী থাকবে যতদিন লোকেরা ইফতারে জলদি করবে। নিশ্চয় ইয়াহুদী ও নাসারাগণ বিলম্ব করে।”
[আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত (এমদা) ৪/১৮৯৮। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন (তাহক্বীক্বকৃত আবূ দাউদ হা/২৩৫৩)]
ইফতারি শেষ করাতে সময়ের অবকাশ
অনেকে যঈফ হাদীসের ভিত্তিতে দু’টি খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে ইফতার শেষ করে। অতঃপর মাগরিবের সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করে । যা হানাফী ও আহলে হাদীস উভয়ের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় । তাদের ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসগুলোতে শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। :
(১) আনাস (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন
اِذَا قُدِّمَ الْعَشَاءُ فَاَبْدَؤَا بِهِ قَبْلَ اَنْ تُصَلُّوْا صَلاَةَ الْمَغْرِبِ وَلاَ تُعْجَلُوْا عَنْ عَشَائِكُمْ
“সন্ধ্যার খানা যদি আগে হাযির হয়ে যায় তবে মাগরিবের সালাত আদায় করার পূর্বেই তা খেয়ে নিবে। সন্ধ্যার খানা থেকে বিরত থেকে মাগরিবের সালাত আদায়ে তাড়াহুড়া করবে না।”[সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, তিরমিযী, নাসায়ী, তাজরীদুস সিহাহ (ইফা) ২/৬৩০ নং।]
অন্যত্র আনাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (স) বলেছেন
إذا أقيمت الصلاة وأحدكم صائم فليبدأ بالعشاء قبل صلاة المغرب ولا تعجلوا عن عشائكم
“যখন সালাত দাঁড়ায় (ইক্বামাত দেয়া হয়) আর তোমাদের কেউ সায়িম (রোযাদার), তাহলে সে যেন মাগরিবের সালাতের পূর্বে তার সন্ধ্যার খাবার খেয়ে নেয়। আর সে যেন সন্ধ্যার খাবার গ্রহণে তাড়াহুড়া না করে।”[ ইবনে হিব্বান (বৈরুত : মুআস্সাসাতুল রিসালাহ, ১৯৯৩/১৪১৪) ৫/২০৬৮ নং। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (সহীহ জামে‘উস সগীর ওয়া যিয়াদাতাহু ১/৩৭২ নং)। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ)-ও ‘ফতহুল বারী’তে অনুরূপ বলেছেন। [ফতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী باب إذا حضر الطعام وأقيمت الصلاة ; ২/২২৯ পৃ:]
(২) ইবনে ‘উমার (রা) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে :
كَانَ اِبْنُ عُمَرَ يُوْضَعُ لَهُ الطَّعَامُ وَيُقَامُ الصَّلاَةُ فَلاَ يَأْتِيْهَا حَتّى يَفْرُغَ مِنْهُ وَاِنَّه‘ لَيَسْمَعُ قِرَاءَةَ الْاِمَامِ
“ইবনে ‘উমার (রা)এর নিয়ম ছিল যে, যখন তাঁর জন্য খানা উপস্থিত করা হত, অপর দিকে তাকবীর বলা হত, তিনি সালাতে উপস্থিত হতেন না – যতক্ষণ না খাওয়া ঠিকভাবে সারতেন। অথচ তিনি ইমামের ক্বিরাআত শুনতে পেতেন।”[ সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাত (এমদা) ৩/৯৮৯।]
নাফে‘ (রহ) বর্ণনা করেন :
كان بن عمر إذا غربت الشمس وتبين له الليل فكان أحيانا يقدم عشاءه وهو صائم والمؤذن يؤذن ثم يقيم وهو يسمع فلا يترك عشاءه ولا يعجل حتى يقضي عشاءه ثم يخرج فيصلي ويقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تعجلوا عن عشائكم إذا قدم إليكم
“কখনো কখনো ইবনে ‘উমার (রা) সায়িম (রোযাদার) অবস্থায় সূর্য অস্তমিত এবং রাত সুস্পষ্ট হলে সন্ধ্যার খাবার গ্রহণ করতেন। মুয়াযযিন আযান দিত অতঃপর সালাত দাঁড়াত (ইক্বামাত দেয়া হত) আর তিনি (রা) তা শুনতে পেতেন। কিন্তু সন্ধ্যার খাবার শেষ না করা পর্যন্ত তা ত্যাগ করতেন না এবং তাড়াহুড়াও করতেন না। অতঃপর বের হতেন এবং বলতেন “রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন : যখন তোমাদের সামনে সন্ধ্যার খাবার উপস্থিত হয় তখন তোমরা তাড়াহুড়া করো না।”[ ইবনে হিব্বান ৫/২০৬৭ নং। অনুরূপ - ‘ফতহুল বারী’ (ঐ)। শু‘আয়েব আরনাউত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন (তাহক্বীক্বকৃত ইবনে হিব্বান ৫/৪২০/২০৬৭)। আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (আত-তা‘লিকুল হিসান ‘আলা সহীহ ইবনে হিব্বান ৬/১৫৫১/২০৬৪)]
(৩) ‘আয়িশা (রা) বলেন :
سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ لاَصَلاَةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلاَهُوَ يُدَافِعُه‘ اِلاَّخُبْثَانِ
“আমি রসূলুল্লাহ (স)কে বলতে শুনেছি, খাবার হাযির হলে ও পেশাব-পায়খানার বেগ আসলে কোন সালাত নেই।”[ সহীহ মুসলিম, মিশকাত (এমদা) ৩/৯৯০ নং]
ইফতারি ও মাগরিবের সালাতের সময়ের মধ্যে সমন্বয়
মাগরিবের সালাত সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
لاَيَزَالُ اُمَّتِىْ بِخَيْرٍ اَوْ قَالَ الْفِطْرَةِ مَالَمْ يُؤَخِّرُوْا الْمَغْرِبَ اِلَى اَنْ تَشْتَبِكَ النُّجُوْمُ
“আমার উম্মাত সর্বদা কল্যাণে অথবা বলেছেন ফিতরাতের উপর থাকবে – যতদিন তারা মাগরিবের সালাত তারকারাজি ঘন-নিবিড় হয়ে উঠা পর্যন্ত বিলম্ব না করবে।”[ আবূ দাউদ, দারেমী, মিশকাত (এমদা) ২/৫৬১ নং। আলবানী হাদীসটির সনদকে হাসান বলেছেন (তাহক্বীক্ককৃত মিশকাত ১/১৯৩ পৃ:)]
