সন্দেহ হলো ঈমানের লক্ষণ
লিখেছেন: ' তালহা তিতুমির' @ শুক্রবার, জানুয়ারি ২২, ২০১০ (৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ)
বহুলোক এমন রয়েছে যারা আকিদা-বিশ্বাসের প্রতি বিশেষ ঔদাসীন্য প্রদর্শন করে। তাদের মনে নানারূপ সন্দেহ-সংশয় দানা বেধে ওঠে, নানা কুসংস্কার পুন্জীভূত হয়। কিন্তু তা দূর করার জন্যে তাদের কোনরুপ উদ্যোগী হতে দেখা যায় না। অনেকের মনে নানারুপ সন্দেহ জাগে। সেগুলোকেও তারা মনের গহনে গোপন করে রাখে। তা দুর করার জন্যে চেষ্টা করে না। ফলে তাদের হৃদয় মন আস্তে আস্তে ইসলামের বিশ্বাস থেকে অনেক দুরে সরে যায়। তাতে প্রবেশ করে নানা বিভ্রান্তি ও বিভ্রম। এদের সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে-
“এদের অধিকাংশ লোক কেবলমাত্র ধারণা অনুমানের অনুসরণ করে চলে। অথচ ধারণা অনুমান কখনোই প্রকৃত সত্য জানবার জন্যে কিছুমাত্র যথেষ্ট হতে পারে না।”
অবশ্য এ কথা অস্বিকার করার উপায় নেই যে, মানুষের মনে নানা সময় নানা প্রকারের সন্দেহ-সংশয়, নানা প্রশ্ন-জিগ্গাসা ও নানা খটকা জেগে ওঠে। তা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এরুপ হওয়াটা খারাপ লক্ষণ নয়। কোন কোন সাহাবীর মনে পর্যন্ত এ ধরনের ভাবধারার উদয় হতো। মহানবী (স:) একে বলেছেন-
” এ তো সুস্পষ্ট ঈমানের লক্ষণ।”
বস্তুত: মনে দ্বিধা-সংশয় ও প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া যেমন অস্বাভাবিক নয়, তেমনি তা নিরাময়ের উদ্দেশ্যে সত্য জানতে চাওয়াও স্বাভাবিক। তবে মূল ঈমানকে কোনরুপ ব্যাহত দেয়া চলবে না। তা বজায় রেখে এসব জিগ্গাসার জবাব সন্ধান করাই ঈমানদার লোকদের কাজ।
আপনার এই উদ্ধৃতির রেফারেন্সটা একটু জানাবেন।
আমার জানা মতে ইসলামে প্রধান দু’টো অন্তরের রোগের একটা শাহাওয়াত (কামনা-বাসনা) ও অপরটি শুবুহাত (সন্দেহ)। স্কলাররা বলেছেন শুবুহাত, শাহাওয়াতের চেয়ে অনেক বিপজ্জনক রোগ, যা, মানুষের অন্তরকে কুরে কুরে খায় – আর এর শিফা হচ্ছে জ্ঞান। তবে, “ওয়াওয়াসা”কে ঈমানের লক্ষণ বলে নবীর হাদীস রয়েছে মুসলিম শরীফে। আর নিফাকের চিন্তা নিয়ে হানজালা (রা.)-কে নিয়ে হাদীসটিও বেশ পরিচিত।
@মেরিনার, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম রচিত ‘আল-কোরআনের আলোকে উন্নত জীবনের আদর্শ’ (খায়রুন প্রকাশনী)
@তালহা তিতুমির, আমি আসলে হাদীসটির রেফারেন্স জানতে চেয়েছি – অর্থাৎ, হাদীসের text এবং হাদীস গ্রন্থের নাম (যেমন ধরুন: বুখারী, আবু দাউদ বা যেটাই হোক) – অবশ্য যদি আপনার জানা থাকে।
@মেরিনার, ভাই দু:খিত, জানা নেই। তবে বইটির লেখক নির্ভরযোগ্য।
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম (রহ.)সম্ভবতঃ মুসলিম শরীফের প্রথম খণ্ড ‘কিতাব আল-ইমান’ এর ২৩৯ তম হাদীসটি এখানে উদ্ধৃত করেছেন।
Chapter 61 : PERTAINING TO EVIIL SUGGESTION OR PROMPTING IN FAITH AND WHAT SHOULD BE SAID WHEN IT OCCURS TO THE MIND OF A MAN
——————————————————————————–
Book 1, Number 0239:
It is narrated on the authority of Abu Huraira that some people from amongst the Companions of the Apostle (may peace be upon him) came to him and said: Verily we perceive in our minds that which every one of us considers it too grave to express. He (the Holy Prophet) said: Do you really perceive it? They said : Yes. Upon this he remarked: That is the faith manifest.
