লগইন রেজিস্ট্রেশন

(LOVE IS LIFE) আমি কাকে ভালবাসি

লিখেছেন: ' fazlulkader' @ শনিবার, মার্চ ১২, ২০১১ (৭:৩২ পূর্বাহ্ণ)

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ…
জনাব/জনাবা,
ভালবাসার কথা শুনলে অনেকে মনে মনে ভাবেন লাভ-লোকসানের কথা, চারটি অক্ষরের সমন্বয় খুব ছোট একটি শব্দ ভালবাসা যাকে আরবী ভাষায় মুহাব্বত ও ইংরেজী ভাষায় Love বলে। যার অর্থ হচ্ছে, অনুভূতি, আকর্ষণ, হৃদয়ের টান; যা মানুষের অন্তরে আল্লাহপাক সৃষ্টিগতভাবে দিয়ে দেন। সাধারণত ভালবাসা দুই ধরনের (১) বৈধ ও পবিত্র (২) অবৈধ ও অপবিত্র । ভালোবাসা ব্যাপারটা আমার কাছে একটা চরম কুহেলিকার মত লাগত। অবশ্য শুধু আমি না রবীন্দ্রনাথের মত মানুষও ভালোবাসার দার্শনিক বিচার করতে গিয়ে ঘোল খেয়েছে – বলেছেনঃ-
সখী, ভালোবাসা কারে কয় ! সে কি কেবলই যাতনাময় ।
সে কি কেবলই চোখের জল ? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস ?
লোকে কী তবে সুখেরই তরে করে এমন দুখের আশ ।

