প্রফেসর হান্টিংটনের সভ্যতার সংঘাত বা ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশনস বই অনুসারে পাশ্চাত্য ও ইসলামের সম্পর্ক
লিখেছেন: ' তালহা তিতুমির' @ রবিবার, এপ্রিল ২৫, ২০১০ (১:২১ অপরাহ্ণ)
একুশে বইমেলা থেকে প্রফেসর স্যামুয়েল হান্টিংটনের Clash of Civilizations and Remaking of world order বইটি(অনুবাদ) চড়া দামে কিনেছিলাম। টেনশানে ছিলাম এত দাম দিয়ে কেনার পর না আবার বিশ/ত্রিশ পৃষ্ঠা পড়েই ক্ষান্ত দিতে হয়। কিন্তু পড়ার পর আশ্বস্ত হলাম। বিশ্ব রাজনীতি বোঝার জন্য বইটি অত্যন্ত গুরুত্বের দাবী রাখে। আমার মনে হয়েছে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিবর্গের(পলিসি মেকার) জন্য এ বইটি পড়া অপরিহার্য। এখানে আমি বিচ্ছিন্নভাবে পয়েন্ট আকারে বইটির সামান্য কিছু অংশ তুলে ধরছি, কিন্তু বইটির গভীরতা আরো অনেক ব্যাপক।
##যে সকল উপাদান সভ্যতা গঠনে ভূমিকা রাখে , তার মধ্যে ধর্ম হলো সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিশ্বের প্রধান সভ্যতাগুলোর সাথে কোন না কোন বৃহৎ ধর্মের সংযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে মানুষের আত্মপরিচয়ের বেলায় নৃগোষ্ঠীগত ও ভাষাগত ঐক্য থাকলেও ধর্মের অনৈক্য তাদের পরস্পরের মধ্যে বিভেদরেখা টেনে দেয়। এরকম ঘটনা, লেবানন, পূর্বতন যুগোশ্লাভিয়া প্রভৃতি স্থানে ঘটতে দেখা গিয়েছে।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবংগের উদাহরণ বিবেচনা করলে হান্টিংটনের কথা একদম উড়িয়ে যায় না।
হান্টিংটন তাঁর বইয়ে ৭ টি সভ্যতার উল্লেখ করেছেন–
সিনিক সভ্যতা (সিনিক সভ্যতা বলতে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বোঝায়)
জাপানি,
হিন্দু,
ইসলামী,
পাশ্চাত্য,
ল্যাটিন আমেরিকা ,
আফ্রিকা।
প্রতিদ্বন্দ্বী সভ্যতাসমূহ
প্রফেসর হান্টিংটন ইসলাম ও সিনিক সভ্যতাকে পাশ্চাত্যের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সভ্যতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে এ দুই সভ্যতা ছাড়া অন্যগুলো পাশ্চাত্য সভ্যতার মধ্যে বিলীন/একীভূত হয়ে যাচ্ছে।
সিনিক সভ্যতা বলতে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (কোরিয়া, ভিয়েতনাম) জনগণের সভ্যতা বা সাধারণ সংস্কৃতি বোঝায়।
যেকোন সভ্যতাই নিজেদের শ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করে
প্রত্যেক সভ্যতাই নিজেকে পৃথিবীর ‘সভ্যতার কেন্দ্র’ বলে মনে করে থাকে এবং তারা সেভাবেই তাদের সভ্যতার ইতিহাস লিখে থাকে। একথাটি সম্ভবত অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে পশ্চিমা/পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্য অধিকতর সত্য।
আধুনিকীকরণের জন্য কি পাশ্চাত্যকরণ অপরিহার্য ?
মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক মনে করতেন আধুনিকীকরণ ও পাশ্চাত্যকরণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে সত্য হলো আধুনিকীকরণ সম্ভব এবং কাংখিতও বটে, তবে এজন্যে পাশ্চাত্যকরণের প্রয়োজন নেই।
হান্টিংটনের বইয়ে বাংলাদেশ
দক্ষিণ এশিয়ার প্রসংগে বলতে গিয়ে তিনি এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন– পাকিস্তান, বাংলাদেশ এমনকি শ্রীলংকা কোনক্রমেই ভারতকে নির্দেশদাতা দেশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় মেনে নেবে না।
ইসলাম ও পাশ্চাত্যের সম্পর্ক
হান্টিংটন ইসলামের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে মুসলমান যুবসমাজের ভূমিকা অনন্য বলে রায় দিয়েছেন।
এছাড়া বার্নাড লুইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন – ” প্রায় এক হাজার বৎসরকাল অর্থাৎ মুসলমানদের পদার্পণ থেকে তুর্কিদের দ্বারা ভিয়েনা জয় পর্যন্ত ইউরোপ সর্বক্ষণের জন্য মুসলমানদের ভয়ে ভীত থাকত। ইসলাম হলো একমাত্র সভ্যতা যা পাশ্চাত্যের টিকে থাকাকে অন্তত দু’বার সন্দেহের আবর্তে নিক্ষেপ করেছিলো।”