লক্ষ্য করুন যে, “এ তো সুস্পষ্ট ঈমানের লক্ষণ” কথাটা শেষ বাক্যের সাথে হুবহু মিলে যায়।
@মুসলিম, অসংখ্য ধন্যবাদ মুসলিম ভাই।
ভাই তালহা,
আপনার পোস্টের সাথে সংশ্লিষ্ট হাদীসগুলো নীচে তুলে দিলাম:
باب بَيَانِ الْوَسْوَسَةِ فِى الإِيمَانِ وَمَا يَقُولُهُ مَنْ وَجَدَهَا.
357 – حَدَّثَنِى زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا جَرِيرٌ عَنْ سُهَيْلٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ جَاءَ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَسَأَلُوهُ إِنَّا نَجِدُ فِى أَنْفُسِنَا مَا يَتَعَاظَمُ أَحَدُنَا أَنْ يَتَكَلَّمَ بِهِ. قَالَ « وَقَدْ وَجَدْتُمُوهُ ». قَالُوا نَعَمْ. قَالَ « ذَاكَ صَرِيحُ الإِيمَانِ »
358 – وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِى عَدِىٍّ عَنْ شُعْبَةَ ح وَحَدَّثَنِى مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ جَبَلَةَ بْنِ أَبِى رَوَّادٍ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ إِسْحَاقَ قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو
الْجَوَّابِ عَنْ عَمَّارِ بْنِ رُزَيْقٍ كِلاَهُمَا عَنِ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِى صَالِحٍ عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- بِهَذَا الْحَدِيثِ.
359 – حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ يَعْقُوبَ الصَّفَّارُ حَدَّثَنِى عَلِىُّ بْنُ عَثَّامٍ عَنْ سُعَيْرِ بْنِ الْخِمْسِ عَنْ مُغِيرَةَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سُئِلَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الْوَسْوَسَةِ قَالَ « تِلْكَ مَحْضُ الإِيمَانِ ».
360 – حَدَّثَنَا هَارُونُ بْنُ مَعْرُوفٍ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ – وَاللَّفْظُ لِهَارُونَ – قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « لاَ يَزَالُ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يُقَالَ هَذَا خَلَقَ اللَّهُ الْخَلْقَ فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ فَمَنْ وَجَدَ مِنْ ذَلِكَ شَيْئًا فَلْيَقُلْ آمَنْتُ بِاللَّهِ ».
সহীহ মুসলিমে উপরোক্ত হাদীসগুলোসহ আরও কিছু হাদীস বর্ণিত হয়েছে “ওয়াসওয়াসা” প্রসঙ্গে যাকে বাংলায় বলা যায়: কুপ্ররোচনা, সংশয়, সন্দেহ ইত্যাদি ৷ অপরপক্ষে আরবীতে ব্যবহৃত “শাক্ক” অথবা “রাইব” শব্দটির অনুবাদও হয় সংশয় বা সন্দেহ ৷ তবে “ওয়াসওয়াসা” ও “শাক্ক” এর মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে ৷ “ওয়াসওয়াসা” যে কারও মনে উঁকি দিতে পারে এবং এ অবস্থায় একে অপছন্দ করা ও এ নিয়ে কোন কথা না বলাকে উপরোক্ত হাদীসগুলোতে সুস্পষ্ট ঈমানের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ এক্ষেত্রে তা একজন মু’মিনের জন্য ক্ষতিকর হয়না ৷ অপরপক্ষে “শাক্ক” হচেছ অন্তরে বিদ্যমান স্থায়ী সংশয় – যেক্ষেত্রে ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সম্বন্ধে একজন ব্যক্তির ধারণা এরকম থাকে যে, “এটি হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে”৷ যেমন, কেউ যদি বিশ্বাস করে যে আখিরাত থাকতেও পারে নাও হতে পারে – তবে এধরণের সন্দেহ বা সংশয়কে “শাক্ক” বলা হয় যা কিনা “কুফর” বা অবিশ্বাস হিসেবে বিবেচিত হবে ৷
এজন্য বাংলা “সংশয়” বা “সন্দেহ” জাতীয় শব্দগুলোকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন, নতুবা মানুষ ভুল বুঝতে পারে ৷
মোটকথা উপরোক্ত হাদীসগুলোতে যাকে “ঈমান” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, তা হল “মনে কোন কুচিন্তা উদয়ের পর তাকে অপছন্দ করা এবং প্রকাশ না করা” – আপনি একথাই হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন এবং তা সঠিকও, কিন্তু শব্দচয়নে বিপত্তি ঘটাতে যে কেউ এথেকে ভুল ধারণা লাভ করতে পারে।
@মেরিনার, অনেক ধন্যবাদ মেরিনার ভাই।