আমার বহু সহপাঠীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম – “আচ্ছা তোর কাছে কি মনে হয়, ভালোবাসাটা আসলে কী? প্যাশন না ক্যালকুলেশন?” প্রাথমীক ইস্কুল জীবনে চারপাশের অনেক ছেলেমেয়েকে দেখে খুব দ্বিধায় ছিলাম। পরে বুঝলাম এরা ভালোবাসার নামে একটা খেলা করে, সময় কাটাতে। ক্যালকুলেশন দিয়ে রিলেশন হতে পারে ভালোবাসা নয়। বিয়ের আগে যেমন এক পক্ষ অপর পক্ষের উচ্চতা, ফেয়ারনেস স্কেল, ব্যাংক ব্যালেন্স এবং অন্যান্য সম্পদ ইত্যাদির চুলচেরা হিসাব করে তারপর সম্বন্ধ করে, তেমনি হিসেব করতে দেখতাম অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে – কাকে ভালোবাসবে সেই হিসাব। তারপরেও আমি ভালোবাসা ব্যাপারটা ঠিক সংজ্ঞায়িত করতে পারতাম না। যেমন আমার হৃদয় মাত্র একটা, কিন্তু আমি ভালোবাসি অনেককে – আমার সৃষ্টিকর্তা-প্রতিপালক আল্লাহ, আমার পথ প্রদর্শক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার বাবা-মা-ভাই, আমার স, আমার বন্ধুরা, আমার নিজেকে, আমার আত্মীয়-স্বজনেরা এবং বিভিন্নসূত্রে পরিচিত আরো অনেক মানুষকে। ঝামেলা আরো ঘনীভুত হয় যখন “কাকে বেশি ভালোবাসবো” এই প্রশ্নটা আসে। বাবা না ভাই? মা না বোন? আমার যে বন্ধুটা ছোট্টবেলায় আমার অসুস্থতার সময় মাঠে খেলা বাদ দিয়ে আমাকে গল্পের বই পড়ে শোনাত, নাকি যে প্রথম পচিঁশ হাজার টাকা বেতন পেয়ে দশ হাজার টাকা নিয়ে এসে হাতে দিয়ে বলেছিল “তোর এখন টাকা দরকার – এটা রাখ”? নাকি সে যে, ক্ষূদার জ্বালাই কাতর অবস্থায় দু মোটো ভাত তুলে দিয়েছিল মূখে। কে পাবে অগ্রাধিকার?
২. একজন মুসলিম হিসেবে আমার কর্তব্য আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা। আল্লাহ বলেন -কিন্তু যারা বিশ্বাসী তারা আল্লাহকে অন্য যে কোন কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসে। [সূরা বাকারাহ ২-১৬৫] কিন্তু আল্লাহ এমন এক সত্ত্বা যাকে আমরা না দেখে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি তার ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যের জন্য। ভালোবাসাকে মোটা দাগে ভাগ করলে দু’ভাগ করা যেতে পারে – বিবেকজাত ও স্বভাবজাত। যেমন আল্লাহকে ভালোবাসাটা বিবেকজাত। এছাড়া বেশিভাগ ভালোবাসাই আসলে স্বভাবজাত, প্রাকৃতিক। যেমন কারো রূপ বা গুণে মুগ্ধ হয়ে, কারো কাছাকাছি থাকার ফলে বা অজানা কোনো কারণে মানুষ মানুষকে ভালোবেসে ফেলে। মানুষ সৃষ্টির সেরা, কারণ সে অনেক বেশি ভালোবাসতে পারে। আল্লাহপাক আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা মাখলুক হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। অন্য কোন জীব জন্তুকে আমাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেননি। এমনকি সর্ব শ্রেষ্ঠ আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত আমাদেরকে বানিয়েছেন। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত সর্ব প্রথম এই নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলাকে ভালবাসা এবং আমাদের সর্বশেষ নবী ও হাবীবে রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ভালবাসা।আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন: কোন লোক পূর্ণ মুমিন হবে না যতক্ষণ না সে নিজের জীবন এবং পরিবার পরিজনের চেয়ে আমাকে বেশী ভালবাসবে। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তার রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ভালবাসা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য তথা ফরয। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ভালবাসার অর্থ হচ্ছে তার সুন্নত ও আদর্শের অনুসরণ করা। পক্ষান্তরে আমাদের সমাজে বেগানা যুবক-যুবতীর প্রেম-ভালবাসার নামে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উত্তাল সাগরের উর্মিমালার মত বহমান রয়েছে তা সম্পূর্ণ রূপে অবৈধ ও হারাম। বিবাহের পূর্বে এরূপ প্রেম-ভালবাসা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়, অবৈধ। মহান আল্লাহ প্রেম-ভালবাসা নামক ধ্বংসাত্বক রোগের প্রতিরোধের জন্য পর্দাপ্রথা দিয়েছেন। এরই মাধ্যমে বাচানো সম্ভব হবে ব্যক্তি, পরিবার সমাজ এবং দেশকে রক্ষা করা। পরিশেষে বলব, যদি আমরা যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের শরীয়ত সম্মতভাবে বৈবাহিক বন্ধনের ভিত রচনা করি তাহলে ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে সুখী হতে পারব। দেশ ও সমাজকে পাপাচার থেকে মুক্তি দিতে পারব এবং সামনে আগত প্রত্যেক শিশুকে সুন্দর ভবিষ্যত এবং কাঙ্খিত দেশ সমাজ ও পরিবেশ উপহার দিতে পারব। তাই আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই এবং যুবসমাজকে সঠিকভাবে বাঁচার জন্য সুন্দর পথ দেখাই। তাই সব মানুষের মধ্যে ভালোবাসার সর্বাধিক অগ্রাধিকার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর। তাকে ভালোবাসার মানে তার আদর্শ নিজের মধ্যে ধারণ করা, তাকে অনুসরণ-অনুকরণ করা, তার আদেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করা, তার নিষেধ মেনে চলা, তার প্রচারিত বিধান অন্যদের কাছে পৌছিয়ে দেয়া। তাই একটি শিক্ষিত পরিবার, সমাজ, দেশ গড়ার জন্য একটি শিক্ষিত মা চায়। যার আছে ঈমানী শক্তি ও সততা, আছেন কেউ পারবেন কি সন্ধান দিতে? জানি অনেকেই মূখ ফিরিয়ে নিবেন তবে, হ্যাঁ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ভালোবাসাও হতে হবে আল্লাহর ভালোবাসার অধীনে, যে মানুষটা একবার আল্লাহকে ভালোবাসার অনুভূতিটা পেয়েছে সে আসলে খুব সৌভাগ্যবান। কষ্টভরা এই পৃথিবীতে আর কোনো কিছুরই সামর্থ নেই তাকে দুঃখ দেবার। আল্লাহ আমাদের সেই হাতেগোণা ভাগ্যবানদের দলে থাকবার সুযোগ দিন, আমিন।

Processing your request, Please wait....
  • Print this article!
  • Digg
  • Sphinn
  • del.icio.us
  • Facebook
  • Mixx
  • Google Bookmarks
  • LinkaGoGo
  • MSN Reporter
  • Twitter
৯৯৭ বার পঠিত
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( ভোট, গড়:০.০০)

১০ টি মন্তব্য

  1. (Y) (F) Thankyou very much for nice writing.

    fazlulkader

    @hafes_alamin,জাযাকাল্লাহ খায়রান।

  2. তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত সর্ব প্রথম এই নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাআলাকে ভালবাসা এবং আমাদের সর্বশেষ নবী ও হাবীবে রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে ভালবাসা। (Y) খুব সুন্দর হয়েছে ধন্যবাদ।

    fazlulkader

    ধন্যবাদ আপনাকে আল্লাহ আমাদের মঙ্গল করুন।

    Shah Shajedur Rahman

    @মুসাফির, সহমত

  3. ইসলাম যে ভালবাসা নিষেধ করেছে। সেই ভালবাসায় কেউ সুখি হয়েছে এখন পর্যন্ত আমি দেখিনি আর যদি কেহ সুখি হয়েও থাকে তাহলে তা হল গোবরে পদ্ম ফুল। (Y)

    fazlulkader

    @humaid,ঠিক বলেছেন ভাই। জাযাকাল্লাহ খায়রান………..

  4. আপনাকে ধন্যবাদ

    fazlulkader

    @jaran,alla bless you.