এ দ্বন্দ্বের কারণ সম্ভবত দুটো ধর্মের বৈশিষ্ট্যের ভেতর লুকায়িত আছে। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, ইসলাম হলো একটি পূর্ণাংগ জীবনব্যবস্থা এবং ধর্ম ও রাজনীতি পরস্পর অবিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে পশ্চিমা খ্রিস্টধর্মের ধারণা হচ্ছে “ঈশ্বর” এবং “সীজারের” মধ্যে পার্থক্য করা। অর্থাৎ ধর্ম ও রাজনীতি আলাদা।
লেনিনের মতে রাজনীতির কেন্দ্রীয় ইস্যু হলো ইসলামের সংগে পাশ্চাত্যের প্রতিযোগিতা। লেনিন আরো বলেন, দুটি সভ্যতার মধ্যে কোন্টি সত্য আর কোন্টি মিথ্যা সে প্রশ্ন উত্তাপন করা নিরর্থক। যতদিন পর্যন্ত ইসলাম ইসলাম হিসেবে টিকে থাকবে (থাকবে বলেই মনে হয়) এবং পশ্চিমাবিশ্ব ‘পশ্চিমা’ হয়ে টিকে থাকবে, ততদিন এ দুটি বৃহৎ সভ্যতার মধ্যে সম্পর্ক বিগত ১৪শত বছর যেভাবে চলে এসেছে সেভাবেই বজায় থাকবে।
আমার মতে হান্টিংটনের বই থেকে আমাদের যে শিক্ষা নিতে হবে তা হলো— আমরা আধুনিক হবো, কিন্তু তোমাদের (পাশ্চাত্য) মতো হবো না। অর্থাৎ নিজেদের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রেখে যা কিছু কল্যাণকর তাই গ্রহণ করব।
দুই সভ্যতার সংঘাত হিসাবে আমি নিজে গবেষনা করেছি। মুসলিম সমাজে যে ওনার কিলিং সহ কিছু আজব নুতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা দুই সভ্যতার সংঘাত থেকেই উতভুত, মানুষ নিজেদের সভ্যতার মূল্যবোধ, এর জন্য কিছুটা কামাল আতাতুর্ক দায়ী। কারন তিনি প্রশ্চাত্য সভ্যতা মুসলিম সভ্যতায় পুশ করেছেন, একি ভাবে উনাকে ফল করেছেন আয়ুব খান থেকে শুরু করে বাকি মুসলিম নেতারা অন্ধভাবে ফল করেছেন। এতে করেই আমাদের নিজেদের মূল্যবোধের পথন ঘটছে বা ঘটতেছে। আর কেউ দৃড় ভাবে মসুলিম মূল্য বোধ ধরে রাখার চেষ্টা করতে ছে। কিন্তু তার সংঘাত চলতেছে, আর তা হল দুই সভ্যতার সংঘাত, না সে একটা নিতে পারতেছে, না একটা ছাড়তে পারতেছে। এর দুই দন্দে পড়ে মুসলিম নেতা থেকে সব মানুষ দিধাভিবিক্ত। তাই, নিজেদের মধ্যে সমাধানের চেয়ে সমস্যাই বাড়তেছে। এই সুযোগ আবার আরেক সভ্যতা নেওয়ার চেষ্টা করতেছে।
আসলে পৃথিবীতে একটি ফুটবল খেলা চলতেছে। আমি আরো অনেক বিষয় আছে, যা আমার পর্যবেক্ষন পরেছিল।
@ফুয়াদ,
কিন্তু তার সংঘাত চলতেছে, আর তা হল দুই সভ্যতার সংঘাত, না সে একটা নিতে পারতেছে, না একটা ছাড়তে পারতেছে। এর দুই দন্দে পড়ে মুসলিম নেতা থেকে সব মানুষ দিধাভিবিক্ত।
সহমত।
মুসলিম সমাজে যে ওনার কিলিং সহ কিছু আজব নুতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা দুই সভ্যতার সংঘাত থেকেই উতভুত( মানুষ নিজেদের সভ্যতার মূল্যবোধ,) এর জন্য কিছুটা কামাল আতাতুর্ক দায়ী
\
ব্রেকেট করা অংশ ভুল করে উঠেগেছে। লেখা সংশোধন করে নিলাম।
এই লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
মুসলিম বিদ্বেষী লেখকদের আরো একটি অনন্য নমুনা “Clash of Civilization” ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রতিদ্বন্বী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে এই বই এ ।
এডওয়ার্ড সাঈদ খুবই সুন্দরভাবে এই বই এর ভুলগুলো দেখিয়েছে ।
@হাফিজ,
আপনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেছেন। এটা ও সত্য মুসলিম আর ইসলাম কে প্রতিদন্দি করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই বই আমি পড়িনি, আমি নিজের পর্যবেক্ষন বলেছি, দুই সভ্যতার(প্রশ্চাত্য আর ইসলামী সভ্যতা) একটি বিশেষ দন্দ আছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ভারতীয় সভ্যতা মধ্যখান থেকে বিশেষ সুবিধা নিতেছে। যা আপনাদের চোখে ধরা পরেছে কি না জানি না।
@ফুয়াদ,
ভারতীয় সভ্যতা মধ্যখান থেকে বিশেষ সুবিধা নিতেছে। যা আপনাদের চোখে ধরা পরেছে কি না জানি না।
মুসলিমদের বিপক্ষে কোনো বিষয় দাড় হলে সব অবিশ্বাসিরা এক হয়ে যায় । এটা আবহনমানকাল ধরে সত্য ।
@হাফিজ,
ভারতীয় সভ্যতা কিন্তু মুসলিম আর প্রাশ্চাত্য সভ্যতা উভয়কেই ঘৃনা করে, আপাত প্রাশ্চাত্যের পিছি আছে, সুযোগ পাইলেই, প্রাশ্চাত্য কে বাশ দিবে। তা অবতার সহ বেশ কিছু হলিঊডের ছবির মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে। কিছুদিন যেতে দিন দেখেন কি হয়?
আল্লাহ পাক ই সব থেকে ভাল জানেন।