সাহারীর সময়ের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অবকাশ দেয়া হয়েছে
রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
ياَهْلَ الْكِتبِ لاَ تَغْلُوْا فِىْ دِيْنِكُمْ وَلاَ تَقُوْلُوْا عَلَى اللهِ اِلاَّ الْحَقَّ
“যখন তোমাদের কেউ আযান শোনে আর খাওয়ার পাত্র তার হাতে থাকে তখন সে যেন তা রেখে না দেয়, যতক্ষণ না সে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে।” [আবূ দাউদ, মিশকাত (এমদা) ৪/১৮৯১ নং। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। [তাহক্বীক্বকৃত মিশকাত ১/৬২১ পৃ:]
সহজ বিধানটি গ্রহণ করাটাই সুন্নাত
ما خُيِّرَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بين أمريْن قطُّ إلا أخذَ أيْسرَهما ما لم يكن إثماً، فإن كان إثماً كان أبعدَ الناسِ منه، وما انتقمَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لنفسِه في شيءٍ قطُّ إلا أن تُنْتَهَكَ حُرْمةُ اللهِ، فينتقمَ بها للهِ.
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে যখন কোন দুটি কাজের মধ্যে এখতিয়ার দেয়া হয়। তখন তিনি দুটির মধ্যে অপেক্ষাকৃত সহজটি গ্রহণ করতেন যদি তা গুনাহর কাজ না হতো। আর যদি তা গুনাহের কাজ হতো, তা হলে তিনি তা থেকে সবার চাইতে দূরে সরে থাকতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন বিষয়ে নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ নিতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্গন করলে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন।” [সহীহ বুখারী – কিতাবুল আদব, অনুচ্ছেদ : নবী (স)এর বাণী : তোমরা নম্র ব্যবহার কর, আর কঠোর ব্যবহার করো না। হা/৬১২৬ (ইফা. ৯/৫৬৯৬)]
ইবাদাতে মধ্যপন্থা অবলম্বন (রিয়াদুস সালেহীন থেকে – সংক্ষেপিত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন : مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ
অর্থাৎ “ত্বা-হা-। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি।” (সূরা ত্বাহা ১-২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন :يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ
অর্থাৎ “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কঠিনতা তাঁর কাম্য নয়।” (সূরা বাক্বারাহ, ১৮৫ আয়াত)
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত,
أن النبي صلى الله عليه وسلم دخل عليها وعندها امرأة قال: من هذه؟ قالت: هذه فلانة تذكر من صلاتها قال: “ مه عليكم بما تطيقون، فوالله لا يمل الله حتى تملوا” وكان أحب الدين إليه ما داوم صاحبه عليه. ((متفق عليه))
একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।[সহীহুল বুখারী ৪৩, ১১২২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪, ৬৪৬৫, ৬৪৬৬, ৬৪৬৭, মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, ৭৮৩, ৭৮৫, ১১৫৬, ২৮১৮, নাসায়ী ৭৬২, ১৬২৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬৬০, ৪২৪০৯, ২৫৬০০]
আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন :
إن الدين يسر، ولن يشاد الدين إلا غلبه، فسددوا وقاربوا وأبشروا، واستعينوا بالغدوة والروحة وشيء من الدلجة” ((رواه البخاري)).
وفي رواية له : سددوا وقاربوا واغدوا وروحوا، وشيء من الدلجة، القصد القصد تبلغوا
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি অহেতুক দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তার উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দিবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা সুসংবাদ নাও। আর সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য নাও।’’বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, সকাল-সন্ধ্যায় চল (ইবাদত কর) এবং রাতের কিছু অংশে। আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তাহলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে।’’ [সহীহুল বুখারী ৩৯, ৫৬৭৩, ৬৪৬৩, মুসলিম ২৮১৬, নাসাঈ ৫০৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২০১, আহমাদ ৭১৬২, ৭৪৩০, ৭৫৩৩, ২৭৪৭০]
ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে অজ্ঞানতা ও অহেতুক বাড়াবাড়ি থেকে হেফাযত করুন। আমিন!!
=======
মাগরিব/ইফতার ও সূর্যাস্তের সময়ের পার্থক্য:
জুন – ২৭ : সূর্যাস্ত – ০৬:৪৭; মাগরিব/ইফতার -৬:৫২ = সময়ের পার্থক্য : ৫ মিনিট [সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ২৭ জুন’২০১৪, ইন্টারনেট সংস্করণ]
জুন – ২৮ : সূর্যাস্ত – ০৬:৪৭; মাগরিব/ইফতার -৬:৫২ = সময়ের পার্থক্য : ৫ মিনিট [সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ২৭ জুন’২০১৪, ইন্টারনেট সংস্করণ]
জুন – ২৯ : সূর্যাস্ত – ০৬:৪৭; মাগরিব/ইফতার -৬:৫২ = সময়ের পার্থক্য : ৫ মিনিট [সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ২৭ জুন’২০১৪, ইন্টারনেট সংস্করণ]